অতীত একটা ভিনদেশ
মোজাফ্ফর হোসেন
তরুণ লেখক মোজাফ্ফর হোসেন লিখছেন গল্প, আলোচনা, সমালোচনা, অনুবাদেও বেশ স্বচ্ছন্দ। আমি যখন তাঁর ‘আদিম বুদবুদ অথবা কাঁচামাটির বিগ্রহ’ গল্পগ্রন্থের ‘পুনরুত্থান’ গল্পটি পড়ি তখন খুব বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ গল্পে নির্মাণ বলে কিছু নেই। কোনো প্রস্তাবনা, অবতরণিকা বা কোনো ভূমিকা ছাড়াই গল্প শুরু হয়। যেমন, ‘গতকাল মধ্যরাতে কবর থেকে উঠে এসেছে রহমান। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই তার এই উত্থান। আমি জানতাম ওর যা হতচ্ছাড়া স্বভাব তাতে করে বেশি দিন টিকতে পারবে না ওখানে।’
মৃত ব্যক্তির কবর থেকে উঠে এসে এক কাপ গরম কড়া চা খেয়ে গল্পগুজব করে আবার কবরে ফিরে যাওয়া এবং লেখকও তার সঙ্গে গিয়ে কবর পর্যন্ত পৌঁছে দেবার মধ্যে যে হেঁয়ালি আছে তার গূঢ় অর্থ কোথাও আছে কি না, তা পাঠকই উদ্ধার করবেন এই আশায় এখনকার নবীন লেখকরা গল্পে-কবিতায় কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা এতদিন জানি, গল্পই হোক আর উপন্যাসই হোক বিষয়বস্তু বিস্তারে নির্মাণ বলে একটা ব্যাপার আছে তার একটা কর্মও আছে, কিন্তু মোজাফ্ফরের গল্পে নির্মাণ বলে কিছু নেই সমস্ত বিষয়টি ভেঙেচুরে দিয়ে যা তিনি সৃষ্টি করে ওঠেন, তা যেন অস্থিহীন একটি অবয়ব। যেন ‘দেহহীন লাবণ্য বিলাস’। অবয়বটিও যেন বায়বীয় স্বপ্ন আর ঘন কুয়াশার ভেতর দিয়ে দেখা বাস্তবের প্রায় বিলীয়মান বাস্তব। যেমন, বর্তমান গ্রন্থের ‘বাঁশিওয়ালা মজ্জেল’ গল্পটিতে মৃত্যুর পনেরো বছর পর মজ্জেলের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর যা ঘটে তা বাস্তবে ঘটতে পারত কিন্তু মৃত্যুর পনেরো বছর পর কথাটা ধরে রাখলেও কথা বলার তোড়ে ধরতাই ছিঁড়ে যায় এবং গল্পের শেষে লেখকের হঠাৎ একটি ইংগিতময় কথায় বোঝা যায়, গল্পকথকের মৃত্যুর পর মজ্জেলের সঙ্গে তার এই দেখা। এই ভীষণ সত্যটাই বাস্তব কিন্তু তা একটা বায়বীয় অস্তিত্বে এখানে লুকিয়ে আছে। ব্যাখ্যায় যাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয় মোটেই। পাঠক নিজেই জানুক কী আছে সেথায়! আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি, মোজাফ্ফর হোসেনের এই গল্পহীন গল্পগুলোতে আধুনিক পরাবাস্তব ও বিনির্মাণ-কৌশল কাজ করছে কি না ভেবে দেখবার বিষয়।
বইয়ের ফ্লাপে কথাসাহিত্যিক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত লিখেছেন : ‘মোজাফ্ফর-এর গল্পের আপাত সরল কাঠামো, সাবলীল বর্ণনাভঙ্গি পাঠককে দ্রুত গল্পের ভুবনে প্রবেশ করিয়ে দেবে যদিও সামান্য সময় পার হলেই তিনি সম্মুখীন হবেন নানা সম্ভাবনার, বহুকৌণিক গল্পজগতের। সচেতন পাঠক সেটিকে পরাবাস্তব, জাদুবাস্তববাদ বা অতি-আধুনিক গল্পের জগৎ—যে-নামেই চিহ্নিত করুন না কেন গল্পের পাঠতৃপ্তি কী পাঠযোগ্যতা বিন্দুমাত্র ব্যাহত হয় না তাতে।’
মোজাফ্ফর হোসেন
বইটি ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ কথাসাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’ পেয়েছে।কথাসাহিত্যিক জাহানারা নওশিন বইটি ও লেখক সম্পর্কে যা বলেছেন;
তরুণ লেখক মোজাফ্ফর হোসেন লিখছেন গল্প, আলোচনা, সমালোচনা, অনুবাদেও বেশ স্বচ্ছন্দ। আমি যখন তাঁর ‘আদিম বুদবুদ অথবা কাঁচামাটির বিগ্রহ’ গল্পগ্রন্থের ‘পুনরুত্থান’ গল্পটি পড়ি তখন খুব বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ গল্পে নির্মাণ বলে কিছু নেই। কোনো প্রস্তাবনা, অবতরণিকা বা কোনো ভূমিকা ছাড়াই গল্প শুরু হয়। যেমন, ‘গতকাল মধ্যরাতে কবর থেকে উঠে এসেছে রহমান। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই তার এই উত্থান। আমি জানতাম ওর যা হতচ্ছাড়া স্বভাব তাতে করে বেশি দিন টিকতে পারবে না ওখানে।’
মৃত ব্যক্তির কবর থেকে উঠে এসে এক কাপ গরম কড়া চা খেয়ে গল্পগুজব করে আবার কবরে ফিরে যাওয়া এবং লেখকও তার সঙ্গে গিয়ে কবর পর্যন্ত পৌঁছে দেবার মধ্যে যে হেঁয়ালি আছে তার গূঢ় অর্থ কোথাও আছে কি না, তা পাঠকই উদ্ধার করবেন এই আশায় এখনকার নবীন লেখকরা গল্পে-কবিতায় কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা এতদিন জানি, গল্পই হোক আর উপন্যাসই হোক বিষয়বস্তু বিস্তারে নির্মাণ বলে একটা ব্যাপার আছে তার একটা কর্মও আছে, কিন্তু মোজাফ্ফরের গল্পে নির্মাণ বলে কিছু নেই সমস্ত বিষয়টি ভেঙেচুরে দিয়ে যা তিনি সৃষ্টি করে ওঠেন, তা যেন অস্থিহীন একটি অবয়ব। যেন ‘দেহহীন লাবণ্য বিলাস’। অবয়বটিও যেন বায়বীয় স্বপ্ন আর ঘন কুয়াশার ভেতর দিয়ে দেখা বাস্তবের প্রায় বিলীয়মান বাস্তব। যেমন, বর্তমান গ্রন্থের ‘বাঁশিওয়ালা মজ্জেল’ গল্পটিতে মৃত্যুর পনেরো বছর পর মজ্জেলের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর যা ঘটে তা বাস্তবে ঘটতে পারত কিন্তু মৃত্যুর পনেরো বছর পর কথাটা ধরে রাখলেও কথা বলার তোড়ে ধরতাই ছিঁড়ে যায় এবং গল্পের শেষে লেখকের হঠাৎ একটি ইংগিতময় কথায় বোঝা যায়, গল্পকথকের মৃত্যুর পর মজ্জেলের সঙ্গে তার এই দেখা। এই ভীষণ সত্যটাই বাস্তব কিন্তু তা একটা বায়বীয় অস্তিত্বে এখানে লুকিয়ে আছে। ব্যাখ্যায় যাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয় মোটেই। পাঠক নিজেই জানুক কী আছে সেথায়! আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি, মোজাফ্ফর হোসেনের এই গল্পহীন গল্পগুলোতে আধুনিক পরাবাস্তব ও বিনির্মাণ-কৌশল কাজ করছে কি না ভেবে দেখবার বিষয়।
বইয়ের ফ্লাপে কথাসাহিত্যিক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত লিখেছেন : ‘মোজাফ্ফর-এর গল্পের আপাত সরল কাঠামো, সাবলীল বর্ণনাভঙ্গি পাঠককে দ্রুত গল্পের ভুবনে প্রবেশ করিয়ে দেবে যদিও সামান্য সময় পার হলেই তিনি সম্মুখীন হবেন নানা সম্ভাবনার, বহুকৌণিক গল্পজগতের। সচেতন পাঠক সেটিকে পরাবাস্তব, জাদুবাস্তববাদ বা অতি-আধুনিক গল্পের জগৎ—যে-নামেই চিহ্নিত করুন না কেন গল্পের পাঠতৃপ্তি কী পাঠযোগ্যতা বিন্দুমাত্র ব্যাহত হয় না তাতে।’