পোশাক-সচেতন রবীন্দ্রনাথ
সেলিনা হোসেন
রবীন্দ্রনাথের পোশাকে নিজস্ব ঢঙের দারুণ ফ্যাশন ছিল। এই ফ্যাশন তাঁর নিজের তৈরি। অবিশ্বাস্য সত্য এই যে তিনি একাই এই পোশাক ব্যবহার করেছেন। তাঁর সময়ে অন্য কোনো লেখক বা অন্য কোনো জমিদারের ছবিতে এই পোশাক দেখা যায় না।
এখানেই রবীন্দ্রনাথের বিশেষত্ব।
ফ্যাশনকে তিনি নিজস্ব মননশৈলীতে দেখেছেন। এই দেখা ছিল মানুষের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে একটি অসাধারণ বিবেচনা।
‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসের এক জায়গায় কবি বলেছেন, ‘ফ্যাশন হলো মুখোশ, স্টাইলটা হলো মুখশ্রী।’
মুখোশ বলতে যদি গাত্রাবরণ বুঝিয়ে থাকেন, তবে স্টাইলের শ্রীতে তাঁর জোব্বা ঢংয়ের গাত্রাবরণ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। যৌবনে স্যুট পরেছেন। পরিণত বয়সে স্যুটপরা ছবি আর দেখা যায় না। তিনি নিজের ফ্যাশনকেই শ্রেয় মনে করেছেন।
এই পোশাক তাঁর শারীরিক সৌন্দর্যের সঙ্গে যুক্ত করেছে এক অসাধারণ মাত্রা। শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদপুরের প্রজারা এখন থেকে একশো বছর আগে তাঁকে মহামানব হিসেবে দেখেছিলেন। তাঁরা তেমন অনুভবের কথা প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদেহী সুঠাম মানুষটি জোব্বা পরে তাঁর বাবরি চুল এবং দাড়িসহ যখন মাঠের মাঝখানে দাঁড়াতেন বা হাঁটতেন তখন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতেন প্রজারা।
যেন আকাশের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে আছেন কোনো দেবদূত।
এখানে ফ্যাশন এবং স্টাইল যুক্ত হয়ে যেত।
‘বাল্মীকির প্রতিভা’ তাঁর প্রথম মঞ্চস্থ গীতি নাটক। তিনি নিজে বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তাঁর পোশাক, গলার মালা থেকে পায়ের জুতো পর্যন্ত বলে দেয় নাটকের পোশাক নিয়েও তিনি কতটা ভাবতেন। প্রতিটি নাটকের পোশাক নিয়ে তাঁর ভাবনার শেষ ছিল না।
বাংলার কবি নবীনচন্দ্র সেন রবীন্দ্রনাথের শারীরিক সৌন্দর্য বর্ণনায় লিখেছেন. ‘...মুখাবয়ব দেখিলে চিত্রিত খ্রিস্টের মুখ মনে পড়ে।’ আশি বছর বয়সের রবীন্দ্রনাথকে দেখে কবি বুদ্ধদেব বসু তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন। লিখেছিলেন, অমন রূপবান হতে বুঝি অত বছর সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
ব্রাসেলসে রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলেন Gaston Denys Perier নামের এক ফরাসি লেখক। তিনি লেখেন, ‘A face like that of Christ, bronzed, Serene and superb, came into view।’ বার্লিনে রবীন্দ্রনাথকে দেখে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত লেখেন, ‘he was more impressive in appearance than most of the conceptions of Christ।’
দেশে এবং বিদেশে কবি তাঁর অসাধারণ সৌন্দর্যের সঙ্গে যুক্ত করেছেন ফ্যাশন সচেতনতাকে। তাঁর পা-পর্যন্ত নামানো আলখাল্লার ডিজাইন সব সময় এক রকম নয়। ছবিতে দেখা যায় নানা রকম এবং একই সঙ্গে কাপড়ের মানও আশ্চর্য সুন্দর।
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ছবির বই ‘Rabindranath Tagore : A Journey Through The Lenses’-এর প্রতি পৃষ্ঠা প্রমাণ করে কবি কতটা পোশাকের ডিজাইন সচেতন ছিলেন।
১৮-০৪-২০১১
সেলিনা হোসেন
বইয়ের হাট ব্লগ
শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
চালু হয়েছে বইয়ের হাট ব্লগ। এখন থেকে এখানে প্রকাশিত হবে বাংলা সাহিত্যের নানা অনুষঙ্গের বাছাইকৃত অংশবিশেষ। দীর্ঘ লেখা নয়, মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটে পড়ে ফেলা যায় এমন সব লেখা নিয়ে সাজানো হবে বইয়ের হাটের ব্লগ। লেখাগুলো আশাকরি পাঠকের পাঠাভ্যাস ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে চলেছি। পাশে থাকুন, আমাদের সমৃদ্ধ করুন, নিজেকে আলোকিত করুন। ধন্যবাদ।
রবীন্দ্রনাথের পোশাকে নিজস্ব ঢঙের দারুণ ফ্যাশন ছিল। এই ফ্যাশন তাঁর নিজের তৈরি। অবিশ্বাস্য সত্য এই যে তিনি একাই এই পোশাক ব্যবহার করেছেন। তাঁর সময়ে অন্য কোনো লেখক বা অন্য কোনো জমিদারের ছবিতে এই পোশাক দেখা যায় না।
এখানেই রবীন্দ্রনাথের বিশেষত্ব।
ফ্যাশনকে তিনি নিজস্ব মননশৈলীতে দেখেছেন। এই দেখা ছিল মানুষের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে একটি অসাধারণ বিবেচনা।
‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসের এক জায়গায় কবি বলেছেন, ‘ফ্যাশন হলো মুখোশ, স্টাইলটা হলো মুখশ্রী।’
মুখোশ বলতে যদি গাত্রাবরণ বুঝিয়ে থাকেন, তবে স্টাইলের শ্রীতে তাঁর জোব্বা ঢংয়ের গাত্রাবরণ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। যৌবনে স্যুট পরেছেন। পরিণত বয়সে স্যুটপরা ছবি আর দেখা যায় না। তিনি নিজের ফ্যাশনকেই শ্রেয় মনে করেছেন।
এই পোশাক তাঁর শারীরিক সৌন্দর্যের সঙ্গে যুক্ত করেছে এক অসাধারণ মাত্রা। শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদপুরের প্রজারা এখন থেকে একশো বছর আগে তাঁকে মহামানব হিসেবে দেখেছিলেন। তাঁরা তেমন অনুভবের কথা প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদেহী সুঠাম মানুষটি জোব্বা পরে তাঁর বাবরি চুল এবং দাড়িসহ যখন মাঠের মাঝখানে দাঁড়াতেন বা হাঁটতেন তখন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতেন প্রজারা।
যেন আকাশের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে আছেন কোনো দেবদূত।
এখানে ফ্যাশন এবং স্টাইল যুক্ত হয়ে যেত।
‘বাল্মীকির প্রতিভা’ তাঁর প্রথম মঞ্চস্থ গীতি নাটক। তিনি নিজে বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তাঁর পোশাক, গলার মালা থেকে পায়ের জুতো পর্যন্ত বলে দেয় নাটকের পোশাক নিয়েও তিনি কতটা ভাবতেন। প্রতিটি নাটকের পোশাক নিয়ে তাঁর ভাবনার শেষ ছিল না।
বাংলার কবি নবীনচন্দ্র সেন রবীন্দ্রনাথের শারীরিক সৌন্দর্য বর্ণনায় লিখেছেন. ‘...মুখাবয়ব দেখিলে চিত্রিত খ্রিস্টের মুখ মনে পড়ে।’ আশি বছর বয়সের রবীন্দ্রনাথকে দেখে কবি বুদ্ধদেব বসু তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন। লিখেছিলেন, অমন রূপবান হতে বুঝি অত বছর সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
ব্রাসেলসে রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলেন Gaston Denys Perier নামের এক ফরাসি লেখক। তিনি লেখেন, ‘A face like that of Christ, bronzed, Serene and superb, came into view।’ বার্লিনে রবীন্দ্রনাথকে দেখে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত লেখেন, ‘he was more impressive in appearance than most of the conceptions of Christ।’
দেশে এবং বিদেশে কবি তাঁর অসাধারণ সৌন্দর্যের সঙ্গে যুক্ত করেছেন ফ্যাশন সচেতনতাকে। তাঁর পা-পর্যন্ত নামানো আলখাল্লার ডিজাইন সব সময় এক রকম নয়। ছবিতে দেখা যায় নানা রকম এবং একই সঙ্গে কাপড়ের মানও আশ্চর্য সুন্দর।
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ছবির বই ‘Rabindranath Tagore : A Journey Through The Lenses’-এর প্রতি পৃষ্ঠা প্রমাণ করে কবি কতটা পোশাকের ডিজাইন সচেতন ছিলেন।
১৮-০৪-২০১১