যেসব ‘বাবু’রা পতিতালয়ে নিয়মিত যেতেনযাঁদের বাঁধা ‘মাগ’ ছিলÑ তাদের কেউ কেউ স্মৃতিকথা লিখলেও তাতে তাঁরা এই কলুষিত জীবনের কাহিনীর ধারে-কাছেও যান নি- নিজেদের এক ধরনের ‘মহাপুরুষ’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। অথচ সেকালে ও একালে অনেকেই অবিদ্যার গৃহে পদধূলি দিয়েছেন- নিয়মিত রক্ষিতার হাতে পান-তামাক খেয়েছেন- অঙ্কশায়ী হয়েছেন। মানদা দেবী শিক্ষিতা পতিতার আত্ম-চরিত-এ জানিয়েছেন কোন ধরনের মানুষ আসতেন তাঁদের ঘরে : “ঃ আমার মতো পাপরতা, পতিতা নারীর পদতলে যে সকল পুরুষ তাহাদের মান, মর্যাদা, অর্থসম্পত্তি, দেহমন বিক্রয় করেছেঃ তাদের সমাজ মাথায় তুলে রেখেছে- তারা কবি ও সাহিত্যিক বলিয়া প্রশংসিত, রাজনীতিক ও দেশসেবক বলিয়া বিখ্যাত- ধনী ও প্রতিপত্তিশালী বলিয়া সম্মানিত। এমন কি অনেক ঋষি-মোহন্তও গুরুগিরি ফলাইয়া সমাজের শীর্ষস্থানীয় অধিষ্ঠিত আছেন, তাহা সমাজ জানিয়া শুনিয়াও নীরব।” সত্যের খাতিরে সমালোচনার ভয় উপেক্ষা করে আমরা সেকাল ও একালের কিছু নামী ব্যক্তির উদাহারণ পেশ করি। বাংলা টপ্পাগানের জনক রামনিধি গুপ্ত ওরফে নিধুবাবুর সঙ্গে নাকি বারবধূ শ্রীমতির ‘নিষ্কাম’ ও ‘পবিত্র’ সম্পর্ক ছিল- তাঁর চরিত্রে মহিমা আরোপের জন্য এই ধরনের কাহিনী প্রচারের প্রয়োজন হয়। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনে পতিতা ও রক্ষিতার ভূমিকা কম নয়। প্রমথেশ বড়-য়া ও যমুনা দেবীর সম্পর্কের বৈধতাও প্রশ্নহীন নয়- যেমন একালে উত্তম-সুপ্রিয়ার সম্পর্ক। লাজুক-আত্মমুখীন-অন্তরালের সাহিত্যিক এবং হতদরিদ্র মানুষ মানুষ জগদীশ গুপ্তও কলকাতায় রক্ষিতা পুষতেন। অবিদ্যাপাড়ার গায়িকাদের সঙ্গে নজরুলের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের সাক্ষ্য দুর্লভ নয়। নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের বাঁধা-রক্ষিতা ছিলেন প্রখ্যাত কীর্তন-গায়িকা রাধারানী দেবী। তুলসী লাহিড়ীর পুত্র হাবু লাহিড়ী বলতে দ্বিধা করেননি, তাঁর পিতা ও সংগীতশিল্পী কমলা ঝরিয়া ‘প্রায় স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করিতেন’।
প্রয়োজনে এই তালিকা আরো দীর্ঘ করা যায়। আগেই বলেছি, কৃতবিদ্যদের মধ্যে এ বিষয়ে বোধহয় একমাত্র ব্যতিক্রম মীর মশাররফ হোসেন। আরেকজন অখ্যাত রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এম.এ। রমেশচন্দ্র সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত না হলেও-পতিতা-পল্লীর একজন জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন-যিনি তাঁর পাপ্লাত পতিতামগ্ন জীবনের কথা খোলামেলা পাঠকদের শুনিয়েছেন তাঁর স্মৃতিচর্চা-ব্যভিচারী রমেশদা’র আত্মকথায়।
ব্যভিচারী রমেশদার আত্মকথার প্রকাশকাল জানা যায় না, তবে তা 'বিনোদিনীর কথা বা আমার কথা'র পরে কখনো বেরিয়েছিল। কারণ গণিকাগামী রমেশচন্দ্র এই বইটি লিখেছিলেন মূলত বিনোদিনী দাসীর 'আমার কথা'র সূত্র ধরে।
আমার বই ডট কম এবার অনলাইনে রমেশদা’র আত্মকথা আবুল আহসান চৌধুরীর সম্পাদনায় pdf ভার্সন প্রকাশ করলো।
ব্যভিচারী রমেশদার আত্মকথার প্রকাশকাল জানা যায় না, তবে তা 'বিনোদিনীর কথা বা আমার কথা'র পরে কখনো বেরিয়েছিল। কারণ গণিকাগামী রমেশচন্দ্র এই বইটি লিখেছিলেন মূলত বিনোদিনী দাসীর 'আমার কথা'র সূত্র ধরে।
আমার বই ডট কম এবার অনলাইনে রমেশদা’র আত্মকথা আবুল আহসান চৌধুরীর সম্পাদনায় pdf ভার্সন প্রকাশ করলো।
0 Comments