মধ্যযুগে বাঙ্গলা - কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়
“মধ্যযুগে বাঙ্গলা”। ষোড়শ শতক থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বাংলার ইতিহাস নানা ঘটনায়পূর্ণ। সুদীর্ঘকাল এই কালপর্বের প্রামাণ্য গ্রন্থাদির অভাব ছিল। সমকালীন বাংলা কাব্যর মাধ্যমে ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় যেমন, তেমনি মূল ফারসিতে লেখা কিছু গ্ৰন্থও পাওয়া গেছে। যার উপকরণের মধ্যে পাওয়া গেছে। ইতিহাসের উপাদান। তাকেই বিভিন্ন গ্ৰন্থকার নানাভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। কালীপ্রসন্ন এক্ষেত্রে অন্যতম পথিকৃৎ হিসাবে চিহ্নিত। “মধ্যযুগে বাঙ্গলা” গ্রন্থে পাঠক দেখতে পাবেন, কেবল রাজা মহারাজার যুদ্ধ বিগ্রহ আর ঐশ্বৰ্যকেই তিনি বিশ্লেষণ করেননি। রাজনৈতিক জটিলতা, বহিরাগতের রাজক্ষমতা দখলের লড়াই, স্থানীয় ক্ষমতাশালী ভূস্বামী ও জমিদারদের কেন্দ্ৰিয় শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে সাধারণ জনজীবনের কথা। এক্ষেত্রে কালীপ্রসন্নর অসাধারণত্ব অবশ্য স্বীকার্য। রাজা গণেশের সময় থেকে মোঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত গ্রন্থের কালসীমা। তার মধ্যে হােসেন শা, সেকালের নবদ্বীপ ও চৈতন্যের আবির্ভাব, মোগলপাঠান সংঘাত, মগ ও ফিরিঙ্গিদের অত্যাচার, দেশের ব্যবসাবাণিজ্য এবং বিদেশী পৰ্যটকদের বিবরণ এবং জমিদারি বন্দোবস্ত আলোচিত হয়েছে প্ৰথমে। তারপর কালীপ্রসন্নের রচনায় প্রাধান্য পেয়েছে সেকালের সমাজজীবনের বৈচিত্ৰ্যময় নানান বৈশিষ্ট্য, ধনী দরিদ্র সব শ্রেণীর বাঙালির হেঁসেল সমাচার অর্থাৎ আহার বৈচিত্ৰ্য, পোষাক-আসাক, শিল্পের বিকাশ এবং আভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্য, কর্মক্ষেত্রে বাঙালির অবদান এবং ধর্মবিশ্বাস-এসবই রচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। অন্তত পরবর্তীকালের ইতিহাস লেখকদের অনুসন্ধানের পথ অনেকখানি সুগম করে গিয়েছিলেন কালীপ্রসন্ন।