পরিভাষা কোষ - সুপ্রকাশ রায়
বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে জ্ঞানের পরিধি যেমন বেড়ে চলেছে, তেমনি সাধারণ পাঠকদের জিজ্ঞাসাও বাড়ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। কিন্তু জানার সমস্যা বড় জটিল।
একটি, এমন কি কয়েকটি বিষয়ে জ্ঞান থাকলেও শেষ পর্যন্ত সামান্যই জানা হয়েছে বলতে হয়। এমন কি বিশেষজ্ঞদেরও তাঁদের নিজস্ব বিষয়গুলি সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞানলাভ করতে হলে বহুতর বিষয়ের শরণাপন্ন হতে হয়। পশ্চিমী দেশগুলির পাঠকদের কাছে হয়ত সমস্যাটা খুব বেশী কঠিন না-ও হতে পারে ? কারণ, তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমেই তার প্রায় সব বিষয়ের শ্রেষ্ঠ বইগুলি পেতে পারেন। কিন্তু নানা কারণে বাঙ্গালী পাঠকসম্প্রদায় ঐ সুযোগ থেকে সাধারণত বঞ্চিত। আজকাল বহু বই বাংলা ভাষায় অনূদিত হলেও, অনুবাদের ত্রুটিও প্রচুর। একই বিষয়ের অনুবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করেন—যার ফলে পাঠক দিশেহারা হয়ে যান, যারা সােজাসুজি ইংরাজী বই পড়েন তাদের পক্ষেও অসুবিধা খুব কম নয়। ইংরাজী ভাষায়, অভিজ্ঞ এমন পাঠক কমই আছেন যারা ভাষার গােলমালে বেসামাল হন না। তাই অনেক সময়েই তাদের জ্ঞান হয় ভাসা ভাসা। তাই বহু ইংরাজী শব্দের প্রাঞ্জল পরিভাষার প্রয়ােজনীয়তা বহুদিন ধরে বিশেষভাবে অনুভূত। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান যেমন কষ্টসাধ্য, প্রচেষ্টা সে তুলনায় আরও নগণ্য। এদিক থেকে শুধু সাধারণ পাঠকদেরই নয়, যারা অসাধারণত্বের দাবি করেন, তাঁদের পক্ষেও এই বই যথেষ্ট উপযােগী হবে মনে হয়। তাছাড়া, এই বইয়ের দৃষ্টান্তে উৎসাহিত হয়েই হােক বা প্রলুব্ধ হয়েই হােক, আরও অনেকেই যে অনুরূপ প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হবেন তা আশা করা, অসঙ্গত নয়। মােটের উপর বাঙ্গালী পাঠকসমাজের পক্ষে এই বইয়ের মূল্য যথেষ্ট।
এই বইয়ে বহু কঠিন বিষয়ের দুরুহ শব্দগুলির বেশ সহজবােধ্য টীকা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য লেখককে যে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে তা নিশ্চয়ই নিরর্থক হবে না।
প্রাচীন গ্রীক যুগ থেকে আরম্ভ করে অতি আধুনিক পঞ্চশীল-দুনিয়া পর্যন্ত যেসব মতবাদ ও আদর্শ বারবার সমাজে আলােড়ন এনেছে, তাদের সংক্ষিপ্তসার লেখক খুব সহজবােধ্য করেই বােঝাবার চেষ্টা করেছেন। বিশেষতঃ, গত কয়েক শতাব্দীর মধ্যে যেসব দার্শনিক, রাষ্ট্রনৈতিক ও অর্থনৈতিক এবং ইতিহাস ও সমাজতত্ত্ব সম্বন্ধীয় মতবাদ প্রচারিত হয়েছে, সেগুলি সম্বন্ধে এরকম সংক্ষিপ্ত পরিচয়পুস্তক শুধু বাংলা ভাষায় কেন, অন্য বহু ভাষাতেই হয়ত খুব কমই আছে।
অবশ্য একথা সত্য যে, একাধিক ক্ষেত্রে লেখকের ব্যাখ্যা ও টীকার সঙ্গে অনেকের মত-পার্থক্য দেখা দিতে পারে। সে ত খুবই স্বাভাবিক। তবু একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, এই রকম একখানা বই কাছে থাকলে যে কোন পাঠক অন্ততঃ তিন হাজার বছরের বিভিন্ন মনীষীর সঙ্গে বেশ সহজ আলাপ জমিয়ে তুলতে পারবেন।
আশা করি, বাঙ্গালী পাঠকসমাজে এই বইখানি সমাদৃত হবে; এবং লেখকসম্প্রদায়ের মধ্যেও সৃজনশীল প্রতিযােগিতার পথ খুলে দিতে সাহায্য করবে।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২৬শে জানুয়ারী, ১৯৫৮
ডাঃ ধীরেন্দ্রনাথ সেন
বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে জ্ঞানের পরিধি যেমন বেড়ে চলেছে, তেমনি সাধারণ পাঠকদের জিজ্ঞাসাও বাড়ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। কিন্তু জানার সমস্যা বড় জটিল।
একটি, এমন কি কয়েকটি বিষয়ে জ্ঞান থাকলেও শেষ পর্যন্ত সামান্যই জানা হয়েছে বলতে হয়। এমন কি বিশেষজ্ঞদেরও তাঁদের নিজস্ব বিষয়গুলি সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞানলাভ করতে হলে বহুতর বিষয়ের শরণাপন্ন হতে হয়। পশ্চিমী দেশগুলির পাঠকদের কাছে হয়ত সমস্যাটা খুব বেশী কঠিন না-ও হতে পারে ? কারণ, তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমেই তার প্রায় সব বিষয়ের শ্রেষ্ঠ বইগুলি পেতে পারেন। কিন্তু নানা কারণে বাঙ্গালী পাঠকসম্প্রদায় ঐ সুযোগ থেকে সাধারণত বঞ্চিত। আজকাল বহু বই বাংলা ভাষায় অনূদিত হলেও, অনুবাদের ত্রুটিও প্রচুর। একই বিষয়ের অনুবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করেন—যার ফলে পাঠক দিশেহারা হয়ে যান, যারা সােজাসুজি ইংরাজী বই পড়েন তাদের পক্ষেও অসুবিধা খুব কম নয়। ইংরাজী ভাষায়, অভিজ্ঞ এমন পাঠক কমই আছেন যারা ভাষার গােলমালে বেসামাল হন না। তাই অনেক সময়েই তাদের জ্ঞান হয় ভাসা ভাসা। তাই বহু ইংরাজী শব্দের প্রাঞ্জল পরিভাষার প্রয়ােজনীয়তা বহুদিন ধরে বিশেষভাবে অনুভূত। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান যেমন কষ্টসাধ্য, প্রচেষ্টা সে তুলনায় আরও নগণ্য। এদিক থেকে শুধু সাধারণ পাঠকদেরই নয়, যারা অসাধারণত্বের দাবি করেন, তাঁদের পক্ষেও এই বই যথেষ্ট উপযােগী হবে মনে হয়। তাছাড়া, এই বইয়ের দৃষ্টান্তে উৎসাহিত হয়েই হােক বা প্রলুব্ধ হয়েই হােক, আরও অনেকেই যে অনুরূপ প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হবেন তা আশা করা, অসঙ্গত নয়। মােটের উপর বাঙ্গালী পাঠকসমাজের পক্ষে এই বইয়ের মূল্য যথেষ্ট।
এই বইয়ে বহু কঠিন বিষয়ের দুরুহ শব্দগুলির বেশ সহজবােধ্য টীকা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য লেখককে যে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে তা নিশ্চয়ই নিরর্থক হবে না।
প্রাচীন গ্রীক যুগ থেকে আরম্ভ করে অতি আধুনিক পঞ্চশীল-দুনিয়া পর্যন্ত যেসব মতবাদ ও আদর্শ বারবার সমাজে আলােড়ন এনেছে, তাদের সংক্ষিপ্তসার লেখক খুব সহজবােধ্য করেই বােঝাবার চেষ্টা করেছেন। বিশেষতঃ, গত কয়েক শতাব্দীর মধ্যে যেসব দার্শনিক, রাষ্ট্রনৈতিক ও অর্থনৈতিক এবং ইতিহাস ও সমাজতত্ত্ব সম্বন্ধীয় মতবাদ প্রচারিত হয়েছে, সেগুলি সম্বন্ধে এরকম সংক্ষিপ্ত পরিচয়পুস্তক শুধু বাংলা ভাষায় কেন, অন্য বহু ভাষাতেই হয়ত খুব কমই আছে।
অবশ্য একথা সত্য যে, একাধিক ক্ষেত্রে লেখকের ব্যাখ্যা ও টীকার সঙ্গে অনেকের মত-পার্থক্য দেখা দিতে পারে। সে ত খুবই স্বাভাবিক। তবু একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, এই রকম একখানা বই কাছে থাকলে যে কোন পাঠক অন্ততঃ তিন হাজার বছরের বিভিন্ন মনীষীর সঙ্গে বেশ সহজ আলাপ জমিয়ে তুলতে পারবেন।
আশা করি, বাঙ্গালী পাঠকসমাজে এই বইখানি সমাদৃত হবে; এবং লেখকসম্প্রদায়ের মধ্যেও সৃজনশীল প্রতিযােগিতার পথ খুলে দিতে সাহায্য করবে।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২৬শে জানুয়ারী, ১৯৫৮
ডাঃ ধীরেন্দ্রনাথ সেন