প্রথম আলো - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (দুখন্ড একত্রে)
এই বিশাল,বর্ণাঢ্য,বেগবান ঐতিহাসিক উপন্যাসের পটভূমিকায় রয়েছে গত শতাব্দীর শেষ এবং বর্তমান শতাব্দীর শুরুর এক নবজাগরণের সময়কাল। সেই সময়- যখন হঠাৎ যেন ঘুম ভেঙে কিছু মানুষ আবিষ্কার করছে দেশ নামের এক ভাবসত্তাকে। শরীরে অনুভব করছে পরাধীনতার জ্বালা। ব্যক্তিগত মর্মযাতনা,ভালোবাসার অপূর্ণতাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে জাতিগত অধঃপতনের গ্লানি। দু-পর্বে বিন্যস্ত এই মহান উপন্যাসের কাহিনীর শুরু এক রাজ-অন্তঃপুরে।ঠিক যেন রুপকথার এক রাজবাড়ি, যেখানে কয়েকজন মহারানীর সঙ্গে বিহার করছেন এক কঠোর-কোমল মহারাজ, রাজপুত্র-রাজকন্যারা ঘোরাঘুরি করছে কাছাকাছি। অথচ এ-কাহিনী রূপকথা নয়। মাত্র এক শো বছর আগেকার কথা এবং এই মহারাজের মুখের ভাষা বাংলা, রাজ্যের নাম- ত্রিপুরা।
সেই পার্বত্য ত্রিপুরা-রাজ্য থেকে ক্রমশ এই কাহিনী বিস্তৃত হয়েছে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী বাংলায়,তারপর সমগ্র ভারতে। অসংখ্য জীবন্ত চরিত্র। এঁদের মধ্যে রয়েছেন মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য, রাধাকিশোর মাণিক্য, বিলেত-প্রত্যাগত তরুণ কবি রবীন্দ্রনাথ, অকস্মাৎ-দৃষ্ট উল্কার মতন ব্যতিক্রমী সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ, আধুনিক ভারতের প্রথম বৈজ্ঞানিক জগদীশচন্দ্র,আয়ার্ল্যান্ডের অগ্নিকন্যা মার্গারেট নোবল, বঙ্কিমমচন্দ্র, তিলক, ওকাকুরা, অবনীন্দ্রনাথ,গিরিশ ঘোষ, অর্ধেন্দু মুস্তাফি প্রমুখ বিস্তর চেনা এবং সেই সঙ্গে অনেক দরিদ্র-মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ। সব ছাপিয়ে, এই উপন্যাসেরও মূল নায়ক-সময়।
তীর সামনে ছুটে যাবার আগে কিছুটা পিছিয়ে যায়।বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে আগিয়ে যাবার পথে যে-কোণও সমাজের মাঝেমাঝে ঐতিহ্য ও ইতিহাসের দিকে পিছু ফিরে দেখা দরকার। আমাদের দেশের অনতি-অতীতের পুনর্দশন ও পুনর্বাচার নিয়েই 'প্রথম আলো' ।
বইটি নতুন করে স্ক্যান ও পিডিএফ করা হয়েছে।