‘সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দে’
–সন্জীদা খাতুন
সন্জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। পিতা - বুদ্ধিরমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম নেতা জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কাজী মোতাহার হোসেন। মা - সাজেদা খাতুন। বাঙালি সংস্কৃতির প্রগতিশীল বিকাশে আত্মনিবেদিত সন্জীদা খাতুন আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে এক অনন্য মানুষ। ভাষা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক স্বাধিকার আন্দোলন, শত বাধার মুখে রবীন্দ্র-শতবর্ষ উদ্যাপন, বটমূলে বর্ষবরণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনকে ঋদ্ধ করে বাঙালিত্বের দৃঢ় ভিত্তিস্থাপনে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও আমরা তাঁকে দেখেছি অগ্রণী সাংস্কৃতিক নেত্রীর ভূমিকায়।
তাঁর ঐকান্তিক সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে ‘ছায়ানট’ ও জাতীয় ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদে’র মতো সংগঠন। এ ছাড়া ‘ব্রতচারী’ আন্দোলন এবং ‘কাজী মোতাহার হোসেন ফাউণ্ডেশন’ ও তাঁর কর্মকুশলতায় সমুজ্জল। শিশু-শিক্ষার উদ্ভাবনী কর্মতৎপরতায় যুক্ত হয়ে গড়ে তুলেছেন ‘নালন্দা বিদ্যালয়’।
সন্জীদা খাতুনের শিক্ষা কামরুননেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে। অধ্যাপনা করেছেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নিয়মানুবর্তিতায় শৃঙ্খলাবদ্ধ, সৃজনী ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বিরল কুশলতায় সমুজ্জল ৮০ বছল বয়সী সন্জীদা খাতুন। এশিয়াটিক সোসাইটির অনারারী ফেলো সন্জীদা রবীন্দ্রচর্চা ও বাঙালি সংস্কৃতি প্রসারে অবদানের জন্য পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, বিশ্ব-ভারতী প্রদত্ত ‘দেশিকোত্তম’ ইত্যাদি।
|| প্রসঙ্গ কথা ||
মানবজীবন আদ্যন্ত সুখের কিংবা দুঃখের হয় না। আবার জীবনের কথা লিখতে গেলে সুখের চেয়ে দুঃখের স্মৃতিই যেন ভিড় করে আসে। সেইজন্য দুঃখ-আঘাতের কথায় প্রায়শ তিক্ততার সঞ্চার হয়ে যায়। ভয় করি, লেখাটির কিছু অংশ পাঠককে ক্লিষ্ট করতে পারে। তবে হুল না-ফুটিয়ে লিখবার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। কিন্তু অপ্রিয় প্রসঙ্গ বর্জনও করতে হয়েছে, লেখা সুখপাঠ্য রাখবার প্রয়োজনে।
নাম দিয়েছি ‘সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দে’। আমার ধারণা, জীবনে দ্বন্দ্ব আর ছন্দ দুটিই স্বাভাবিক বলে কঠিন বাধা পেরিয়ে অবশেষে সহজগতিতেই এগিয়ে যেতে পারে মানুষ। কঠিন অভিজ্ঞতার কথাও বাস্তবিক সর্বতোভাবে পরিহার্য নয়। শেষ বিচারের দায় পাঠকের উপরেই বর্তাবে। ...
~ সন্জীদা খাতুন ~