Ticker

6/recent/ticker-posts

কেতাবি খবর ১১ই জানুয়ারি ২০১৪, শনিবার

সময়টা সম্ভবত ১৯৬২, মতিঝিলে সমকাল সাহিত্য পত্রিকার অফিস। তখন নতুন লেখকদের লেখা বাছাইয়ের কাজ চলছে—সমকালের সম্পাদক সিকান্দার আবু জাফর পত্রিকার কিছু কাজে সহায়তা করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন আমাকে। ওই সময় হঠাৎ একদিন অফিসের ভেতরে দুই তরুণ এসে আমার টেবিলের সামনে দাঁড়ালেন। ‘সম্পাদক সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে চাই,’ জানালেন তাঁরা। দুজনই একেবারে তরুণ বয়সী। অনুমান করি, দুজনই নতুন লেখক অথবা কবি।
কিছুক্ষণ বসে নিচু গলায় কথা বলেন দুজন। তারপর কী মনে করে উঠে দাঁড়ান। ফরসামতো তরুণটি বলেন, ‘জাফর ভাই তো এলেন না, আর কতক্ষণ অপেক্ষা করব?’ সিকান্দার আবু জাফর বিখ্যাত সাংবাদিক। তাঁর ওপর আবার সমকালের মতো খ্যাতিমান সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক। আবার ব্যবসার দিকেও নাকি নজর দিয়েছেন বলে গুজব শোনা যায়। তাঁর সম্পর্কে সুস্পষ্ট আর পুরোপুরি ধারণা তখনো আমার ঠিকমতো হয়ে ওঠেনি। তাই তরুণ দুজনের দিকে মুখ তুলে বলি, ‘কোনো কাজে বোধ হয় আটকে পড়ছেন কোথাও—আপনারা কেন এসেছেন তাঁর কাছে?’
‘না এমনি, দেখা করতে—তা আজ যখন দেখা হলো না তাহলে কাল টেলিফোনে যোগাযোগ করব।’
দ্বিতীয় তরুণটির কথায় প্রথমজন মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে, ‘না না, টেলিফোনে কথা নয়—আমরা আগামীকাল আবার আসব। বলবেন, আমার লেখা গল্পটা কবে ছাপানো হবে তা জানতে এসেছিলাম, আমার নাম আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।’ (সূত্রঃ প্রথম আলো)

জাতীয় মুক্তির ছোঁয়া সমাজে কতটা গভীর থেকে বদলে দিতে পারে, তার একটা নমুনা পাওয়া যাবে শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটিতে, তাঁর গণচীন ভ্রমণসংক্রান্ত অংশে। একই সঙ্গে আশাভঙ্গের বেদনাও যে সমাজের পাপগুলোকে আরো গভীরে প্রোথিত করতে পারে, তারও আদর্শ উদাহরণ একই গ্রন্থের পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের কারাগারে বসে যখন স্মৃতিকথাটি লিখছেন শেখ মুজিবুর রহমান, তখনো তিনি 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিটি থেকে মাত্র বছর দুয়েক দূরে; পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারই একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উৎসাহী কর্মী ছিলেন তিনি। তাঁর মননে পাকিস্তানেরও দুই বছর পর স্বাধীন হওয়া চীন ভ্রমণের অভিঘাতটি মূল্যবান :
"আমি ট্রেনের ভেতর ঘুরতে শুরু করলাম। ট্রেনে এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত যাওয়া যায়। নতুন চীনের লোকের চেহারা দেখতে চাই। 'আফিং' খাওয়া জাত যেন হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। 'আফিং' এখন আর কেউ খায় না, আর ঝিমিয়েও পড়ে না। মনে হলো, এ এক নতুন দেশ, নতুন মানুষ। এদের মনে আশা এসেছে, হতাশা আর নেই। তারা আজ স্বাধীন হয়েছে, দেশের সব কিছুই আজ জনগণের। ভাবলাম, তিন বছরের মধ্যে এত বড় আলোড়ন এরা কী করে করল!" (সূত্রঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী - শেখ মুজিবুর রহমান)

Post a Comment

1 Comments

Rashedul Islam said…
ধন্যবাদ বইটির জন্য।