বাংলা গল্পের উত্তরাধিকার - আহমাদ মোস্তফা কামাল
রাজনৈতিক কারণে একটি দেশ ভাগ হয়ে গেলে আসলে কী ভাগ হয়? শুধু ভূমি? শুধু সীমানা? নাকি ভাষা-সাহিত্য-সঙ্গীত-চিত্রকলা-চলচ্চিত্র-নাটক প্রভৃতি সাংস্কৃতিক উপকরণগুলােও? যদি ভাগ না হয় তাহলে কি এই দুটো নতুন দেশে সংস্কৃতির এই উপকরণগুলাে একই ভাবে একই ধারায় বিকশিত হয়? আর যদি ভাগ হয়ে যায়, তাহলে দেশের কোন অংশটি অবিভক্ত দেশটির শিল্প-সাহিত্যের মূলধারার ধারাবাহিকতা বহন করে? যে-কোনাে একটি, নাকি দুটোই? এইসব প্রশ্ন এখন আমাদের সামনেও অনিবার্যভাবে চলে আসছে। কারণ আমরা, বাংলা নামক দেশটির অধিবাসীরাও, এই রাজনৈতিক বিভাজনের শিকার হয়েছি। ভারতবর্ষ কখনােই এক জাতির দেশ ছিল না। তবু গত শতকের মাঝামাঝিতে ব্রিটিশরাজের কূটচালে এবং ব্রিটিশদের এদেশীয় অনুগত রাজনীতিকদের সহযােগিতায় ভারতবর্ষের ভাগ হয়ে যাওয়াকে আমরা দেশভাগ' হিসেবেই বর্ণনা করে থাকি। যদিও এটি কোন দেশ, কার দেশ, কেনই-বা ভারত-ভাগকে আমরা দেশভাগ বলছি সেই প্রশ্নগুলাে খুব একটি উত্থাপন করি না। সম্ভবত গত শতকে জেগে ওঠা বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উজ্জীবিত চিন্তাশীল অংশটি বাংলা ভাগকেই দেশভাগ হিসেবে বর্ণনা করতে শুরু করেছিলেন। সেটি বােঝা যায় গত শতকের শুরুতে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে এই চিন্তাশীল অংশের তীব্র প্রতিক্রিয়ার ধরন দেখেই। তারা বঙ্গভঙ্গকে মানেননি। সম্ভবত বাংলা অঞ্চলকে তারা একটি দেশরূপেই কল্পনা করতেন। (বিপরীত মতটিও ভুলে যাচ্ছি না যে, তারা এই বিরােধিতায় নেমেছিলেন সাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণে। এই মতটি খুব প্রবলভাবেই বিদ্যমান, এবং সেটিও হয়তাে সম্পূর্ণ মিথ্যে নয়।) যাহােক, বাংলাভাগ বা দেশভাগের ফলে সৃষ্ট দুটো পৃথক রাষ্ট্রে বাঙালি সংস্কৃতি এবং সাংস্কৃতিক উপাদান প্রবাহিত হলাে পৃথক দুটো ধারায়। এই রচনায় বাংলাদেশের ছােটগল্পের ইতিহাস এবং উত্তরাধিকারের পরিপ্রেক্ষিতটি- এর সাফল্য-ব্যর্থতা, অর্জন-অক্ষমতা খুবই সংক্ষিপ্তভাবে আলােচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
রাজনৈতিক কারণে একটি দেশ ভাগ হয়ে গেলে আসলে কী ভাগ হয়? শুধু ভূমি? শুধু সীমানা? নাকি ভাষা-সাহিত্য-সঙ্গীত-চিত্রকলা-চলচ্চিত্র-নাটক প্রভৃতি সাংস্কৃতিক উপকরণগুলােও? যদি ভাগ না হয় তাহলে কি এই দুটো নতুন দেশে সংস্কৃতির এই উপকরণগুলাে একই ভাবে একই ধারায় বিকশিত হয়? আর যদি ভাগ হয়ে যায়, তাহলে দেশের কোন অংশটি অবিভক্ত দেশটির শিল্প-সাহিত্যের মূলধারার ধারাবাহিকতা বহন করে? যে-কোনাে একটি, নাকি দুটোই? এইসব প্রশ্ন এখন আমাদের সামনেও অনিবার্যভাবে চলে আসছে। কারণ আমরা, বাংলা নামক দেশটির অধিবাসীরাও, এই রাজনৈতিক বিভাজনের শিকার হয়েছি। ভারতবর্ষ কখনােই এক জাতির দেশ ছিল না। তবু গত শতকের মাঝামাঝিতে ব্রিটিশরাজের কূটচালে এবং ব্রিটিশদের এদেশীয় অনুগত রাজনীতিকদের সহযােগিতায় ভারতবর্ষের ভাগ হয়ে যাওয়াকে আমরা দেশভাগ' হিসেবেই বর্ণনা করে থাকি। যদিও এটি কোন দেশ, কার দেশ, কেনই-বা ভারত-ভাগকে আমরা দেশভাগ বলছি সেই প্রশ্নগুলাে খুব একটি উত্থাপন করি না। সম্ভবত গত শতকে জেগে ওঠা বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উজ্জীবিত চিন্তাশীল অংশটি বাংলা ভাগকেই দেশভাগ হিসেবে বর্ণনা করতে শুরু করেছিলেন। সেটি বােঝা যায় গত শতকের শুরুতে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে এই চিন্তাশীল অংশের তীব্র প্রতিক্রিয়ার ধরন দেখেই। তারা বঙ্গভঙ্গকে মানেননি। সম্ভবত বাংলা অঞ্চলকে তারা একটি দেশরূপেই কল্পনা করতেন। (বিপরীত মতটিও ভুলে যাচ্ছি না যে, তারা এই বিরােধিতায় নেমেছিলেন সাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণে। এই মতটি খুব প্রবলভাবেই বিদ্যমান, এবং সেটিও হয়তাে সম্পূর্ণ মিথ্যে নয়।) যাহােক, বাংলাভাগ বা দেশভাগের ফলে সৃষ্ট দুটো পৃথক রাষ্ট্রে বাঙালি সংস্কৃতি এবং সাংস্কৃতিক উপাদান প্রবাহিত হলাে পৃথক দুটো ধারায়। এই রচনায় বাংলাদেশের ছােটগল্পের ইতিহাস এবং উত্তরাধিকারের পরিপ্রেক্ষিতটি- এর সাফল্য-ব্যর্থতা, অর্জন-অক্ষমতা খুবই সংক্ষিপ্তভাবে আলােচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।