Ticker

6/recent/ticker-posts

মাই নেম ইজ রেড - ওরহান পামুক

amarboi.com
বুক রিভিউ

মাই নেম ইজ রেড - ওরহান পামুক
ফারুক ওয়াসিফ

খুন হয়েছে, লাশটি পড়ে আছে কুয়োর তলায়। কথা শুরু তারই জবানিতে, ‘আমি এখন একটি লাশ ছাড়া আর কিছু নই’।
ওদিকে শাদা ঘোড়ায় চড়ে নিজের শহরে ফিরছে এক মুসাফির শিল্পী। বিরহজ্বালায় পৃথিবীর পথে পথে অনেক ঘুরেছে সে। ডাক এসেছে, তাই ফেরা, কিন্তু কার কাছে? চাচা এনিশতে এফেন্দি শিল্পগুরু। তাঁর বাড়িতেই জায়গির থেকে শিখত রং-রেখার শিল্প। শিরিন ও ফরহাদের ছবি আঁকার সময় মনে ভাসতো চাচাতো বোন শেকুরের মোহময়ী মুখ। কিন্তু সে যে বড্ড দেমাগি! প্রত্যাখ্যানের অপমানে ইস্তাম্বুল ছাড়া সেই তরুণ দশ বছর পর ফিরে এসে বলবে: ‘মাই নেম ইজ ব্ল্যাক’।
মহামান্য সুলতানের হুকুমে ওস্তাদ এনিশতে এফেন্দি এক মহাগ্রন্থ সৃজন করছেন। ব্ল্যাক হবে সেই বইটির পাঁচ শিল্পীর একজন। পুরো বইটি সম্পর্কে জানেন একমাত্র এনিশতে। যতই কাছে আসে নিষিদ্ধ গ্রন্থটির, ততই ব্ল্যাকের মনে বলক দিয়ে ওঠে সেই নিষিদ্ধ প্রেম। শেকুর এখন ভরযুবতী, বহুদিন হলো স্বামী যুদ্ধে নিখোঁজ। দেবর হাসানের বাসনায় ভীতা সে ফিরে আসে বাবার গৃহে। সে রকম এক দিনে জানালার ফাঁক দিয়ে সে দেখে, ডালিমগাছের তলা দিয়ে যাচ্ছে তার বাল্যপ্রেমিক; এই প্রথম চোখের দেখা পেল চোখ। কিন্তু নিজের মনের খবর কি জানে শেকুর? স্বপ্নবান ব্ল্যাক নাকি গোঁয়ারগুণ্ডা হাসান, কাকে চায় সে?
এ রকম এক দিনেই খুন হয় অলিভ। সুলতানের নির্দেশ, হিজরি সনের সহস্রবর্ষপূর্তিতে প্রকাশিত হবে বইটি। সৌন্দর্যে হবে ফিরদৌসীর শাহনামার সমকক্ষ। রক্ষণশীল অভিজাত মহলের আড়ালে, নিষিদ্ধ ইউরোপীয় শৈলীতে অঙ্কিত হবে প্রতিটি পৃষ্ঠা। এনিশতের তত্ত্বাবধানে আঁকবেন ইস্তাম্বুলের সেরা পাঁচ শিল্পী। তাদের সাংকেতিক নামই কেবল জানব: ব্ল্যাক বা কৃষ্ণ, রেড বা রক্তিম, বাটারফ্লাই বা প্রজাপতি, স্টর্ক বা সারস এবং অলিভ বা জলপাই। অলিভের খুনী হয়তো এদেরই একজন। গুঞ্জন রটে, কুফরি ইউরোপীয় ঢংয়ে আঁকার পাপে কিংবা সেই পাপ ঠেকানোই এই খুনের হেতু। এতদিন ইসলামী প্রাচ্যের শিল্পীরা বাস্তবের প্রতিচ্ছবি নয়, খোদার দৃষ্টির প্রতিফলনই ঘটাতে চাইতেন তাঁদের অনুশিল্পকর্মে (মিনিয়েচার আর্ট)।
দৃষ্টিটা মনের, চোখের নয়। বাস্তবের চরিত্র বা উপাদান নয়, খোদার সৃষ্টির বিশুদ্ধ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলাই তাদের সাধনা। কিন্তু সুলতান চান দুনিয়া তাঁর বাস্তব কীর্তি জানুক, বিশেষত প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপ জানুক তাঁর গরিমা। এবং সেটা ইউরোপীয় শৈলীতেই সম্ভব। সাবেকি মন এটা মানবে কেন?
ব্ল্যাকের প্রেমের কাঁটাও এই সনাতন প্রথা। শেকুরকে বিয়ে করতে হলে ব্ল্যাককে প্রমাণ করতে হবে, তার স্বামী যুদ্ধে নিহত। নইলে নিরস্ত হবে না হাসান। উত্তেজনা ঘন হয়ে এলে ঘটে দ্বিতীয় খুন। এবারের শিকার ওস্তাদ এনিশতে স্বয়ং। হাসানের সঙ্গে ব্ল্যাকের দ্বন্দ্ব এভাবে ঢুকে যায় ইসলামি বনাম ফ্রাঙ্কিশ তথা ইউরোপীয় সংস্কৃতির রেষারেষির মধ্যে। শিল্পের দুই ধারার নামে মুখোমুখি হয় সভ্যতার দুই নিরিখ, জীবনের দুই আদল, ইতিহাসের দুটি স্রোতোধারা। এভাবে ষোল শতকের পটভূমিতে ঘটতে দেখি ‘সভ্যতার সংঘাত’।
কিন্তু স্বামীহারা শেকুরকে কি পাবে ব্ল্যাক? জানা যাবে কি অলিভ ও এনিশতের খুনী কে? কিংবা শেষ হবে কি সেই মহাগ্রন্থ সৃজন? বাইরে থেকে ইউরোপের চাপ, ভেতরে রক্ষণশীলদের উত্থানের দোলাচলে কোন পথে যাবে ইসলামী দুনিয়ার নেতা তুর্কি সুলানাতাত? এই ঐতিহাসিক পটেই তুর্কি ঔপন্যাসিক অরহান পামুক দাঁড় করান তাঁর মানবিক চরিত্রদের।
ছিল প্রেমকাহিনী, হয়ে দাঁড়াল আলো-আঁধারি রহস্যকাহিনী, আসলে তা মানবাত্মার ইতিহাসও। কিন্তু এ তো আজকের দুনিয়ারই গল্প। সেটাই হয়তো পামুকের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (২০০৬) পাওয়ার কার্যকারণ। কিন্তু ইতিহাস, শিল্প সব ছাপিয়ে শোনা যায় চিরায়ত মানব-মানবীর বুকের ধুকপুক। তাই কেন এই খুন, তার থেকে বড় হয়ে ওঠে খুনি কে, এই প্রশ্ন।
পামুক অভিনব। কুয়োর হিমগহ্বরে পড়ে থাকা লাশের গল্পটা কেড়ে নিয়ে একজন বলতে শুরু করে, ‘মাই নেম ইজ রেড’। তার কথা শেষ হতে না হতেই, গল্পের লাগাম টেনে নেয় দেওয়ালে ঝোলানো ছবির একটি কুকুর বা ফলে ভরা ডালিমগাছ। আবার ফিরে আসে অলিভের লাশ। দাফনকাফনের শেষে তার দেহছাড়া আত্মার উড়ালসঙ্গী হয়ে আমরাও পাখির চোখে দেখতে পাই তুর্কি সালতানাতের রাজধানী ইস্তাম্বুলের অপূর্ব স্থাপত্য, নদী, সেতু, লোকালয়: ওই যে সুলতানের প্রাসাদ, ওই বসফরাস সমুদ্র, ওই মসজিদের সরু মিনার। কথা বলা শুরু করে সেই বৃদ্ধা ইহুদি ফেরিওয়ালি, আয়না ও সিল্কের রুমাল বিক্রি করার ছলে কুমারী কিংবা বিবাহিতা মেয়েদের মনের আনচান আবিষ্কার করাই যার পেশা ও নেশা। সে-ই আবার তাদের চিঠি চালাচালির দূতীয়ালি। ওদিকে মধ্যরাতে কফিখানায় কিংবা দরবেশের আস্তানায় গল্প শোনায় এক ভ্রাম্যমাণ কথক, একটু পরেই মোল্লাদের হামলায় যে নিহত হবে। এদিকে খোজা প্রহরীর পিছু পিছু আমরা ঢুকে পড়ি ইসলামের খলিফার মহাফেজখানার রহস্যময় আঁধারে। অনুচিত্রকলায় যেমন বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন করানো হয়, তেমনি মাই নেম ইজ রেডও কাহিনীর পরতে পরতে, আখ্যানের দানার পর দানায় জীবন্ত করে তোলে এক অদেখা মানবজমিন।
মাই নেম ইজ রেড এক সন্ধিক্ষণের গল্প, যখন প্রাচ্য আর পাশ্চাত্য মিলন ও সংঘাতে পরস্পরকে বদলে দিচ্ছিল। যখন সময় হঠাৎ দৌড়াতে শুরু করেছে আর টান পড়ছে আত্মায়। এসব কিছুর মধ্যেও কান পাতলে শোনা যাবে তুচ্ছ সাধারণ মানুষের হূদস্পন্দন—মাই নেম ইজ রেড তারই কথাচিত্রলেখা।
ভাষায় ও গল্প বলায় পামুক সতর্ক, তুখোড় ও বিশদ। মনে হবে পড়ছেন তুর্কি-পারস্য প্রেমলীলার মহাকাব্যগুলো, জানছেন প্রাচ্যের লুপ্ত চিত্রকলার দর্শন ও তার কিংবদন্তীর শিল্পগুরুদের কথা। সবই নাহয় হলো, কিন্তু কী আছে পথের শেষে? এই প্রশ্ন উপন্যাসের পাঠককে শেষ বাক্যের শেষ শব্দটার দিকে ইউলিসিসের সাইরেন ডাকিনীর মতো হাতছানি দিয়ে ডাকে। এমনকি এই আকাঙ্ক্ষাও আপনাকে পেয়ে বসতে পারে, বিপজ্জনক বইটির সব ছবি আঁকা শেষ হোক, খুনি ব্ল্যাক বা রেড বা স্টর্ক বা বাটারফ্লাই যে-ই হোক, তারা তো শিল্পীই শেষপর্যন্ত। একবারের জন্য হলেও বিরহী মুসাফির ব্ল্যাক পাক তার শেকুরকে। কিন্তু শেকুর কি এখনো সেই ছলনাময়ী নয়? নইলে কেন সে ব্ল্যাককে পাঠায় দুর্ধর্ষ হাসানের বিরুদ্ধে, কেন সে বাবার খুনীকে চিহ্নিত করা ছাড়া তার বুকে ধরা দেবে না বলে শর্তের ফাঁদ পাতে? পাঠিকা চঞ্চল হবেন, পাঠক হয়তো উপন্যাসের লম্বা সফরে ক্লান্তও হবেন। উপন্যাস এক বিষন্ন শিল্প, শেষ পৃষ্ঠায় তারই প্রমাণ। আর প্রেম ও শিল্পের হাতে নিহতদের খুনের রংতো লালই হবে চিরটাকাল। তারপরও একটা খেদ রয়ে যাবে মনে; হায় এই প্রেম, আহা এ জীবন! কেন যে কেন যে, তবু!

আপনাদের সহযোগীতা আমাদের একান্ত কাম্য। তাই যদি বইটি ভালো লেগে থাকে তাহলে দুচার লাইন লিখে আপনার অভিমতগুলো জানিয়ে রাখুন আমাদের কমেন্টস বক্সগুলোতে। বন্ধু-বান্ধবদের বলুন এই সাইটটির কথা। আপনাদের অনুপ্রেরণায় আমরা আরও অনেক বই নিয়ে আপনাদের সামনে আসতে পারবো। ধন্যবাদ।

Download Bangla books in pdf form mediafire.com and also read it online. Read it from iPad, iPhone. My Name is Red - Orhan Pamuk, bangla ebooks, free download , mediafire , humayun ahmed , zafar iqbal , sunil gangopadhaya , suchitra , bengali ebooks, free bangla books online, ebooks bangla, bangla pdf, bangla books, boi, bangla boi, amarboi.
নতুন বই ইমেইলে পেতে হলে

Post a Comment

2 Comments

সায়ন said…
বইটির পিডিএফ কি দেয়া যাবে?
রাশেদ চৌধুরী said…
where the download link?