ব্যক্তি: হুমায়ূন আহমেদ |
আমার বাংলাদেশ
ব্যক্তি: হুমায়ূন আহমেদ
১৯৭২ সালে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ‘নন্দিত নরকে’-এর মধ্যদিয়ে তরুণ লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং ৩৫ মি.মি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ পরিচালনা করে ৮টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার পান। পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা যেমন- শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারি, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, আমার আছে জল এবং সর্বশেষ ঘেটুপুত্র কমলা ছবিগুলোর কাহিনিকার এবং পরিচালকও ছিলেন। তিনি চার শতাধিক গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ওপর বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসও লিখেছেন যা পাঠক মহলে প্রচন্ড সাড়া জাগিয়েছে। কীর্তিমান এই ব্যক্তি ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। এই নন্দিত সাহিত্যিকের প্রয়াণ হয়েছে ১৯ জুলাই, ২০১২ সালে। তিনি আমাদের বাংলা সাহিত্যের সম্রাট।
ছবি: আগুনের পরশমণি
১৯৭১ সাল। বাঙালিদের জীবনে একটি ভয়াবহ বছর। পাকিস্তানী সেনাদের কঠোর প্রহরার মধ্যে একটি অসহায় শহর। শহরের অসহায় মানুষ, চারদিকে অন্ধকার, সীমাহীন ক্লান্তি। এমনি একদিনে বদিউল আলম নামের রোগা পাতলা এক মুক্তিযোদ্ধা এসে ওঠে মতিন উদ্দিনের বাসায়। মতিন উদ্দিন একজন সরকারি কর্মচারী। শহরের একটি মহল্লায় স্ত্রী ও দুকন্যা নিয়ে বসবাস করে। স্ত্রী সুরমা, কন্যাদ্বয় রাত্রি ও অপলা। নির্ভেজাল জীবন তার। বদিউল আলম শহরে ঢুকেছে সাতজনের একটি ছোট দল নিয়ে। শহরে গেরিলা অপারেশন হবে। অপারেশনের দায়িত্ব তার। বদিউল জানায় সে এক সপ্তাহ এই বাড়িতেই থাকবে। অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে সুরমার বুক। বদিউলের অপারেশনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসে। রাত্রি-অপলা ফুফুর বাড়ি থেকে চলে আসে নিজেদের বাড়িতে। অপারেশনের দিন মারাত্মক আহত বদিউল মতিন উদ্দিনের বাড়িতেই আসে। তারপর মুমূর্ষু এই মানুষটিকে নিয়ে বাড়ির মানুষগুলোর প্রাণান্ত চেষ্টা চলে তাকে বাঁচিয়ে তোলার আর ভোরের সূর্যের অপেক্ষার। ১৯৯৪ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। ছবির কাহিনি ও পরিচালনা করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। চিত্রগ্রহণে ছিলেন আখতার হোসেন। সঙ্গীত পরিচালনায় সত্যসাহা। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর, বিপাশা হায়াত, আবুল হায়াত, ডলি জহুর, শীলা আহমেদ প্রমুখ। এ ছবিটি ৮টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।
প্রিয় বই
সমকালীন বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদ এক কিংবদন্তি। গত ১৯ জুলাই এই নন্দিত কথাসাহিত্যিকের মহাপ্রয়াণ হয়েছে। তিনি একাধারে শ্রেষ্ঠ গল্পকার, ঔপন্যাসিক, কল্পবিজ্ঞানী, চলচ্চিত্রকার, নাট্যকার, নির্দেশক, সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ এবং রংতুলির অনবদ্য শিল্পী। তার লেখা প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩২২টি। এর মধ্যে আছে অবিস্মরণীয় কিছু সৃষ্টি যেমন- মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস, জোসনা ও জননীর গল্প, নন্দিত নরকে, সিরিজ হিমু, রহস্য সিরিজ মিসির আলী, সিরিজ মধ্যাহ্ন, শঙ্খনীল কারাগার, মেঘের উপরে বাড়ি, নিউইয়র্কের নীল আকাশে ঝকঝক রোদ, পায়ের তলা খড়মসহ অসংখ্য প্রিয় বই।
টিভি নাটক
সাহিত্যের মতো দেশের টিভি নাটকও জনপ্রিয় হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের কল্যাণে। অসংখ্য টিভি নাটক লিখেছেন তিনি। ধারাবাহিক টিভি নাটকের ক্ষেত্রেও নতুন এক ধারা সৃষ্টি করেন কিংবদন্তি এই নাট্যপুরুষ। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ধারাবাহিক ও একঘণ্টার নাটকের মধ্যে রয়েছে এইসব দিনরাত্রি, কোথাও কেউ নেই, বহুব্রীহি, অয়োময়, আজ রবিবার, নক্ষত্রের রাত, উড়ে যায় বকপক্ষি, কালা কইতর, সবুজ ছাতা প্রভৃতি। আর একঘন্টার নাটক- খাদক, নান্দাইলের ইউনুস, একদিন হঠাৎ, অন্যভুবন, অচীন বৃক্ষ, খোয়াবনগর, জোছনার ফুল, আজিজ সাহেবের পাপ, আমরা তিনজন, ভূত বিলাস, বুয়া বিলাস, এই বৈশাখে, জুতাবাবা, চৈত্রদিনের গান, পক্ষীরাজ, নাট্যকার হামিদ সাহেবের একদিন, তারা তিনজন টিম মাস্টার, তৃষ্ণা, রূপালী রাত্রি, মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, ঘটনা সামান্য, চেরাগের দৈত্য, তুরুপের তাস, বৃক্ষ মানবসহ অসংখ্য নাটকের মাধ্যমে তিনি মানুষকে বিনোদিত করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ চলে গেছেন অন্য ভুবনে।
স্থান: নুহাশ পল্লী
গাজীপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের পিরুজালী গ্রামে বনের ভেতর প্রথমে ২২ বিঘা জমি কিনে গড়ে তোলা হয় নুহাশ পল্লী। এখন আছে ৪০ বিঘা। গত দেড় দশক ধরে প্রকৃতি প্রেমি হুমায়ূন আহমেদের নিজের মতো করে পরিকল্পনা মাফিক গড়ে তুলেছেন এই নুহাশ পল্লী। এই নুহাশ পল্লীতে বসে সৃষ্টিশীল অনেক লেখা লিখেছেন। নুহাশ পল্লীতে দৃষ্টিনন্দন যে কয়টি ভাস্কর্য রয়েছে সেগুলো তৈরি করেছেন স্থানীয় শিল্পী আসাদুজ্জামান খান। নুহাশের ভেতরে মা ও শিশু, মৎস্যকন্যা, কঙ্কালের মাথা, ব্যাঙের ছাতাসহ ৫টি বড় আকারের ভাস্কর্য তৈরি করেছেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদের শেষ ইচ্ছা ছিল নুহাশে পাহাড়ের আদলে মাটি উঁচু করে তার পাশে একটি ম্যাজিক বক্স তৈরি করার। প্রকৃতিপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদ গাছপালা বড্ড ভালোবাসতেন। নুহাশের উত্তর পুকুরের পাড় ঘেষে রয়েছে প্রায় ৩শ প্রজাতির দুর্লভ ভেষজ গুণসম্পন্ন ঔষধি গাছের বাগান। পাশেই রয়েছে ছোট আকারের একটি চায়ের বাগান। ঔষধি বাগান লাগোয়া রয়েছে তার অকাল প্রয়াত সন্তানের নামে একটি স্মৃতিফলক। নুহাশের প্রতিটি গাছ, প্রতিটি জিনিস, প্রতিটি ধূলিকণা হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় ছিল। দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফলজ, ঔষধি এবং বনজ সব গাছপালাকেই তিনি আপন করে নিয়েছিলেন। গাছে গাছে রয়েছে তার হাতের ছোঁয়া। এ সবে তিনি হাত বুলিয়েছেন, আদর করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লীতে যে ঘরটিতে বসবাস করতেন সেই ঘরের দেয়ালে রয়েছে মাটির প্রলেপ। প্রকৃতির প্রতি তার যে অফুরন্ত টান ছিল সেই প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশের লিচুতলায় হয়েছে তার শেষ ঠিকানা।
Chrome Extension for Amarboi, Add it Now You can follow us on Twitter or join our Facebook fanpage or even follow our Google+ Page to keep yourself updated on all the latest from Bangla Literature.
Download Bangla books in pdf form amarboi.com and also read it online. 'bangla-boi, boimela, humayun ahmed, bangla boi, ebook, bangla-ebook, bangla-pdf, bangla book, bangla pdf, zafar iqbal, boi, bengali books download'
Download Bangla books in pdf form amarboi.com and also read it online. 'bangla-boi, boimela, humayun ahmed, bangla boi, ebook, bangla-ebook, bangla-pdf, bangla book, bangla pdf, zafar iqbal, boi, bengali books download'
1 Comments
priti o suvechchha roilo. iti,
Kalyan Majumdar
Florida, USA
email: KALfromFL@aol.com