বই পড়ার আনন্দ ও তার বিকল্প ভাবনা
আহমদ রফিক
মুদ্রণ প্রযুক্তির কল্যাণে বই পড়ার যে আনন্দময় ভুবন তৈরি, তা দীর্ঘ সময় ধরে নানা মাত্রায় প্রসারিত। বইয়ের জগৎ বরাবরই এবং শুরু থেকেই ব্যক্তি ও সমাজের প্রয়োজন মেটাতে একাডেমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর বাইরে বিশাল নন-একাডেমিক সৃজনশীল জগৎ মূলত বিনোদনের বলে বিবেচিত হলেও তাতে যে শিক্ষণীয় কিছু নেই—এমন কথা বলা যাবে না। কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস মূলত বিনোদনমূলক হয়েও শিক্ষণীয় হিসেবেও বিবেচ্য। সেই সঙ্গে জ্ঞানার্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিক বিচারে এগুলোর বাইরে বিশেষভাবে রয়েছে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিবিষয়ক বইয়ের পাঠ, যা আবার কারো কারো মননে বিনোদনের আনন্দ সঞ্চার করে। আমার বিবেচনায় যেকোনো বইয়ের পাঠেই বিনোদন ও জ্ঞানার্জন দুইয়েরই উপস্থিতি কমবেশি সত্য। এককথায় সব রকম বইতেই থাকে নানা মাত্রায় আনন্দ এবং জানা ও বোঝার অন্য রকম আনন্দের উপাদান। ভালো লাগার পাশাপাশি কিছু অর্জনের ধারা একই সঙ্গে চলে। সেটা যেমন তরুণ শিক্ষার্থীর বেলায় সত্য, তেমনি বা ততোধিক সত্য বয়স্কমননের ক্ষেত্রে। আনন্দ ও অর্জনে কে কার চেয়ে বেশি নম্বর পাবে তা নিশ্চিত বলা যাবে না, এটা একান্তই ব্যক্তির রুচিনির্ভর।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ইদানীং প্রশ্ন উঠেছে বইয়ের (তা সাহিত্যের হোক বা তাত্ত্বিক হোক) অনলাইন প্রযুক্তির উপস্থাপনা নিয়ে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যান্ত্রিক তৎপরতার অবদানে। তথ্যের সংগ্রহ-সঞ্চয় এবং সেখান থেকে খুশিমতো পছন্দসইকে নামিয়ে এনে পাঠ অনেকের মনে এমন আশঙ্কা তৈরি করেছে যে এর ফলে বোধ হয় বইয়ের প্রকাশনাজগতে একসময় বিস্ফোরক ভূমিকম্পের সূচনা ঘটবে। তেমন অশনিসংকেতে কারো কারো মনে আতঙ্ক ।
কারণ তাতে মুদ্রিত বইয়ের জগৎ একসময় যথানিয়মে বিলুপ্তির মুখোমুখি হবে। এসব জল্পনাকল্পনা শুরুর পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও দেখা যাচ্ছে, বইয়ের প্রকাশনাভুবন সংকুচিত হওয়া দূরে থাক, তা ক্রমাগত প্রসারিতই হচ্ছে। বইমেলাগুলোতে বই প্রকাশকদের মুনাফাস্ফীতি এমন প্রমাণই তুলে ধরে। তাদের রমরমা ব্যবসার গায়ে আঁচড় পড়েছে বলে মনে হয় না। স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকার বই বাদেই পরিসংখ্যান বলে, আমাদের পাঠাভ্যাসেরও আয়তনিক প্রসারণ ঘটছে, সেই সঙ্গে ঘটছে শ্রেণিবিশেষের বৈষয়িক সমৃদ্ধি। নতুন নতুন প্রকাশনা সংস্থার আবির্ভাব ঘটছে। তারা বাজারে নিয়ে আসছে নতুন-পুরানো নানা ধরনের বই—সুদৰ্শন চেহারায়, পাঠকের আকর্ষণ তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে।
দুই
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পাঠে মানুষ যেমন অজানাকে জেনে, নতুন নতুন তথ্য ও তত্ত্ব জেনে পুলকিত হয়, অন্যদিকে সাহিত্য পাঠে সেই জানা বা উপলব্ধির দিকটা ভিন্ন। ব্যক্তি সেখানে নিজেকে খুঁজে পেতে চায় নানা গল্প-কাহিনীর মধ্যে। কবিতায় পেতে চায় হঠাত আলোর ঝলকানি, যা বিশেষ কোন সত্যকে উদ্ঘাটন করে বা জানিয়ে দেয় চিরায়ত কোনো সত্য।
বিচিত্র এসব দিক, জীবনের নানা রহস্যময়তার আভাস বই-ই দিয়ে থাকে। আপনি অবশ্য ডাউনলোড করে বহু তথ্য জেনে নিতে পারেন কম্পিউটারের বিশালায়তন ভুবন থেকে। কিন্তু তাতে বই পড়ার আনন্দ মিলবে না। ঘরের এক কোণে বা বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে কিংবা একফালি বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে টবের ফুলগাছটির পাশে বসে বই পড়ার যে মজা, তার ধরনই আলাদা। "ডাউনলোড' কি তা দিতে পারে? জানি, এ ক্ষেত্রে দ্বিমত অবশ্যম্ভাবী।
‘ডাউনলোড' তথ্যের বিষয়টি গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই। অনেক অজানা তথ্যের ভাণ্ডার সেখানে রয়েছে। তবু ওই তৎপরতাকে কেন জানি অনেকটা রোবটের মতোই মনে হয়-এক ধরনের প্রাণহীন যান্ত্রিকতা। সে তুলনায় একটি সুদর্শন সুসাহিত্য বা অনুরূপ বিষয়ের বই আমার চোখে বরং সজীব সত্তা, সে ঐতিহ্য অনেক গুরুত্ব বহন করে। বহন করে ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গী হিসেবে। আনন্দ, বেদনা দুই-ই হয়তো সেখানে উপস্থিত থাকে।
বিষয়টি অনেকটা প্রকৃতি বনাম যন্ত্রবিজ্ঞানের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। দুটি আধুনিক সভ্যতা ও আধুনিক মননের জন্য দরকারি। তবে সেখানে অগ্রাধিকার প্রকৃতির। মানব জন্মের পর তার সভ্যতার ক্রমবিকাশ প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে। প্রকৃতির মধ্যে, তার সাহচর্যে আমরা বড় হয়ে উঠি। আমাদের হৃদয়-মন বিকশিত হয়ে ওঠে প্রকৃতিকে সঙ্গী করে, তার অচেতন প্রভাব নিয়ে। পরে হয়তো বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্যে সেসব সত্য বুঝতে পারি। বই আর কম্পিউটার এভাবেই আমাদের আধুনিক চেতনা ও মনন গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
ঐতিহ্যকে কি দূরে সরিয়ে রাখা যায়? সেই কবে শৈশব থেকে বই নিয়ে শিক্ষার্থীর পথচলা শুরু । বছরের শুরু নতুন বইয়ের তাজা, টাটকা রোমান্টিক গন্ধ নিয়ে। রোমান্টিক শব্দটি ও তার অর্থ দুই-ই তখন অজানা। কিন্তু সেই যে বর্ণবোধ বা বর্ণপরিচয় বা বাল্যশিক্ষা হাতে নিয়ে একজীবনের যাত্রা শুরু, তার অবশেষ পরিণতি সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়ার মধ্যে। এমন মানুষও আছেন, দিনে একবার বইয়ের পাতা ওল্টাতে না পারলে দিনটাই অস্বস্তিতে কাটে। মনের আরাম হারাম হয়ে যায়।
যান্ত্রিক পদ্ধতিতে হোক বা ঐতিহ্যবাহী ধারায় হোক, মননশীলদের জন্য একটি জ্ঞানগর্ভ বাক্য, যা প্রায় প্রবাদবাক্যে পরিণত : “জ্ঞানের বিহনে সত্য নেই। যাঁরা সত্যের অন্বেষাকে গুরুত্ব দেন, তাঁদের জন্য বই পাঠের বিকল্প নেই। তা সে সত্য সামাজিক, রাজনৈতিক, জৈবনিক-যেমনই হোক। এ সত্যে রয়েছে আনন্দেরও অনুভূতি।” এ কথাও তো ঠিক যে ঐ সব নানামাত্রিক সত্যের অন্বেষায় অনুসন্ধানী-মনের লেখক চৈতন্যের গভীরে ডুব দেন সত্যের কিছু মণিমুক্তার সন্ধানে। তাই নিয়ে কমিউনিকেশনের টানে তাঁর উপলব্ধি বা অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন। চিত্তবিনিময় বলে কথা। এর সঙ্গে বিনোদনের নেশা মিলেমিশে বই পাঠের ভুবন তৈরি করে। ব্যক্তিমানুষের প্রকৃতি-বৈশিষ্ট্য ধরা থাকে তার মনোগহনের রহস্যময়তায়। মনের গভীরে নানা বাঁকফেরা ছোটবড় ঢেউ একজন লেখক বা একজন পাঠকের জন্ম দেয়। নিজেকে জানা অন্যকে জানার আকাক্ষার সঙ্গে বিনোদনের তৃষ্ণা মেটানোর টান মানব-মনে কখনো ফুরোয় না। এই অফুরন্ত তৃষ্ণা মেটাতেই লেখক-পাঠক এ দুয়ের পারস্পরিকতা।
অবশ্য লেখক-পাঠকের ভাবনা, রুচি ও মননশীলতা শতকের ব্যবধানে তো বটেই, কখনো কয়েক দশকের ব্যবধানেও পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়। এর কারণ যেমন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কতিক রদবদল, তেমনি বৈশ্বিক প্রভাবও সেখানে কাজ করে। পছন্দ-অপছন্দের মাপকাঠি পাল্টে যায়, যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটে ভালোমন্দের আপেক্ষিকতায় । একই রকম ঘটনা দেখা যায় চিন্তা, মতাদর্শ বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে। পরিবেশের প্রভাব এর বড় কারণ।
তিন
বিষয়টা আমরা বিশেষভাবে লক্ষ করি বাংলাদেশে বিগত শতকের একেবারে শেষ দিক থেকে বর্তমান শতকে পৌছে, - বিশেষভাবে নতুন প্রজন্মে। তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেই সামাজিক পরিবেশ ও তার উপকরণ, এমনকি রাজনীতিকেও ভিন্ন মাত্রায় বিচার করতে চাইছে। মন ও মননশীলতার সমীকরণ ঘটাতে চাইছে ভিন্ন হিসাবে । নব্য বিষয়াদি তাকে প্রলুব্ধ করছে অধিকতর টানে। তাই জীবনযাত্রার ধরন-ধারণও বদলাতে শুরু করেছে, বরং বলা যায় বদলাচ্ছে। তাই পাঠরুচির বদলও অনিবার্য।
তাই একালের পাঠককে পদ্মা-তিতাসের জীবনচিত্র পূর্বজদের মতো না-ও টানতে পারে। গোটা কথাসাহিত্য সম্পর্কে একই কথা খাটে। কবি ও কবিতার চরিত্র বদল একইভাবে অনিবার্য বিষয় হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে পাঠকেরও। জীবন যৌনতা প্রকৃতি সাহিত্যের বিভিন্ন এবং চাইবে আর এটাই স্বাভাবিক। শিল্প সৃষ্টির বিষয় ও আঙ্গিক অভিনবত্ব খুঁজতে চাইবে।
তখন সে নিরিখে পাঠকও তার উপভোগের নিশানা ঠিক করে নেবে। নন্দনতত্ত্বের পরিবর্তিত ধারণা তার বোধে প্রভাব ফেলবে। এ সবই এখন অনেকটা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির ওপর। কারণ প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বভুবন তো একেবারে ঘরের টেবিলে। এ প্রভাব তারুণ্যে সবচেয়ে বেশি। তাই বলে কি ক্লাসিক হিসাবে পরিচিতি বা প্রচলিত সাহিত্য-ভাবনার খোলনলচে পাল্টে যাবে বা গেছে বাংলাদেশে? অবস্থাদৃষ্টে তা মনে হয় না।
তবু পরিবর্তন যে ঘটছে ও ঘটবে, তা বলাই বাহুল্য। জীবনপ্রবাহ মানেই তো পরিবর্তন। মানুষ সেই পরিবর্তনের পিঠে ঘোড়সওয়ার। রাজনীতিতে এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিগোচর। কম নয় সাহিত্যের দৃষ্টি ও সৃষ্টিতে, সেই সঙ্গে পাঠকের রুচিভেদে। তবু অবাক হওয়ার মতো ঘটনা যে আমাদের লেখক-পাঠকের একাংশ এখনো শিকড়সন্ধানী, লোকজীবনের প্রতি তার দৃষ্টি এখনো অটুট। বিজ্ঞান ও কল্পবিজ্ঞানও তাকে সমানভাবে টানে। অন্যদিকে লোকসাহিত্য ও লোকগীতির তত্ত্বরহস্যে ডুব দিতে অবিশ্বাস্য আকর্ষণ দেখা যায় কোনো কোনো তরুণের মধ্যে ।
চার
বিগত শতকের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে, সুনির্দিষ্টভাবে তিরিশের দশকের মধ্য সময় থেকে চল্লিশে পৌছে শ্রেণিচেতনা ও শ্রেণিসংগ্রাম মননশীল চেতনাকে খুবই আকৃষ্ট করেছিল। সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা শাখায় ছিল এর উজ্জ্বল প্রতিফলন। এ ধারা বিভাগোত্তর পূর্ববঙ্গে পঞ্চাশের দশকেও উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ‘মতাদর্শ' শব্দটি তখন সাহিত্যে ও রাজনীতিতে বর্ণময় হয়ে ওঠে। এর পরই হঠাৎ নিষ্ক্রমণ।
কিন্তু পরবর্তী দশকে এবং সেই ধারায় আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় দেখা যায় এর বলিষ্ঠ বিস্তার। যেমন রাজনীতির ক্ষেত্রে, ততোধিক সাহিত্য এবং তার ব্যাপক পাঠে। লাতিন আমেরিকার বৈচিত্রময় সাহিত্য পাঠ বাংলাদেশি পাঠকের জন্য এক মহৎ উত্তরাধিকার হয়ে ওঠে, চল্লিশে-পঞ্চাশে যেমন রুশ ও অন্যান্য প্রগতিধর্মী সাহিত্য। সেই ধারা বিলুপ্ত না হলেও তা হ্রাস পেয়েছে।
এবং তা মূলত সাম্রাজ্যবাদী ধনতন্ত্র তথা মার্কিন রাজনীতি-অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান চাপে। বিত্তবৈভবের প্রতি অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ ও ভোগবাদী সংস্কৃতির প্রবল প্রভাব এ দেশীয় সমাজের একাংশকে বলা যায় বেঁধে ফেলেছে। এর পেছনে আরেকটি বড় কারণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মোহমদির আকর্ষণ।
ফলে সাহিত্য পাঠের বিশেষ একটি যুগের প্রভাব কমে এলেও তার মৃত্যু ঘটেনি। হেমিংওয়ে, হাওয়ার্ড ফাষ্ট পিছু হটলেও কাফকা ও মিলার, সাঈদ বা চমস্কি স্বমহিমায় বিরাজমান। যদিও সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ, প্রগতিবাদী ধ্যানধারণা ও শ্রেণিসংগ্রামের স্থান দখল করে নিয়েছে কথিত পশ্চিমা ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার' । সেই ফ্যাশনের আধুনিকতায় পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবপ্রতিপত্তি এখন বিশ্বময় ছড়ানো।
গণতন্ত্রের নামে স্বশাসন যে বাস্তবে জনশাসনের রূপ নিতে পারেনি, এটাও একুশ শতকের জন্য বড় এক ট্র্যাজেডি। ‘মানবাধিকার’ শব্দটিও একই পরিণতির সম্মুখীন হয়েও যথেষ্ট প্রবল। অথচ গত শতকে স্লোগান 'একবিংশ শতাব্দী হোক জনগণের শতক’। কিন্তু গত শতক তেমন সম্ভাবনার ভিত তৈরি করে দিতে পারেনি। অবস্থা অনেকটা ‘সত্তরের দশক, মুক্তির দশক’-এর মতোই। ১ শতাংশ বনাম ৯৯ শতাংশের দ্বন্দ্ব স্লোগানে শেষ হয়ে গেছে।
আর বর্তমান পরিস্থিতি সেসব বিচারে হতাশাব্যঞ্জক বলা চলে। মতাদর্শ ও মুক্তিসংগ্রামের ক্ষেত্রে এক লাতিন আমেরিকা বাদে সম্ভাবনার কোনো আভাস-ইঙ্গিত মিলছে না। এশিয়া-আফ্রিকা হয়ে উঠেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসরদের নির্ভয় বিচরণভূমি। সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রটি অবশ্য দুই ধারায় বহমান। সে ক্ষেত্রে প্রতিবাদী ধারা গৌণ হলেও অনুপস্থিত নয়। আর পাঠরুচি মূলত ভোগবাদী ধারা অনুসরণ করলেও বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক শুদ্ধ গণতন্ত্র বা যুক্তিবাদী ধারার অনুসারী প্রগতিভাবনা অনুপস্থিত নয়। নয় প্রগতিবাদী গ্রন্থাদির পাঠ।
সব শেষে বিশদ আলোচনায় না গিয়ে এটুকু বলেই সমাপ্তি টানা যে মননশীল মানুষের শুভবুদ্ধি ও মানবকল্যাণচিন্তা ইতিবাচক সমঝোতায় পৌছতে পারবে। কারণ আত্মঘাতী চেতনা ব্যতিক্রমী, তা মানুষের স্বভাবসুলভ নয়। অস্তিত্ব রক্ষাই শেষ পর্যন্ত তার চেতনায় বড় কথা হয়ে ওঠে। এটাই মানবিক সত্য। এর সহজাত বাস্তবতা জিনতত্ত্বের সমর্থন পাওয়া যুক্তিগ্রাহ্য বলে মনে হয়।
তাই ভাবতে পারা যায় অভিজ্ঞতা, ঐতিহ্য ও ইতিহাসচেতনা মানুষকে বাস্তববাদী হওয়ার শিক্ষাই দেবে। মানবস্বভাব বিবর্তনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মননকে অন্তদীপ্ত করার পথই ধরবে, অন্তত তার ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব বিবেচনায়। সাহিত্য-সংস্কৃতির সৃষ্টিশীল ধারা যদিও স্বাতন্ত্র্যবাদী পথেই অগ্রসর, তবু তাতে ভিন্নমাত্রার প্রকাশ দৃশ্যমান।
স্বভাবতই পাঠরুচি ও পাঠক-মননশীলতা এমন ধারায়ই বিকশিত হতে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। পরিস্থিতি তেমন ধারণাই দেয়। পাঠাভ্যাসে মননশীলতার প্রকাশই কাম্য। তবে তা যতটা বর্তমান বয়সীমননে, তারুণ্যে ততটা লক্ষণীয় নয়। অন্তত আমার অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। ঘটনা কিছুটা ভিন্নও হতে পারে।
Comments/Join our Facebook Group