সেদিনের কথা
মণিকুন্তলা সেন
বরিশালে জন্ম হয় মণিকুন্তলা সেনের। বরিশালে মায়ের কাকাবাবু রজনীকান্ত দাস-এর বাড়িতে মানুষ হয়ে উঠেছিলেন মণিকুন্তলা। দাদু, মা এবং দিদি জামাইবাবুদের স্নেহের মধ্য দিয়ে বড় হয়ে উঠেছিলেন মণিকুন্তলা। জহর বসু, অশ্বিনীকুমার দক্ত, তাঁর সহযোগী কালীশচন্দ্র পণ্ডিত ও জগদীশচন্দ্র আচার্যদের স্নেহ-মমতা দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, শিক্ষা বিস্তার ব্রত এসবে এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন মণিকুন্তলা সেন যে তিনি এদের মহাপুরুষ আখ্যা দিয়েছিলেন তার লেখা সেদিনের কথা নামের বইতে। ধর্মীয় বাতাবরণ, নারীস্বাধীনতা ব্যাপারে রক্ষণশীল পরিমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে মানুষ হয়েছিলেন মণিকুন্তলা। কিন্তু এই পরিমণ্ডলের মধ্যেও শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ মণিকুন্তলার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোক্তর শিক্ষা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেজন্য তিনি মেট্রোপলিটন গার্লস স্কুলে বেশ কয়েক বছর প্রধানা শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন।
মণিকুন্তলা সেন বরিশালে থাকার সময়ই সেখানে গান্ধীজীর গিয়েছিলেন পতিতাদের ঐ বৃক্তি ছড়িয়ে দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে টেনে আনতে দেখেছেন। আবার স্বাধীনতা সংগ্রামী চারণকবি মুকুন্দ দাসের স্বদেশী পালাগান শুনেছেন, আবার অশ্বিনীকুমার দক্তের আতুরাশ্রম এবং র্লিটন ব্রাদার্স অব দি পুয়োর’ এর রোগী সেবা ও অন্যান্য সমাজ সেবামূলক কাজ দেখেছেন ‘ব্রাহ্ম সমাজ’-এর প্রচারক ও উপাচার্য্য মনমোহন চক্রবর্তীর ক্লান্তিহীন প্রচারাভিযান, বিপ্লবী রাজনীতির আখড়া ‘শংকর মঠ’-এ যাতায়াত করেছেন। এসবের মধ্য দিয়ে তাঁর দেশপ্রেমী ও বিপ্লবী মানসিকতা গড়ে উঠেছিল। স্নেহলতা দাস, শান্তিসুধা ঘোষ এসব বিপ্লবীদের সান্নিধ্যেও এসেছিলেন মণিকুন্তলা। একবার পুলিসরা তাকে থানায় ডেকে নিয়ে ঐসব বিপ্লবীদের সঙ্গে সম্পর্কে না রাখার পরামর্শ দেয়।
অশ্বিনী দক্তের বাবার নাম ছিল ব্রজমোহন। তাঁর নামে গড়া কলেজে পড়েছেন মণিকুন্তলা সে সময়ে সে কলেজেও ছেলেদের ও মেয়েদের বসবার জায়গার মাঝখানে ছিল বেড়ার পার্টিশান। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় কলেজ দেখতে এলে এই পার্টিশন সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মণিকুন্তলা সেনের লেখা ‘সেদিনের কথা’ বই থেকে সামান্য
‘‘ … ইংরেজ রাজত্বে কি ধর্মগুরু বা গির্জা-মন্দিরের দ্বারা ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি বা শাসিত ছিল? বরং ইংরেজ সরকারের সহায়তা নিয়েই রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে ও বিধবা বিবাহ সপক্ষে আইন পাস করাতে পেরেছিলেন। এইটুকু করতে গিয়ে রামমোহনকে দেশ ছাড়তে হল আর বিদ্যাসাগরের লাঞ্ছনার সীমা ছিল না।
এসব অনাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাদের হিন্দুশাস্ত্র ঘেটে প্রমাণ করতে হয়েছিল সতীদাহ হতেই হবে, আর বিধবা বিবাহ হতেই পারে না এমন কথা হিন্দু শাস্ত্রে নেই। কিন্তু আইনের অধিকার দিয়েও মানুষের মন থেকে তারা ঐ প্রচলিত কুসংস্কারগুলোকে দূর করতে পারেননি। যে নারী সমাজের জন্য তাঁদের দুঃখবরণ, সেই নারীরাই মুখ ফিরিয়ে রইল তাদেরই কল্যাণের রচিত আইনের প্রতি। সে কল্যাণকে গ্রহণ করার মানসিক প্রস্তুতি তাদের ছিল না। অবশেষে আর এক দফা সমাজের প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিদ্যাসাগরকে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে পথ ধরতে হল। বলতে হল অ,আ,ক,খ-র বই লিখতে। এই মহাপুরুষদের আশীর্বাদে বাঙালি নারী সমাজের বিদ্যামন্দিরে প্রথম প্রবেশের অধিকার মিলল। অপেক্ষায় রইলেন ঈশ্বরচন্দ্র, মেয়েরা শিক্ষায় উন্নত হয়ে কবে নিজেদের প্রয়োজনে ঐসব আইনের অধিকার জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
আমরা ভুগছি যুগ যুগ ধরে এদেশের ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অপশাসনে। এরা হিন্দু সমাজের উপরে যে সামাজিক শাসন চালিয়ে এসেছে তার মারাত্মক ফল থেকে আজও আমরা উদ্ধার পাইনি। অর্ধশিক্ষিত জনসাধারণ এবং বিশেষ করে নারীসমাজকে পঙ্গু করে নিজেদের স্বার্থসাধনই ছিল তখনকার ব্রাহ্মণ শ্রেণীর উদ্দেশ্য। সে জন্য সমস্ত কুসংস্কারের বীজ তারা জনসাধারণের মনের মধ্যে রোপণ করেছিল, কালে কালে সে বীজ সহস্র ডালপালা মেলে বিষবৃক্ষের মতন মানুষের মনগুলোকে আঁকড়ে ধরে রইল। সমাজ জীবনে আজকের উত্কট অপসংস্কৃতির জন্ম এখান থেকেই।
১৯৪৩-এর সময়ে বাংলার নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে সেই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেন মণিকুন্তলা। ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে চাল দেবার দাবিতে যে ঐতিহাসিক মিছিল তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হক-এর কাছ থেকে আংশিক দাবি আদায় করে তারও অন্যতম সংগঠক ছিলেন মণিকুন্তলা সেন।
১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হল তাকে নিরাপক্তা আইনে বন্দী করে রাখে শাসকশ্রেণী। ঐ সময়ে জেলে বন্দীদের ৫১দিনব্যাপী ঐতিহাসিক অনশন ধর্মঘটে অংশ নেন মণিকুন্তলা সেন। কলকাতার কালিঘাট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ’৫২ সালে এবং ’৬২ সালে নির্বাচিত হয়ে গণআন্দোলন বিধানসভার ভেতরে প্রতিফলিত করেছিলেন মণিকুন্তলা সেন। তিনি বিধানসভায় কমিউনিস্ট দলের সহকারী নেত্রী ছিলেন। ১৯৫৪ সালে কলকাতায় ভারতীয় মহিলা ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মহিলা ফেডারেশনের পশ্চিমবঙ্গে শাখার যুগ্ম সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। ঐ বছর ঐতিহাসিক শিক্ষক ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে গ্রেপ্তার হন তিনি। ১৯৫৫ সালে লুসানে অনুষ্ঠিত মাতৃ সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃস্থানীয় ছিলেন তিনি।
সে দিনের কথা বইয়ের শেষ অধ্যায়ে নারী স্বাধীনতা, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার শিশু পালন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিষয়ে মণিকুন্তলা সেনের অনবদ্য লেখা আজও প্রাসঙ্গিক।
এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা জলিমোহন কাউল ছিলেন তাঁর স্বামী। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কমিউনিস্ট পার্টির সবসময়ের কর্মী হলেও মণিকুন্তলা কিভাবে অভাবের সংসারেও গুছিয়ে চলেছিলেন। পার্টি ভাগে তাঁদের মর্মবেদনা, মণিকুন্তলা সেনের সক্রিয় রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিতে বাধ্য করেছিল। মণিকুন্তলা সেনের জীবনাসান হয় ১৯৮৭ সালের ১১ সেপেম্বরে।
মণিকুন্তলা সেন
বরিশালে জন্ম হয় মণিকুন্তলা সেনের। বরিশালে মায়ের কাকাবাবু রজনীকান্ত দাস-এর বাড়িতে মানুষ হয়ে উঠেছিলেন মণিকুন্তলা। দাদু, মা এবং দিদি জামাইবাবুদের স্নেহের মধ্য দিয়ে বড় হয়ে উঠেছিলেন মণিকুন্তলা। জহর বসু, অশ্বিনীকুমার দক্ত, তাঁর সহযোগী কালীশচন্দ্র পণ্ডিত ও জগদীশচন্দ্র আচার্যদের স্নেহ-মমতা দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, শিক্ষা বিস্তার ব্রত এসবে এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন মণিকুন্তলা সেন যে তিনি এদের মহাপুরুষ আখ্যা দিয়েছিলেন তার লেখা সেদিনের কথা নামের বইতে। ধর্মীয় বাতাবরণ, নারীস্বাধীনতা ব্যাপারে রক্ষণশীল পরিমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে মানুষ হয়েছিলেন মণিকুন্তলা। কিন্তু এই পরিমণ্ডলের মধ্যেও শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ মণিকুন্তলার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোক্তর শিক্ষা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেজন্য তিনি মেট্রোপলিটন গার্লস স্কুলে বেশ কয়েক বছর প্রধানা শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন।
মণিকুন্তলা সেন বরিশালে থাকার সময়ই সেখানে গান্ধীজীর গিয়েছিলেন পতিতাদের ঐ বৃক্তি ছড়িয়ে দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে টেনে আনতে দেখেছেন। আবার স্বাধীনতা সংগ্রামী চারণকবি মুকুন্দ দাসের স্বদেশী পালাগান শুনেছেন, আবার অশ্বিনীকুমার দক্তের আতুরাশ্রম এবং র্লিটন ব্রাদার্স অব দি পুয়োর’ এর রোগী সেবা ও অন্যান্য সমাজ সেবামূলক কাজ দেখেছেন ‘ব্রাহ্ম সমাজ’-এর প্রচারক ও উপাচার্য্য মনমোহন চক্রবর্তীর ক্লান্তিহীন প্রচারাভিযান, বিপ্লবী রাজনীতির আখড়া ‘শংকর মঠ’-এ যাতায়াত করেছেন। এসবের মধ্য দিয়ে তাঁর দেশপ্রেমী ও বিপ্লবী মানসিকতা গড়ে উঠেছিল। স্নেহলতা দাস, শান্তিসুধা ঘোষ এসব বিপ্লবীদের সান্নিধ্যেও এসেছিলেন মণিকুন্তলা। একবার পুলিসরা তাকে থানায় ডেকে নিয়ে ঐসব বিপ্লবীদের সঙ্গে সম্পর্কে না রাখার পরামর্শ দেয়।
অশ্বিনী দক্তের বাবার নাম ছিল ব্রজমোহন। তাঁর নামে গড়া কলেজে পড়েছেন মণিকুন্তলা সে সময়ে সে কলেজেও ছেলেদের ও মেয়েদের বসবার জায়গার মাঝখানে ছিল বেড়ার পার্টিশান। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় কলেজ দেখতে এলে এই পার্টিশন সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মণিকুন্তলা সেনের লেখা ‘সেদিনের কথা’ বই থেকে সামান্য
‘‘ … ইংরেজ রাজত্বে কি ধর্মগুরু বা গির্জা-মন্দিরের দ্বারা ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি বা শাসিত ছিল? বরং ইংরেজ সরকারের সহায়তা নিয়েই রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে ও বিধবা বিবাহ সপক্ষে আইন পাস করাতে পেরেছিলেন। এইটুকু করতে গিয়ে রামমোহনকে দেশ ছাড়তে হল আর বিদ্যাসাগরের লাঞ্ছনার সীমা ছিল না।
এসব অনাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাদের হিন্দুশাস্ত্র ঘেটে প্রমাণ করতে হয়েছিল সতীদাহ হতেই হবে, আর বিধবা বিবাহ হতেই পারে না এমন কথা হিন্দু শাস্ত্রে নেই। কিন্তু আইনের অধিকার দিয়েও মানুষের মন থেকে তারা ঐ প্রচলিত কুসংস্কারগুলোকে দূর করতে পারেননি। যে নারী সমাজের জন্য তাঁদের দুঃখবরণ, সেই নারীরাই মুখ ফিরিয়ে রইল তাদেরই কল্যাণের রচিত আইনের প্রতি। সে কল্যাণকে গ্রহণ করার মানসিক প্রস্তুতি তাদের ছিল না। অবশেষে আর এক দফা সমাজের প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিদ্যাসাগরকে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে পথ ধরতে হল। বলতে হল অ,আ,ক,খ-র বই লিখতে। এই মহাপুরুষদের আশীর্বাদে বাঙালি নারী সমাজের বিদ্যামন্দিরে প্রথম প্রবেশের অধিকার মিলল। অপেক্ষায় রইলেন ঈশ্বরচন্দ্র, মেয়েরা শিক্ষায় উন্নত হয়ে কবে নিজেদের প্রয়োজনে ঐসব আইনের অধিকার জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
আমরা ভুগছি যুগ যুগ ধরে এদেশের ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অপশাসনে। এরা হিন্দু সমাজের উপরে যে সামাজিক শাসন চালিয়ে এসেছে তার মারাত্মক ফল থেকে আজও আমরা উদ্ধার পাইনি। অর্ধশিক্ষিত জনসাধারণ এবং বিশেষ করে নারীসমাজকে পঙ্গু করে নিজেদের স্বার্থসাধনই ছিল তখনকার ব্রাহ্মণ শ্রেণীর উদ্দেশ্য। সে জন্য সমস্ত কুসংস্কারের বীজ তারা জনসাধারণের মনের মধ্যে রোপণ করেছিল, কালে কালে সে বীজ সহস্র ডালপালা মেলে বিষবৃক্ষের মতন মানুষের মনগুলোকে আঁকড়ে ধরে রইল। সমাজ জীবনে আজকের উত্কট অপসংস্কৃতির জন্ম এখান থেকেই।
১৯৪৩-এর সময়ে বাংলার নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে সেই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেন মণিকুন্তলা। ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে চাল দেবার দাবিতে যে ঐতিহাসিক মিছিল তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হক-এর কাছ থেকে আংশিক দাবি আদায় করে তারও অন্যতম সংগঠক ছিলেন মণিকুন্তলা সেন।
১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হল তাকে নিরাপক্তা আইনে বন্দী করে রাখে শাসকশ্রেণী। ঐ সময়ে জেলে বন্দীদের ৫১দিনব্যাপী ঐতিহাসিক অনশন ধর্মঘটে অংশ নেন মণিকুন্তলা সেন। কলকাতার কালিঘাট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ’৫২ সালে এবং ’৬২ সালে নির্বাচিত হয়ে গণআন্দোলন বিধানসভার ভেতরে প্রতিফলিত করেছিলেন মণিকুন্তলা সেন। তিনি বিধানসভায় কমিউনিস্ট দলের সহকারী নেত্রী ছিলেন। ১৯৫৪ সালে কলকাতায় ভারতীয় মহিলা ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মহিলা ফেডারেশনের পশ্চিমবঙ্গে শাখার যুগ্ম সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। ঐ বছর ঐতিহাসিক শিক্ষক ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে গ্রেপ্তার হন তিনি। ১৯৫৫ সালে লুসানে অনুষ্ঠিত মাতৃ সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃস্থানীয় ছিলেন তিনি।
সে দিনের কথা বইয়ের শেষ অধ্যায়ে নারী স্বাধীনতা, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার শিশু পালন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিষয়ে মণিকুন্তলা সেনের অনবদ্য লেখা আজও প্রাসঙ্গিক।
এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা জলিমোহন কাউল ছিলেন তাঁর স্বামী। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কমিউনিস্ট পার্টির সবসময়ের কর্মী হলেও মণিকুন্তলা কিভাবে অভাবের সংসারেও গুছিয়ে চলেছিলেন। পার্টি ভাগে তাঁদের মর্মবেদনা, মণিকুন্তলা সেনের সক্রিয় রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিতে বাধ্য করেছিল। মণিকুন্তলা সেনের জীবনাসান হয় ১৯৮৭ সালের ১১ সেপেম্বরে।