মাও এর শেষ নর্তক - লি কুন শিন অনুবাদঃ মীনাক্ষী দত্ত
বাঙালিদের অনেকের কাছেই চিন একটা সোনার দেশ। মাটির জগতে স্বৰ্গ থেকে আনা এক আদর্শ সমাজ। পনেরো দিন চিন ভ্ৰমণ করে এসে অনেকেই আস্ত আস্ত বই লিখে ফেলেন সেই ভুস্বর্গের সুব্যবস্থা বিষয়ে। আমন্ত্রিত অতিথি বা দলবদ্ধ পর্যটকেরা চিন দেশে শুধু তাই দেখতে পেতেন চিন সরকার যা তাদের দেখাত, সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে যেমন, বাইরের লোক এলেই রাজা যা দেখাতে চান না তার উপর তাবু টেনে দেওয়া হত। তবে ছবিতে যা মজার জীবনে তো তা নয়। তবু চিনের চেয়ারম্যানকে আমাদের হৃদয়মন্দিরে চেয়ারম্যান করে রেখেছি বহুদিন।
স্টালিনের উত্তরাধিকারীরা ওই লৌহমানবের মৃত্যুর পর প্রকাশ করেছিলেন একনায়কতন্ত্রের ভয়াবহ তথ্য, কিন্তু চিনের কমিউনিস্ট পাটির নায়কেরা মাও-এর চিন যে স্টালিনের সোভিয়েট রাশিয়ার চেয়েও ভয়াবহ সেই হিম সত্যের মুখোমুখি হননি। লি কুন শিন, যাঁকে বলা হত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যালে নর্তক, এই জীবন আলেখ্যে সেই বিরাট ইতিহাস উদঘাটন করেছেন। কোনো সমালোচনা না করে তিনি মাও শাসিত চায়নার ছবি এঁকেছেন। এতে কোনো তত্ত্ব, বিষেদাগার, কোনো রিপোর্ট, দলিল-দস্তাবেজ নেই, শুধু লেখকের নিজের জীবনের অনুপুঙ্খ দিয়ে তিনি যা ফুটিয়ে তুলেছেন তা ডকুমেন্টারির চেয়েও বেশি কারণ তা তার নিজের জীবন।
যদি না মাও-এর চতুর্থ স্ত্রীর মাথায় খেয়াল চাপত একটি ব্যালে নাচের টিম তৈরি করার যা হবে বিশ্বজয়ী। এইভাবে তিনি গ্রামের চাষিদের অনুকম্পা প্ৰদৰ্শন করার সুযোগ পেয়েছিলেন তাদের ছেলে-মেয়েকে তুলে এনে। মা-বাবার অনুমতির কোনো প্রশ্ন ছিল না, যাকে ইচ্ছে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হত। তার হুকুমে বালক-বালিকাদের ওপর চলত দিবারাত্রির প্রশিক্ষণ।
লি কুনশিন তঁর মা-বাবা, শিক্ষক-শিক্ষিকার জীবনের যে ছবি এঁকেছেন তাতে তাদের মুখে কোনো কথা বসাননি, শুধু বিন্দু বিন্দু করে ফুটিয়ে তুলেছেন তাদের অনাহার, অপমান, রাষ্ট্রের পীড়ন অসহায়তার কথা। যে কোটি কোটি মানুষ ‘গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডে’ অনাহারে তিলে তিলে মরেছেন তার পরিসংখ্যান তিনি দেননি, শুধু নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন।
বেজিঙে আসার আগে পর্যন্ত নাচ কাকে বলে গ্রামের এই নিরন্ন চাষির ছেলে জানত না। মাদাম মাও-এর সংগ্ৰাহকেরা হাত পা টিপে নরম কোমল দেখে তুলে আনত। প্ৰতিভাও যে গড়া যায় এই নর্তক তার প্রমাণ। ভাগ্যিস, নাচের জোরে সে বিদেশ সফরে এসেছিল, কীভাবে মাও-এর খাঁচা থেকে সে বেরুল এটা সেই আশ্চর্য কাহিনি। চার্লি চ্যাপলিন যেমন ওয়ার্ক হাউস থেকে হলিউডের উড়ন্ত গালিচাতে আরোহণ করেছিলেন, এটাও তেমনই চিনের কমিউন থেকে প্রাসাদে উত্তরণের গল্প। বাস্তবের এই রূপকথা যে কোনো “পাই-থ্রিলার” বা রোমান্টিক উপন্যাসের চেয়ে রোমাঞ্চকর।
বইটি পড়ে শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমি অনুবাদ করেছিলাম। তারপরে বেশ কিছুদিন চলে গেছে। ‘মাও-এর শেষ নর্তক’ তার ইংরিজি নামে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছে, এটি অবলম্বনে হলিউডে ছবি হয়েছে। নানা কারণে বইটি প্রকাশে বিলম্ব হল। তবু, হয়তো এই বই-এর উপযোগিতা এখন আরও বেশি। চিনের বর্তমান অর্থনৈতিক চাকচিক্যের আড়ালে যে কী কলংক লুকিয়ে আছে তা পাঠকের জানা দরকার।
বাঙালিদের অনেকের কাছেই চিন একটা সোনার দেশ। মাটির জগতে স্বৰ্গ থেকে আনা এক আদর্শ সমাজ। পনেরো দিন চিন ভ্ৰমণ করে এসে অনেকেই আস্ত আস্ত বই লিখে ফেলেন সেই ভুস্বর্গের সুব্যবস্থা বিষয়ে। আমন্ত্রিত অতিথি বা দলবদ্ধ পর্যটকেরা চিন দেশে শুধু তাই দেখতে পেতেন চিন সরকার যা তাদের দেখাত, সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে যেমন, বাইরের লোক এলেই রাজা যা দেখাতে চান না তার উপর তাবু টেনে দেওয়া হত। তবে ছবিতে যা মজার জীবনে তো তা নয়। তবু চিনের চেয়ারম্যানকে আমাদের হৃদয়মন্দিরে চেয়ারম্যান করে রেখেছি বহুদিন।
স্টালিনের উত্তরাধিকারীরা ওই লৌহমানবের মৃত্যুর পর প্রকাশ করেছিলেন একনায়কতন্ত্রের ভয়াবহ তথ্য, কিন্তু চিনের কমিউনিস্ট পাটির নায়কেরা মাও-এর চিন যে স্টালিনের সোভিয়েট রাশিয়ার চেয়েও ভয়াবহ সেই হিম সত্যের মুখোমুখি হননি। লি কুন শিন, যাঁকে বলা হত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যালে নর্তক, এই জীবন আলেখ্যে সেই বিরাট ইতিহাস উদঘাটন করেছেন। কোনো সমালোচনা না করে তিনি মাও শাসিত চায়নার ছবি এঁকেছেন। এতে কোনো তত্ত্ব, বিষেদাগার, কোনো রিপোর্ট, দলিল-দস্তাবেজ নেই, শুধু লেখকের নিজের জীবনের অনুপুঙ্খ দিয়ে তিনি যা ফুটিয়ে তুলেছেন তা ডকুমেন্টারির চেয়েও বেশি কারণ তা তার নিজের জীবন।
যদি না মাও-এর চতুর্থ স্ত্রীর মাথায় খেয়াল চাপত একটি ব্যালে নাচের টিম তৈরি করার যা হবে বিশ্বজয়ী। এইভাবে তিনি গ্রামের চাষিদের অনুকম্পা প্ৰদৰ্শন করার সুযোগ পেয়েছিলেন তাদের ছেলে-মেয়েকে তুলে এনে। মা-বাবার অনুমতির কোনো প্রশ্ন ছিল না, যাকে ইচ্ছে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হত। তার হুকুমে বালক-বালিকাদের ওপর চলত দিবারাত্রির প্রশিক্ষণ।
লি কুনশিন তঁর মা-বাবা, শিক্ষক-শিক্ষিকার জীবনের যে ছবি এঁকেছেন তাতে তাদের মুখে কোনো কথা বসাননি, শুধু বিন্দু বিন্দু করে ফুটিয়ে তুলেছেন তাদের অনাহার, অপমান, রাষ্ট্রের পীড়ন অসহায়তার কথা। যে কোটি কোটি মানুষ ‘গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডে’ অনাহারে তিলে তিলে মরেছেন তার পরিসংখ্যান তিনি দেননি, শুধু নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন।
বেজিঙে আসার আগে পর্যন্ত নাচ কাকে বলে গ্রামের এই নিরন্ন চাষির ছেলে জানত না। মাদাম মাও-এর সংগ্ৰাহকেরা হাত পা টিপে নরম কোমল দেখে তুলে আনত। প্ৰতিভাও যে গড়া যায় এই নর্তক তার প্রমাণ। ভাগ্যিস, নাচের জোরে সে বিদেশ সফরে এসেছিল, কীভাবে মাও-এর খাঁচা থেকে সে বেরুল এটা সেই আশ্চর্য কাহিনি। চার্লি চ্যাপলিন যেমন ওয়ার্ক হাউস থেকে হলিউডের উড়ন্ত গালিচাতে আরোহণ করেছিলেন, এটাও তেমনই চিনের কমিউন থেকে প্রাসাদে উত্তরণের গল্প। বাস্তবের এই রূপকথা যে কোনো “পাই-থ্রিলার” বা রোমান্টিক উপন্যাসের চেয়ে রোমাঞ্চকর।
বইটি পড়ে শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমি অনুবাদ করেছিলাম। তারপরে বেশ কিছুদিন চলে গেছে। ‘মাও-এর শেষ নর্তক’ তার ইংরিজি নামে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছে, এটি অবলম্বনে হলিউডে ছবি হয়েছে। নানা কারণে বইটি প্রকাশে বিলম্ব হল। তবু, হয়তো এই বই-এর উপযোগিতা এখন আরও বেশি। চিনের বর্তমান অর্থনৈতিক চাকচিক্যের আড়ালে যে কী কলংক লুকিয়ে আছে তা পাঠকের জানা দরকার।