Ticker

6/recent/ticker-posts

বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র - এম. এ. ওয়াজেদ আলী

বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র - এম. এ. ওয়াজেদ আলী
বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র
এম. এ. ওয়াজেদ আলী

ভূমিকা


স্বাধীন বাংলাদেশ তথা এ ভূখণ্ডের স্বাধীন বাঙ্গালী জাতিকে তার সুদীর্ঘকালের স্বপ্ন, আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে ও মূল্যবােধ প্রতিষ্ঠায় যে অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম ও বিপুল ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে তার কিছু বিবরণ এই গ্রন্থটিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সেসব আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতি অনেক সাফল্য অর্জন করলেও তার স্বপ্ন ও আশা আকাক্ষার অনেক কিছু অপূর্ণ রয়ে গেছে। জাতির সেসব ব্যর্থতা ও হতাশার কারণ কি এবং তার জন্য কে বা কারা দায়ী, জাতির রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিমণ্ডলে ঘটে যাওয়া অনেক উল্লেখযােগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই গ্রন্থে পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সে সম্পর্কে কিছুটা আলােকপাতের প্রয়াস করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন তৎপরতা ও কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক তৎপরতা ও কর্মকাণ্ড সংগঠনে এবং জনমত গড়ায় যাদের সার্থক ভূমিকা পালন ও আবদান রাখার অবকাশ রয়েছে, সেসব নেতা-কর্মী জাতির স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কতটুকু দায়িত্ববােধের পরিচয় দিয়েছেন সে সম্পর্কেও এই গ্রন্থে কিছুটা তার আলােকপাতের চেষ্টা করা হয়েছে।


১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত উপমহাদেশকে বিভক্ত করে পাকিস্তান নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপিত হলে বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষ তার নিজেদের আদর্শ ও বিশ্বাসের অনেক কিছু বিসর্জন দিয়েও পাকিস্তানের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন এই আশায় যে, নতুন রাষ্ট্র কাঠামাের মধ্যে থেকেও তারা অধিকতর স্বাধীনভাবে নিজেদের ঐতিহ্য, শিল্প সংস্কৃতি-ভাষার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে, প্রশাসন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় এবং সর্বোপরি আদর্শ, বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়নের সুযােগ পাবেন। কিন্তু, পাকিস্তানের সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানী ও পশ্চিম পাকিস্তানে স্থায়ীভাবে আশ্রয় গ্রহণকারী উর্দুভাষী, বিশেষ করে পাঞ্জাবী সামরিক-বেসামরিক শাসকগােষ্ঠী এ ভূখণ্ডের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি অবলম্বন করে এবং এ অঞ্চলের মানুষের ভাষা-সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে প্রশাসনিক ও সামরিক আধিপত্য বিস্তার এবং অন্যান্য শােষণ-বঞ্চনার মাধ্যমে এ ভূখণ্ডকে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি কলােনীতে পরিণত করার চক্রান্তে লিপ্ত থাকে। এ ভূখণ্ডেরই অনেক নেতা-কর্মী তাদের নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগােষ্ঠীর সে চক্রান্তে সহায়তাও করেছিল।


পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠীর সেসব চক্রান্তের বিরুদ্ধে এ ভূখণ্ডের মানুষ বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্নভাবে অনেক প্রতিবাদ ও আন্দোলন করেছেন এবং প্রাণও বিসর্জন দিয়েছেন। অবশেষে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এ ভূখণ্ডের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘােষিত বাঙালীর মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬-দফার ভিত্তিতে এ ভূখণ্ডের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হন। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগােষ্ঠী ও কতিপয় চক্রান্তকারী রাজনীতিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সে দাবি মেনে নিলে তিনি বাঙ্গালী জাতিকে এ ভূখণ্ডের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার জন্য উজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক বেসামরিক শাসকগােষ্ঠী এবং কতিপয় রাজনৈতিক কুচক্রী মহল এ ভূখণ্ডের মানুষকে চিরতরে দাবিয়ে রাখতে গণহত্যা শুরু করলে এদেশের কতিপয় পশ্চিম পাকিস্তানী দালাল ছাড়া ধর্ম, বর্ণ, গােত্র ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমগ্র বাঙ্গালী জনগােষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আহবানে পশ্চিম পাকিস্তানের নিগড় থেকে দেশকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সশস্ত্র সংগ্রাম ও যুদ্ধে লিপ্ত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশিত পথে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধ করে এবং লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে বাঙ্গালী জাতি তার স্বাধীনতা ও স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করে। তারপর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে পাকিস্তানী নেই একই সামরিক-বেসামরিক শাসকগােষ্ঠী ও কতিপয় রাজনৈতিক কুচক্রী মহল তাকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে নতুন করে ষড়যন্ত্র আঁটে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে পাকিস্তানের সে ষড়যন্ত্রের সহায়তা ও অংশ গ্রহণ করে এদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মুষ্টিমেয় পাকিস্তানী এজেন্ট, কতিপয় বিভ্রান্ত রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সেই একই স্বাধীনতাবিরােধী রাজনৈতিক কুচক্রী মহল। সেসব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের সেই একই শাসকগােষ্ঠী ও রাজনৈতিক কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে সপরিবারে হত্যা করে। বাংলাদেশে সংঘটিত সেসব ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং সেসব ঘটানাের মূল উদ্দেশ্যও এই গ্রন্থে আলােচনা করা হয়েছে।


১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের সে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনার পর বাংলাদেশে জারি করা হয় সামরিক শাসন। ঐ সুযােগে বাংলাদেশের কতিপয় মুষ্টিমেয় উচ্চাভিলাষী সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের চক্রান্তে লিপ্ত হয়। সে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সেনা বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল (পরবর্তীকালে লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। দেশে গণতন্ত্র রক্ষার নামে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জিয়াউর রহমান সামরিক শাসনের ক্ষমতাবলে প্রথমে তার ওপর জনগণের আস্থা আছে কি-না সে সম্পর্কে হঁ্যা বা না-এর প্রহসনমূলক গণভােটের ব্যবস্থা করেন এবং তারপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নামক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে বিপুল রাষ্ট্রীয় অর্থ-সম্পদের অপচয়ের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিকে রাজনীতিকদের জন্য কঠিন করে তােলেন। সামরিক আইনের সুযােগে ও ক্ষমতা বলে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে ধূলিসাৎ করে দেশে সেই পাকিস্তানী মতাদর্শ ও ধ্যান-ধারণার পুনঃপ্রবর্তন করেন। শুধু তাই নয়, তার সাড়ে পাঁচ বছরের শাসন আমলে রাষ্ট্রপতির পদের নির্বাচন, জাতীয় সংসদের নির্বাচন প্রভৃতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সেসব ছিল অনেকাংশে প্রহসনমূলক এবং সেসবে ঘটেছে ব্যাপক নিয়মনীতি লংঘন, বিপুল কারচুপি ও অজস্র অর্থের ছড়াছড়ি। সেসবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কলুষিত করেন দারুণভাবে। জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে ঘটা সেসব ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণও এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।


১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ তারিখে পাকিস্তানী ধ্যান-ধারণার সমর্থক বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অপর একটি ক্ষুদ্র গ্রুপের নেতৃত্বে তৎকালীন বাংলাদেশ সেনা বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল (পরবর্তীতে লে. জেনারেল) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন এবং একই সঙ্গে দেশে পুনরায় সামরিক আইন জারি করা হয়। প্রথমে সামরিক আইন বলে এবং পরবর্তীতে সামরিক বাহিনীর একাংশকে ব্যবহার, নানান ছল-চাতুরি, অপকৌশল, ভাওতাবাজি, বিপুল রাষ্ট্রীয় অর্থ-সম্পদের অপব্যবহার ও ব্যাপক দুর্নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে এরশাদ স্বৈরাচারী স্টাইলে সুদীর্ঘ পৌনে নয় বছর দেশ শাসন করেন। ঐ সময়ে তিনিও পূর্বসূরী জিয়াউর রহমানের মতাে প্রথমে তার ওপর জনগণের আস্থা আছে কি-না সে ব্যাপারে হ্যা বা না-এর গণভােট অনুষ্ঠান এবং পরবর্তীতে দুর্নীতিবাজ ও আদর্শবিবর্জিত দলছুট রাজনীতিবিদ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও আমলাদের নিয়ে জাতীয় পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তারপর, তিনিও জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতির পদে প্রহসনমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। সেসব ক্রিয়াকাণ্ডে এরশাদ বিপুল রাষ্ট্রীয় অর্থ-সম্পদ ও সুযােগ-সুবিধাদির অপব্যবহার করেন, বিশেষ করে তার শাসন আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচন গুলােয় ঘটে সামরিক বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের চরম অপব্যবহার, সশস্ত্র মাস্তান-সন্ত্রাসীদের দ্বারা ভােটকেন্দ্র দখল করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের পক্ষে ব্যালট পেপারে সীল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তিকরণ, ব্যাপক ভােট কারচুপি, নির্বাচনের রেজাল্টশীটে ভােটের ফলাফল পাল্টে দিয়ে রাষ্ট্রীয় গণপ্রচার মাধ্যমে নির্বাচনে পরাজিত জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের বিজয়ী ঘােষণা ইত্যাদি ন্যক্কারজনক ঘটনা। সেসব ন্যক্কারজনক, বিবেকবিবর্জিত ও হিতাহিত জ্ঞানশূন্য ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শুধু দেশের রাজনীতিই নয়, নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াকেও সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেন। অবশেষে, ১৯৯০ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ৮-দলীয় জোট, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭-দলীয় জোট ও বামফ্রন্টের ৫-দলীয় জোটের যৌথ আন্দোলনে সৃষ্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে এরশাদ ৬ই ডিসেম্বর (১৯৯০) তারিখে রাষ্ট্রপতির পদে ইস্তফা দিয়ে উল্লিখিত তিন জোটের প্রস্তাব অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের কাছে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত মােটামুটি অবাধ, সুষ্ঠু ও দল-নিরপেক্ষ নির্বাচনে দেশের পঞ্চম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। সে সময়পর্বে সংঘটিত অনেক রাজনৈতিক ঘটনা এবং সর্বোপরি, এরশাদের স্বৈরাচারী ও বেপরােয়া ক্রিয়াকলাপের বিস্তারিত বিবরণও এই গ্রন্থে বিবৃত করা হয়েছে।


হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনে অংশ নিয়ে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও দল-নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয়েও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার গণতন্ত্রের মূল্যবােধ প্রতিষ্ঠায় ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক স্থায়ী রূপ দানে কোন বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি। এমন কি ১৯৯০ সালের ১৯শে নভেম্বরে ঘােষিত তিন জোটের রূপরেখায় উল্লিখিত অংগীকারসমূহ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নেও কোন আন্তরিক ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাছাড়াও ১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হলেও সরকারপ্রধান প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারী এরশাদের স্টাইলেই দেশ পরিচালনা করেন। তিনিও দলীয় স্বার্থে ও কাজে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্র, অফিস ভবন, যানবাহন, অর্থ-সম্পদ, সুযােগ-সুবিধাদি ও গণপ্রচার মাধ্যম, বিশেষ করে রেডিও ও টেলিভিশনের অপব্যবহার করেন দ্বিধালেশহীন ও নির্বিকারভাবে। জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনগুলােয়, বিশেষ করে, ঢাকা-১১ (মিরপুর) ও মাগুরা-২ আসন দুটোর উপনির্বাচনে বিরােধী দলগুলাের সমর্থকদের ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন, সশস্ত্র মাস্তান-সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ভােটকেন্দ্র দখল করে বিএনপি প্রার্থীদের পক্ষে ব্যালট পেপারে সীল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তিকরণ, বােমাবাজি, কালাে টাকার ছড়াছড়ি, নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের অপব্যবহার ইত্যাকার ঘটনা পরিদৃষ্ট হয়। সেসব ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরােধী দল আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি ও জামাতে ইসলামীসহ অন্যান্য বিরােধী গ্রুপ জাতীয় সংসদের ভবিষ্যৎ সকল সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের জন্য সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানায়। সে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই দলগুলাে সুদীর্ঘ নয় মাস ধরে সংসদের অধিবেশন বর্জনসহ আন্দোলন করে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে সম্মিলিত বিরােধী দলের নেতৃবৃন্দ সরকারী দল বিএনপি-এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে প্রবর্তনের প্রশ্নে কয়েক দফা বৈঠকও করেন। কিন্তু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রশ্নে বিএনপি সরকারের সঙ্গে কোন সমঝােতা না হওয়ায় জাতীয় সংসদের প্রধান বিরােধী দল আওয়ামী লীগ এবং অপর দুটি বিরােধী দল জাতীয় পার্টি ও জামাতে ইসলামীর সকল সাংসদ ২৮শে ডিসেম্বর (১৯৯৪) তারিখে একযােগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসন আমলের ঐ সময়পর্বে ঘটা সেসব ঘটনার প্রেক্ষিতসহ বিস্তারিত বিবরণও এই গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।


এই গ্রন্থে উপস্থাপিত লেখার প্রায় পুরােটাই দৈনিক আজকের কাগজে ১০ই আগস্ট (১৯৯৪) থেকে ৩০শে নভেম্বর (১৯৯৪) তারিখ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে একদিন পর পর প্রকাশিত হয়। সে প্রকাশনায় সম্মতি প্রদানের জন্য আজকের কাগজের সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি কাজী শাহেদ আহমদকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। এই লেখাটি ‘আজকের কাগজে প্রকাশনার সময় ঐ পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদক জনাব সালাম সালেহ উদ্দিন অত্যন্ত যত্ন ও আন্তরিকতার সঙ্গে এই প্রকাশনার ব্যাপারে দেখাশােনা ও তদারকি করেছেন। সেজন্য জনাব সালাম সালেহ উদ্দিনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এই গ্রন্থটি প্রবন্ধাকারে লেখার সময় দৈনিক ‘বাংলার বাণীর কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটির ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালের বেশ কিছু পুরনাে সংখ্যার কপি সরবরাহ করেছেন। তার জন্য বাংলার বাণী’র সম্পাদক শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং সার্কুলেশন ম্যানেজার সরদার রউফুল আমিন রউফকে সবিশেষ ধন্যবাদ জানাই। এই লেখাটি পুস্তকারে প্রকাশনায় সম্মত হওয়ায় ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মহিউদ্দিন আহমদকে এবং এ ব্যাপারে সার্বিক তদারকির জন্য ইউপিএল-এর সম্পাদক জনাব আবদার রহমানকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। পুস্তকাকারে প্রকাশনার পর্যায়ে লেখাটির সম্পাদনা ও পরিমার্জন করে জনাব বদিউদ্দিন নাজির অনেক উপকার করেছেন। তার জন্য তাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। এই লেখাটির হস্তলিপি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের স্টেনােগ্রাফার জনাব মােঃ হুমায়ুন কবির অত্যন্ত যত্ন নিয়ে এককভাবে টাইপ করেছেন। এজন্য তাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আজকের কাগজে প্রকাশিত লেখাটির কিছুটা পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে এই গ্রন্থটি প্রকাশ করা হলাে। এই গ্রন্থটির প্রকাশনার সময় অত্যন্ত যত্ন ও মনােযােগ সহকারে এর প্রুফ দেখা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই গ্রন্থের কোন রকমের ভ্রম বা তথ্যগত ত্রুটি কিংবা ঐ গ্রন্থে উল্লিখিত কোন ব্যক্তির নাম ভুলভাবে ছাপা হয়েছে এমন কোন ত্রুটি যদি কোন পাঠকের নজরে আসে, তাহলে অনুগ্রহপূর্বক সে সম্পর্কে লেখককে অবহিত করার জন্য সবিনয় অনুরােধ করা হলাে। এ জাতীয় ভ্রম বা ত্রুটি গ্রন্থটির পরবর্তী সংস্করণে সংশােধন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।

ঢাকা, ১লা ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৫
এম, এ, ওয়াজেদ মিয়া
পরমাণু বিজ্ঞানী

বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক!