Ticker

6/recent/ticker-posts

তিনটি উপন্যাস - সেলিনা হোসেন

তিনটি উপন্যাস - সেলিনা হোসেন তিনটি উপন্যাস - সেলিনা হোসেন

অপেক্ষা
অপেক্ষা মানব-মানবীর সম্পর্কের সন্ধিক্ষণের গল্প সময়ের অপেক্ষায় মানুষ কীভাবে দিন গোনে, কীভাবে অপেক্ষমাণ সময় ধীরে ধীরে অন্যরকম সময়ে বদলে যায়, কীভাবে অপেক্ষার তৃষ্ণা নারীর জীবনকে ঘনীভূত করে সে গল্পই নারীবাদী বিশ্লেষণে এবং মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায় উঠে এসেছে এই উপন্যাসে । অপেক্ষার জন্য জীবনের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই, অপেক্ষার জন্য দেশ-কালের সীমানা নেই। অপেক্ষা মানব-মানবীর সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেয়। আবার দেখা যায় অপেক্ষার সম্পর্ক তৈরি হওয়ার সুযোগই থাকে না। তবুও শব্দটি উচ্চারিত হয়। অপেক্ষা করে অনিমা –কিন্তু তার অপেক্ষা যার জন্য তাকে পাওয়া আর হয় না। বাদ সাধে বাবা, বাবার ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে অনিমা। মাধবী কুট্টি ভারতের কেরালার মেয়ে। ভালোবাসে তন্ময়কে, কিন্তু তন্ময় জানে ওর জন্য অপেক্ষায় আছে অনিমা। তারপরও মাধবী কুটি বলে যদি তোমার অপেক্ষার মানুষ আর তোমার অপেক্ষায় না থাকে, তাহলে আমার কাছে এসো। দিল্লিতে দেখা কিশোরী যৌনকর্মী তন্ময়কে বলে কয়েকটা টাকা পাব বলে আমি আপনার অপেক্ষায় থাকব। এই অপেক্ষার কোনো ব্যক্তিক সম্পর্ক নেই-তারপরও মানুষ মানুষের সঙ্গে এভাবে জীবনের অবস্থান খুঁজে নেয়। সম্পর্কের টানাপোড়েন অমলিন স্মৃতি হয়ে যায় অপেক্ষার মতো গভীর বিমূর্ত বোধে।

পদশব্দ
এই উপন্যাসের দুটি নারী চরিত্র, সালমা ও নাসিমার মাধ্যমে নারীর ব্যক্তিসত্তার মুক্তি-আকাঙ্ক্ষার চিত্র রূপায়িত হয়েছে। দুটি চরিত্রই চেষ্টা করেছে প্রচলিত প্রথাকে ভেঙে নিজেদের চারপাশের গণ্ডি অতিক্রম করে বেরিয়ে যেতে । নিজেদের বিচার-বিবেচনা কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজেরাই। এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক না নেতিবাচক তা বিচার করবে সময় এবং অগ্রসর চিন্তার পাঠক। তবে সেলিনা হোসেনের কাছে নারীবাদের অর্থ নারীর ব্যক্তিত্ব অর্জন এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ। এ দুইয়ের সমন্বয় হলে নারী নিজেকে জানতে পারে-নিজের অধিকার বুঝতে পারে। এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহস অর্জন করে। ভালো ও মন্দের তফাৎ যিনি করতে পারেন তিনিই প্রকৃত অর্থে পরিপূর্ণ মানুষ। সেলিনা হোসেন চান নারীরা শুধু নারী নয়, পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠুক। নিজেকে মানুষ পরিচয়ে বিকশিত করার শ্ৰেয়বোধ। সভ্যতার অনিবার্য ক্রমবিবর্তিত ধারায় একসময় লিঙ্গভিত্তিক পরিচয় দানা বেঁধে উঠলেও বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে নারী কিংবা পুরুষের পুনর্বার মানুষ’ হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা শ্ৰেয়বোধ থেকে আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে। পদশব্দ উপন্যাসটি লিঙ্গ-চেতনার জড়তা কাটিয়ে, মানসিক জাড্য মুক্ত হয়ে মানুষ’ হওয়ার আন্দোলনে সচেষ্ট হওয়ার শব্দশিল্প।

টানাপোড়েন
এই উপন্যাস মানবসম্পর্কের জটিল সূত্র ধরে রচিত। প্রবল জলোচ্ছাসে ভেসে যাওয়া মানুষ হারায় তাদের প্রিয়জন। একজন বয়সী মানুষ সবাইকে হারিয়ে একা হয়। একজন তরুণী স্বামী-সন্তান হারিয়ে একা হয়। একটি শিশু সবাইকে হারিয়ে কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকে। এই অপরিচিত তিনজন বেঁচে থাকার সূত্র ধরে এক হয়। আবার নিজেদের স্বার্থের প্রয়োজনে ভেঙে দেয় এই সম্পর্ক। রচিত হয় মানবিক ট্র্যাজেডির উপাখ্যান। এই উপন্যাস সম্পর্কে প্রাবন্ধিক, গবেষক ড. পবিত্র সরকার লিখেছেন : শারদীয় বসুমতী’তে আপনার উপন্যাসটি পড়ে আমি চমকে গেছি। আপনি মানব সম্পর্ক ও অস্তিত্বের এমন এক মৌলিক সূত্র ধরে টান দিয়েছেন যে, সংবেদনশীল পাঠককে তা আলোড়িত করতে বাধ্য। জানি না আমাদের লেখকরা সেই জায়গায় পৌছোতে কেন দ্বিধাগ্রস্ত বা অপারগ।" এই উপন্যাস মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামের পাশাপাশি টানাপোড়েনের সম্পর্ককে শিল্পরূপ দিয়েছে। মানবিক দলিলের বিমূর্ত হওয়ার গল্প এই উপন্যাস ।




Download and Comments/Join our Facebook Group