Ticker

6/recent/ticker-posts

সাক্ষাৎকার নারায়ণ দেবনাথ

সাক্ষাৎকার নারায়ণ দেবনাথ


আমার মতো কমিকস-শিল্পী শিশুসাহিত্যিকের মর্যাদা পেয়েছে, সেটা খুব বড় কথা।
সাক্ষাৎকার
নারায়ণ দেবনাথ

হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল-দি-গ্রেট, নন্টে-ফন্টের স্রষ্টা হিসেবে তাঁর পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা অনস্বীকার্য। নিজের জীবন, অন্যান্য নানা কাজ-সৃষ্টি নিয়ে কথা বললেন নারায়ণ দেবনাথ। শুনলেন দেবাশীষ দেব।

দেবাশীষ দেব: আপনি তো নব্বই পেরোলেন, অথচ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত নিয়মিত কমিকস স্ট্রিপ করে গিয়েছেন মাসে তিন-চারটে করে।একটানা পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চালিয়ে গিয়েছেন ‘হাঁদা ভোঁদা’, যেটা তো মনে হয় একটা বিশ্বরেকর্ড!

নারায়ণ দেবনাথ: হতে পারে, লোকের ভাল লেগেছে, তাই আমি করে গিয়েছি। তবে এখন আর ইচ্ছে হয় না, তেমন উৎসাহ পাই না।
প্র: আপনার জন্ম তো এই হাওড়ার বাড়িতেই।
উ: হ্যাঁ, তবে আমাদের দেশ হল ওপার বাংলায়। আমার বাবা-কাকারা এখানে চলে এসে বাড়ি বানান, গয়নার ব্যবসা শুরু করেন। কাকা ছিলেন নকশাদার, তাগার ওপর relief-এর কাজ করতেন, সোনার পাতের ওপর ঠুকে-ঠুকে লতাপাতা এইসব। কাকার কাজ দেখতে দেখতেই আমার ছবি আঁকার শুরু। ভাল ছবি-টবি পেলেই কপি করতাম। যারা দেখত বলত, ওকে আর্ট কলেজে দিয়ে দাও। সেটা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়। পাড়ায় একটা ছেলে ছিল, সে আমায় নিয়ে গিয়ে তুলল একটা প্রাইভেট কলেজে। প্রিন্সিপাল ছিলেন লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অফ আর্ট থেকে পাশ করা, নাম কী রায়চৌধুরী... আমাকে খুব ভালবাসতেন। তো, এইভাবে দু’বছর চলল। পরে আমাদের কলেজ ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের সঙ্গে মিশে গেল। আমাকে কমার্শিয়াল আর্ট নিতে হয়েছিল। কারণ, সবাই বলত, ‘দূর, এরা তো বেরিয়ে খেতে পাবে না।’ পাশ করার পর দেখলাম সত্যিই ফাইন আর্টস-এ কিছুই নেই। তখন ওই লেবেল-টেবেল-এর কাজ আসতে লাগল। তবে সিনেমা স্লাইড-টা বেশি করতাম।

প্র: চাকরি-টাকরি কিছু পাননি?
উ: সারা জীবন কোথাও কোনও বাঁধা মাইনের চাকরি করিনি, শুধু কয়েকমাস গরাণহাটার ‘দাস ব্রাদার্স’ বলে একটা প্রেসে আলতা, সিঁদুরের প্যাকেটের ওপর লেটারিং করার কাজ ছাড়া। ওখানে আমার মতো আরও দু’-তিনজন লেটারিং আর্টিস্ট ছিল।
প্র: ইলাস্ট্রেশন করা শুরু হল কীভাবে?
উ: ওই সময় কালিদাস রায়ের অনুবাদ-কবিতার বই ‘ত্রিবেণী’-র একটা এডিশনের জন্য ছবি এঁকেছিলাম এবং সেই সূত্রেই আলাপ হল সুবোধ মজুমদারের সঙ্গে, উনি তখন দেব সাহিত্য কুটিরের সবকিছু দেখাশোনা করতেন, সেই থেকে যুক্ত হয়ে গেলাম এই সংস্থার সঙ্গে। সেটা ১৯৫০ সাল। তবে চাকরি করিনি। নিয়মিত ছোটদের ‘শুকতারা’ পত্রিকার প্রচ্ছদ আর ইলাস্ট্রেশন করা শুরু হল।
প্র: তখন তো ওখানে শিল্পী প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব নামডাক।
উ: হ্যাঁ, আমাকে খুব ভালবাসতেন, থাকতেন হিন্দ সিনেমার উলটো দিকে, বাড়িতে প্রচুর পুরনো ইলাস্ট্রেটেড ইংলিশ ম্যাগাজ়িন ছিল, একজনের কাজ দেখিয়ে বলতেন ‘এই আর্টিস্ট-কে আমি দশ বছর ধরে ফলো করেছি।’ মনে আছে কী সাংঘাতিক রিয়্যালিস্টিক কাজ, স্টাইলটাকে ভাল না বেসে উপায় নেই। প্রতুলবাবুর কাজ দেখেও শিখেছি অনেক কিছু, তারপর নানারকম চেঞ্জ করতে করতে নিজের স্টাইল তৈরি হয়ে গেল। সুবোধবাবু বলতেন, কখনও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছে আঁকবেন না... অ্যাকশন দেবেন। একজন বর্শা ছুড়ছে, তার বডি পসচার কী হবে মাথায় রাখতাম। প্রতুলবাবু বলতেন, ফিগার আঁকতে গেলে মনে রাখবে শরীরের হাড়গোড়, অ্যানাটমি যার করায়ত্ত তার হিউম্যান ফিগার কখনও ভুল হবে না।
প্র: এর পর তো কমিকস শুরু করলেন।
উ: হ্যাঁ, ১৯৬১ সালে ‘আনন্দবাজার’-এ ছোটদের পাতায় আমি প্রথম ধারাবাহিক কমিকস করি ‘রবি ছবি’ নামে, রবীন্দ্রনাথের জীবনী, ওই বছর ওঁর শতবর্ষ চলছে। তখন ওই পাতাটা দেখতেন বিমল ঘোষ, মানে মৌমাছি। লেখাটা ওঁরই ছিল... এর পর বিবেকানন্দ, শিবাজি, এঁদের নিয়েও কমিকস করেছি। এর পর বিমলবাবু ছেড়ে দিলেন, আমার কাজও বন্ধ হয়ে গেল।
প্র: কিন্তু তার আগে থেকেই তো আপনি আনন্দবাজারের ছোটদের বিভাগ ‘আনন্দমেলা’-য় নিয়মিত ইলাস্ট্রেশন করতেন।
উ: হ্যাঁ, ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭০-এর দশকের গোড়া অবধি করেছি।
প্র: এর মাঝেই তো ‘হাঁদা ভোঁদা’ শুরু হল...
উ: হ্যাঁ, ১৯৬২ সালে ‘শুকতারা’-তে। সুবোধবাবুর ছোটভাই ছিলেন ক্ষীরোদবাবু, উনিই প্রস্তাবটা দেন... ছোটদের জন্য বিদেশে তো কতরকমের কমিকস হয়, আপনি ওইরকম কিছু ভাবুন। আমি টারজ়ান ছাড়া তখনও বিশেষ কমিকস-টমিকস দেখিনি। ভাবলাম, চেষ্টা তো করা যাক। আমাদের বাড়ির চারদিকে ছোটরা সারা দিন যেসব বিদঘুটে কাণ্ডকারখানা করে বেড়াত, আমি সেগুলোকেই কাজে লাগিয়ে হাঁদা ভোঁদা শুরু করলাম... দুটো ছেলে, একজন বেশি ওপরচালাকি করতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছে, আর-একজন ভাল। দু’-চারটে সংখ্যা বেরোবার পর ওঁরাই বললেন, খুব ভাল রেসপন্স পাচ্ছি, আপনি চালিয়ে যান।
প্র: এর পরেই তো বাঁটুল...
উ: হ্যাঁ, বছর তিনেক পর ১৯৬৫-তে। ওঁরা বললেন, এবার একটা রঙিন কমিকস করুন, তবে একটু অন্যরকমের হওয়া চাই। বাড়ি ফিরে ভাবতে ভাবতে প্রথমে বাঁটুল নামটা মাথায় এসে গেল, তারপর নানারকম আঁকিবুঁকি কাটতে কাটতে ক্যারেক্টারটা তৈরি হল। গল্প বানালাম।ব্যস, চলতে লাগল। এর কিছুদিন পরেই ভারতের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ লাগল, তখন ক্ষীরোদবাবু চাইলেন এটা নিয়ে কিছু করতে।ভাবলাম, অন্য দেশকে নিয়ে মজা করা কি ঠিক হবে... উনি বললেন ‘না না, এখন তো যুদ্ধ’। তো, আমি দেখালাম ওরা ট্যাঙ্ক নিয়ে আসছে আর বাঁটুল সেই ট্যাঙ্ক তুলে নিয়ে ওদের তাড়া করেছে! তারপর প্লেন আসছে বোমা ফেলতে আর বাঁটুল অমনি ল্যাসো দিয়ে প্লেনগুলোকে মাটিতে নামিয়ে আনছে। এইসব ঘটনাগুলো যদিও আজগুবি, কিন্তু দেখলাম সবার খুব ভাল লেগে গেল। মনে হয় সাধারণ লোক নিজে যা পারে না, যদি দেখে তা অন্য কেউ ঘটাচ্ছে, তখন খুব মজা পায়।
প্র: ওই সময় থেকেই আপনি কমিকস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন?
উ: হ্যাঁ, এর পর ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকা থেকে দীনেশবাবু (চট্টোপাধ্যায়) ডেকে পাঠিয়ে বললেন, আমাদেরও কমিকস দিন। ১৯৬৯ সাল থেকে শুরু হল ‘নন্টে আর ফন্টে’। ওখানেও দুটো ছেলের কাণ্ডকারখানা, তবে ঠিক হাঁদা ভোঁদা নয়, একটু অন্য ধরনের মজা।...
(সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি পড়ার জন্য নিচের Read Or Download বাটনটি ক্লিক করুন।)
সূত্রঃ বইয়ের দেশ’ অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৮ সংখ্যা