তখন ও এখন
গীতা দাস
আলোচনাঃ
যদি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখতাম আমার শৈশব আমরই দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে। তবে আমি কী করতাম? সকালে আঁখের পাটালিগুড় আর মুড়ি খেতে দিতাম তাকে,
তারপর বেড়িতে পড়তাম তাকে নিয়ে। দিগন্ত জোড়া মাঠের মধ্যে এসে দাঁড়াতাম, ঘুড়ি উড়াতাম। স্বপন সরকারের আমবাগানের আম চুরি করে পাড়তাম, মগডালে যে ফিঙে পাখিটা বাসা বেঁধেছে, তাদের ছোট্ট ছোট্ট ছানাদের দেখে আসতাম। কিংবা নিপেন মন্ডলের পুকুরে চুপি চুপি মাছ ধরতাম, নয়তো বুড়ি মাসির পাকা টসটসে বড়ই গাছ থেকে লাল টুকটুকে বড়ই পাড়তাম। সন্ধ্যেবেলা দাদুর মুখে দেশ বিদেশের নানা রোমাঞ্চকর গল্প শুনতাম। সবই করতাম তাকে নিয়ে, যা আমার হারিয়ে গেছে তা এক দিনেই ফিরে পেতে চাইতাম।
শরীর যত বুড়ো হতে শুরু করে, মৃত্যু যখন আর কাছে আসতে চায় তখন শুধুই বারবার করে শৈশবের সেই রঙিন স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায়। তাকে আগলে ধরতে ইচ্ছে করে।
আমাদের সকলের শৈশব একই রকম নয় কিন্তু আবেগ একই রকম। মানুষের স্বভাবই এই যে, আমাদের যা কিছু হারিয়ে যায় তা আগলে রাখতে চাই। আর তা যদি শৈশবের স্মৃতি হয়, তাহলে তখনও সখনও তা উপলব্ধি করতে গিয়ে চোখের কোনে জল এসে যায়, সে জল কোনটা সুখের, কোনটা দুঃখের।
বাস্তবতা বলছে, যুগের দ্রুত পরিবর্তন এসেছে। তাই পুরনো মানুষের সাথে নতুন যুগের ছেলে-মেয়েদের স্বভাব আর উপলব্ধীর পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। আজকের প্রজন্মদের কাছে আমাদের স্মিৃতিগুলো শুধুই রূপকথার গল্পের মতো শোনায়। আমার একজন ঠাকুরমা ছিলেন, যখন তিনি মারা যান কখন আমার বয়স ১৩ বছর আর উনার ১০৩। আমি তাকে মাঝে মাঝে বলতাম, ঠাকুমা, তোমার খুব দুঃখ হয় তাই না? তিনি বলতেন, কিসের দুঃখ?
আমি বলতাম, এই যে তোমার যৌবন কালে তুমি কত রং বেরঙের শাড়ী আর সোনার গয়না পড়ে স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তুলতে আর ছবিগুলো উঠত সাদাকালো।
কি লাভ হতো বলতো, অত যত্ন করে রঙিন পোশাক পড়ে? ঠাকুমা মুচকি মুচকি হাসতেন, তবে কিছু বলতেন না। হয়তো তিনি বুঝতেন যে, আমি সেই স্মৃতির আনন্দ উপভোগ করতে পারব না।
আজকে যে বইটি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি তা শৈশবকে ঘিরেই। লেখিকা তাঁর শৈশবের স্মৃতি আর সেই সোনাঝড়া আনন্দ-বেদনাঘন মুহূর্তগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন।
আজকের পৃথিবীতে বেড়ে ওঠা ছেলে-মেয়েদের শৈশবের সাথে তাঁর শৈশবের যে অমিল বা পার্থক্য তাও ফুটে উঠেছে এই বইটিতে। বইটি স্মৃতিচারণমূলক হলেও, এ থেকে ফুটে উঠেছে তৎকালীন সময়ের গ্রাম্য পরিবেশের বর্ণনা,
সমাজ ব্যবস্থা, গ্রাম্য মানুষদের আচার-আচরন, সংস্কৃতি আর একাত্মতার কথা। রয়েছে মেয়েদের পরাধীনতার কথা, ঘরের কোণে লুকিয়ে লুকিয়ে চাপা কান্নার কথা।
বইটি পড়ার সময় আমার শৈশবের সমস্ত স্মৃতি যেন একটি মাত্র চিত্রপটে দেখতে পাচ্ছিলাম। পড়ার প্রতিটি মুহূর্তে যেন মনে হচ্ছিল, এই তো আমার শৈশব, এই তো আমার গ্রাম, এই তো আমার সব। বইটি বর্তমান প্রজন্মের ছেলেবেলার সাথে
পুরনো আর ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মের সাথে একটি সেতু বন্ধন রচনা করছে বলে আমি মনে করি।
আমি একজন উত্তম সমালোচক নই। বইটি পড়ে মনের মধ্যে যে দুটি কথার উদয় হয়েছে তাই উপস্থাপন করেছি। লেখটি পড়ে নিজের ফেলে আসা শৈশবকে নতুন করে
আমার যেভাবে উপলব্ধি করেছি তার জন্য লেখককে অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতে তার কাছে থেকে আর ভাল ভাল লেখা পাব বলে আশা রাখছি। পরিশেষে সকলের প্রতি অনুরোধ রইল বইট পড়ুন। যদি ভাল লাগে তবে দু একটি কথা আমাদের সাথে শেয়ার করুন। এতে করে লেখক উৎসাহিত হবেন তার নব লেখনিতে। আমি লেখকের শতয়ু কামনা করছি।
উপরের আলোচনাটি, ইপাব করা ও অন্যান্য সকল কাজ করেছে আমাদের বইয়ের হাটের পরিচালক Sisir Suvro
গীতা দাস
আলোচনাঃ
যদি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখতাম আমার শৈশব আমরই দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে। তবে আমি কী করতাম? সকালে আঁখের পাটালিগুড় আর মুড়ি খেতে দিতাম তাকে,
তারপর বেড়িতে পড়তাম তাকে নিয়ে। দিগন্ত জোড়া মাঠের মধ্যে এসে দাঁড়াতাম, ঘুড়ি উড়াতাম। স্বপন সরকারের আমবাগানের আম চুরি করে পাড়তাম, মগডালে যে ফিঙে পাখিটা বাসা বেঁধেছে, তাদের ছোট্ট ছোট্ট ছানাদের দেখে আসতাম। কিংবা নিপেন মন্ডলের পুকুরে চুপি চুপি মাছ ধরতাম, নয়তো বুড়ি মাসির পাকা টসটসে বড়ই গাছ থেকে লাল টুকটুকে বড়ই পাড়তাম। সন্ধ্যেবেলা দাদুর মুখে দেশ বিদেশের নানা রোমাঞ্চকর গল্প শুনতাম। সবই করতাম তাকে নিয়ে, যা আমার হারিয়ে গেছে তা এক দিনেই ফিরে পেতে চাইতাম।
শরীর যত বুড়ো হতে শুরু করে, মৃত্যু যখন আর কাছে আসতে চায় তখন শুধুই বারবার করে শৈশবের সেই রঙিন স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায়। তাকে আগলে ধরতে ইচ্ছে করে।
আমাদের সকলের শৈশব একই রকম নয় কিন্তু আবেগ একই রকম। মানুষের স্বভাবই এই যে, আমাদের যা কিছু হারিয়ে যায় তা আগলে রাখতে চাই। আর তা যদি শৈশবের স্মৃতি হয়, তাহলে তখনও সখনও তা উপলব্ধি করতে গিয়ে চোখের কোনে জল এসে যায়, সে জল কোনটা সুখের, কোনটা দুঃখের।
বাস্তবতা বলছে, যুগের দ্রুত পরিবর্তন এসেছে। তাই পুরনো মানুষের সাথে নতুন যুগের ছেলে-মেয়েদের স্বভাব আর উপলব্ধীর পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। আজকের প্রজন্মদের কাছে আমাদের স্মিৃতিগুলো শুধুই রূপকথার গল্পের মতো শোনায়। আমার একজন ঠাকুরমা ছিলেন, যখন তিনি মারা যান কখন আমার বয়স ১৩ বছর আর উনার ১০৩। আমি তাকে মাঝে মাঝে বলতাম, ঠাকুমা, তোমার খুব দুঃখ হয় তাই না? তিনি বলতেন, কিসের দুঃখ?
আমি বলতাম, এই যে তোমার যৌবন কালে তুমি কত রং বেরঙের শাড়ী আর সোনার গয়না পড়ে স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তুলতে আর ছবিগুলো উঠত সাদাকালো।
কি লাভ হতো বলতো, অত যত্ন করে রঙিন পোশাক পড়ে? ঠাকুমা মুচকি মুচকি হাসতেন, তবে কিছু বলতেন না। হয়তো তিনি বুঝতেন যে, আমি সেই স্মৃতির আনন্দ উপভোগ করতে পারব না।
আজকে যে বইটি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি তা শৈশবকে ঘিরেই। লেখিকা তাঁর শৈশবের স্মৃতি আর সেই সোনাঝড়া আনন্দ-বেদনাঘন মুহূর্তগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন।
আজকের পৃথিবীতে বেড়ে ওঠা ছেলে-মেয়েদের শৈশবের সাথে তাঁর শৈশবের যে অমিল বা পার্থক্য তাও ফুটে উঠেছে এই বইটিতে। বইটি স্মৃতিচারণমূলক হলেও, এ থেকে ফুটে উঠেছে তৎকালীন সময়ের গ্রাম্য পরিবেশের বর্ণনা,
সমাজ ব্যবস্থা, গ্রাম্য মানুষদের আচার-আচরন, সংস্কৃতি আর একাত্মতার কথা। রয়েছে মেয়েদের পরাধীনতার কথা, ঘরের কোণে লুকিয়ে লুকিয়ে চাপা কান্নার কথা।
বইটি পড়ার সময় আমার শৈশবের সমস্ত স্মৃতি যেন একটি মাত্র চিত্রপটে দেখতে পাচ্ছিলাম। পড়ার প্রতিটি মুহূর্তে যেন মনে হচ্ছিল, এই তো আমার শৈশব, এই তো আমার গ্রাম, এই তো আমার সব। বইটি বর্তমান প্রজন্মের ছেলেবেলার সাথে
পুরনো আর ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মের সাথে একটি সেতু বন্ধন রচনা করছে বলে আমি মনে করি।
আমি একজন উত্তম সমালোচক নই। বইটি পড়ে মনের মধ্যে যে দুটি কথার উদয় হয়েছে তাই উপস্থাপন করেছি। লেখটি পড়ে নিজের ফেলে আসা শৈশবকে নতুন করে
আমার যেভাবে উপলব্ধি করেছি তার জন্য লেখককে অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতে তার কাছে থেকে আর ভাল ভাল লেখা পাব বলে আশা রাখছি। পরিশেষে সকলের প্রতি অনুরোধ রইল বইট পড়ুন। যদি ভাল লাগে তবে দু একটি কথা আমাদের সাথে শেয়ার করুন। এতে করে লেখক উৎসাহিত হবেন তার নব লেখনিতে। আমি লেখকের শতয়ু কামনা করছি।
উপরের আলোচনাটি, ইপাব করা ও অন্যান্য সকল কাজ করেছে আমাদের বইয়ের হাটের পরিচালক Sisir Suvro
বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক!