প্রগতির প্ৰকাশ আলোচনা ছাড়া বুদ্ধদেবের জীবনের আলোচনা অসম্পূর্ণ এবং বুদ্ধদেবের প্রস্তুতিপর্ব ও প্রগতির আলোচনা আধুনিক বাংলা সাহিত্যের আলোচনার প্রয়োজনে উপেক্ষা করা যায় না। সমগ্র বাংলা সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে প্রগতির ভূমিকা নগণ্য; কিন্তু ঢাকাকেন্দ্রিক পূর্ব বাংলার সাহিত্যের আলোচনায় প্রগতির প্রসঙ্গ বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রগতির গুরুত্ব ঐতিহাসিক, যদিও নতুন লেখকগােষ্ঠী সৃষ্টিতেও ক্ষণজীবী প্রগতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং পরবর্তীকালে তাঁরই সম্পাদিত কবিতা আধুনিক বাংলা কবিতায় অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে-তৈরি করেছে নতুন কবি। পক্ষান্তরে প্রগতি ছিল ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকেন্দ্ৰিক একটি সাময়িকী। এই বইতে তার কৈশোর ও যৌবন অর্থাৎ তার লেখকজীবনের প্ৰস্তুতিপৰ্ব, যা প্ৰগতি প্ৰকাশ ও বন্ধ হওয়া পর্যন্ত সময়; এবং যে-সময়টার সবটাই তার কাটে ঢাকার পুরানা পল্টনের বাড়িতে। বুদ্ধদেব বসুর শেষবার ঢাকা সফর তাঁর জীবনের কোনো বড় ঘটনা না হলেও একেবারে উপেক্ষা করার মতো নয় । ঘটনাটি কলকাতার লেখকদের জন্য না হলেও ঢাকার কবি-লেখকদের জন্য স্মরণীয়। এই সফরটি সম্পর্কে কোথাও কিছু লেখা হয়নি, বুদ্ধদেবের কোনো জীবনীগ্রন্থেও নয়। বিষয়টি বাস্তবিক পক্ষেই বিস্মৃতির অতলে চলে গেছে। মুসলমানপ্ৰধান পূর্ব বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে বুদ্ধদেবের সম্পর্ক কেমন ছিল? পূর্ব বাংলার পঞ্চাশের আধুনিক লেখকেরা কেউ কেউ তাঁর দ্বারা অনুপ্ৰাণিত ও প্রভাবিত হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগে তাঁরা উপকৃত হয়েছেন। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক আবহেও আধুনিক হয়ে উঠতে উদ্ধৃদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যুর পরে তাঁর জীবন, কর্ম ও সাহিত্য নিয়ে যথেষ্ট লেখা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা তো দুই বাংলায় হচ্ছেই। কলকাতা থেকে প্রকাশিত এবং ভারতীয় লেখকদের প্রণীত তাঁর ওপর গ্রন্থগুলোতে বুদ্ধদেবের প্রথম জীবনের বিভিন্ন বিষয় যথাযথভাবে আসেনি। উপনিবেশ-উত্তরকালে দুই বাংলার সাহিত্য-গবেষণার কাজ পরিচালনায় একটা বড় সমস্যা এই যে, অনেক গবেষকের পক্ষেই এক রাষ্ট্র থেকে আরেক রাষ্ট্রে গিয়ে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে তথ্য-সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন। বাংলা সাহিত্যের তিরিশের কবি-সাহিত্যিকেরা আধুনিকতাবাদের ওপর খুব জোর দিতেন। কিন্তু, কথাটা অপ্রিয় শোনালেও সত্য হলো, আমাদের সামাজিক কারণে তারা প্রায় কেউই মানুষ হিসেবে সম্পূর্ণ আধুনিক হয়ে উঠতে পারেননি-বিশেষ করে পশ্চিমের লেখকেরা যে অর্থে আধুনিক। ইউরোপের Age of Enlightenment বা জ্ঞানবিভাসিত যুগের পর থেকে আধুনিকতা আর সত্য অনুসন্ধান সমাৰ্থক হয়ে যায়। সত্যের স্বার্থে কোনো কিছুই গোপন করা যাবে না-সো-সত্য যেকোনো লব্ধপ্রতিষ্ঠিতের জন্য যতই বিব্রতকর হােক না কেন। জন্মের এক শ বছর পর কারও জীবন সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে কোনো সত্যই গোপনযোগ্য নয়। নিজের সম্পর্কে বুদ্ধদেব অনেক সত্য প্রকাশ করে যাননি। সেগুলো উদঘাটিত হওয়া উচিত। সে-বিষয়ে আমি সাধ্যমতে চেষ্টা করেছি। এ বই বুদ্ধদেবের আংশিক জীবনী, পূর্ণাঙ্গ জীবনীর অংশবিশেষ নয়—বস্তুত বিষয়ভিত্তিক বা Theamatic জীবনীর একটি পর্ব। আশা করা যায় বইটি পাঠকদের আগ্রহ জাগাবে।
বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক! সাধ্যের মধ্যে থাকলে বইটি কিনবেন এই প্রত্যাশা রইলো।