Ticker

6/recent/ticker-posts

গাঞ্জে ফেরেশ্‌তে - সা’দত হাসান মান্টো

amarboi
গাঞ্জে ফেরেশ্‌তে - সা’দত হাসান মান্টো
A Document of Film History by Sadat Hasan Manto

ভূমিকা সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

সা’দত হাসান মান্টো (১৯১২-১৯৫৫) এই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আধুনিক লেখকদের একজন। এ-কথা বলে, জানি, ভুল বলা হয়নি। কিন্তু, এরকম দায়সারাভাবে বললে যেন এমন একটা বৃত্তের পরিধি দেখানো হল, যার কোনো কেন্দ্ৰই নেই। সা’দত অন্যতম ঠিকই। আবার, এ উপমহাদেশে এখনও আর-একটি মান্টে খুঁজে পাওয়া যায়নি, এটাও মিথ্যে নয়। সাদতের গল্পের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য হল তার লেখার নিজস্ব স্থান ও সময় (টাইম-স্পেস)। কিন্তু, সে তো প্রেমচন্দেও আছে। পৃথিবীর সমস্ত ভালো লেখায় এটা তো থাকতেই হবে। মানুষকে আগে পুরুষ, নারী বা এমনকি নপুংসক যা হয় একটা হয়ে জন্মাতে তো হবে। তারপর না। অন্য কিছু! কিন্তু, সা’দত যে অন্য, তার কারণ অন্যত্র। তার লেখায় আমরা পাই এক নিরঙ্কুশ অবজেক্টিভিটি— যেখানে লেখকের ধ্যান-ধারণার একটুও অনুপ্রবেশ নেই। একটা লেখা পড়ে আছে, কিন্তু লেখকের নাম নেই, এমনটা যদি ভাবতে পারেন তো ব্যাপারটা সেইরকম। এবং লেখক পুরোপুরি অনুপস্থিত বলে পাঠক তার নিজস্ব ভূমিকা এখানে খুব সহজেই নিয়ে নিতে পারে। এক কথায় প্রতিটি পাঠক হয়ে ওঠে এক-একজন লেখক। বেঁচে থাকলে এতদিনে সা’দতর বয়স হত ৮৩ ৷ কিন্তু ও আমার এত আপনজন, যে ওকে আমি এখনও আপনি-আজ্ঞে করতে পারি না।

মান্টোর "গাঞ্জে ফেরেশতে” বইটির খবর কজন রাখেন আমি তা জানি না। এর বাংলা অনুবাদ আমি প্রথম দেখতে পাই, আর কোথায়, গ্রন্থমানব পার্থসারথি চৌধুরির মান্টো-তাকে। চৌধুরি বইটি সম্পর্কে খুব উৎসাহ না দেখালেও, বইটি উলটে পালটে দেখে আমার অত্যন্ত আকর্ষণীয় লাগে। আমি বইটি সঙ্গে নিয়ে আসি। এবং প্ৰাণে-ধরে আজও ফেরত দিতে পারিনি। দেশ বিভাগের পরেই সা’দত হাসান মান্টো বন্ধুদের বুকে দাগা দিয়ে লাহাের চলে যায়। তার আগে ৭ বছর সে বোম্বাইয়ের ফিল্মি-দুনিয়ার সঙ্গে কাহিনি ও চিত্ৰনাট্যকার হিসেবে জড়িয়ে পড়ে। ‘গাঞ্জে ফেরেশতে” সেই সময়ের ক্যানভাসের পর ক্যানভাস। নাগিন্স, অশোককুমার, পরিরানি নাসিমবানু, সম্পাদক বাবুরাও প্যাটেল (ফিল্মিন্ডিয়া), শাহির লুধিয়ানভি, কামাল আমারোহি, কোকিলকণ্ঠী নুরজাহান (পুকার ও খানদানের নায়িকা)- এইসব সমকালীন তারকাদের খুব চড়া রঙে আঁকা চরিত্র-প্রতিকৃতি সব। ইসমত চুঘতাই এবং হানিফ আজাদ পাশাপাশি দুটি অধ্যায় পেয়েছেন। ইসমত তো বুঝলাম। বিখ্যাততম উর্দু লেখিকা। কিন্তু হানিফ কে ? হানিফ হল মহম্মদ আলি জিন্নাহর ব্যক্তিগত সোফার। এবং মান্টোর এক গ্রাসের ইয়ার। সা’দত এদেরই বলেছেন, “গাঞ্জে ফেরেশতে” (বাংলা : টেকো দেবদূত)। বইটি পড়ার আগে পর্যন্ত হেনরি মিলার-এর ‘মারুসির কলোসাস’ ই ছিল স্মৃতিচিত্র হিসেবে আমার সেরা পাঠ-অভিজ্ঞতা।

১৪ অধ্যায়ে ভাগ-করা এই বইটি। কত কান্নার কথাই যে সে হাসতে হাসতে বলে গেছে। কত হাসির কথা কাঁদতে কাঁদতে। সব কান্না একা কেঁদে গেছে। সব হাসি একা হেসে গেছে। কত নতুন নতুন তথ্য। যেমন, অশোককুমার ঘরে বক্সিং খেলতেন। বালির ঝুলন্ত বস্তা পেটানো ছিল তার রোজ সকালের নিত্যকর্ম। প্রতিদিন একজন-না-একজনের নাম উচ্চারণ করে তিনি ওই ক্রুদ্ধ ঘুষিগুলি প্রয়োগ করতেন। তার বাহুদ্বয় ছিল এত শক্তিশালী যে, জানালার শিকা বঁকাতে পারতেন। ভাগ্যিস, বোম্বাই টকিজের নবাগত নায়ক নাজমুল হাসান হিমাংশু রায়ের স্ত্রী, মালকিন তথা নায়িকা দেবিকারানিকে নিয়ে কলকাতা পালিয়েছেন। নায়ক হিসেবে অশোককুমারের ভাগ্যের দরজা। এতেই খুলে যায়।




Read Now and Comments/Join our Facebook Group