কাব্যসংগ্রহ - হুমায়ুন আজাদ
অজস্র অসংখ্য কবিতা লেখার মনোরম দেশে আমি কবিতা লিখেছি কমই। অনুরাগীদের দীর্ঘশ্বাসে আমি প্রায়ই কাতর হই যে দিনরাত কবিতা লেখা উচিত ছিলো আমার । অনেক ভুলই হয়তো সংশোধিত হতে পারে; তবে আমার এ-ভুল বা অপরাধ সংশোধন অসাধ্য। অবশ্য মধুর আলস্যে জীবন উপভোগ আমি করি নি; বন্ধুরা যখন ধ্বংসস্তুপের ওপর বসে উপভোগ করছেন তাদের অতীত কীর্তি, সিসিফাসের মতো আমি পাথর ঠেলে চলছি। কবিতার মতো প্রিয় কিছু নেই আমার বলেই বোধ করি, তবে আমি শুধু কবিতার বাহুপাশেই বাধা থাকি নি; কী করেছি হয়তো অনেকেরই অজানা নয়। কবিতা কেনো লিখলাম? খ্যাতি, সমাজবদল, এবং এমন আরো বহু মহৎ উদ্দেশ্যে কবিতা আমি লিখি নি বলেই মনে হয়; লিখেছি সৌন্দর্যসৃষ্টির জন্যে, আমার ভেতরের চোখ যে-শোভা দেখে, তা আকার জন্যে; আমার মন যেভাবে কেপে ওঠে, সে-কম্পন ধরে রাখার জন্যে। মানুষের অনন্ত সৃষ্টিশীলতা আমার ভেতর দিয়েও প্রকাশ পাক কিছুটা, এমন একটা ব্যাপারও হয়তো আছে। যদিও আমার কবিতা অপ্রিয় নয়। কবিতা প্রলাপ নয়, তবে প্রলাপ ও কবিতা আজ অভিন্ন অনেকের কাছে; এটা এখনকার এক জনপ্রিয় রোগ। আমার কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা বেশি নয়, ছ-টি, ষাটটি হ’লে গৌরব করা যেতো; ওগুলো থেকে বাছাই ক’রে একটি শ্ৰেষ্ঠ কবিতাও বেরিয়েছিলো; এবার বেরোলো কাব্যসংগ্রহ, এ-সংগ্রহটি আমার কবিতার গ্রহণযোগ্য পাঠ। নিজের কবিতা সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই না; শুধু বলি আমি কবিতা লিখেছিলাম, লিখছি, এবং লিখবো, এটা আমাকে সুখী এবং আমার বেঁচে থাকাকে সুখকর করেছে- অন্য আর কিছু এতোটা করে নি।
এরকম কিছু কথাই বলে গেছেন হুমায়ুন আজাদ তার এই বইটির ভূমিকায়। কবিতাগুলো পড়লে এক অন্যধরনের ভালোলাগা কাজ করে যা লিখে প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তাই সেই দ্বায়িত্ব আপনাদের উপরেই থাকলো।
Download and Comments/Join our Facebook Group