জাসদের উত্থান পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি
মহিউদ্দিন আহমদ
সৌজন্যেঃ মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ
ভূমিকা
ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলাদেশ ছিল রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে টালমাটাল । আমরা অনেকেই এই অস্থির সময়কে দেখেছি, এর নানান কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছি। আমাদের আছে অনেক অর্জন, অনেক ব্যর্থতা; অনেক আনন্দ, অনেক বেদনার স্মৃতি। আমরা এই সময়টাকে ধরে রাখতে চাই, দেখতে চাই নির্মোহ দৃষ্টিতে। আমরা চাই এই সময়ের বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা।
আমার লেখার প্রধান বিষয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। ১৯৭২ সালে এই দলটির জন্ম হলেও এর একটা পূর্ব-ইতিহাস আছে। জাসদকে বুঝতে হলে এর পটভূমি জানা দরকার। প্রয়োজন ইতিহাসের মোড়ক উন্মোচনের। ইতিহাস কোনো ঠাকুরমার ঝুলি' নয়। বরং এটা হয়ে উঠতে পারে একটা ‘প্যানডোরার বাক্স’। এর ডালা খুললে এমন সব সত্য বেরিয়ে আসে, যার মুখোমুখি হতে চাই না আমরা অনেকেই। কেননা, সত্যটা জানাজানি হয়ে গেলে আমাদের অনেকের বর্তমানটা নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। ইতিহাসচর্চার এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ, গুম হয়ে যাওয়া সত্যকে খুঁজে বের করে আনা । কাজটা অত্যন্ত পরিশ্রমের এবং অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকির।
একাত্তরে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের একটা গৌরবোজ্জ্বল উত্থানপর্ব আছে। তার অনিবার্য ধারাবাহিকতায় আমরা একটা সশস্ত্র প্রতিরোধপর্বের সূচনা দেখতে পাই একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে। এই পর্বের সমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। কিন্তু যখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি, সে যুদ্ধ তো ১৬ ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যায়নি? দেশের মুক্তি হয়েছে, মানুষের মুক্তি হয়নি।
মানুষের মুক্তি, বিশেষ করে তার ইহজাগতিক সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, উন্নতি, প্রবৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য নানাজনের নানা মত, নানা পথ। মত ও পথ অনুযায়ী মানুষ জোটবদ্ধ হয়। তারা সংগঠন গড়ে তোলে। মানুষের এই যুথবদ্ধ প্রয়াসের এক আধুনিক রূপ হলো রাজনৈতিক দল।
রাজনৈতিক দলগুলো আবর্তিত হয় কোনো-না-কোনো মতাদর্শকে ঘিরে । আমাদের দেশে দলগুলো নানা কারণে ব্যক্তিকে মতাদর্শের ওপরে জায়গা দিয়ে একধরনের পীরবাদের জন্ম দিয়েছে। এখানে দলের নেতা ঈশ্বরের সমতুল্য, কিংবা তার চেয়েও বেশি। কেননা, তিনি দৃশ্যমান। এই মনস্তত্ত্ব থেকেই তৈরি হয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি, রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পায় ব্যক্তির কাল্ট, তিনি যেন হয়ে ওঠেন সব ক্ষমতার উৎস। রাজনীতির এরকম পরিণতি থেকে ইতিহাসকে আলাদা করা কঠিন। এখানে ইতিহাস সময় কিংবা ঘটনাকেন্দ্রিক না হয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয় । যেমন আমরা বলি মুজিব আমল, জিয়ার আমল, এরশাদের আমল ইত্যাদি।
আমাদের দেশের ইতিহাসচর্চার একটা বড় সমস্যা হলো নির্মোহ হয়ে উঠতে না-পারা। যে ঘটনাগুলো আমাদের জীবনকালে ঘটেছে এবং আমরা অনেকেই যেসব ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে গেছি বা আছি, সে ঘটনাগুলোকে ঘিরে আমরা একধরনের আবেগ অনুভব করি। এই আবেগের সঙ্গে জড়ানো আছে ভালোবাসা অথবা ঘৃণা। ফলে আমরা যখন কিছু বলি বা লিখি, তখন অনেক সময় ভালোবাসা বা ঘৃণা দ্বারা তাড়িত হই ।
আমাদের দেশে ইতিহাস লেখার আরেকটা বড় সমস্যা হলো পর্যাপ্ত সূত্রের অভাব। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটা মোড় পরিবর্তন হয়েছিল ষাটের দশকে । ওই সময় এবং তার পরের অনেক প্রক্রিয়া ও ঘটনার কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। কেননা, সে আন্দোলন সব সময় প্রকাশ্য ছিল না। গোপন প্রক্রিযার দালিলিক প্রমাণ সব সময় থাকে না। নিরাপত্তার কারণেই তা রাখা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে ইতিহাসচর্চার অন্যতম প্রধান সূত্র হচ্ছে ওই সময়ের কুশীলবদের মুখ থেকে শোনা কথা, ‘ওরাল হিস্ট্রি' বা কথ্য ইতিহাস। সেখানেও সমস্যা আছে। অনেকেই নিজেকে মনে করেন অপরিহার্য ও অভ্রান্ত। অন্যদের মনে করেন ভ্রান্ত, বিভ্রান্ত অথবা ষড়যন্ত্রকারী। ফলে তাদের কথা শুনে যারা লেখেন, তাদের লেখা একপেশে হয়ে যায়, যদি না তারা ওই সময়টা বোঝার জন্য সময়ের অন্য চরিত্রগুলোর সঙ্গেও কথাবার্তা বলেন ।
আমাদের দেশে অনেকে ইতিহাসের চর্চা করেন গবেষণার জন্য । গবেষকদের মধ্যে একটা সাধারণ ফর্মুলা গ্রহণের ঝোক থাকে। প্রথমে একটা প্রস্তাবনা বা হাইপোথিসিস ঠিক করে সেটা প্রমাণের জন্য তারা তাদের তথ্য-উপাত্ত সাজান। যদিও হয়তো ওই প্রস্তাবনাটাই সঠিক নয়।
ওরাল হিস্ট্রির জন্য মূল সূত্র খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। সবাই সবটা জানেন না। যারা জানেন, তারা বলতে চান না। যারা বলেন, তারাও অনেক সময় নির্মোহভাবে বলেন না। আবার অনেকের যুক্তি, এ কথা বলার সময় এখনো হয়নি।’
আমার একটা সুবিধা ছিল, বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতিকদের মধ্যে অনেককেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম। সত্তরের দশকের গোড়ায় আমি এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে পড়ি। ওই সময় দলের বেশির ভাগ প্রচারপত্র ও পুস্তিকার খসড়া তৈরি করার দায়িত্ব পালন করতেন রায়হান ফেরদৌস মধু। বাহাত্তরের মাঝামাঝি তরুণ সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত একটা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে তিনি বুদাপেস্ট চলে যান। তখন লেখালেখির দায়িত্ব পড়ে মূলত আমার ওপর। ছাত্রলীগ ও বিএলএফের (মুজিব বাহিনী) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে আমি অনেক কিছু ভেতর থেকে দেখেছি, যা বাইরে থেকে একজন গবেষকের পক্ষে জানা অতটা সহজ নয়। সে সময় আমি জাসদ পরিচালিত দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সঙ্গেও সংযুক্ত ছিলাম এবং ওই সময়ের রাজনীতির দৈনন্দিন ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণের একটা সুযোগ আমার হয়েছিল। আমি তখন দলের ভেতরে ‘বুলবুল’ নামে পরিচিত ছিলাম। এই লেখা তৈরি করার সময় আমি অনেক সূত্র ব্যবহার করলেও এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, আমি নিজেও অনেক ঘটনা ও প্রক্রিয়ার সাক্ষী ।
স্বল্প পরিসরে ওই সময়ের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভব নয়। অনেক ঘটনাই আমার জানার কথা নয় এবং আমি সেনাব বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকতে চেষ্টা করেছি। আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আমি যেটুকু জানি বা অনুসন্ধান করে জানতে পেবেছি, তা অন্যদের জানানো। সবাই তো সবটা জানেন না। এই বিষয়টা নিযে হুযতো আরও অনেকেই লিখবেন। আর এভাবেই ইতিহাস রচনার উপাদান সংগৃহীত হতে থাকবে ভবিষ্যতের গবেষকদের জন্য ।
আগেই বলেছি, ইতিহাস লেখা ও পড়ার একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলো নির্মোহ হওয়া। লেখক ও পাঠক উভয়কেই নির্মোহ হতে হবে। বদ্ধমূল ধারণা কিংবা রাজনৈতিক মতলব থেকে কেউ যদি লেখেন, সেটা ইতিহাস হবে না। আবার পাঠকেরও তার পূর্বধারণাকে এক পাশে সরিয়ে অজানা তথ্য গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে ।
ষাটের দশকে স্বাধীনতার দুটো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়। এগুলো ছিল মূলধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে, অথচ গুরুত্বপূর্ণ। একটি হচ্ছে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ', অন্যটি ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র'। বাহাত্তর সালে দৃশ্যপটে আসে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে আমি এ বিষয়ে কিছু লেখালেখির উদ্যোগ নিই। এ নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ১৯৮৩ সালের অক্টোবরে আমি ছাত্রলীগের একসময়ের দপ্তর সম্পাদক রেজাউল হক মুশতাককে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা আবদুর রাজ্জাকের ধানমন্ডির বাসায় যাই। কথাবার্তা বলার সুবিধে হবে, এই ভেবে আমরা তাকে নিয়ে মুশতাকের ভূতের গলির বাসায় যাই। আমি আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে চার-পাচ ঘন্টা আলাপ করি। ষাটের দশকের ইতিহাসের একটা অনুদঘাটিত পর্ব আমার সামনে উন্মোচিত হয়। আমি ওই তথ্যগুলো সিরাজুল আলম খান, আ স ম আবদুর রব, মনিরুল ইসলাম ও কাজী আরেফ আহমেদের সঙ্গে যাচাই করে নিই।
পরে আমি ‘আনফার্লিং দ্য রেড ফ্ল্যাগ' নামে বড় একটা লেখা তৈরি করি। তখন সেনাপতি এরশাদের জমানা। দেশে নাগরিক অধিকারের ছিটেফোটাও নেই। ইউরোপের উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর একটা নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন গ্রুপ তখন বেশ সক্রিয়। এই গ্রুপের মধ্যে ছিলেন বার্নার্ড কারভিন (ফরাসি সংস্থা ব্রাদার্স টু অল মেন—বাম ইন্টারন্যাশনাল-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি), ড্যানিয়েল অ্যাসপ্লান্ড (ঢাকায় সুইডিশ উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার প্রধান কর্মকর্তা), পিটার মারেস (নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের প্রথম সচিব), ড্যান জোনস (ব্রিটিশ ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক), এন্ড্র জেনকিনস (উন্নয়ন পরামর্শক ও একসময় ব্র্যাকের স্বেচ্ছাসেবক), ইয়ান ভ্যানডারল্যান (পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও পরবর্তী সময়ে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের প্রথম সচিব) ও তার স্ত্রী ইয়োকা ভ্যানডারল্যান প্রমুখ। ১৯৮৩ সালের দিকে তারা যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে ঢাকার ধানমন্ডিতে ‘নিজেরা করি’র অফিস ব্যবহার করতেন । এ ব্যাপারে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবিরের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য । ওই সময় আমি এদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হই। পরবর্তী সময়ে ধানমন্ডিতে ‘গণ উন্নয়ন গ্রন্থাগার' অফিসে এই যোগাযোগ অব্যাহত থাকে এবং এর ফলে অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের ঢাকা-১ চ্যাপ্টারের সূচনা হয়। আমি ১৯৮৪ সালের আগষ্টে আমষ্টার্ডামভিত্তিক সংগঠন এভার্ট ভারমিয়ার ষ্টিখটিংয়ের কাছে আনফার্লিং দ্য রেড ফ্ল্যাগ’-এর পাণ্ডুলিপি পাঠাই।
সংগঠনটি মিমিওগ্রাফ আকারে এটি প্রকাশ ও বিতরণ করে। লন্ডনের জেড বুকস-এর সম্পাদক রবার্ট মলটেনের সঙ্গে পাণ্ডুলিপিটি নিয়ে চিঠি চালাচালিও হয়েছিল। তবে এটি লিখে আমি খুশি হতে পারিনি, স্বচ্ছন্দ বোধ করিনি। লেখাটি সংক্ষিপ্ত আকারে 'র্যাডিকেল পলিটিক্স ইন বাংলাদেশ' নামে ১৯৮৪ সালে গণ উন্নয়ন গ্রন্থাগার থেকে প্রকাশিত হয়। অনেক পরে সে লেখাটি পরিমার্জিত হয়ে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাপিডিয়ার ইংরেজি ও বাংলা সংস্করণে যথাক্রমে 'র্যাডিকেল পলিটিকস' ও 'বাম রাজনীতি’ শিরোনামে স্থান পায়। তার পরও বিভিন্ন সময় আমি বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেছি, শোনা কথাগুলো যাচাই করে নেওয়ার প্রয়াস পেয়েছি। যদিও এই প্রয়াস পরবর্তী সময়ে অব্যাহত রাখতে পারিনি।
তবে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী অস্থির সময়টি নিয়ে আমি বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্নভাবে লেখা অব্যাহত রেখেছিলাম। অনেক বছর আগে ১৫ আগষ্ট দৈনিক সংবাদ-এ আমার ঢাকা কলেজের সতীর্থ শেখ কামালকে নিয়ে লিখেছিলাম 'একজন কামালের গল্প' । যুগম্ভর এ দুই কিস্তিতে লিখেছিলাম 'মুজিবনামা'। গণ উন্নয়ন গ্রন্থাগার আমার স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ 'এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল' প্রকাশ করেছিল ২০০৬ সালে। কিন্তু জাসদ নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ বই লিখতে না পারার অতৃপ্তি থেকেই গিয়েছিল।
সম্প্রতি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিশেষ অনুরোধে আমি জাসদকে নিয়ে আমার অসমাপ্ত কাজটি সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিই। পাণ্ডুলিপির প্রাথমিক খসড়ার ওপর তার পরামর্শ ও মন্তব্য লেখাটি চূড়ান্ত করতে আমাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে।
ইতিহাস যে পদ্ধতিতে লেখা হয়, তা অনেকটাই প্রাণহীন ও একঘেয়ে। ইতিহাসের মূল উপাদান হলো মানুষ। আমাদের দেশে ইতিহাস রচনায় প্রথাগত পদ্ধতিতে সাধারণত তারকাখ্যাতিসম্পন্ন নেতাদের কথাই বলা হয় । বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি হিসেবেই ব্যবহৃত হন। আমি চেয়েছি তৃণমূলের সেসব সাহসী তরুণকে যতটুকু সম্ভব পাদপ্রদীপের আলোয় পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন তাদের নেতাদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা, অনেক বেশি মানবিক এবং সত্যের কাছাকাছি।
লেখাটি তৈরি করতে গিয়ে অনেকের কাছ থেকে সমর্থন ও সাহায্য পেয়েছি। আমি প্রথাগত সাক্ষাৎকার নিইনি। যাদের আমি চিনি, তাদের সঙ্গে দিনের পর দিন আলাপ করে জানার ও বোঝার চেষ্টা করেছি। তাদের অকৃপণ সাহায্য পেয়েছি। তাদের নামের একটা তালিকা গ্রন্থের শেষে দেওয়া আছে। কেউ কেউ অতিরঞ্জিত কিংবা ভুল তথ্য দিয়ে আমাকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন। প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি একটি ইংরেজি প্রবাদ ব্যবহার করে বলেছিলেন, ভিক্টরি হ্যাজ এ থাউজেন্ড ফাদার্স, বাট ডিফিট ইজ এন অরফেন ।’ পরাজিতের মানসিকতা ও এক ধরনের অপরাধবোধ থেকে দায়দায়িত্ব অস্বীকার করার প্রবণতা দেখা যায় অনেক রাজনৈতিক নেতার মধ্যে। তারা জেনেশুনে তথ্য গোপন করেন, ভুল তথ্য দেন, অথবা তথ্য দিলেও নাম প্রকাশ করার ব্যাপারে তাদের প্রবল আপত্তি। তাদের কারও কারও অবলীলায় মিথ্যা কথা বলার পারঙ্গমতা দেখে বিস্মিত হতে হয়। আমাকে তাই অনেক সতর্কতার সঙ্গে তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হয়েছে। এই বইয়ে ব্যবহৃত ছবিগুলো বিভিন্ন পত্রিকা, ব্যক্তিগত সংগ্রহ এবং ফেসবুক থেকে নেওয়া ।
খায়রুজ্জামান বাবুল, রেজাউল হক মুশতাক, স্বপন দাশগুপ্ত, আঞ্জুমান আরা বীথি, আকা ফজলুল হক ও মুসী ফারুক আহমেদ পুরোনো প্রচারপত্র, ছবি ইত্যাদি জোগান দিয়ে লেখাটি তথ্যবহুল করতে যথাসাধ্য সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া কবি সোহরাব হাসান, বজলুল করিম আকন্দ, অধ্যাপক নেহাল করিম, তানিয়া বুলবুল, মো. সাখাওয়াত হোসেন, অধ্যাপক আহসানুল হাবিব, মুহাম্মদ লুৎফুল হক, খন্দকার সাখাওয়াত আলী, মো. কামাল উদ্দিন প্রমুখ আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। প্রথমা প্রকাশনের জাফর আহমদ রাশেদ পাণ্ডুলিপি গোছানো ও ছাপানোর কাজটির তত্ত্বাবধান করেছেন। আমি তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
মহিউদ্দিন আহমদ