শরণার্থীর মুক্তিযুদ্ধ - মিহির সেনগুপ্ত
‘শরণার্থীর মুক্তিযুদ্ধ’কে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব ও পরের সময়কে যাপন করা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানসিক দ্বন্দ্ব, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যকার স্বার্থগত দ্বন্দ্ব, ঐতিহাসিক কথন বা রাজনৈতিক বয়ান, বাংলাদেশের মানচিত্রের ভেতরে-বাইরে থাকা দুই নর-নারীর প্রেমের গল্পের বয়ান, নারী পুরুষের স্বাধীন যৌন ও মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কের বিশ্লেষণ- সবই বলা সম্ভব। বইটিকে ঐতিহাসিক উপন্যাস, নিবন্ধ, ডায়েরি, চিঠি বা কলামের এক মিশ্রিত রূপ বললে অত্যুক্তি হবে না।
এক্ষেত্রে ২০০১ সালে বসে অনিমেষের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, শরণার্থীদের নিয়ে কিংবা এদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশের আওয়ামী লীগ প্রীতির পাশাপাশি ভারতে যাতায়াত নিয়ে যে বিশ্লেষণ তা শঙ্কার সৃষ্টি করে। এ নিয়ে কিছুটা বিতর্কের জায়গা থেকেই যায়। বাংলাদেশ কি কেবল সংখ্যালঘু নির্যাতনেরই দেশ? এখানকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্বদের মুখে প্রতিনিয়ত আমরা যে ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা শুনি, তা কি কেবলি লোক দেখানো? এ পর্যায়ে মনে হতে পারে ১৯৭১ সালে শরণার্থীদের যে মুক্তিযুদ্ধ ছিল তা আসলে শেষ হয়নি, এখনো চলমান। প্রসঙ্গক্রমে মিহির সেনগুপ্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সংবাদপত্রের তথ্য ব্যবহার করেছেন। এমনকি এ বইয়ের শেষ অধ্যায়ে তিনি ‘সত্যকে সবার এত ভয়? এত ভয়’ শিরোনামে আবেদ খানের একটি কলামও ব্যবহার করেছেন। যে কলামে তৎকালীন সরকারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা দানে ব্যর্থতা আর সংখ্যালঘুদের নির্যাতিত হওয়ার চিত্রই ফুটে ওঠে। মনে হয়, বইটি যেন লিখিত হয়েছে মূলত ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সংখ্যালঘু নির্যাতনকে ফোকাসে রাখার তাগিদেই।
মিহির সেনগুপ্ত খুব সাবলিলভাবে তার লেখায় বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি কখনও কখনও চলতি ভাষার সঙ্গে সাধু ভাষা মিলিয়ে ব্যবহার করেন, যা বেখাপ্পা মনে হওয়ার কথা থাকলেও তাঁর ভাষা ব্যবহারের কুশলতায় শেষ পর্যন্ত বেখাপ্পা লাগে না। এ প্রবণতা তাঁর আগের অনেক লেখাতে দেখা গেছে, এ বইতেও রয়েছে যা খুব সহজেই পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কলকাতার প্রচলিত গদ্যের ভাষা থেকে তার ভাষাকে আলাদা করে তোলে।
‘শরণার্থীর মুক্তিযুদ্ধ’ এক বিষাদময় আত্মস্মৃতিমূলক আখ্যান যা বাংলাদেশের এক ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরে। এখানে ১৯৭১ এর পূর্ববর্তী কিংবা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কাল থেকে শুরু করে ২০০১ সময়কালে হিন্দু মুসলিম সমস্যাটা শুধু আসেনি, এসেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিক মনস্তত্ব, জীবনসংগ্রাম, পাশাপাশি স্বপ্ন দ্রষ্টা কিছু মানুষের উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা- মোট কথা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিসেবে নির্যাতি হওয়ার একাংশের ইতিহাস ও মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র।
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন
‘শরণার্থীর মুক্তিযুদ্ধ’কে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব ও পরের সময়কে যাপন করা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানসিক দ্বন্দ্ব, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যকার স্বার্থগত দ্বন্দ্ব, ঐতিহাসিক কথন বা রাজনৈতিক বয়ান, বাংলাদেশের মানচিত্রের ভেতরে-বাইরে থাকা দুই নর-নারীর প্রেমের গল্পের বয়ান, নারী পুরুষের স্বাধীন যৌন ও মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কের বিশ্লেষণ- সবই বলা সম্ভব। বইটিকে ঐতিহাসিক উপন্যাস, নিবন্ধ, ডায়েরি, চিঠি বা কলামের এক মিশ্রিত রূপ বললে অত্যুক্তি হবে না।
এক্ষেত্রে ২০০১ সালে বসে অনিমেষের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, শরণার্থীদের নিয়ে কিংবা এদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশের আওয়ামী লীগ প্রীতির পাশাপাশি ভারতে যাতায়াত নিয়ে যে বিশ্লেষণ তা শঙ্কার সৃষ্টি করে। এ নিয়ে কিছুটা বিতর্কের জায়গা থেকেই যায়। বাংলাদেশ কি কেবল সংখ্যালঘু নির্যাতনেরই দেশ? এখানকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্বদের মুখে প্রতিনিয়ত আমরা যে ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা শুনি, তা কি কেবলি লোক দেখানো? এ পর্যায়ে মনে হতে পারে ১৯৭১ সালে শরণার্থীদের যে মুক্তিযুদ্ধ ছিল তা আসলে শেষ হয়নি, এখনো চলমান। প্রসঙ্গক্রমে মিহির সেনগুপ্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সংবাদপত্রের তথ্য ব্যবহার করেছেন। এমনকি এ বইয়ের শেষ অধ্যায়ে তিনি ‘সত্যকে সবার এত ভয়? এত ভয়’ শিরোনামে আবেদ খানের একটি কলামও ব্যবহার করেছেন। যে কলামে তৎকালীন সরকারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা দানে ব্যর্থতা আর সংখ্যালঘুদের নির্যাতিত হওয়ার চিত্রই ফুটে ওঠে। মনে হয়, বইটি যেন লিখিত হয়েছে মূলত ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সংখ্যালঘু নির্যাতনকে ফোকাসে রাখার তাগিদেই।
মিহির সেনগুপ্ত খুব সাবলিলভাবে তার লেখায় বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি কখনও কখনও চলতি ভাষার সঙ্গে সাধু ভাষা মিলিয়ে ব্যবহার করেন, যা বেখাপ্পা মনে হওয়ার কথা থাকলেও তাঁর ভাষা ব্যবহারের কুশলতায় শেষ পর্যন্ত বেখাপ্পা লাগে না। এ প্রবণতা তাঁর আগের অনেক লেখাতে দেখা গেছে, এ বইতেও রয়েছে যা খুব সহজেই পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কলকাতার প্রচলিত গদ্যের ভাষা থেকে তার ভাষাকে আলাদা করে তোলে।
‘শরণার্থীর মুক্তিযুদ্ধ’ এক বিষাদময় আত্মস্মৃতিমূলক আখ্যান যা বাংলাদেশের এক ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরে। এখানে ১৯৭১ এর পূর্ববর্তী কিংবা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কাল থেকে শুরু করে ২০০১ সময়কালে হিন্দু মুসলিম সমস্যাটা শুধু আসেনি, এসেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিক মনস্তত্ব, জীবনসংগ্রাম, পাশাপাশি স্বপ্ন দ্রষ্টা কিছু মানুষের উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা- মোট কথা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিসেবে নির্যাতি হওয়ার একাংশের ইতিহাস ও মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র।
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন