ফেরদৌসীর শাহানামা অনুবাদ : মনিরউদ্দীন ইউসুফ (১ম খন্ড) (ছয় খন্ডে সমাপ্ত)
যে-শাহনামা লিখতে ফেরদৌসীর সময় লেগেছিল ৩০ বছর, সে-শাহনামা অনুবাদ করতে মনিরউদ্দীন ইউসুফের সময় লেগে যায় ১৭ বছর। ছয়টি খন্ডে তিনি সম্পূর্ণ শাহনামা অনুবাদ করেন। তবে তাঁর জীবিতকালে সবকটি খন্ড প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৭ ও ১৯৭৯ সালে দুটি খন্ড প্রকাশিত হয়েছিল। শাহনামা রচনার সহস্র বার্ষিকী উৎসব উপলক্ষে ছয়টি খন্ড প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ইউনেস্কো ও ঢাকার ইরানি দূতাবাসের সহযোগিতায় ১৯৯০-এর ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বাংলাদেশে ‘শাহনামা উৎসব’ পালন করেছিল। ইউনেস্কো আন্তর্জাতিকভাবেই উৎসব পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে শাহনামার একটি পান্ডিত্যপূর্ণ সংকলন প্রকাশিত হয় ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে। এটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন টি. ম্যাকান। সতেরোটি পান্ডুলিপির তুলনামূলক যৌগিক সম্পাদনার মাধ্যমে এটি প্রস্ত্তত করা হয়। ফ্রান্স, রাশিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে শাহনামার বেশ কটি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন প্রকাশিত হলেও ভারতবর্ষের অন্য কোনো অঞ্চলে এর পূর্ণাঙ্গ, সুসম্পাদিত সংকলনের খবর আমরা পাইনি। তবে মুঘল সম্রাটরা এ বইটি গুরুত্বের সঙ্গে পড়তেন, তার প্রমাণ আছে বাবর, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান প্রমুখের শাহনামার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে। প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর শাহনামা থেকে কিছু পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করেছিলেন। বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁও শাহনামা পাঠ করে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন এমন সংবাদ জানা যায়। বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে শাহনামা বিষয়ে কোনো কোনো বই প্রকাশিত হলেও এই মহাগ্রন্থের কোনো সম্পূর্ণ সংকলন ইতোপূর্বে প্রকাশিত হয়নি।
‘ইলিয়ড’-‘ওডিসি’ ও ‘রামায়ণ’-‘মহাভারত’-এর নিয়ামক শক্তি কাল নয় - স্থান; সেখানে গ্রীস ও ট্রয়, অযোধ্যা ও লঙ্কা, হস্তিনাপুর ও কুরুক্ষেত্রকে কেন্দ্র করেই ঘটনা আবর্তিত হয়েছে। একের পতনে অন্যের মহিমা সেখানে ভাস্বর। অন্যপক্ষে শাহনামাকে নিয়ন্ত্রিত করেছে মহাকাল। যে-কালের বহমান স্রোতে ঘটনা ও স্থান মুহূর্তের জন্যে উদ্ভাসিত হয়ে বিলীন হয়ে যায়, - সেখানে রাজা ও রাজবংশের উত্থান-পতনে, বীরের শৌর্যে ও সম্রাটদের মহানুভবতায় এক মূল্যবোধের উদ্ভব ঘটেছে, এবং শেষ পর্যন্ত তা মানুষের হাতে আসছে উত্তরাধিকারসূত্রে ইতিহাসেরই শিক্ষা হয়ে।
অবশ্য শাহনামা প্রধানত ইরানের কিংবদন্তি, পৌরাণিক, বীরত্বব্যঞ্জক এবং ঐতিহাসিক যুগসমূহের কীর্তিগাথাকে সমন্বিত করে রচনা করা হলেও শাহনামা যে ইতিহাস নয়, কাব্যই, এ-বিষয়টিকেও অনুবাদক ব্যাখ্যার ভেতর দিয়ে প্রতিভাত করেছেন।
অনুবাদক শাহনামার ঐতিহাসিক পটভূমি বিবেচনার পর ফারসি ভাষার উৎপত্তি ও তার ধর্মীয় চিন্তার বিবর্তন সম্পর্কে দিকনির্দেশ করেছেন। কারণ, শাহনামা ফারসি ভাষায় রচিত। অনুবাদক ভাষা ও ধর্মচিন্তার বিষয়টিকে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করেছেন।
শাহনামা অনুবাদের জন্য গদ্য মাধ্যমই বিবেচিত ছিল। তবে অনুবাদের ক্ষেত্রে মনিরউদ্দীন ইউসুফ কিছুটা স্বাধীনতা গ্রহণ করেছেন। গদ্যে লিখলেও তা টানা গদ্যে রাখেননি। কবিতার আদলে অসম চরণ বিন্যাসে সাজিয়েছেন।
Shahnama V01 Bangla Translation by Maniruddin Yusuf
বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক!