তপস্বী ও তরঙ্গিণী - বুদ্ধদেব বসু
‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’র কাহিনী ও পটভূমিতে রয়েছে ভারতীয় পুরাণ। বিশ্বখ্যাত মহাকাব্য ‘রামায়ণ’ ও মহাভারত’-এর কাহিনী অবলম্বন করে বুদ্ধদেব রচনা করেছেন আধুনিক নাটক। এটি প্রথম সার্থক নাটকও বটে। এর আগে তিনি রামায়ণের কাহিনী নিয়ে ‘রাবণ’ নামের একটি নাটক লিখেছেন। রামায়ণ-ভারতের কাহিনী-চরিত্র নিয়ে অজস্র নাটক লেখা হয়েছে। রামায়ণের কাহিনী নিয়ে নতুন বিন্যাসে মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) রচনা করেছেন মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধকাব্য’ (১৮৬১)। রামায়ণে রাবণকে দেখানো হয়েছে সীতা-হরণকারী খলনায়ক হিসেবে, মেঘনাদবধকাব্যে রাবণকে দেখানো হয়েছে সীতা-পূজারী প্রেমিক হিসেবে। বুদ্ধদেব বসু রাবণকে এঁকেছেন হুদয়বান মানুষ হিসেবে। মধুসূদন এবং বুদ্ধদেব দুজনই রাবণকে এঁকেছেন রামায়ণের বিবরণ থেকে স্বতন্ত্রভাবে। পুরাণের নবরূপায়ণ ঘটিয়েছেন তাঁরা। যাত্রাসম্রাট ব্রজেন্দ্রকুমার দে ‘মহীয়সী কৈকেয়ী’ পালায় কৈকেয়ীকে এঁকেছেন মহীয়সী হিসেবে। রামের বিমাতা কৈকেয়ী রামকে বনবাসের পাঠানোর চক্রান্তকারী হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু ব্রজেন্দ্রকুমার দে দেখালেন যে, প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে রাজ্যশাসনের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্যেই রামকে বনবাসে পাঠিয়েছেন বিমাতা কৈকেয়ী। সেই কারণে তিনি মহীয়সী। পুরাণের নবরূপায়ণ আমাদের নাটকে-যাত্রায় দুর্লক্ষ্য নয়।