ফ্রানৎস কাফকা গল্প সমগ্র প্রথম খন্ড জীবদ্দশায় প্রকাশিত লেখাসমূহ অনুবাদ করেছেন মাসরুর আরেফিন
আধুনিক পৃথিবীর দিকে তাকানো, এক অর্থে ফ্রানৎস কাফকার চোখ দিয়ে তাকানোই। কাফকার ভুবনে প্রবেশ করা লেখক ও পাঠকদের কাছে তিনি বিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখক; শতাব্দীর বিবেক। এই মহান ও ‘ভবিষ্যদ্বক্তা’ লেখকের সব ছোট ও বড় গল্প দুই খ-ে, বিস্তারিত ভূমিকা ও প্রতিটি লেখার ব্যাখ্যা -টীকাসহ, বাংলা ভাষায় এই প্রথম। এই খ-ে থাকছে লেখকের জীবদ্দশায় প্রকাশিত লেখাগুলোর সম্ভবত যে কোনো ভাষায়, এযাবৎকালের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ সংকলন। ফ্রানৎস কাফকার বিচিত্র ভুবনে স্বাগত, যেখানে এক সেলস্্ম্যান ঘুম থেকে উঠে বিষণœ তেলাপোকায় রূপান্তরিত হয়ে যায়; এক ছেলে বিয়ে করে স্বাধীন হতে চায় বলে তার বাবা তাকে মৃত্যুদ- দিয়ে দেন; এক অনশন-শিল্পী উপোস করে করে মারা যাওয়ার আগে বলে যায়Ñ এই পৃথিবীতে তার খাওয়ার মতো কোন খাদ্য নেই বলেই অনশনই ছিল তার শিল্প; এক লোক সারা জীবন অপেক্ষা করে করে ব্যর্থ হয় আইনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে, আর তার মৃত্যুর সময় বলা হয়, এই দরজাটি শুধু তার জন্যই বানানো হয়েছিল ... বিংশ শতাব্দীর বিশ্বসাহিত্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক ফ্রানৎস কাফকা। শেক্সপিয়ারের পরে আর কোনো লেখককে নিয়ে এতটা গবেষণা হয়নি, যা হয়েছে কাফকাকে নিয়ে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগের আগেই তাঁকে নিয়ে লেখা হয়ে গেছে ১০ হাজার বই। আর ১৯৯৬ থেকে ২০১০ পর্যন্ত সময়ে প্রতি ১০ দিনে তাঁর ওপর বের হয়েছে একটি করে নতুন বই। মাত্র নয়টি পূর্ণাঙ্গ গল্প, তিনটি অসমাপ্ত উপন্যাস, সামান্য কয়টি অসমাপ্ত বড় গল্প, কিছু গদ্য-স্কেচ, ডায়েরি ও চিঠি রেখে যাওয়া এই লেখকেরÑ যিনি বন্ধুকে আদেশ দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর সব লেখা পুড়িয়ে ফেলতেÑ ক্ষুদ্রায়তন পা-ুলিপির মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ কোটি পাউন্ড, কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তা বেচেনি। এই পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেলজয়ী ১০৯ জন লেখকের মধ্যে ৩২ জনই নিজেদের ওপরে কাফকার প্রভাবের কথা স্বীকার করেছেন।
ফ্ল্যাপের কথা
কাফকা সাহিত্যে ‘নিয়তি বা সম্তভবত এই লেখাগুলোর মহত্ত্ব এটাই যে , সবকিছু আছে এতে, কিন্তু কোনো কিছুই নিশ্চিত করা হয়নি’ - আরব্যের কাম্যু
আধুনিক পৃথিবীরর দিকে তাকানো এক অর্থে , ফ্রানৎস কাফকার চোখ দিয়ে তাকানেই। কায়কার ভুবনে প্রবেশ করা লেকখ ও পাঠকদের কাছে তিনি বিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখক, শতাব্দীর বিবেক,বিচ্ছিন্নতা, হতাশা আর দূর্বোধ্য কর্তৃপক্ষের হাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার হয়রান হওয়া মানুষের কাছে এ জীবনটিই ‘কাফকায়েস্ত, যে শব্দটি আমরা এখন ব্যবহার করি আমাদের ব্যক্তি জীবনের একই রকম অভিজ্ঞতাগুলোর বর্ণনার সময়ে।
এই মহান ও ‘ভবিষ্যবক্তা’ লেখকের-যিনি তাঁর লেখায় ঘটনার অনেক আগেই ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, হলোকাস্ট, কম্যুনিজম ,অস্ত্বিত্ববাদ ও স্নায়ুযুদ্ধের -সব ছোট ও বড় গল্প দুই খণ্ডে ,বিস্তারিত ভূমিকা ও প্রতিটি লেখার ব্যাখ্যা-টীকাসহ, বাংলা ভাষায় এই প্রথম।
প্রথম খণ্ডে থাকছে লেখকের জীবদ্দশায় ছাপা সব লেখা, যার মধ্যে রয়েছে তিনি তাঁর যে কটি লেখা গোনায় ধরা যায় বলে ভাবছেন, সেই সব কটি লেখাই। আজ পর্যন্ত কাফকার ‘জীবদ্দশায় প্রকাশিত লেখা নিয়ে ‘ ছাপা অসংখ্য ইংরেজী অনুবাদ-গ্রন্থের একটিতেও এতগুলো লেখা একসঙ্গে নেই, যা রয়েছে গল্পসমগ্রের এই প্রথম খণ্ডে। তার মৃত্যুর আগে ছাপা হওয়া সবগুলো গল্পই শুধু নয়, এত থাকছে তাঁর অনবদ্য এক ভ্রমণকাহিনী, ম্যাক্স ব্রডের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা অমাপ্ত এক উপন্যাসের প্রথম খণ্ড, তার আমেরিকা উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়, যা তিনি বই আকারে প্রকাশ করেছিলেন, এমনকি তাঁর লেখা তিনটি সমালোচনামূলক প্রবন্ধও।
ফ্রানৎস ডকাফকা বিচিত্র ভূবনে স্বাগত , যেখানে এক সেলসম্যান ঘুম থেকে উঠে বিষণ্ন তেলাপোকায় রূপান্তরিত হয়ে যায়; এক ছেলে বিয়ে করে স্বাধীন হতে চায় বলে তার বাবা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দেন; এক অনশন-শিল্পী উপোস করে করে মারা যাওয়ার আগে বলে যায়- এই পৃথিবীতে তার খাওয়ার মতো কোনো খাদ্য নেই বলেই অনশনই ছিল তার শিল্প; এক লোক সারা জীবন অপেক্ষা করে করে ব্যর্থ হয়ে আইনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে; আর তা মৃত্যুর সমসয় বলা হয়, ওই দরজাটি শুধু তার জন্যই বানানো হয়েছিল।