Ticker

6/recent/ticker-posts

দ্য গড অব স্মল থিংস - অরুন্ধতী রায়

amarboi
দ্য গড অব স্মল থিংস - অরুন্ধতী রায়
'দ্য গড অব স্মল থিংস' উপন্যাসটির লেখক স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্রী অরুন্ধতী রায় এবং এটিই তার প্রথম গ্রন্থ। যে গ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন বাস্তবতার বিচারে এক আশাহীন বাস্তব পৃথিবী। আকাশি নীল দিন ঊনসত্তরের ডিসেম্বরের, একটা আকাশি নীল প্লেমাউথ, লেজের পাখনায় সূর্যরশ্মির ঝিলিক-ভুলে কচি ধানের ক্ষেত আর প্রাচীন রাবার বাগান পেরিয়ে কোচিনের দিকে ছুটতে ছুটতে ভেবে চলেছেন... কী ভাবছেন লেখিকা অরুন্ধতী রায়? যে কি-না সমকালীন হয়েও ভাবছেন তার পেছনের দিককার কথা, ইতিহাসের কথা। পাঠক 'দ্য গড অব স্মল থিংস' পড়তে অবশ্যই আপনাকে বেশ ক'টা বিষয় বুঝে-সমঝে এগোতে হবে। অনেকটা অন্ধকারে হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার মতো। অন্ধকার দালানটির সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে যেন কোনো গৃহপরিচারিকার হাতের গ্গ্নাস থেকে জল অথবা তরল জাতীয় পদার্থ সিঁড়িতে পড়ে পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনাকে বেগবান করতে না পারে, এ জন্য আগে থেকেই এ উপন্যাসটির সারমর্ম উদ্ধারে পূর্ববর্তী পরিবেশ সম্বন্ধে জ্ঞাতব্য থাকা আবশ্যক। এ উপন্যাসটি শুধু কল্পকাহিনীনির্ভর উপন্যাস নয়, এতে ইতিহাস আছে, শাশ্বত প্রেমের কথাও আছে। কোন ইতিহাসের কথা আছে এ উপন্যাসটিতে_ এর উত্তরে বলা যায়, যখন কেরালায় মার্কসবাদী পার্টি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। মেধাবী মার্কসবাদী নেতা ইএমএস নাল্ফু্বদ্রিপাদ যখন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী এবং দ্বিতীয় দফা ('৬৭) এবং প্রথমবার ('৫৭) সালে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ের ঘটনা। বিশ্বের প্রথম নির্বাচিত বামপন্থি সরকার গঠন করেছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভিক্ষ, কমিউনিস্ট পার্টিতে বিভক্তি, উগ্র বাম বা নকশালিদের দৌরাত্ম্য এবং অন্যান্য সংকট যখন কাউকে স্থিতিশীল থাকতে দেয়নি। 'দ্য গড অব স্মল থিংসে'র যে আখ্যানভাগটি রচিত হয়েছে এইমেনেম নামের অঞ্চলকে ঘিরে, সেটি নাম্বুদ্রিপাদের আদি পৈতৃক বাসস্থান। যেখানে প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো জাতপাতের বিভেদ, পার্টির নেতা এবং স্থানীয় বুর্জোয়াদের, লুম্পেনদের সঙ্গে আঁতাত, পুলিশি নৃশংসতা, প্রেমের মৃত্যু, দুটি অবোধ মেধাবী শিশুর অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাওয়াটাকে লেখিকা সচেতন মানবিক দৃষ্টি দিয়ে দেখে মানতে পারেননি। এ উপন্যাসে লুম্পেন, বুর্জোয়া, গণতান্ত্রিক সুবিধাভোগী, আর চরমপন্থি সবারই কিছু ভূমিকা আছে। যে সময়টাকে লেখক উন্মোচন করতে চেয়েছেন সে সময়টা যথার্থভাবেই উন্মোচিত করতে পেরেছেন এ কথা বলা যায়। ঔপন্যাসিক 'দ্য গড অব স্মল থিংসে' যে ভাষাশৈলী ব্যবহার করেছেন তা অভূতপূর্ব। প্রতিটি বিষয়, ঘটনা, অনুঘটনার উপাদানকে ভেঙে ভেঙে একেবারে ভেতরের শাঁসটাকে বের করে দিয়েছেন পাঠকের হাতে। ডিটেইলের কারণে তার গল্প বলার ঢং পাঠককে মোহিত করে। মাঝে মধ্যে প্রতীকের ব্যবহার এ উপন্যাসের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকখানি, এ কথা অংশত বলা বলা যায়। 'দ্য গড অব স্মল থিংস' অর্থাৎ 'ক্ষুদে জিনিসের দেবতা' কিংবা 'ক্ষুদ্র ঈশ্বর'_ এই আক্ষরিক নামের সঙ্গেও উপন্যাসের মূল বিষয় যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ। কেননা এ উপন্যাসে দেখানো হয়েছে, সমাজের বা রাষ্ট্রের বঞ্চিত আশ্রিত আর অস্পৃশ্যরা বরাবরই বড় দেবতাদের কাছে ঘেঁষতে পারে না, তাদের সাক্ষাৎও দুরপনেয়। ফলে, দেবতা বা ঈশ্বর বঞ্চিতদের বানিয়ে দেয় শক্তিহীন ক্ষুদে ঈশ্বর। স্রেফ কোনো রকমে বেঁচে থাকার অবলম্বনহীন, জীবনের জন্য নয় নির্বাণের জন্যও নয়। হ্যাঁ, সত্যিই বঞ্চিতরা, অবহেলিতরা শেষ পর্যন্ত নিয়তিকে আলিঙ্গন করে বাঁচে, বেঁচে থাকতে হয়, কখনও বা নিয়তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করেই মারা যায়। ঔপন্যাসিক যথার্থই এ নিয়তিবাদিতাকে এ উপন্যাসে বড় করে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। কেননা নিয়তি সবাইকে ধ্বংস করে, আশ্রয় দেয়, বেঁচে থাকার স্বপ্ন জোগায় আর সব আধা-আদিম বর্বর, নিষ্ঠুরতাকে নিয়তিই প্রশ্রয় দেয় সবশেষে। এ নিয়তিবাদের অনাদিকালের কামড়া-কামড়িকেই লেখক স্পষ্ট করে বলেছেন।