Ticker

6/recent/ticker-posts

ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে - দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে - দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
কুমারিল ছিলেন অষ্টম/নবম শতকের দার্শনিক। তাঁর মতামতের অতিবড় সমালোচকও অস্বীকার করবেন না, অমন ক্ষুরধার বুদ্ধির নজির ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে সত্যিই বিরল। রচনা-কৌশলের দিক থেকেও আশ্চর্য। তীক্ষ্ণবিচারের সঙ্গে তীব্র শ্লেষ মিলিয়ে বিপক্ষকে মিশমার করবার আশ্চর্য দক্ষতা!
তারই একটা মন্তব্য থেকে শুরু করবো। কিন্তু মনে রাখা দরকার তার প্রধান বই ‘শ্লোকবার্তিক’ শ্লোকে লেখা, তাই সাঁটে লেখাও। হুবহু তর্জমার চেষ্টা করার বদলে কিছুটা ব্যাখ্যামূলক ভূমিকা দিয়ে শুরু করলে বোঝবার সুবিধা হতে পারে।
দার্শনিক মহলে কুমারিল বলেছেন এরকম লোক ঠকানো কায়দা চালু আছে। বলবার কথাটা যত দুর্বল, কায়দাটার চাহিদাও তত বেশি। বলবার কথায় যদি ফাঁকি থাকে তাহলে নেহাত সাদমাটা ভাষায় তা বললে তো সহজে ধরা পড়ে যাবার ভয়। জমকালো ভাষার মারপ্যাচ কষলে বরং কিছুটা নিরাপত্তা থাকে : সাধারণ লোক হকচকিয়ে যাবে, ভাববে ব্যাপারটাই বুঝি এমন গভীর যে থই পাওয়া চারটিখানি কথা নয়।
নমুনা হিসেবে কুমারিল বলেছেন, যদি বলি মুখের ‘লালা’ তাহলে তো সাধারণ লোক সহজেই বুঝে ফেলবে। কিন্তু তার বদলে যদি বলি ‘বক্তাসব’? শুনে রীতিমতো মাথা চুলকোতে হবে। সংস্কৃত শব্দের কোনো আটপৌরে তালিকায় শব্দটার হদিশ পাওয়া কঠিন। এমনকি, মনিয়ার-উইলিয়ামস-এর (Monier-Williams) বিশাল ‘সংস্কৃত-ইংরেজি অভিধান’-এ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যদিও আপটে (V.S. Apte) সবিনয়ে যে অভিধানকে ‘ছাত্ৰপাঠ্য’ আখ্যা দিয়েছেন তাতে চােখ পড়লো। যাই হােক, ‘বক্তাসব’ শুনলে সাধারণ লোক বিশেষ কিছু বুঝবে না। আর বুঝবে না বলেই কল্পনা করবে, ওসব ভয়ানক পণ্ডিতী ব্যাপার! নাক-গালাবার চেষ্টাটা নিরাপদ নয়।
অথচ, ‘লালা’ মানেও যা, ‘বক্তাসব’ মানেও তাই। কেবল, দ্বিতীয়টার ব্যবহারে লোক-ঠকানোর পটুতার পরিচয়।