কিশোর ভারতী শারদীয়া ১৪২২
আটচল্লিশের শারদ উৎসবে
প্রিয় বন্ধু, ঝড়ের বেগে পার হয়ে গেল সাতচল্লিশ বছর। গত শতাব্দীর ১৩৭৫ সালের মহালয়ায় ভূমিষ্ঠ হয়েছিল যে নবজাতক, সেই কিশোর ভারতী এবার আটচল্লিশ বছরে পা দিল। আর মাত্র দু’বছর পরেই তার সুবর্ণজয়ন্তী। ভাবলে শিহরিত হই, যে কিশোরের হাতে তার বাবা ন্যস্ত এই পত্রিকার গুরুদায়িত্ব। সেই দায়িত্ব সে পালন করতে পেরেছে কিনা, দীনেশচন্দ্রের মানসকন্যাকে যুগোপযোগী করে একালের কিশোর-তরুণজগতের নিজস্ব মুখপত্র করে তুলতে পেরেছে কিনা, তার বিচার করবে তোমরা, আমাদের সবুজপ্রাণ বন্ধুরা। এই পাঁচদশক ধরে তোমাদের ভালোবাসাতে সঞ্জীবিত হয়েই বহু দুৰ্গম, বন্ধুর পথ অনায়াসে পার হয়েছে কিশোর ভারতী। যখন চতুর্দিকে শোনা যায় হা-হুতাশ, ছেলেমেয়েরা নাকি বই পড়ে না, তখনও কিশোর ভারতীর প্রচার সংখ্যা উর্ধ্বগামী। ছুটছে সে আরও দুরন্ত দামাল গতিতে। বন্ধু, এ কথা প্রত্যয়ের সঙ্গে বলতে পারি, আমরা কখনও কিশোর ভারতীর প্রতি অবহেলা করিনি। তাকে সাজিয়ে তুলতে ফাকি দিইনি। আমাদের প্রকাশনা পত্রভারতী এক ভালোবাসায় মোড়া যৌথ পরিবার। শারদীয়া কিশোর ভারতী প্রকাশের সময়ে সকলেই একসঙ্গে ঝাপিয়ে পড়ি। আমাদের চ্যালেঞ্জ–এবারেও যেন সে ‘সেরার সেরা’ শিরোপা জিতে নিতে পারে। আবার বলছি, বিচারক তোমরাই। এবারের প্রচ্ছদটি একটু দেখো। আমার প্রিয় বন্ধু বিখ্যাত চিত্রশিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় এবারেও ভালোবেসে একেছেন শারদীয়ার প্রচ্ছদ। সুব্রতর শিল্পীজীবনের শুরু কিশোর ভারতীতে। মা এসেছেন শারদ-উৎসবে। দীনদুঃখিনী মা ভাঙা কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন রক্তিম আলোয় মোড়া শরৎ প্রভাতে। মায়ের কোলে শিশুসন্তান। আর ছোট্ট মেয়েটি অবাকচোখে তাকিয়ে আছে মায়ের আঁচল ধরে। এই তো বাস্তব। গ্রাম-শহরের সমস্যাদীর্ণ সাধারণ মানুষের জীবনে উৎসবের দিনগুলো একেবারে অন্যরকম। প্রকৃতির জাদুছোয়ায় সব ব্যবধান ঘুচে যায়, গরীব-বড়লোক জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই এসে দাঁড়ান উৎসবপ্রাঙ্গণে। আমাদের মা তাদেরই একজন। জগজ্জননীর অবিকল্প প্রতিবিম্ব। প্রচ্ছদের মধ্যে দিয়ে সুব্রত সেই চিরায়ত সত্যকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। বন্ধু, এই আনন্দ-উৎসবের প্রাক্কালে স্বজনবিয়োগের বেদনায় আমরা শোকাহত। কিশোর বয়েস থেকে যে মানুষটির সঙ্গে আমার অগ্রজ-অনুজের নিবিড় সম্পর্ক, সেই শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। কিশোর ভারতীর পৃষ্ঠায় তার প্রথম লেখা শুরু সেই ১৯৬৯ সাল থেকে। পেশায় তখন তিনি ক্রীড়া সাংবাদিক। কিন্তু খেলার লেখা ছাড়াও কিশোর ভারতী এবং প্রায় সব ছোটদের কাগজে নানাস্বাদের অজস্র উপন্যাস, গল্প লিখেছেন। মানুষ হিসেবে শাস্তিদার তুলনা ছিল না। অমন স্নেহপ্রবণ, বন্ধুবৎসল মানুষ বিরল। নবকল্লোল ও শুকতারা পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘকাল। নতুন প্রতিশ্রুতিমান লেখকদের কাছ থেকে তিনি যেচে লেখা চেয়ে নিতেন। এরকম ঘটনা আজকাল দেখাই যায় না। আজ এই পর্যন্ত। শারদ-উৎসবে তোমরা সকলে ভালো থেকে। দুর্গত, গরীব মানুষের পাশে সম্ভব হলে থেকো। শারদীয়া কিশোর ভারতী ১৪২২ কেমন লাগল, জানাতে ভুলো না কিন্তু। তোমাদের ভালো লাগলে, আমাদের সব প্রচেষ্টা সার্থক হয়ে উঠবে।
তোমাদের সম্পাদক-বন্ধু
Download and Comments/Join our Facebook Group