ভূমেন্দ্র গুহর জন্ম বরিশালে। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। জীবনানন্দ দাশের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার ও অন্যান্য কাজে ব্যয় করেছেন ২৮ বছর। সমপ্রতি ঢাকায় এসেছিলেন এই কবি। তার এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আনিসুল হক ও জাফর আহমদ রাশেদ। জাফর আহমদ রাশেদঃ জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে আপনার ও আপনার বন্ধুদের দুই বছরের পরিচয়। পরিচয়টা কীভাবে হলো? ভূমেন্দ্র গুহঃ বালাদেশের তরুণ, ছেলেমানুষ কবিরা কয়েকটি ?কবিতা পত্রিকা? করেছিল। এর মধ্যে ?৫২ সালে আমরা যারা ময়ূখ করেছিলাম তারা আক্ষরিক অর্থেই ছিলাম উদ্বাস্ত-, চালচুলোহীন। তখন যেকেনো তরুণ কবিগোষ্ঠীর একটা কবিতা স্কুলে ঢুকে পড়ার ধারা ছিল। যেমন বুদ্ধদেব বসুর স্কুল বৌদ্ধ, বিষ্ণু দের স্কুল বৈষ্ণব। আমরা কোনো স্কুলে বা দলেই ছিলাম না। এরা যেভাবে সাহিত্য করতেন আর আমাদের যে জীবনযাপন, আমরা যেভাবে বেঁচে থাকছি, এগুলো ঠিক মিলছিল না। আমাদের মনে হতো, জীবনানন্দ দাশও উদ্বাস্ত-, বোধহয় সেই বেদনাটা বোঝেন। ওঁর কবিতা হয়তো আমাদের জীবনযাপনের কাছাকাছি হয়ে উঠছিল। তিনি স্কুলে বিশ্বাসও করতেন না। ওঁর কাছে লোকজন গেলে বিদায় করতে পারলে বাঁচেন। ময়ূখ-এ তাঁর কবিতা নেওয়ার জন্য আমরা তাঁর ল্যানসডাউনের বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করছি, ঢোকার সাহস করতে পারছি না। তাঁর ছোট বোন সুচরিতা দাশের সাহায্যে আমরা তাঁর বাড়িতে ঢুকতে পারলুম। একসময় আমরা জীবনানন্দের পরিবারের প্রায় অঙ্গীভূতই হয়ে গিয়েছি, বিশেষত ব্যক্তিগতভাবে আমি। তার মানেই যে জীবনানন্দের সঙ্গে খুব অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠেছিল, তা নয়। বা তিনি আমাদের সঙ্গে অনেক কথা বলতেন বা সাহিত্য-আলোচনা করতেন, তাও নয়। উনি সাহিত্য আলোচনার ধারেকাছেই ছিলেন না। উনি একটু অবিশ্বাসপ্রবণ ছিলেন। যেহেতু তাঁর বোন আমাদের নিয়ে গেছেন, সুতরাং তিনি আমাদের বিশ্বাস করলেন। আনিসুল হকঃ আপনার বয়স তখন কত? ভূমেন্দ্রঃ আমি তখন মেডিকেল কলেজে ফাসর্ট ইয়ারে পড়ি। ধরুন ১৯ বছর। রাশেদঃ এটা কি ১৯৫২ সাল? ভূমেন্দ্রঃ হ্যাঁ, ?৫২ সাল। ঘুরেছি, কিন্ত- তিনি লেখাটেখা দেননি। আনিসঃ তাঁর জীবদ্দশায় ময়ূখ-এ তো তাঁর কবিতা বেরিয়েছিল? ভূমেন্দ্রঃ একটা কবিতা বেরিয়েছিল। শারদীয় সংখ্যায়। দেখে তিনি বলেছিলেন তোমরা খুব যত্ন করে করেছ। আমাদের অজ্ঞাতে তাঁর বোনকে বলেছিলেন, এই ছেলেগুলো অন্য রকম। রাশেদঃ প্রথম পরিচয়ের মুহূর্তটা কেমন ছিল? সমপর্কটা কীভাবে এগিয়েছে? ভূমন্দ্রঃ ওই যে বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। ভেতরে ঢোকার সাহস পাইনি। একদিন দিদি বললেন, তোমরা এখানে ঘোরাঘুরি করো, ব্যাপার কী? তখন তাঁকে বললাম। তিনি নিয়ে গেলেন। বোনকে খুকি ডাকতেন, খুব ভালোবাসতেন। খুকি আমাদের নিয়ে গেছেন, বলেছেন, ভূমেন বরিশালের লোক, কালীবাড়ির সামনে বাড়ি ছিল, আমাকে ধরেছে, তোমার কবিতা চাই। উনি বিশ্বাস করলেন না। খানিক বাজিয়ে নিলেন। আনিসঃ আপনার জন্ম কোথায়? ভুমেন্দ্রঃ জন্ম পিরোজপুরে। বাবা ওখানে চাকরি করতেন। বাড়ি মৈশালী গ্রামে। স্বরূপকাঠি থানা, পিরোজপুর ছিল মহকুমা। জেলা বরিশাল। আনিসঃ আপনি কলকাতা গেলেন কবে? ভূমেন্দ্রঃ আমি গেছি ১৯৪৬ সালে। রাশেদঃ আপনি বলছিলেন, আপনারা যাঁরা ময়ূখ করছিলেন, সবাই ছিলেন আক্ষরিক অর্থে উদ্বাস্ত-, অর্থাৎ আপনারা সবাই পূর্ববঙ্গের লোক ছিলেন-সমীর, প্রতাপ, স্মেহাকর, জগদিন্দ্র সবাই? ভূমেন্দ্রঃ সবাই। ওরা ময়মনসিংহের গ্রুপ। আমি শুধু বরিশালের। আরও ইতিহাস আছে। ময়ূখ করেছিল কয়েকজন ডাক্তারি-পড়া ছাত্র। পূর্বাশা পত্রিকায় আমার একটা পদ্য বেরিয়েছিল। দেখে ওরা ভাবল, আমি কবি। ছাত্ররা ?কপি? বলে ঠাট্টা করত। ওরা আমাকে ডেকে নিয়েছিল। লিটল ম্যাগাজিন অনেকে মিলে শুরু করে, আসলে কাজকর্ম একজনই করে। ধীরে ধীরে দেখা গেল, আমিই কাগজ কিনতে যাই, আমিই প্রুফ দেখি। গতরের খাটনিটা আমিই করি। একসময় ডাক্তারি-পড়া ছাত্রদের সিটম কমে গেল। ওরা ছেড়ে দিল। তখন আমি কিন্ত- নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। ভাবতে লাগলাম, কাদের নিয়ে আবার একটা গোষ্ঠী করা যায়। দেশ পত্রিকায় স্মেহাকর ভট্টাচার্যর একটা কবিতা বেরিয়েছিল। পড়ে মনে হলো ভালো। গড়িয়াহাট এলাকায় আবিষকার করলুম স্মেহাকরকে। সে তাঁর দলবল নিয়ে চলে এল। এভাবে ময়ূখের নতুন একটা গোষ্ঠী তৈরি হলো। আনিসঃ ময়ূখ পড়ে মনে হয় আপনারাই আগে ধরতে পেরেছিলেন যে এই লোক অন্য রকম। ৫৪ বছর পর বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় কবি হবেন তিনি-তখন নিশ্চয় এতটা ভাবেননি। কিন্ত- কিছু একটা তো পেয়েছিলেন। কীভাবে বুঝেছিলেন? ভূমেন্দ্রঃ আমাদের মনে হয়েছিল, ওরা যদি বৌদ্ধ বা বৈষ্ণব হয়, জীবনানন্দ এক শ পঞ্চাশ ভাগ জৈবনিক। জীবন ছাড়া উনি কিছু জানেননি। দুঃখ, কষ্ট, ব্যর্থতা, মৃত্যু, জীবনের ক্ষয়ে যাওয়া-এগুলো খুব জেনেছিলেন তিনি। তথাকথিত ?আধুনিকতা? বলে একটা কথা ছিল তখন-যা ধনতন্ত্রের মুখোশ, মুখচ্ছবি। তিনি ধরতে পেরেছিলেন, এই মুখচ্ছবিতে ক্ষয়ে যাওয়া ছাড়া কিচ্ছু নেই। সে জন্য জীবনানন্দের ধূসর পাণ্ডুলিপিতে দেখবেন শুধু ক্ষয়ে যাওয়ার ছবি। আমরাও ক্ষয়ে যাওয়া। যাদের পেটে ভাত নেই, যারা বিতাড়িত হয়েছে, যারা শেয়ালদা সেটশনে সরকারের দেওয়া লপসি খাচ্ছে, কাউকে কলোনিতে থাকতে হয়েছে, তাদের জীবনযুদ্ধ তো মারাত্মক। সেই কথাগুলো বামপন্থীরা বলছেন তাত্ত্বিকভাবে। এই করলে সেই করলে সেই ইউটোপিয়ান সমাজ আমরা পাব। তা পাইনি যে দেখতেই তো পাচ্ছেন। সেটা আমাদের টানেনি। পাশাপাশি আনন্দ, নান্দনিকতা, ঈশ্বর, শুভবোধ-এও টানেনি আমাদের। আমরা উড়ে হোটেলে খাই। কোনোদিন ১০ পয়সার পাউরুটি খেয়ে লাঞ্চ করেছি। আমাদের থাকার জায়গা নেই। বিনে পয়সায় বলে একটা স্কুলবাড়ির ছাদে ভূতে পাওয়া ঘরে থাকছি আর স্কুলটা পাহারা দিচ্ছি। তাই জীবনানন্দ পড়তে পড়তে মনে হতো, তিনি হয়তো আমাদের কথাগুলোই বলছেন। অনেক পরের একটা কথা এ প্রসঙ্গে আগে বলে রাখি। জীবনানন্দ নামের ওপর ?নির্জনতার কবি? ছাপটা পড়ে গিয়েছিল। সুভাষ মুখোপাধ্যায় জীবনানন্দ দাশকে খুব গালমন্দ করে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন পরিচয় পত্রিকায়, রবীন্দ্র পুরস্কার পাওয়ার পরে। আমরা খুব রেগে গিয়েছিলুম। ওই চিলেকোঠায় বসে আমরা এগুলোর প্রতিবাদ লিখেছিলুম। লিখে জীবনানন্দকে শোনাতে গিয়েছি। মাঝখানে তিনি থামিয়ে দিলেন। বললেন, ?দেখো, এসব লিখে, ছাপিয়ে কিছু হয় না। আমি যখন থাকব না, এঁরাও যখন থাকবেন না, তোমরাও নির্ঘাত বুড়ো হয়ে যাবে, তখন হয়তো এ কবিতাগুলোর কোনো মূল্যায়ন হবে। এখন এসব শুধু শুধু কেন?? তাঁর মৃত্যুর পরে লেখাটা ছাপা হয়েছিল ময়ূখ পত্রিকায়। রাশেদঃ ওই সময়ে জীবনানন্দের কিছু বিরুদ্ধতা ছিল। সজনীকান্ত দাশ ছিলেন, বামপন্থীরা ছিলেন। জীবনানন্দের জন্য তা কতটা দুর্বিষহ ছিল? তারা কি পরে ভুল বুঝতে পেরেছিলেন? তিনি কতটা স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। ভূমেন্দ্রঃ স্বীকৃতির প্রশ্নই ছিল না। আড়াই হাজারের ওপর কবিতা লিখেছেন জীবনানন্দ, ছাপিয়েছেন মাত্র ১৬৬টি। শনিবারের চিঠি বা সজনীকান্ত দাশ তাঁকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেছেন। বুদ্ধিমানের মতো সমালোচনা করেছেন বামপন্থীরা। তাঁকে বলেছেন পলায়নপর, প্রতিক্রিয়াশীল, জীবনযুদ্ধে নিরুৎসাহজনক; বলেছেন জীবনানন্দের কবিতা পুরোনো বাংলার শুঁড়িখানার মতো। বলেছেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে মনীন্দ্র রায় বলেছেন, আমি আমার প্রবন্ধ তুলে নিচ্ছি। সজনীকান্ত দাশও ভুল বুঝতে পেরেছিলেন পরে। সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, আমি তাঁকে বুঝতে পারিনি। আমার মার্ক্সবাদের জ্ঞান কাঁচা ছিল। রাশেদঃ জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে ময়ূখ করার জন্য আপনারা লেখকদের কাছে কাছে গেলেন লেখা চাইতে। লেখকেরা কেমন আচরণ করেছেন? ভূমেন্দ্রঃ নীহাররঞ্জন রায়কে জীবনানন্দ খুব আস্থায় নিয়েছিলেন। ব্রহ্মদেশে তিনি যখন কালচারাল উপদেষ্টা, জীবনানন্দ তাঁকে চিঠি লিখেছেন। লেখার জন্য তাঁর কাছে অনেক ঘোরাঘুরি করলাম। শেষ পর্যন্ত বললেন, ?আমি সভাপতি হিসেবে নিখিল ভারত বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনে যে বক্তৃতাটি দিয়েছি, তাতে জীবনানন্দকে নিয়ে বলেছি। ওই অংশটা ছেপে দাও।? আমরা ওটা কেটে ছেপে দিয়েছি। অমলেন্দু বসু আজীবন ঘুরিয়েছেন, দেননি। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত একমাত্র লোক, সবচেয়ে বেশি বদনাম ছিল তাঁর, এককথায় লেখা দিয়েছেন। আনিসঃ জীবনানন্দ স্নরণসংখ্যা করার জন্য বুদ্ধদেব বসু কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তর কাছে গিয়েছিলেন। সুধীন দত্ত বলেছিলেন, যে কবি নয় তার জন্য স্নরণসংখ্যা করার দরকার কী। ভূমেন্দ্রঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত জীবনানন্দকে মনে করতেন স্বভাবকবি, গ্রাম্য কবি। জীবনানন্দ দাশ যে লেখাপড়া জানা ধীশক্তিসমপন্ন ছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন না। তাঁর লেখা পড়ে ধরা যেত না। সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে শেষ অনুরোধ করেছিলেন সঞ্জয় ভট্টাচার্য-জীবনানন্দ তো তবু আপনাকে নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন, আপনাকে আমাদের সবচেয়ে বড় নিরাশাকরোজ্জ্বল কবি বলে উল্লেখ করেছেন। জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে পূর্বাশার এই যে সংখ্যাটা বেরোচ্ছে, তাতে আপনি একটা লেখা দিন। অন্তত তুল্যমূল্য হবে। সুধীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ?আমার ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে, তাই লিখতে পারছি না।? রাশেদঃ জীবনানন্দ যখন মারা গেলেন, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কি এসেছিলেন দেখতে? ভূমেন্দ্রঃ প্রথম এসেছিলেন সুধীন দত্ত। অভিজাত ব্যক্তি। অর্থের আভিজাত্য নয়, মননশীলতার, সংস্কৃতির আভিজাত্য। হরিণের চামড়ার চটি পায়ে, গায়ে ড্রেসিং গাউন, চুলটুল ভালো করে আঁচড়ানো নয়। হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা। সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে উঠলেন। জীবনানন্দের মাথার কাছে ফুলের তোড়াটি রেখেছেন। এক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে-এক মিনিট-তারপর পেছনে হেঁটে সিঁড়ির কাছে এসে জুতা পায়ে দিয়ে নেমেছেন। রাশেদঃ ?৫২ সাল থেকে আপনি জীবনানন্দ দাশের বাসায় যান। ?৫৪ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আপনার কোনো কথা হয়নি? ভূমেন্দ্রঃ না। রাশেদঃ তিনি যখন মারা গেলেন, তাঁর ঘরের পুরো পরিবেশটা ঠিক কেমন ছিল? ভূমেন্দ্রঃ ভোররাতে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল থেকে জীবনানন্দের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা অশোকানন্দ দাশের ফ্লাটে। জীবনানন্দ শেষ জীবনে বেঁচে থেকেছেন ভাই-বোনের মোটামুটি আর্থিক সাহায্যে; তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর পুরো পরিবারকে দেখাশোনা করেছেন তাঁর ছোট ভাই অশোকানন্দ। জীবনানন্দকে অশোকানন্দের বাড়ির দোতলায় দরজার দিকে মুখ করে শুইয়ে দেওয়া হয়। দাড়ি কামিয়ে, একটা জামা পেছন দিকে কেটে পরিয়ে সুন্দর করে তাঁকে সাজিয়ে দেওয়া হলো। তারপর ব্রাহ্মমতে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে লাগলেন মহিলারা। যদিও জীবনানন্দ দাশ রবীন্দ্রসংগীতের ভক্ত ছিলেন না। তখনো ওঁর স্ত্রী আসেননি। তিনি এলেন সকাল নটায়। এখনো ছবিটা আমার মনে আছে। সাদা শাড়ি, হলুদ পাড়, স্মান করে চুলটুল আঁচড়ে এসেছেন। তখনো গায়ে সুগন্ধ রয়েছে। এসে সরাসরি ওপরে উঠে গেলেন। ওপরে ঝুলবারান্দা ছিল। অন্যরা চলে গিয়েছিল। আমি রয়ে গেছি। এই বসছি এই ঘুরে বেড়াচ্ছি। কেন? সুচরিতা দিদি বলেছেন, ?ভূমেন, তুমি যাবে না।? রাত জেগেছি, স্মান করিনি, মুখ ধুইনি। মাঝেমধ্যে দিদি আমাকে চা খেতে দিচ্ছেন। বাড়ির সামনে একটা বিরাট বকুলগাছ আছে। ততক্ষণে বকুলগাছের নিচে ভিড় জমে গেছে। সেখানে অচিন্ত্য, বুদ্ধদেব, সজনী-অনেক বড় বড় লোকেরা আছেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায় বসবস থেকে এসেছেন। তরুণ কবিরা তো আছেনই। সেই ভিড় পেরিয়ে লাবণ্যপ্রভা এলেন। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলেন। এসেই আমাকে প্রশ্ন করলেন, এই প্রথম আমার সঙ্গে কথা বললেন, ?এত সব লোক কেন এসছেন, বলো তো! সজনীবাবুকে দেখছি, সঞ্জয়বাবু, বুদ্ধদেব, সুভাষ এসছেন, এত লোক কেন, বলো তো!? বললাম, ?উনি মারা গেছেন, খবর পেয়ে সবাই এসছেন।? ?তাহলে তোমাদের দাদা কি বড় লেখক ছিলেন? বড় কবি ছিলেন?? আমি বললাম, ?ছিলেন নিশ্চয়, না হলে এত লোক এসছেন কেন?? আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে বললেন, ?আচ্ছা, তোমার দাদা তো বড় কবি ছিলেন, বাংলা সাহিত্যকে নিশ্চয় অনেক দানও করে গেলেন। কিন্ত- আমার জন্য কি রেখে গেলেন, বলো তো!? রাশেদঃ তাঁকে যাঁরা হাসপাতালে দেখতে গেছেন, আপনি লিখেছেন তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ভূমেন্দ্রঃ মুখ্যমন্ত্রী মানে পশ্চিমবাংলার বিধানচন্দ্র রায়। বাংলাদেশ আমি দুভাবে লিখি-?বাংলাদেশ?, আর পশ্চিমবঙ্গ হলে ?বাংলা দেশ?। আনিসঃ আচ্ছা, রূপসী বাংলার কবিতাগুলো তো তাঁর ট্রাংকে ছিল। যদিও এ নামে ছিল না। কেন এগুলো প্রকাশ করেননি। ভূমেন্দ্রঃ এ বিষয়ে জীবনানন্দের লেখা চিঠিই ছিল। তাঁর অনুরাগী ভক্ত প্রভাকর সেনকে লেখা। তখন আমি প্রকারান্তরে জীবনানন্দের লেখার বাকসোর মালিক হয়ে গেছি। খাতাপত্র রোদে দিই, নিমপাতা দিই। রাশেদঃ ওগুলো আপনি পেলেন কী করে? ভূমেন্দ্রঃ জীবনানন্দের মৃত্যুর পর আমি ও সুচরিতা দিদি ল্যানস রোডের ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁর সমপত্তিগুলো অশোকানন্দের বাড়িতে নিয়ে এলাম। সমপত্তি মানে একটা গোটানো মাদুর, একটা কেরোসিনের টেবিল, একটা চেয়ার। খবরের কাগজ ছিল অনেক, ওগুলো আনিনি। খাটের নিচে ছিল চারটে কালো ট্রাংক। একটাতে জামাকাপড়, একটাতে বই আর দুটোতে ছিল ম্যানুস্ক্রিপ্ট। জীবনানন্দের শ্রাদ্ধ হবে, শ্রাদ্ধে ছবি লাগে, মালা দিতে হয়। তিনি ছবি তোলেননি জীবনে। ভাবতেন, আমি দেখতে কুৎসিত, দেখতে সুন্দর নই। অশোকানন্দ বললেন, ?বাকসো ঘেঁটে দেখো তো, দাদার কোনো ছবি পাওয়া যায় কি না?? সেই প্রথম বাকসে আমার হাত পড়ল। খুঁজে একটা গ্রুপ ফটো পাওয়া গেল। এখন তাঁর যে ছবিটা আপনারা দেখেন সেটা ওই গ্রুপ ফটো থেকে কেটে ডি রতনে নিয়ে গিয়ে রংটং লাগিয়ে তৈরি করা। ওই করতে গিয়ে একটা খাম পেলাম। তাতে কয়েকটি চিঠির একটা প্রভাকর সেনকে লেখা-একসময় ভাবাক্রান্ত হয়ে খুব অল্প সময়ে দিন পনেরোর ভিতরে একসঙ্গে অনেকগুলি কবিতা লিখে ফেলেছিলাম বাঙালি এবং আবহমান বাংলাকে উদ্দেশ্য করে। সেই কবিতাগুলির নামও ভেবে রেখেছিলুম ?বাংলার ত্রস্ত নীলিমা?। এখন আর সে লেখাগুলো ছাপা যায় না। এখন আমার কবিতার মেজাজ অনেক পাল্টে গেছে, এই কবিতাগুলো তখন হয়তো ছাপা গেলেও যেতে পারত। সেই খাতাটা খুঁজতে শুরু করলাম। ছ নম্বর খাতাটা বার করলাম। সেখানেই কবিতাগুলো আছে। অশোকানন্দকে দেখালাম, ?মেজদা, এগুলো কি সেই কবিতা হবে?? তিনি বললেন, নিশ্চয় হতে পারে। বললাম, ?এটা ছাপিয়ে দিলে কেমন হয়? জীবনানন্দ ছাপাননি, এখন আমরা ছাপাচ্ছি।? সিদ্ধান্ত হলো সেটা ছাপানো হবে, জীবনানন্দের চিঠিটাকে বইটার পেছনে দিয়ে দেওয়া হবে। ম্যানুস্ক্রিপ্ট তৈরি করে সিগনেট প্রেসে দিয়ে আসার সময় চিঠিটার কথা দিলীপ গুপ্ত মশাইকে বলে এলাম। সবই ঠিক ছিল। বইটা যখন বেরোল, দেখলাম চিঠিটা নেই। আনিসঃ ?রূপসী বাংলা? নামটা কে দিলেন? ভূমেন্দ্রঃ দিলীপকুমার গুপ্ত। তিনি বললেন, ?বাংলার ত্রস্ত নীলিমা? নামটা ভারী, জিভে আটকে যায়। একটি ক্যাচি নাম দেব, জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকেই দেব। জীবনানন্দ ?ত্রস্ত? বলতে গেলেন কেন? আমার বক্তব্য- কবিতাগুলো দেশপ্রেম-টেশপ্রেম নয় কিছু, ওইগুলো হচ্ছে আমাদের যে ইনডিজেনাস সভ্যতা, অলিখিত সংস্কৃতি, উপনিবেশিকতা তাকে শেষ করে দিল। জীবনানন্দ যখন দেখলেন, বাংলাদেশের নীলিমা শেষ হয়ে যাচ্ছে, কাঁপছে, ত্রস্ত, ভীত, উনি ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করে গেলেন। যে জিনিস ছিল, থাকবে না, যাচ্ছে, এই জিনিসটা মনে হয় উপ্ত ছিল ?ত্রস্ত? কথাটার মধ্যে। রাশেদঃ আপনার কি মনে হয় না সেই নামটাই ভালো ছিল? ভূমেন্দ্রঃ অ-নে-ক ভালো ছিল। আনিসঃ কতগুলো খাতা ছিল ট্রাংকে? ভূমেন্দ্রঃ গুনিনি। কবিতার খাতাগুলি গেছে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে। ৪৮টা খাতা। প্রবন্ধের খাতাগুলোও ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে গেছে। আনিসঃ এত কিছু পেলেন আপনি ২১ বছর বয়সে। এখন ৭০ পেরিয়েছেন। এতটা বছর ধরে আপনি জীবনানন্দ দাশ নিয়েই আছেন? ভূমেন্দ্রঃ না না। ?৬৮ সাল পর্যন্ত জীবনানন্দ নিয়ে ছিলাম। ১৪ বছর। ডাক্তারি যখন পাস করে গেলাম, আমার বড় ডাক্তার হওয়া লোভ হলো। সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে আমি বড় ডাক্তার হওয়ার সাধনায় লেগে গেলাম। আনিসঃ আপনি কি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ? ভূমেন্দ্রঃ আমি হার্ট সার্জন। ইনডিয়ান পেনিনসুলায় প্রথম যে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়, আমি সেই টিমে ছিলাম। ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে। যা-ই হোক, বড় ডাক্তার একরকমভাবে হলাম মোটামুটি। ১৯৯৪ সালে রিটায়ার করে ভাবলাম আর ডাক্তারি করব না। জীবনানন্দের মেয়ে মঞ্জুশ্রী মারা গেলেন ১৯৯৫-এ। ওঁর মৃত্যুর পরেই এই খাতাগুলো আবিষকৃত হলো। ১৯৯৬-৯৭ সালে জীবনানন্দের ভাতুষপুত্র একদিন আমার কাছে হাজির। অমিতানন্দ দাশ। বললেন, ?দেখুন, এতগুলো ম্যাটেরিয়াল পাওয়া গেছে।? রাশেদঃ এগুলো ওই চার ট্রাংক খাতার বাইরে? ভূমেন্দ্রঃ অন্য বই নষ্ট হয়ে যাবে বলে পোকায় ধরা খাতাগুলো ন্যাশনাল লাইব্রেরি নেয়নি। সেগুলো বিছানার চাদরে বস্তাবাঁধা অবস্থায় মঞ্জুশ্রীর দূর-সমপর্কীয় এক কাজিন-সিসটারের বাড়িতে ছিল। ও বাড়িতে বিয়ে হবে, ওরা ভাবল, কাগজগুলো কোথায় ফেলব। জীবনানন্দের খুড়তুতো বোন জ্যোৎস্মা দাশগুপ্তর পরামর্শে ওগুলো অমিতানন্দকে দেওয়া হলো। খাতাগুলোতে তখন ছোট ছোট উইয়ের ঢিবি। অমিতানন্দ অনেক চেষ্টা করেও কোনো লেখার লেজ আর মুড়ো মেলাতে পারলেন না। ইঞ্জিনিয়ার মানুষ, কী করে পারবেন? রাশেদঃ এর জন্য তো একজন ডাক্তার দরকার। ভূমেন্দ্রঃ হা-হা। উনি এসে একদিন আমাকে বললেন, আপনি এগুলো একবার দেখলে খুব ভালো হতো। বললাম, ?বাবা, তুমি তা আমাকে বাঁচিয়েই দিলে। আমার কাজকর্ম কিছু নেই। আমি করে দেব।? তারপর লেগে পড়লাম। এখনো লেগে আছি। আনিসঃ আগে ১৪ পরে ১৪ বছর এই কাজটা করলেন, নিজের জীবনটা সমপর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? ভূমেন্দ্রঃ আমি একজন সাধারণ মানুষ। আদার যাকে বলে ইংরেজি ভাষায়-অপর, নিজেকে আমি তার চেয়ে বেশি কিছু মনে করি না। বাংলাদেশে এসে হঠাৎ করে দেখছি ইন্টারভিউ দিচ্ছি। ইন্টারভিউ-টিন্টারভিউ আমি কখনো দিইনি। এই কাজটা আমার কাছে পড়েছে। কাজটা শেষ করতে হবে। ৭০-৮০ বছরের পুরোনো খাতা, ধরা যাচ্ছে না, ভেঙে ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। এগুলোকে কোনোপ্রকারে আমি যদি প্রিন্টে দিয়ে যেতে পারি, তারপর পরের প্রজন্মের লোকে পড়ুক, না পড়ুক, এ নিয়ে কাজ করুক না করুক, ম্যানুস্ক্রিপ্ট তো রইল। নষ্ট তো হয়ে গেল না। এটা করতে পেরে আমি সুখী। আনিসঃ জীবনানন্দ যে এত ডায়েরি লিখে গেলেন, কেন লিখলেন। শেষ জীবনে একবার এগুলি পড়ে দেখবেন এ জন্য, নাকি ভবিষ্যৎ কালের জন্য এগুলো লিখে গেছেন? ভূমেন্দ্রঃ সেটার উত্তর রিসেন্টলি পেয়েছি। এখন তাঁর যে খাতাগুলোর কাজ করছি এর একটি খাতার পেছনের মলাটের লেখা দেখে মনে হচ্ছে উনি একটা আত্মজীবনী লেখার কথা ভেবেছেন। চ্যাপ্টার বা স্তরগুলো সাজিয়েছেন। সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে বলেছেনও, আত্মজীবনী লিখব ভাবছি। কিন্ত- আমি নিঃসন্দেহ, জীবনানন্দ আত্মজীবনী লিখতে পারতেন না। আনিসঃ উনি অনেকগুলো গল্প-উপন্যাস লিখলেন। কিন্ত- যখন নিজের কথা লিখেছেন, বলছেন উপন্যাস লিখতে চাই। তাহলে এত কিছু যে লিখলেন, এসব রচনাকে তিনি কী ভাবতেন? ভূমেন্দ্রঃ তিনি লিখেছেন, কিন্ত- প্রকাশ করতে হবে, এ রকম ধারণা তাঁর কখনোই ছিল না। না হলে দুই হাজারের ওপরে কবিতা লিখে মাত্র ১৬৬টা কবিতা প্রকাশ করতেন না। করার জায়গাও ছিল না। আনিসঃ অনেকদিন পরে বাংলাদেশে এলেন? ভূমেন্দ্রঃ ১০ বছর পরে এলাম। রাশেদঃ বরিশালে শেষ করে গেছেন? ভূমেন্দ্রঃ ১৯৪৬ সালে বরিশাল ছেড়েছি। আর যাইনি। এবার গেলাম। আনিসঃ নির্জনতম কবি থেকে এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উদ্যাপিত কবি হয়ে উঠলেন জীবনানন্দ। আপনি এর সবটা দেখলেন-এ সমপর্কে আপনার উপলব্ধি কী? ভূমেন্দ্রঃ আমরা জানতাম, জীবনানন্দ জৈবনিক কবি, দেবতা তাঁর জীবন। জীবনে কষ্ট হতে পারে, সাময়িক অবক্ষয় আসতে পারে-কিন্ত- জীবন শেষ পর্যন্ত অপরাজেয়। যেহেতু জীবনানন্দ জৈবনিক কবি, জীবনানন্দ একদিন স্বীকৃতি পাবেনই। যদি না জানতুম, তাহলে এত বছর ধরে কি সম্মুখ নাবিকি করা যেত, এত প্রতিকূল অবস্থায়, সবার বিপক্ষে গিয়ে? রাশেদঃ আমরা প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পড়েছি। আপনি জীবনানন্দের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তাঁকে কাছে থেকে দেখেছেন। তাঁকে কথা বলতে দেখেছেন, হাঁটতে দেখেছেন। তাঁর সঙ্গে আপনার ঘটেছে-এমন একটা স্নৃতির কথা বলুন। যেখানে আমরা জীবনানন্দকে দেখতে পাব। ভূমেন্দ্রঃ ভারী, না হালকা? আনিসঃ একটা হালকা, একটা ভারী। ভূমেন্দ্রঃ প্রথমে হালকাটা বলি। জীবনানন্দের টাক নিয়ে একটা বাতিকতা ছিল। চুল উঠে যেত। ছোট টাকটিকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। টাক ঢাকার জন্য বা নতুন করে চুল গজাবার জন্য যে যত উপদেশ দিতেন, মান্য করতেন। মহাভৃঙ্গরাজ জবাকুসুম তৈল, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ অনেক করেছেন। বিকেলে, সন্ধেবেলা উনি বাইরে বেড়াতে বেরোতেন, আবার রাত্তির নটা-সাড়ে নটায় বেড়াতে বেরোতেন, সমস্ত রাত বেড়িয়ে রাত তিনটে-সাড়ে তিনটেয় ফিরতেন। একদিন বিকেলে বেরোলেন, সঙ্গে আমি। উনি বললেন, ?দেখো তো,? মাথা নামিয়ে আনলেন, ?টাক দেখা যাচ্ছে?? আমি বললাম, ?দেখা যাচ্ছে না।? ?ভালো করে দেখো, দেখা যাচ্ছে না তো?? আমি বললাম, ?একদমই দেখা যাচ্ছে না।? আনিসঃ এবার ভারীটা বলুন। ভূমেন্দ্রঃ জীবনানন্দ সঞ্জয়বাবুর বাড়ি গেছেন। ফেরার সময় সঞ্জয়বাবু বললেন, ?ভূমেন, তুমি জীবনবাবুকে বাসে তুলে দাও।? জীবনানন্দ বাসে উঠেছেন। আমিও উঠে পড়েছি। সবুজ রঙের দোতলা বাস, ছাতখোলা। ওপরে গিয়ে দোতলায় পাশাপাশি বসেছি। ছেলেবেলার দুষ্টু বুদ্ধি, দুম করে বলে ফেললাম, ?লোকে বলে, আপনি নাকি ?বনলতা সেন? কবিতাটা অ্যাডগার অ্যালান পোর ?টু হেলেন? থেকে মেরেছেন, ?হায় চিল? কবিতাটার সঙ্গে নাকি ডব্লিউ বি ইয়েটসয়ের ?ও কাররিউ?র মিল আছে?? শুনে তিনি চুপ করে থাকলেন। কিছুক্ষণ পরে বললেন, ?তুমি কি কুম্ভীলকবৃত্তির কথা বলছ?? বললাম, ?তা না, লোকে বলে।? তিনি বললেন, ?তুমি যে সমাজে বাস করো, সে সমাজের ভাষাও তোমার জিভে চলে আসে। তুমি বাংলা ভাষায় কেন কথা বলো? ছেলেবেলায় তুমি বাঙালিসমাজে বড় হয়ে উঠেছ। অতএব বাংলা ভাষা তোমার জিভে আছে। তুমি যদি অ্যাডগার অ্যালান পোর, ইয়েটসের, কিটসের বা এলিয়টের সমাজে বাস করো, তোমার জিভে কী ভাষা আসবে? সেই ভাষাই চলে আসে জিভে। তাকে কুম্ভীলকবৃত্তি বলে না।? দেশপ্রিয় পার্ক এসে পড়ল। নেমে পড়লুম। দুজনেই।
0 Comments