আমাদের বইমেলা
হুমায়ুন আজাদ
বই একসময় পবিত্র, প্রায় অলৌকিক বলে গণ্য হতো; আমাদের ছেলেবেলায়ও অত্যন্ত পবিত্রভাবে আমরা বই স্পর্শ করতাম, পাতা উল্টোতাম, শ্রদ্ধার সঙ্গে পড়তাম এবং গভীর ভক্তির সঙ্গে বই বন্ধ করে গুছিয়ে রাখতাম। পায়ে বই লাগলে চুমো খেতে হতো, মাথায় ছোঁয়াতে হতো; এবং এমন বিশ্বাস সবাই পোষণ করতাম যে বইতে কোনো মিথ্যে ও ভুল থাকতে পারে না। বই ছিল সত্য ও পবিত্রতার প্রতিমূর্তি- বইয়ের প্রতিটি অক্ষর ও বাক্য সত্য, তাই বই পবিত্র। এটা অবশ্য আদিম সমাজের বৈশিষ্ট্য, যেখানে পবিত্র বস্তুগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ও লালনের অধিকার ছিল সমাজের ওপর স্তরের মানুষের, যা দিয়ে তারা রক্ষা করতো তাদের আধিপত্য, এবং সাধারণ মানুষদের সন্ত্রস্ত করে রাখতো। বই ছিল দুর্লভ, এবং বই ছোঁয়ার কোনো অধিকার ছিল না সাধারণ জনমগুলোর। সে সময় কেটে গেছে, এখন বই আর আদিম পবিত্র বস্তু বলে গণ্য হয় না; বই মানুষের সৃষ্টিশীলতার লিখিত বা মুদ্রিত রূপ। বই ছাড়া সভ্যতার বিকাশ ঘটতো না; মানুষ প্রজাতিটি আজ যতোটা অগ্রসর হয়েছে, ততোটা এগোতে পারতো না। এক সময় বই বলতে প্রধানত ধর্মগ্রন্থই বোঝানো হতো; কিন্তু মানুষ যখন ওই বিধান ভেঙে দেয়, প্রকাশ করতে থাকে তার অভিজ্ঞতা, আবেগ, কামনাবাসনা, বিচিত্র জ্ঞান, তখন থেকেই বই প্রকৃত বই হয়ে ওঠে। বই সব সময় নির্ভুল নয়, যেমন মানুষ নির্ভুল নয়; সব বই মহৎ বা অসাধারণ নয়, যেমন সব মানুষ মহৎ বা অসাধারণ নয়। গত চার হাজার বছরে বহু বই রচিত হয়েছে, যেগুলোকে মানুষ নির্ভুল বলে মনে করেছে, যদিও সেগুলোর অধিকাংশই ভুল- যা আমরা দেখেছি জ্ঞানের বিস্তারের সঙ্গে। বইয়ে কী থাকে? বই মানুষের জীবন, স্বপ্ন ও জ্ঞানের মুদ্রিত রূপ। বই মানুষের মতো বিশাল ও মহাবিশ্বের মতো অনন্ত ও চিরসমপ্রসারণশীল; তাই বইয়ে সব থাকে। এক ধরনের, বিশেষ করে প্রাচীন ধরনের, বই হচ্ছে বিধান; সেগুলোতে চিরসত্য আছে বলে মনে করা হয়, ওগুলো খুবই প্রভাবশালী, যদিও ওসব বইয়েই ভ্রান্তির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বিধানমূলক বইগুলোর সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিতে থাকে দুধরনের বই : এক ধরনের বইতে প্রকাশিত হয় জীবনের গল্প, আবেগ, কামনাবাসনা, স্বপ্ন- এ সব বই সাহিত্য বলে গণ্য হয়, এবং আরেক ধরনের বইতে মানুষ উদঘাটন করতে থাকে প্রাকৃতিক সত্য ও সূত্র, এগুলো জ্ঞানের বই। মানুষের বুকে ছন্দ ও আবেগ জেগে উঠেছিল হাজার হাজার বছর আগে, তাঁকে মানুষ রূপ দিয়েছে কবিতায়; অজস্র কাহিনী জন্মেছে তাঁর বুকে, সে কাহিনী বলতে শুরু করেছে, রচিত হয়ে উঠেছে উপাখ্যান। অবশ্য প্রাচীন ও মধ্যযুগের কবি ও কাহিনীকারেরা আমাদের মতো স্বাদীন ছিলেন না, তাঁদের মেনে চলতে হতো প্রভুদের বহু বিধান, তাই তাঁদের সাহিত্যে প্রচারিত হয়েছে বহু ভুল বিশ্বাস, ভুল কাহিনী, ভুল সত্য। প্রাচীন সাহিত্য প্রধানত বন্দনা- প্রভু বা দেবদেবীর, ওগুলোকে তাঁরা সত্য মনে করেছেন, যার প্রভাব আজো প্রচণ্ডভাবে পড়ে আছে আমাদের ওপর। প্রাচীন কবি ও কাহিনীকারেরা সে সময়ের প্রভাবশালী ধর্মপ্রবর্তক, দার্শনিক ও রাজন্যদের বিশ্বাস ও বিধানগুলোকে ছন্দে মিলে বিন্যস্ত করে সঞ্চার করে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের মনে; তাঁরা তাঁদের রচনাগুলোকে আজকের ‘বইয়ের মতো দেখতে পাননি; চমৎকার প্রচ্ছদ সজ্জিত হয়ে বিচিত্র অক্ষরে মুদ্রিত হয়ে সেগুলো প্রকাশ পায়নি। মুদ্রাযন্ত্রের আবিষ্কারের পর আমরা তাঁদের রচনাগুলোকে বই করে তুলেছি। বাল্মীকি আজ যদি দেখতেন তাঁর রামায়ণ, হোমার যদি দেখতেন ইলিয়াড, কাহ্নপাদ ও অন্যান্য কবিরা যদি দেখতেন তাঁদের চর্যাপদ, তাঁরা বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হতেন। তাঁরা নেই, কিন্তু তাঁদের রচনাগুলো আছে- বইরূপে। আমাদের মোটামুটি নিরক্ষর সমাজে বই বলতে বোঝানো হয় ‘পাঠ্যবই’, অধিকাংশ শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত পরিবারেও পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই পাওয়া যায় না, যদিও আধুনিক সভ্যতার সমস্ত আবর্জনায় তাদের প্রাসাদ অভিরাম নর্দমার রূপ ধারণ করে অন্যদের স্তম্ভিত করে। আমরা সাধারণত পাঠ্যবইয়ের বাইরে কোনো বই পড়ি না- সৃষ্টিশীল বইও পড়ি না, জ্ঞানবিজ্ঞানের বইও পড়ি না; কেননা সৃষ্টিশীলতা ও জ্ঞানকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। চাকরি পাওয়ার পর আমরা বইপড়া ছেড়ে দিই; অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তি আমার সঙ্গে কখনো কখনো সাহিত্য আলোচনা করেন; দেখি তাঁরা নবম-দশম শ্রেণীতে পড়া কবিতার পঙ্ক্তি আবৃত্তি করে তাঁদের সাহিত্যানুরাগের পরিচয় দেন, অনেক সময় সাহিত্য সম্পর্কে চূড়ান্ত কথা বলেন। বইপড়ার প্রাথমিক শর্ত পড়তে জানা, যা আমাদের অধিকাংশ মানুষ জানে না; পনেরো কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি মানুষও হয়তো পড়তে জানে না। আর যারা পড়তে জানে তারা পড়ে না কোন? ছাত্ররা তাদের পাঠব্যই ছাড়া পড়ে না কোন? বইপড়া একটি একান্ত ব্যক্তিগত কাজ; কেরানি বা চাকরকে দিয়ে বই পড়া যায় না। নিজেকে পড়তে হয়, মনোযোগ দিতে হয়, বুঝতে হয়, জ্ঞান বা শিল্পকলার প্রতি আকর্ষণ থাকতে হয়; এবং বই পড়ে হাতে হাতে নগদ আমরা কিছু পাই না। একটা ফাইল চাপা দিয়ে এক লাখ রুজি করতে পারি; যদি মন্ত্রী হই, তাহলে স্ত্রীর নামে পঞ্চাশ কোটি টাকার জমি পাঁচ হাজার টাকায় নিতে পারি; এমনকি একটি ছোট ক্যাডার হলেও দিনে দশ হাজার অর্জন করতে পারি। আমাদের রাষ্ট্র যারা চালায়- মন্ত্রী, আমলা, বিচারপতি, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সেনাপতি এবং অন্যরা বই পড়ে না; কেননা তাতে কোনো আশুলাভ নেই, বরং পড়া বেশ কষ্টকর কাজ; আর শিল্পকলা ও জ্ঞানে গুলশান বারিধারায় প্রাসাদ ওঠে না। একটি বাজে কথা এখন শুনতে পাই- হাতে সময় নেই; বরং এখন মানুষের হাতে সময় বেড়ে গেছে, আগে যে কাজ করতে দশ ঘণ্টা লাগতো, এখন এক ঘণ্টায় করা যায়। বিনোদনের ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এখন বইকে আক্রমণ করছে, সস্তা আনন্দে লোকজন এখন রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে মেতে উঠেছে, তাই তারা বই পড়ে না- এ কথাও ঠিক নয়; যারা চ্যানেল বিকারগ্রস্ত, চ্যানেল না থাকলেও তারা বই পড়তো না। এখন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বই পাওয়া যাচ্ছে; ওগুলো বই নয়, খুব দরকারে ওগুলো ব্যবহার করা যায়। বই হচ্ছে মুদ্রিত বই; চমৎকার প্রচ্ছদে কাগজে ছাপা একটি বই হাতে নিয়ে যে সুখ, তা কখনো ইলেকট্রনিক মাধ্যম দিতে পারবে না। বই আমি হাতে নিই, উল্টোই, গন্ধ শুঁকি, কয়েক পাতা পড়ি, রেখে দিই, আবার পড়ি- এই সুখ দিতে পারে শুধু সে মুদ্রিত বস্তুটি, যার নাম বই। আমাদের কোনো সাংস্কৃতিক উৎসব নেই, বাঙলা একাডেমীর বইমেলা হয়ে উঠেছে আমাদের প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসব। আমি এর অপেক্ষায় থাকি; এখানে গিয়ে আমি যে সুখ পাই, তা আর কোথাও গিয়ে পাই না। বইমেলা একদিনে গড়ে ওঠেনি, ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে; এর জন্য কৃতিত্ব প্রাপ্য মুক্তধারার চিত্তরঞ্জন বাবুর যিনি একাই বাঙলা একাডেমীর সামনের পথে প্রথম বই বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন। তখন তিনি জানতেন না তাঁর উদ্যোগ এমন উৎসবে পরিণত হবে। আমাদের বইমেলা আন্তর্জাতিক বইমেলা নয়; ফ্রাংকফুর্টের চাকচিক্য আমাদের নেই; আমাদের বইমেলায় আছে আমাদের দারিদ্র্যের সারল্য ও সৌন্দর্য; আগের দিনে নদী তীরের মেলার মতো। অনেক বছর ধরে আমি বইমেলা দেখছি- দেখেছি লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতে, ধুলোতে আখাশ ঢেকে যেতে, সামনের রাস্তায় বাঁশি বাজতে, ঢোল বাজতে শুনেছি, খাবারের গন্ধে এপাশ ওপাশ ভরে উঠতে দেখেছি। ধুলো উড়লেও আমার বইমেলা ভালো লাগে, ভিড়ে হাঁটতে না পারলেও আমার বইমেলা ভালো লাগে; এর কারণ আমি দিকে দিকে বই দেখতে পাই এবং এ মেলা জড়িত আমাদের শ্রেষ্ঠ চেতনার সঙ্গে, একুশের চেতনার সঙ্গে, যার ফলে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ, নোবেলপ্রাপ্ত লেখকদের বই এখানে ওঠে না; তবে আমাদের যে বিশ্বমানের লেখক নেই, তা নয়, প্রচারের অভাবে আমরা অখ্যাত হয়ে আছি; দিকে দিকে যে বই দেখতে পাই, এটাই আনন্দের। আমাদের বই প্রকাশের মাস হয়ে উঠেছে এখন ফেব্রুয়ারি, প্রধান লেখকেরা এর অপেক্ষায় থাকেন, যে লেখক তার প্রথম বইটি নিয়ে কাঁপছে, সেও স্বপ্নে থাকে একুশের বইমেলার। এর থেকে উজ্জ্বল ও প্রেরণাঋদ্ধ মাস আর আমাদের নেই। বইমেলায় ধনীরা ভিড় করে না, গাড়িতে পথ ভরে যায় না, তারা যায় বাণিজ্যমেলায়, গিয়ে লাখ টাকার কার্পেট কেনে, একশ-দুশ টাকার বই তাদের মর্যাদা বাড়াতে পারে না, বইমেলায় আসেন লেখকেরা, তরুণ-তরুণীরা, কিশোর-কিশোরীরা, মধ্যবিত্ত পুস্তুকানুরাগীরা- তারাও সবাই বই কেনে না, তবু বইমেলাকে তারা উজ্জ্বল করে তোলে। একটি তরুণ বা তরুণী যখন একটি বই কিনে জ্বলজ্বল করে ওঠে, তখন আমি তাদের চোখেমুখে অসংখ্য শুকতারা ঝলমল করতে দেখি। আমাদের বইমেলায় বইয়ের বৈচিত্র্য কম; এটি প্রধানত উপন্যাসের মেলা, এক সময় ছিল সস্তা উপন্যাসের মেলা, এখন সেটা বেশ কমেছে; এছাড়া বেরোয় মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ ও বিভিন্ন বিষয়ে কিছু পদ্যগ্রন্থ; এবং এখন কিছু প্রকাশক বের করতে শুরু করেছেন পুরোনো লেখকদের রচনাবলী, কেননা ওই লেখকদের পারিশ্রমিক দিতে হয় না। মৌলিক চিন্তার বইদর্শন, বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ক বই সাধারণত বেরোয় না, কেননা এখানে মৌলিক চিন্তাবিদ নেই। আমাদের বিজ্ঞানী নেই, তাই মেলায় বিজ্ঞানের বই নেই; আমাদের মৌলিক দার্শনিক নেই, তাই মেলায় মৌলিক দর্শনের বই নেই; এমনকি নৌকো বা সাঁকো সম্পর্কেও একটি ভালো মৌলিক বই পাওয়া যায় না। এক সময় কবিতার খুবই জনপ্রিয়তা ছিল, কিন্তু কবিরা স্লোগানে, রাজনীতিতে, ভুল গদ্য পঙ্ক্তিতে কবিতাকে এতো দূষিত করে ফেলেন যে কবিতার বই এখন আর সাড়া জাগায় না। মেলায় ভালো গবেষণামূলক বই দেখি না, ভালো তাত্ত্বিক বই দেখি না। আমাদের কিছু কাহিনীকার সস্তা উপন্যাস লিখে, জনপ্রিয় হয়ে, উপন্যাসকেও নষ্ট করে ফেলেছেন, এমনকি শিশু-কিশোর সাহিত্যকেও নষ্ট করে ফেলেছেন। যারা শিশু-কিশোর সাহিত্য পড়তে পারতো, তাদের জন্য লেখা হচ্ছে লঘু প্রেমের উপন্যাস যা হাজার হাজার কপি বিক্রি হলেও সাহিত্যের কোনো উপকার হয় না, আর একটিও না বেরোলে কোনো ক্ষতি হয় না। এক ধরনের বই এখন কিশোরদের কাছে বেশ জনপ্রিয়, যেগুলোকে বলতে পারি ‘বৈজ্ঞানিক ভূতের গল্প’; যাঁদের লেখা উচিত ছিল প্রকৃত বিজ্ঞানের বই, কিশোর-কিশোরীদের জন্য, তাঁরা ভূতের গল্প লিখছেন। এ শ্রেণীর লেখকদের ভাষাবোধও বেশ দুর্বল; সহজ সরল বাক্য লেখেন, ভুল বাক্যও লেখেন, তাঁরা কোনো ভাষিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেন না। এমন একটি সাধারণ সৃষ্টি হয়েছে এখন যে তাঁরা পাঠক সৃষ্টি করেছেন বা করছেন; এটা খুবই ভুল ধারণা। জনপ্রিয় ধারার ‘অপন্যাস’ বা ‘বৈজ্ঞানিক ভূতের গল্প’ পড়ে যে কিশোর-কিশোরীরা, তাদের মগজ শিথিল হয়ে ওঠে, বড় হয়ে তারা উৎকৃষ্ট সাহিত্য পড়তে পারে না, কেননা তা তাদের কাছে কঠিন লাগে। এঁরা পাঠক সৃষ্টি না করে পাঠক নষ্ট করছেন। মহৎ সাহিত্য সৃষ্টির জন্য মহৎ পাঠক সমপ্রদায় দরকার। আমাদের পাঠকেরা বই একটুকু কঠিন হলেই অস্বস্তি বোধ করেন। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যরাশির অধিকাংশই দুরূহ, প্রবল প্রচেষ্টা ছাড়া সেগুলোর সৌন্দর্য ও সুখ উপভোগ করা যায় না। আমাদের সাহিত্যের সীমাবদ্ধতার একটি বড় কারণ আমাদের অজস্র সামাজিক-রাজনীতিক ‘ট্যাবো’ বা ‘নিষেধ’। সাহিত্য জীবনের মতোই আপত্তিকর; সাহিত্যে সব কিছু প্রকাশিত হবে, কোনো কিছুই গোপন রাখা হবে না; কিন্তু আমাদের এখানে রয়েছে নানা নিষেধ। তাতে যৌনতা থাকতে পারবে না- থাকলে থাকবে খুব নিষ্পাপভাবে; আমরা পুরোনো বিধানগুলোকে পরখ করে দেখতে পারবো না; এবং রাজনীতিকদের সম্পর্কে কোনো সত্য কথা বলতে পারবো না। এতো সব নিষেধের মধ্যে মহৎ সাহিত্য রচিত হতে পারে না। তবু আমাদের অনেকেই উদ্যোগ নেন, এর ফলেই আমাদের সৃষ্টিশীলতা প্রবহমান থাকে। আমরা নতুন একটি শতাব্দীতে প্রবেশ করেছি, আমাদের সাহিত্যকেও হয়ে উঠতে হবে নতুন শতাব্দীর; কিন্তু আমরা আজো পুনরাবৃত্তি করে চলছি, অনেকে মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছেন। ১৯৮৫ থেকে আমাদের বইমেলা রমজান, কুরবানি, মাঝেমাঝে হরতাল প্রভৃতি নিয়ে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে; ওই সময় থেকে ক্রেতা-পাঠকও কমতে শুরু করে। তাই বইমেলা সম্পর্কে একটি উদ্বেগ থেকেই যায়- জমবে তো? মনে মনে বইমেলার জন্য যতোটা আগ্রহ থাকে, ততোটা উল্লাস বোধ করতে পারি না। বইমেলা সাধারণত নতুন বইয়ের মেলা; আগের বছরগুলোর বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ কম। তাহলে কি আগের বছরগুলোর সব বই সবার পড়া হয়ে গেছে? না কি নতুন পাঠক সৃষ্টি হচ্ছে না? এটা কেন হয়? আমরা তো চাই আগের পাঠক এবং নতুন পাঠক, যাতে মেলা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। বইমেলা বইয়ের মেলা, এতে গুরুত্ব পাওয়া উচিত লেখকদের। দেশের কোনো প্রবীণ প্রধান লেখক যদি বইমেলা উদ্বোধন করেন, কয়েকজন প্রধান লেখক ভাষণ দেন, তাহলেই তা সুন্দর দেখায়, মেলাটি সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক হয়ে ওঠে; কিন্তু সরকার কোনোকিছু থেকেই তার দৃঢ় মুঠো সরাতে চায় না। এটা গৌরবজনক নয়; সরকারের জন্য নয়, বইমেলার জন্যও নয়, সাহিত্যের জন্যও নয়। (আগামী প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত আমাদের বইমেলা গ্রন্থ থেকে সংকলিত, ঈষৎ সংক্ষেপিত)
0 Comments