নো লংগার অ্যাট ইজ - চিনুবা আচেবে
অনুবাদঃ শওকত হোসেন
নো লংগার অ্যাট ইজ উপন্যাসের কাহিনী শুরু ওবি ওকোনকো নামের এক নাইজেরিয়ান সিভিল সার্ভেন্টের ঘুষ গ্রহণের পর বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এরপর কাহিনীর পুরোটায়ই বর্ণনা করা হয় ফ্লাসব্যাকে। প্রধান চরিত্র ওবি ছোটবেলায় স্কুলে অসাধারণ ছাত্র ছিলেন। তার জন্ম ইউমোফিয়াতে। এটি পূর্ব নাইজেরিয়ার শহর লাগোসের একটি ইগবো পল্লী। ইগবো নাজেরিয়ার অন্যতম বৃহ্ৎ এথনিক সম্প্রদায়ের একটি। নাইজেরিয়ার শহর লাগোসের ইউমোফিয়া উন্নয়ন সমিতি চাঁদা তুলে আটশো পাউন্ড ধার দেয় ওবিকে। উদ্দেশ্যে যে ওবি ইংল্যান্ডে গিয়ে আইন শাস্ত্রে পড়াশোনা শেষ করে নাইজেরিয়াতে ফিরে ইগবো সম্প্রদায়ের সুখ-দুঃখ দেখবে। কিন্তু ওবি ইংল্যান্ডে গিয়ে আইনে পড়াশোনা না করে ইংরেজি সাহিত্যে লেখাপড়া শেষ করে চার বছর পর আবার নাইজেরিয়াতে ফেরত আসেন। বাস করতে থাকেন লাগোস শহরে। যোগদান করেন সিভিল সাভির্সের স্কলারশিপ বোর্ডের চাকুরিতে, একজন শ্বেতাঙ্গ আফিসারের অধীনে। ওবি ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার সুবিধা পায় সরকারের কাছ থেকে। তার এই পার্থিব সাফল্য প্রাপ্তিতে মা-বাবা, গ্রামবাসী ও ইউমোফিয়ার সভাপতি ও সদস্যসহ সকলেই খুব খুশি হয়।
চিনুয়া আচেবে ১৯৩০ সালে নাইজেরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম উপন্যাস থিংস্ ফল অ্যাপার্ট প্রকাশিত হবার পর থেকেই আচেবে সারা দুনিয়ায় আফ্রিকার একজন প্রধান উত্তর-উপনিবেশিক লেখক হিসাবে পরিচিত হতে শুরু করেন। উপন্যাসটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টির বেশি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং প্রকাশের পর থেকে এখন পর্যন্ত আট মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার লেখক নাদিন গর্ডিমার আচেবেকে আধুনিক আফ্রিকান সাহিত্যের জনক বলেছেন। ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করা আচেবে ছাত্র বয়স থেকেই ইউরোপিয়ান লেখকদের দ্বারা আফ্রিকার সংস্কৃতির উপস্থাপনের প্রতি চরম বিরাগ পোষণ করতেন। একবার ইংরেজি সাহিত্যের খ্যাতনামা উপন্যাসিক জোসেফ কনরাডকে ‘ব্লাডি রেসিস্ট’ বলে বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন। পাশ্চাত্য বুর্জোয়া সমাজের ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ তত্ত্বে আচেবের কোন বিশ্বাস নাই। তার এক প্রবন্ধে (নভেলিস্ট অ্যাজ টিচার’স) তিনি জানান যে ঔপন্যাসিককে হতে হবে শিক্ষকের মতো। একজন শিক্ষক যেমন তার ছাত্রদের সঠিক দিক নিদের্শনা দেন, তেমনি একজন উপন্যাসিকও তার নিজ সমাজকে দিক নিদের্শনা দিবেন। ঠিক একইভাবে তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান যে জাতির ক্রান্তিকালীন সময়ে একজন লেখক অবশ্যই কথা বলবেন কেননা তিনি শুধু একজন লেখক নন, রাষ্ট্রের নাগরিকও বটে। নো লংগার অ্যাট ইজ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। এ বছর নাইজেরিয়া রাষ্ট্র হিসাবে বৃটিশ উপনিবেশ হতে স্বাধীনতা লাভ করে। এছাড়া আচেবের অবশিষ্ট উপন্যাসগুলি হলো— অ্যারো অব দি গড (১৯৬৪), এ ম্যান অব দি পিপল (১৯৬৬), এবং অ্যান্টহিলস অব সাভানাহ (১৯৮৭)। থিংস ফল অ্যাপার্ট এবং অ্যারো অব দি গড উপন্যাস দুটিতে উপনিবেশবাদ-পূর্ব এবং উপনিবেশবাদের সময় নাইজেরিয়া, বিশেষ করে ইগবো নৃগোষ্ঠী যে সংকটের মুখোমুখি হয়, সেটিই বর্ণনা করার প্রয়াস পেয়েছেন আচেবে। আর এ ম্যান অব দি পিপল এবং অ্যান্টহিলস অব সাভানাহ উপন্যাসদ্বয়ের পটভূমি স্বাধীনতাত্তোর, আধুনিক, নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক সংকটে ডুবে থাকা নাইজেরিয়া, বিশেষ করে ১৯৭০ এবং ৮০ এর দশক। সুতরাং আচেবের প্রত্যেকটি উপন্যাসকে আমরা বলতে পারি বিভিন্ন সময়ের দর্পণ। তবে তার শেষ তিনটি উপন্যাস পড়ে যে কারো মনে হতে পারে যে এগুলি হলো নাইজেরিয়ার প্রতি লেখকের হতাশার দলিল।
অনুবাদঃ শওকত হোসেন
নো লংগার অ্যাট ইজ উপন্যাসের কাহিনী শুরু ওবি ওকোনকো নামের এক নাইজেরিয়ান সিভিল সার্ভেন্টের ঘুষ গ্রহণের পর বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এরপর কাহিনীর পুরোটায়ই বর্ণনা করা হয় ফ্লাসব্যাকে। প্রধান চরিত্র ওবি ছোটবেলায় স্কুলে অসাধারণ ছাত্র ছিলেন। তার জন্ম ইউমোফিয়াতে। এটি পূর্ব নাইজেরিয়ার শহর লাগোসের একটি ইগবো পল্লী। ইগবো নাজেরিয়ার অন্যতম বৃহ্ৎ এথনিক সম্প্রদায়ের একটি। নাইজেরিয়ার শহর লাগোসের ইউমোফিয়া উন্নয়ন সমিতি চাঁদা তুলে আটশো পাউন্ড ধার দেয় ওবিকে। উদ্দেশ্যে যে ওবি ইংল্যান্ডে গিয়ে আইন শাস্ত্রে পড়াশোনা শেষ করে নাইজেরিয়াতে ফিরে ইগবো সম্প্রদায়ের সুখ-দুঃখ দেখবে। কিন্তু ওবি ইংল্যান্ডে গিয়ে আইনে পড়াশোনা না করে ইংরেজি সাহিত্যে লেখাপড়া শেষ করে চার বছর পর আবার নাইজেরিয়াতে ফেরত আসেন। বাস করতে থাকেন লাগোস শহরে। যোগদান করেন সিভিল সাভির্সের স্কলারশিপ বোর্ডের চাকুরিতে, একজন শ্বেতাঙ্গ আফিসারের অধীনে। ওবি ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার সুবিধা পায় সরকারের কাছ থেকে। তার এই পার্থিব সাফল্য প্রাপ্তিতে মা-বাবা, গ্রামবাসী ও ইউমোফিয়ার সভাপতি ও সদস্যসহ সকলেই খুব খুশি হয়।
চিনুয়া আচেবে ১৯৩০ সালে নাইজেরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম উপন্যাস থিংস্ ফল অ্যাপার্ট প্রকাশিত হবার পর থেকেই আচেবে সারা দুনিয়ায় আফ্রিকার একজন প্রধান উত্তর-উপনিবেশিক লেখক হিসাবে পরিচিত হতে শুরু করেন। উপন্যাসটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টির বেশি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং প্রকাশের পর থেকে এখন পর্যন্ত আট মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার লেখক নাদিন গর্ডিমার আচেবেকে আধুনিক আফ্রিকান সাহিত্যের জনক বলেছেন। ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করা আচেবে ছাত্র বয়স থেকেই ইউরোপিয়ান লেখকদের দ্বারা আফ্রিকার সংস্কৃতির উপস্থাপনের প্রতি চরম বিরাগ পোষণ করতেন। একবার ইংরেজি সাহিত্যের খ্যাতনামা উপন্যাসিক জোসেফ কনরাডকে ‘ব্লাডি রেসিস্ট’ বলে বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন। পাশ্চাত্য বুর্জোয়া সমাজের ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ তত্ত্বে আচেবের কোন বিশ্বাস নাই। তার এক প্রবন্ধে (নভেলিস্ট অ্যাজ টিচার’স) তিনি জানান যে ঔপন্যাসিককে হতে হবে শিক্ষকের মতো। একজন শিক্ষক যেমন তার ছাত্রদের সঠিক দিক নিদের্শনা দেন, তেমনি একজন উপন্যাসিকও তার নিজ সমাজকে দিক নিদের্শনা দিবেন। ঠিক একইভাবে তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান যে জাতির ক্রান্তিকালীন সময়ে একজন লেখক অবশ্যই কথা বলবেন কেননা তিনি শুধু একজন লেখক নন, রাষ্ট্রের নাগরিকও বটে। নো লংগার অ্যাট ইজ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। এ বছর নাইজেরিয়া রাষ্ট্র হিসাবে বৃটিশ উপনিবেশ হতে স্বাধীনতা লাভ করে। এছাড়া আচেবের অবশিষ্ট উপন্যাসগুলি হলো— অ্যারো অব দি গড (১৯৬৪), এ ম্যান অব দি পিপল (১৯৬৬), এবং অ্যান্টহিলস অব সাভানাহ (১৯৮৭)। থিংস ফল অ্যাপার্ট এবং অ্যারো অব দি গড উপন্যাস দুটিতে উপনিবেশবাদ-পূর্ব এবং উপনিবেশবাদের সময় নাইজেরিয়া, বিশেষ করে ইগবো নৃগোষ্ঠী যে সংকটের মুখোমুখি হয়, সেটিই বর্ণনা করার প্রয়াস পেয়েছেন আচেবে। আর এ ম্যান অব দি পিপল এবং অ্যান্টহিলস অব সাভানাহ উপন্যাসদ্বয়ের পটভূমি স্বাধীনতাত্তোর, আধুনিক, নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক সংকটে ডুবে থাকা নাইজেরিয়া, বিশেষ করে ১৯৭০ এবং ৮০ এর দশক। সুতরাং আচেবের প্রত্যেকটি উপন্যাসকে আমরা বলতে পারি বিভিন্ন সময়ের দর্পণ। তবে তার শেষ তিনটি উপন্যাস পড়ে যে কারো মনে হতে পারে যে এগুলি হলো নাইজেরিয়ার প্রতি লেখকের হতাশার দলিল।
New Download Links: