কাঠের শরীর - কিঙ্কর আহসান

কাঠের শরীর - কিঙ্কর আহসান

অমর একুশে গ্রš'মেলা ২০১৪ তে জাগ"তি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত 'কাঠের শরীর' বইটির প্রকাশক 'ফয়সল আরেফিন দীপন'। অসাধারন প্র"ছদটি করেছেন 'নিয়াজ চৌধুরী তুলি'। বইয়ের প্রথম গল্পের নাম ‘জীবন-চিত্রনাট্য-খসড়া’। প্রকৃতি এবং নিয়তির মেলবন্ধনে ব্যক্তি বিশেষে আনন্দ-বেদনা, সুখ দুঃখ, হাসি কান্না আর অপার্থিব বাস্তবতাকে পাশাপাশি এক ফে"মের চিত্রনাট্যে তুলে ধরেছেন গল্পকার। গল্পের শেষে এসেও পাঠকের গতানুগতিক অনুমানকে ভুল প্রমাণ করে জীবনের চিত্রনাট্যকে প্রকৃতির নির্মমতায় থেমে যেতে দেননি বরং বয়ে চলার সুযোগ দিয়েছেন। এই গ্রšে'র সেরা গল্প ‘ছায়ালোকে মায়া’। নিজ আত্মার পাপ আর অপরাধগুলোর কাছে ুদ" মানুষ যে শেষ সময়ে এসে আরও বেশি ুদ্র হয়ে যায় জীবনের কাছে, খুব সহজ ভাষায় গল্পকার তা লেখায় তুলে এনেছেন। লেখার সাবলীলতা আর জীবনের শেষ প্রান্তে অযথাই ভিড় করা স্মৃতির ফিরে আসা এবং ম"ত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ টানার গল্প ‘ছায়ালোকে মায়া’। পাপ আর পরিণতির গল্পে ডুবে থেকে চোখ যে কখন পরের গল্পের চরিত্র রাজা শশীকান্তের কাছে এসে আটকে যায় তা টের পাওয়া যায় না। রাজামশাইয়ের লোভ যে পিতা-পুত্র সম সম্পর্ককে দিন শেষে কর্তা- ভৃত্য’র ফে"মে বন্দী হয়ে ভোগের আড়ালে ঢেকে যাবে ভৃত্য গোপাল সেটা আঁচ করতে দেরি করে ফেলে। রক্তের সম্পর্কের আবেদনের কাছে মানুষ কতটা দুঃসাহসী তারই একটুকরো উপলব্ধি ‘তপোভঙ্গ’ গল্পটি। এই গল্প শেষ করে চলে যেতে হয় কুমারখালি নদী তীরের চন্দ্রপহর গ্রামে। প্রকৃতির ঋণ শোধ আর মানুষের জৈবিক চাহিদার কাছে ধর্ম স"ষ্ট বিধি নিষেধের অবচেতন পরাজয়ের মাধ্যমে এক কথায় মানব ‘উপাসনা’কে এক কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন লেখক গল্পের মধ্য দিয়ে। এভাবে একে একে ‘কাঁচা ধানের কবর’ থেকে ‘চা;ঘুম’, ‘বাগান বিলাস’, ‘পাতকী’ আর ‘মোহর’ গল্পগুলো ছুঁয়ে দিয়ে পাঠক হিসেবে মন ‘কাঠের শরীর’-এর কাছে আত্মসমর্পন করার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। নামের মতই রহস্য নিয়ে অতি প্রাকৃত ঘটনার মিশেলে অপূর্ণ কিছু আকুলতা ‘কাঠের শরীর’ গল্পে উঠে এসেছে। ‘জাগৃতি প"কাশনী’ থেকে বের হওয়া কিঙ্কর আহ্সানের ‘কাঠের শরীর’ গ্রš'টি পাঠককে নিয়ে যায় অন্য এবং ভুবনে। পাঠ শেষে সে ভুবন থেকে ফিরে পাঠক অনুভব করে অদ্ভুত এক ভালোলাগার অপূর্ণতা। গল্পের বিষয়ব¯'ু, সংলাপ, বর্ণনারীতি দিয়ে মোহবিষ্ট করে রাখার জন্য গল্পকারকে ধন্যবাদ। শব্দের রং তুলি দিয়ে যে ছবি এঁকেছেন লেখক, বইয়ের পাতায় পাতায় তা চালু থাকুক। পাঠক হিসেবে বলবে পারি, কিঙ্কর আহ্সানের এ যাত্রা একদিনের নয়। অনেক দিনের।

লেখক পরিচিতি:
প্রথম আলোর ‘বন্ধুসভা’ পাতায় লেখালেখি শুরু। তারপর টানা পাঁচ বছর লিখেছেন প"থম আলোর ‘ছুটির দিনে’ ‘স্বপ্ন নিয়ে’ ‘খোলা কলাম’ সহ আরও নানান পাতায়। বাংলানিউজ ২৪, বাংলাদেশ প্রতিদিন, পরিবর্তন সহ দেশের প্রায় সব শীর্ষ দৈনিক পত্রিকায় লিখেছেন ছোট গল্প। কালের কন্ঠের ‘বাতিঘর’ পাতায় সাব এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। লেখালেখির পাশে এসময় হাত পাকিয়েছেন ফিল্মেও। কাজ করেছেন জ টিভির জন্যে। ‘পাতার নৈাকা’ ‘ক্রিং ক্রিং’ এবং ‘জলপরানি’ টেলিফিল্মের কাজ করে হয়েছেন প"শংসিত। ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ টিভি শো এর সহকারী স্ক্রিপ্ট রাইটার এর কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সংঘ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চল"িচত্র সংসদ, কন্ঠশীলন, মুক্তআসর, বিল্ড বেটার বাংলাদেশ সহ আরও অনেকগুলো সংগঠনের সাথে। ব্লাইন্ড স্পট ডট এন্টারটেননমেন্ট, ব্লু বিজ সহ আরও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছেন। বর্তমানে কর্মরত আছেন চ্যানেল আইয়ের ‘আই পজিটিভ কমিউনিকেশন’ এ সিনিয়র কপিরাইটার হিসেবে। বিজ্ঞাপনের জগতে জড়িয়ে নিয়েছেন নিজেকে। ‘হ্যান্ডসাম দ্য আলটিমেট ম্যান - সিজন ২’ এর প্রধান স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করছেন। সবকিছুর পরেও লেখালেখিই কিঙ্কর আহ্সানের আসল জায়গা। তার সর্ম্পকে এক কথায় বলতে গেলে তার বুবুর কাছ থেকে শোনা কথাটা বলতে হবে। ‘মাটির মানুষ ছেলেটা তবুও আকাশে ডানা মেলে ওড়ার আজন্ম সাধ তার।’ সাহিত্যের জগতে লেখকের এ পথচলা শুভ হোক।

আমারবই.কম এর প্রিমিয়াম সদস্য হতে চাইলে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।