একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে খোলা চোখে দেখার প্রবণতা পাকিস্তানে এখনো ক্ষীণ। এই প্রতিকূল পরিবেশেই পাকিস্তানের এক নারী লেখক মুক্তিযুদ্ধকে দেখতে চেয়েছেন কিছুটা ভিন্ন চোখে। লিখেছেন হাসান ফেরদৌস।
কারটোগ্রাফি উপন্যাসের লেখক কামিলা শামসিকামিলা শামসির উপন্যাস কারটোগ্রাফি লেখা ২০০২ সালে। কামিলার বয়স তখন মাত্র ২৮। মুক্তিযুদ্ধ তিনি দেখেননি। মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষরণ তাঁর শোনা কথা, তাও সম্ভবত তাদের কাছ থেকে, যারা তা দেখেছে বৈরী মানসিকতা নিয়ে। একাত্তরের ঘটনা বাঙালির মনে কী প্রভাব ফেলেছে, কামিলার তা না জানারই কথা—এ মনোভাব নিয়েই উপন্যাসটি পড়তে শুরু করি। শেষ পাতাটি পড়ে বইটি মুড়ে রাখার পর আমার মনোভাব হয়ে দাঁড়াল ভিন্ন। একটি কিশোর প্রেমের গল্পকে অবলম্বন করে যে ব্যাপকতর ন্যারেটিভ কামিলা নির্মাণ করেছেন, তার মুখ্য বিষয় ইতিহাসের জটিল সন্ধিক্ষণে বিভক্ত নাগরিক আনুগত্য, ব্যক্তিচৈতন্য ও একই গোত্রভুক্ত মানব-মানবীর সম্পর্কের ওপর ফেলা প্রভাব।
বইটির নাম মানচিত্রকলা । ফলে দেশ ও আত্মপরিচয় তার কেন্দ্রে থাকবে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। মানচিত্রের এক অর্থ কাগজের ওপর কালির রেখা। এই রেখার ভেতরে ও বাইরে মানুষের বাস। মানচিত্রের আসল পরিচয় মেলে এসব মানুষের রক্ত, ঘাম ও দীর্ঘশ্বাসে। মানচিত্রের অন্য পরিচয়, তা একটি সময়ফলক। মানচিত্রের রেখায় জাতিরাষ্ট্রের যে পরিচয় নির্ধারিত হয়, তা স্থায়ী নয়। এক রেখা মিলিয়ে নতুন রেখার জন্ম হয়, সঙ্গে ঘটে নতুন জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয়। এই রেখাচিত্র থেকে যা মোটেই স্পষ্ট হয় না তা হলো, যাদের নিয়ে এ জাতিরাষ্ট্র, এই কাটাকুটির খেলায় তাদের জীবন কীভাবে বদলে যায়।
একাত্তরকে একটি সময়ফলক বিবেচনা করে মানব-ভাগ্যের এক মানচিত্র এঁকেছেন শামসি। তাতে অন্তভুর্ক্ত পাকিস্তানে বসবাসরত এক বাঙালির অভিজ্ঞতা অনায়াসেই একপেশে ও অবিবেচনাপ্রসূত কল্পকাহিনিতে পরিণত হতে পারত। একাত্তরের পটভূমিতে পাকিস্তানি লেখকের রচিত কোনো উপন্যাসে এই প্রথম বাঙালির লড়াইকে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে নৈতিক জবাবদিহির আয়নায়। (সংক্ষিপ্ত)
Download and Join our Facebook Group
আমারবই.কম এর প্রিমিয়াম সদস্য হতে চাইলে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
কোন ডাউনলোড লিঙ্ক কাজ না করলে, নিচের কমেন্টস বক্সে লিখে আমাদের জানিয়ে দিন, আমরা যথা সম্ভব দ্রুততার সাথে আবার আপলোড করে দেবো।
0 Comments