মাথা উঁচু করে যাওয়া
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সারারাত ঘুম হয়নি। এমনকী দুচোখের পাতাও এককরতে পারেননি। এই এক হচ্ছে মুশকিল। বেশিক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকতে পারছেন না।
না ঘুমোলে কত রকম এলোমেলো চিন্তা আসে। দেশের কথা, প্রিয় মানুষদের কথা। কিন্তু মাঝে মাঝেই সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে মাথার যন্ত্রণার জন্য। কিছুতেই, এত ওষুধ খেয়েও,এই বিশ্রী ব্যথাটা যাচ্ছে না।
রাজা উঠে এসে দাঁড়ালেন জানালার কাছে।
আজ কত তারিখ? একুশ, না বাইশ? সেপ্টেম্বর মাস। এই সময় ইংল্যান্ডের প্রাকৃতিকশোভা অতি মনোহর। দেশেও এখন শরৎকাল। কিন্তু আমাদের শরতে গ্রীষ্ম-বর্ষার প্রচন্ড দাপট পুরোপুরি কাটে না। এখানে এরই মধ্যে শীতের মৃদু পরশ পাওয়া যায় হাওয়ায়।
ফ্রেঞ্চ উইন্ডো খুলে রাজা বেরিয়ে এলেন বারান্দায়।
এটা একটা প্রশস্ত বাগানবাড়ি প্রচুর বৃক্ষশোভিত। তাতে ফুটেছে অজস্র ফুল। সব ফুল তিনি চেনেন না দেশ বিভেদে গাছপালাও অন্যরকম হয়। কিছু কিছু পাখিও ডাকছে। তার মধ্যেএকটা পাখির ডাক চেনা মনে হয়। দেশের বুলবুলিরমতন।
স্নিগ্ধ বাতাসে জুড়িয়ে গেল কপাল, বুজে এলো চক্ষু। সারারাত যে আরামপাননি, এখন প্রকৃতি তাঁকে সেই শান্তি উপহারদিলো।
রাজার ইচ্ছে হলো, বারান্দা থেকে নেমে বাগানের ঘাসে একটু হাঁটবেন। কিন্তু খালি পা, তাঁকে ঠান্ডা লাগাতে নিষেধ করা হয়েছে। মাথা ধরে আছে, এখন একটু সাবধানে থাকাইভালো।
তিনি বসলেন সাদা লেস লাগানো একটি বেতের চেয়ারে।
দেশ থেকে আসবার আগে কয়েকজন তাঁকে সাবধান করে দিয়ে বলেছিল, অত দূরবিদেশে আবহাওয়া অন্যরকম, তা সহ্য না হতেপারে। হঠাৎ হঠাৎ শীত, তাতেই সান্নিপাতিক হবার খুব সম্ভাবনা।
তাঁরা এইসব জানলেন কী করে? নিজেরা তো কেউ সমুদ্র পাড়ি দেননি। শুনেছেন নাকি নাবিক-লস্করদের কাছ থেকে?
কয়েকজন ইংরাজ রাজপুরুষও সাবধান করতে চেয়েছিলেন। একমাত্র ডেভিড হেয়ার বলেছিলেন, যাও যাও বন্ধু, ঘুরে এসো, তোমার কোনো অনিষ্ট হবে না।
ডেভিড হেয়ার অনেক সাহায্য করেছেন। চিঠি লিখে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। আর তাঁর বোনকে বিশেষ করে বলে দিয়েছেন, সব সময়রাজার দেখাশুনো করতে। তা সে-মেয়েটি তো তাঁর এখনকার সর্বক্ষণের সঙ্গিনী। ভারি লক্ষ্মীশ্রীযুক্তা নারী।
বেশ কিছুদিন তো কেটে গেল, তাঁর শরীরের কোনোই ক্ষতি হয়নি। বরং মনে হয়,এ দেশের জলবায়ু আরো স্বাস্থ্যকর। লন্ডনে প্রচুর মানুষের সঙ্গে দেখা হলো। শুধু একটিই অসুবিধে, তিনি একা একা পথে বেরোতে পারেন না। পথচারীদের কৌতূহলী দৃষ্টি। শুধু কৌতূহলী নয়, তিনি বুঝতে পারেন কারো কারো দৃষ্টিতে অন্য কিছুও থাকে। আতঙ্ককিংবা ঘৃণা? যেন তারা এক আজব প্রাণী দেখছে।
শুধু গায়ের রঙের তফাৎ, তার জন্যই এতো দূরত্ব? মানুষেরই তো শরীর, মানুষেরই মস্তিষ্ক। তবে হ্যাঁ, অস্ত্রবলে ভারতীয়রা হেয়।
আবার এখানকার বিদ্বজ্জন সমাজে অন্য রকম প্রতিক্রিয়া হয়। যাঁরা তাঁর কথা আগে শোনেননি বা কিছুই জানেননা, তাঁরা তাঁর কথাবার্তা শুনে এমনই অবাক হন, যেন চক্ষু ঠেলেবেরিয়ে আসার মতন। এই নেটিভটি এমন ইংরেজি জানে? বাইবেল সম্পর্কে এতো জ্ঞান?
দেশে থাকতে ইউনিটারিয়ান চার্চের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। ওঁদের মতন তিনিও একেশ্বরবাদী। হিন্দুদের মূর্তিপূজায়তিনি বিশ্বাস হারিয়েছেন, এ-কথা রাজা আগেই ঘোষণা করেছেন।
হঠাৎ রাজার চোখে পড়ল বাগানের এক প্রান্তে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বড়জোর সাত-আট বছর বয়েস।সাদা ফ্রক ও নীল সোয়েটার পরা। মাথার চুলসব সোনালি। কী যে অপূর্ব সুন্দর দেখাচ্ছে, যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে এক পরি!
তিনি মনে মনে হাসলেন। তিনি স্বর্গও মানেন না।পরিদের অস্তিত্বেও বিশ্বাসী নন। তবু এরকম উপমা মনে এসেই যায়।
মেয়েটি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে।
রাজা একবার ভাবলেন, হাতছানি দিয়ে তাকে কাছে ডাকবেন। কিন্তু এর দৃষ্টিতে কী আছে? কৌতূহল, না ভয়? ডাকলে যদি না আসে, যদি দৌড়ে পালিয়ে যায়। থাক, এই কাননের অজস্র ফুলের সমারোহের মধ্যে সে পরি হয়েই দাঁড়িয়ে থাকে।
একটু পরেই ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো রামহরি। শশব্যস্ত হয়ে বললো, হুজুর, হুজুর, আপনি এই শীতের মধ্যে বসে আছেন। পায়ে ইস্টানিক পরেননি। আপনার শরীলে ব্যাধি আছে।
রাজা রামহরির কথা শোনারপর কোনো উত্তর না দিয়ে আবার তাকালেন বাগানের কোণে। পরি অদৃশ্য।
ঠান্ডা লাগছে ঠিকই, তাহলে আর বাইরে বসার দরকার নেই। রামহরি তাঁর হাত ধরতে গেল, রাজা ভ্রু কুঁচকে বললেন, ছাড়। আমার এমন কিছু ব্যাধি হয়নি।
রামহরি বললো, বাথ সেরে নিবেন? হট হবাটার নিয়ে আসি।
এই দুবছরে নিরক্ষর রামহরি বেশ ইংরেজি শিখেনিচ্ছে শুনে শুনে। বিচিত্র তার উচ্চারণ। রাজা একবার বলেছিলেন, আমার সামনে তোকে ইংরিজিবলতে হবে না। অন্য জায়গায় ফলাস যত পারিস।
পরে আবার তাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। থাক, যতখানি পারে শিখুক, মন্দ কি!
বাথটবে গরম জল ঢেলে দেবার পর তিনি রামহরিকেইঙ্গিত করলেন বাইরে দাঁড়াতে। কিন্তু নিজে স্নান করতে গিয়ে দেখলেন, তাঁর সারা শরীর কাঁপছে। অবসন্ন হয়ে পড়ছেন।
তিনি ভ্রু কুঞ্চিত করে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। এটা কী হচ্ছে? কেন এই দুর্বলতা? কয়েক দিন ধরেই হচ্ছে এরকম। অথচ সেরকম কোনো রোগের কথা তো বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
অতি কষ্টে নিজেই স্নানান্তে পোশাক পরে বেরিয়ে এলেন তিনি। একটুপরেই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসতে হবে। এ দেশে সুসজ্জিত হয়ে টেবিলে বসাই নিয়ম। রামহরি তাঁকে জোববাজুবিব ও মাথায় পাগড়ি পরালো।
পাশের ঘরে শোয় রাজার পুত্র রাজারাম আর একজন সঙ্গী রামরতন মুখোপাধ্যায়। তারাও জেগে উঠেছে। এখানে নির্দিষ্ট সময়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে ঘণ্টা বাজে।
রামহরি সেবাদাসদের দলে,সে দাঁড়িয়ে রইল দূরে। অন্য দুজনকে দুপাশে নিয়ে বসলেন রাজা। অন্যদিকে মিসেস হেয়ার আর এখানে যাঁরা আতিথ্য দিয়েছেন, তাঁদের পক্ষ থেকে মিস কেডেল আর মিস কাসেল।
এ দেশের নারীদের স্বাবলম্বী অবস্থা দেখে রাজা প্রায়ই ভাবেন, কবে দুর্ভাগা ভারতবর্ষে রমণীদের এমন সৌভাগ্য হবে। এ দেশের রমণীরা শিক্ষার সুযোগ পায়, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে, সম্পত্তিরঅধিকারিণী হয়। হায় বঙ্গনারী!
খেতে খেতে শ্রীমতি কেডেল জিজ্ঞেস করলেন, রাজা, কিছু যদি মনে না করেন, একটা প্রশ্ন করবো? কয়েকদিন ধরেই খুবকৌতূহল হচ্ছে।
রাজা বললেন, অবশ্যই প্রশ্ন করতে পারেন।
শ্রীমতী কেডেল সসঙ্কোচে বিনীতভাবে বললেন, আপনারা যে চারজন এসেছেন, এ ছাড়া আর কোনো ভারতীয় আমরা ব্রিস্টলে দেখিনি। আপনাদের চারজনেরই নাম রাম। ভারতীয়দের সকলেরই নাম কি রাম হয়?
রাজা সংযত হাস্য করলেন।কথাটা তো ঠিক।
তিনি বললেন, মিস কেডেল, আপনার যে-খটকা লেগেছে, তা অত্যন্ত সংগত। এখানেআমাদের চারজনেরই নামে রাম রয়েছে বটে, তবে এটা পিয়োরলি কো-ইন্সিডেন্টাল। ভারতীয়দের আরো নানা প্রকার ও বিচিত্র নাম হয়। যেমন আমার বন্ধু দ্বারকানাথ, যেমন…
তাঁকে আর কিছু বলতে হলো না, তাঁর সঙ্গীরাই গড়গড় করে অন্য ভারতীয় নাম বলে গেল।
ভেজিটেবল স্যান্ডউইচে এক কামড় দিতেই রাজার একবার হেঁচকি উঠলো। এরকম প্রায়ই হচ্ছে ইদানীং। কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। অথচ ভোজনরসিক হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল।
নাম প্রসঙ্গ এখনো চলছে।রাজা মনে মনে ভাবলেন, ইংরাজ পুরুষ বা রমণীদেরনামের উচ্চারণে তাঁর কোনো অসুবিধে হয় না। অথচ শিক্ষিত ইংরাজরাও একটি ভারতীয় শব্দ শুদ্ধউচ্চারণ করতে পারে না। রামের মতন একটি অতি সহজ শব্দকে এরা উচ্চারণ করের্যাম, যার অর্থ ভেড়া। একজন বিশিষ্ট পাদ্রি তাঁর পুরো নাম উচ্চারণ করেছিলেন এভাবে, ড়্যামমোহন রয়। তা শুনে তিনি আঁতকে উঠেছিলেন। তার চেয়ে শুধু রাজাই ভালো, তাও অনেকের ওষ্ঠে হয়ে যায় র্যাজা! আমরা পারি, অথচ তোমরা পারো নাকেন? চেষ্টা করো না, নাকি জিভের দুর্বলতা?
প্রসঙ্গান্তরে যাবার জন্য রাজা বললেন, আজ ভোরবেলা একটি বালিকাকে দেখলাম বাগানের এক কোণে। অপরূপ তার মুখশ্রী। বোধকরি কোনো প্রতিবেশীর কন্যা।
মিস কেডেল বিস্মিতভাবে তাকিয়ে রইলেন। পাশের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন রেভারেন্ড জন ফস্টার। তিনি একজন প্রবন্ধকার। ও বাড়িতে তো কোনো বালক-বালিকা নেই।
রাজা তাঁর কথায় কোনো উত্তর পেলেন না। উত্তর আশাও করলেন না।
তাঁর তলপেটে বেদনা শুরু হয়েছে এবং সে-কথা তিনি অন্যদের জানাতে চান না। ব্রেকফাস্ট শেষ হলে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, মাফ করবেন, আমি এখন কিছু সময় নিরিবিলিতে গ্রন্থপাঠ করতে চাই।
তিনি নিজের কক্ষে এসে প্রথমে বসলেন আরাম কেদারায়, কয়েক মিনিট পরেই তাঁর শুয়ে পড়তে ইচ্ছে হলো। এরকম দুর্বলতার জন্য রাজা নিজের ওপরেই ক্রুব্ধ হয়ে উঠলেন।
লন্ডনে দিনের পর দিন ব্যস্ততার পর ব্রিস্টলে এই আতিথেয়তার আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।
স্টেপলটন গ্রোভ নামে এই উদ্যানবাটিকাটি ব্রিস্টল শহর থেকে কিছুদূরে। অতি সুরম্য ভবন, ব্যবস্থাপনা এবং যত্নেরও কোনো ত্রুটি নেই। বিশ্রাম নেওয়ার পক্ষে আদর্শ।
লন্ডনে তাঁকে অনেক সভা-সমিতিতে উপস্থিত থাকতে হয়েছে। ভারতবর্ষ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ একেবারেই অজ্ঞ। কৌতুকের বিষয় এই যে, অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে ধর্ম সম্পর্কেই সকলের কৌতূহল বেশি। রাজা বারবার ঘোষণা করেছেন যে, তিনি হিন্দু ধর্মের মূর্তিপূজা মানেন না। তিনি একেশ্বরবাদী। তিনি যিশুকে মহামানব এমনকি ঈশ্বরপ্রেরিত বলতেও দ্বিধা করেননি। তবু অনেক জায়গাতেই তাঁকে প্রশ্ন শুনতে হয়, যিশুর জীবনের নানান অলৌকিক ঘটনা এবং পুনর্জাগরণও মানেন কিনা। যুক্তিহীন অলৌকিকতা মানতে রাজার দ্বিধা আছে। ভক্তরা সবইমানতে পারে, তারা তো প্রমাণ খোঁজে না।
কেউ কেউ ইঙ্গিত দেয়, রাজা কেন খ্রিষ্টধর্ম অবলম্বন করছেন না? তিনিসযত্নে এ-প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
এখানে তাঁর পরিচয় দেওয়াহয় হিন্দু ব্রাহ্মণ হিসেবে। তিনি সেই পরিচয়টাই বজায় রাখতে চান। তিনি যদিও জাতপাত মানেন না, তবু তিনি একজনব্রাহ্মণ পরিচারক সঙ্গে এনেছেন। তাঁর নিজের অঙ্গেও উপবীত আছে। দেশের লোক যেন বলতে না পারে ম্লেচ্চদের দেশে এসে অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে জাত খুইয়েছেন, পৈতৃক বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলছে দেশে, একবার যদি রটে যায় যে, তিনি জাত খুইয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে সম্পত্তিতেও তাঁর অংশ বরবাদ হয়ে যাবে। তাঁর সন্তানেরাও বঞ্চিত হবে। আগে সম্পত্তি, তারপর তো জাত।
কিন্তু এখানে এতো আদর, আপ্যায়ন, বিশ্রামের অঢেল সুযোগ, তবু শরীরে কেন জোর পাচ্ছেন না। আলস্যের তো সময় নেই। সামনে কতো কাজ।
হাউস অফ কমন্সের ভারতীয়বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।রাজা সেখানে একটা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। এ-বিষয়ে পার্লামেন্টে একটা বিলও পেশ হয়েছে। দেশের কৃষকদের অসহনীয় দুরবস্থার কথাও রাজা জানাতে চান। নারীগণের কথা… বুকের মধ্যে কে যেন দুমদুম করে দুবার ধাক্কা দিলো।
রাজা চমকে উঠলেন। একি মৃত্যুর মুষ্টাঘাত নাকি? মৃত্যু? এতো মানুষ থাকতে তাঁর কাছে আসতে যাবে কেন? তাঁর উন্নত শরীর, অটুট স্বাস্থ্য, রোগভোগ বিশেষ নেই। পৌরাণিক দেব-দেবীর মূর্তিতে তাঁর বিশ্বাস নেই, তাই যম কিংবা যমদূতদের চেহারা তাঁর মনে এলো না,তবু যেন একটা জ্যোতিপুঞ্জ, যেন মৃত্যুর প্রতীক হয়ে চেয়ে আছে, তাঁর মনে হলো।
তিনি শ্লেষের সঙ্গে বললেন, কী, আমাকে নিয়ে যেতে এসেছ নাকি? এতো ত্বরা কিসের? তেমন কোনোগুরুতর অপরাধ তো করিনি!
তারপর ধমক দিয়ে বসলেন, না, না যাও, যাও! আমি এখন মোটেই প্রস্ত্তত নই! আমার অনেক কাজ বাকি! অনেক দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। এরা শাসক জাতি। আমাদের দুখিনী দেশের তোকোনো ক্ষমতাই নেই, শুধু আবেদন-নিবেদন করে যেটুকু দাক্ষিণ্য আদায় করা যায়। এদের এতো ঐশ্বর্য, তা তো অনেকটা প্রাচ্য দেশ লুণ্ঠনেরই ফল।
কনুইয়ে ভর দিয়ে উঁচু রাজা আবার বললেন, না, আমি যাব না। আমি আবার উঠে দাঁড়াব। শরীরে যথেষ্ট বল আছ। বাহুতে, এই দ্যাখো, কতোখানি গুলি ফোলাতে পারি। ডেথ, তোমার প্রতি আমার চ্যালেঞ্জ রইল, তুমি কিছুতে আমাকে হারাতে পারবে না। যাও!
তিনি জোর করে উঠে দাঁড়ালেন এবং স্বভাবোচিত দর্পভরে লম্বা লম্বা পা পেলে পায়চারি করতে লাগলেন আরমনে মনে বলতে লাগলেন, যাও, যাও, পারবে না!
কিন্তু কয়েকবার পায়চারি করার পরই রাজারবক্ষদেশ উত্তাল হয়ে উঠল। তিনি কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়তে বাধ্য হলেন। তাঁর পালস রেট অনেক বেড়ে গেছে।
আস্তে আস্তে ফিরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন বিছানায়। কিছু খেতে ইচ্ছা করল না,তিনি উঠলেনও না। তিনি জ্ঞানও হারালেন না, ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসতে লাগলেন। তাঁরই নিজেরই দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দুর্বলতার জন্য রাগ হতেলাগল। তিনি হাঁটতে পারছেন না কেন? উঠতে তো হবেই, সিলেক্ট কমিটিতে সাক্ষ্য দিতে হবে। আরো অন্য কাজ, মৃত্যু তুমি যাও, যাও!
পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টাতেও রাজার কোনও উন্নতি হল না। পরের রাতে রাজার সহচরদের সঙ্গে মিস হেয়ারও রােগীর ঘরে থাকবেন। এই প্রস্তাব শুনেই রাজা বললেন, না, না, ছি, ছি, এক অনাত্মীয় পুরুষের সঙ্গে এক কুমারী এক কক্ষে রাত্রিবাস করবে, এ আবার হয় নাকি? তার আপত্তি উড়িয়ে দেওয়া হল। এ দেশে কেউ এ ব্যাপারে ভুক্ষেপও করে না।
এক সময় দু'জন চিকিৎসক এসে তাকে দেখার পর একটু দূরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে নিম্নস্বরে কথা বলতে লাগলেন, রাজা তাদের কথা শুনতে না পেলেও তাদের বিরস ভাবভঙ্গি দেখেই বুঝে গেলেন, এই এত সভ্য ও উন্নত দেশের কোনও ঔষধই তাকে আর এই পীড়া থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। ওরা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছেন।
রাজা উঠে বসে সহাস্য মুখে তাদের প্রচুর ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন।
আবার শুয়ে পড়ার পর চোখ বুজে তিনি ভাবলেন, তা হলে বুঝি মরতেই হবে এই বিদেশ বিভুইয়ে। তিনি জেদের সঙ্গে বললেন, ঠিক আছে, যদি যেতেই হয় রাজার মতন মাথা উঁচু করে চলে যাব।
পরক্ষণেই তিনি আবার ভাবলেন, রাজা আবার কী? তাদের বংশে কেউ কখনও রাজা ছিল না। দিল্লির মুঘল বংশের নখদন্তহীন বর্তমান এক অসহায়, নামমাত্র বাদশা তাকে কিছু আর্থিক সুযােগসুবিধা দানের জন্য কাকুতিমিনতি করেছেন ক্ষমতাধর ইংরাজদের কাছে। রামমােহন এ দেশে আসছেন, তিনি অন্যান্য কিছুর সঙ্গে দিল্লির বাদশাহের প্রতিনিধিত্ব করবেন,
সেই জন্যই তাকে রাজা খেতাব দেওয়া হয়েছে। তার কতটুকু মূল্য?
আর মৃত্যুর কাছে তাে রাজা আর প্রজা সবাই সমান।
ঠিক আছে, তবে সাধারণ মানুষও তাে মাথা উঁচু করে যেতে পারে। কোনও দয়া ভিক্ষা নয় মৃত্যুর কাছে। কোনও সময় ভিক্ষা নয়।
রাজা এখনও তাঁর চলে যাওয়ার নিশ্চিততায় ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না। কী এমন ব্যাধি হল তার?
পর দিন তিনি জোর করে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলেন। মেঝেতেই একটা জাজিম পেতে, ধরাধরি করে তাকে এনে শুইয়ে দেওয়া হল সেখানে। তার একটা হাত ও পা অসাড়। পক্ষাঘাত। তিনি আর খাটে উঠতে পারবেন না।
কিন্তু মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ সজাগ।
তিনি ভাবলেন, তা হলে এটাই মৃত্যু খেলা শুরু করল তার সঙ্গে। তিনি অসহায় হয়ে শয্যায় পড়ে থাকবেন, অন্যের দয়ার ওপর নির্ভর করে। দিনের পর দিন। পক্ষাঘাতে পঙ্গু মানুষটিকে করুণা করবে কাছাকাছি সকলে। কিছু দিন পর করুণাও শুকিয়ে যাবে, তার স্থান নেবে বিরক্তি।
তিনি, রাজা রামমােহন রায়, তাঁকে শক্তিহীন, পঙ্গু, হিসেবে দেখাতে চায় মৃত্যু।
তিনি মৃত্যুর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। পারেননি জয়ী হতে। এখন আবার চ্যালেঞ্জ জানালেন। তিনি মৃত্যুর তােয়াক্কা না করে চলে যাবেন নিজেই। স্বেচ্ছামৃত্যু।
তিনি নিশ্বাস বন্ধ করে রাখলেন। এই অবস্থায় তার চোখে ভেসে উঠল, কয়েক দিন আগে ভােরবেলা দেখা সেই বালিকাটির মুখ। এ এক এমনই রূপ, যা দেখলে বড় শান্তি হয়।
মেয়েটি যেন এগিয়ে আসছে তার দিকে। হাসিতে ঝলমল করছে সর্বাঙ্গ।
তা হলে এ মেয়েটি তাকে দেখে ভয় পায়নি? তাকে আপনজন বলে গ্রহণ করেছে। আঃ, এ যে কত বড় প্রাপ্তি, কে বুঝবে? আর না, এক বার আমাকে একটু ছুঁয়ে দে।
অতি কষ্টে ঘাড় ঘুরিয়ে তিনি মৃত্যুর উদ্দেশে বললেন, তুমি আমার আয়ু কেড়ে নিতে পার, কিন্তু তুমি আমার জীবনের গরিমা কেড়ে নিতে পারবে না!
রাজা বারবার নিশ্বাস বন্ধ করতে লাগলেন। মাঝে মাঝে তা ছাড়তে বাধ্য হলেও পরের বার আরও বেশিক্ষণ শ্বাস রােধ করে রাখতে চাইলেন।
তার পর এক সময় বুক থেকে বেরিয়ে এল সমস্ত নিশ্বাস। এবং তার প্রাণ।
চমৎকার শরতের রাত। ফুটফুট করছে জ্যোৎস্না। জানলা দিয়ে সেই জ্যোৎস্না এসে পড়েছে ঘরে। রাজার সন্তান এবং দুই ইংরেজ বিবি নিচু গলায় কথা বলছেন ঘরের এক কোণে বসে। তার কথা বলছেন খুব নিচু গলায়। এ দেশের আবহাওয়ায় এমন রাত কদাচিৎ আসে।
হঠাৎ ওদের এক জন তাকালেন রাজার শয্যার দিকে। চিৎ হয়ে সটান শুয়ে আছেন তিনি। ওষ্ঠে তাঁর ক্ষীণ হাসি। চক্ষু দুটি খােলা। মৃত্যুর খেলা তিনি মেনে নেননি।
কী যেন একটা রাতপাখি ডাকছে তারস্বরে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সারারাত ঘুম হয়নি। এমনকী দুচোখের পাতাও এককরতে পারেননি। এই এক হচ্ছে মুশকিল। বেশিক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকতে পারছেন না।
না ঘুমোলে কত রকম এলোমেলো চিন্তা আসে। দেশের কথা, প্রিয় মানুষদের কথা। কিন্তু মাঝে মাঝেই সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে মাথার যন্ত্রণার জন্য। কিছুতেই, এত ওষুধ খেয়েও,এই বিশ্রী ব্যথাটা যাচ্ছে না।
রাজা উঠে এসে দাঁড়ালেন জানালার কাছে।
আজ কত তারিখ? একুশ, না বাইশ? সেপ্টেম্বর মাস। এই সময় ইংল্যান্ডের প্রাকৃতিকশোভা অতি মনোহর। দেশেও এখন শরৎকাল। কিন্তু আমাদের শরতে গ্রীষ্ম-বর্ষার প্রচন্ড দাপট পুরোপুরি কাটে না। এখানে এরই মধ্যে শীতের মৃদু পরশ পাওয়া যায় হাওয়ায়।
ফ্রেঞ্চ উইন্ডো খুলে রাজা বেরিয়ে এলেন বারান্দায়।
এটা একটা প্রশস্ত বাগানবাড়ি প্রচুর বৃক্ষশোভিত। তাতে ফুটেছে অজস্র ফুল। সব ফুল তিনি চেনেন না দেশ বিভেদে গাছপালাও অন্যরকম হয়। কিছু কিছু পাখিও ডাকছে। তার মধ্যেএকটা পাখির ডাক চেনা মনে হয়। দেশের বুলবুলিরমতন।
স্নিগ্ধ বাতাসে জুড়িয়ে গেল কপাল, বুজে এলো চক্ষু। সারারাত যে আরামপাননি, এখন প্রকৃতি তাঁকে সেই শান্তি উপহারদিলো।
রাজার ইচ্ছে হলো, বারান্দা থেকে নেমে বাগানের ঘাসে একটু হাঁটবেন। কিন্তু খালি পা, তাঁকে ঠান্ডা লাগাতে নিষেধ করা হয়েছে। মাথা ধরে আছে, এখন একটু সাবধানে থাকাইভালো।
তিনি বসলেন সাদা লেস লাগানো একটি বেতের চেয়ারে।
দেশ থেকে আসবার আগে কয়েকজন তাঁকে সাবধান করে দিয়ে বলেছিল, অত দূরবিদেশে আবহাওয়া অন্যরকম, তা সহ্য না হতেপারে। হঠাৎ হঠাৎ শীত, তাতেই সান্নিপাতিক হবার খুব সম্ভাবনা।
তাঁরা এইসব জানলেন কী করে? নিজেরা তো কেউ সমুদ্র পাড়ি দেননি। শুনেছেন নাকি নাবিক-লস্করদের কাছ থেকে?
কয়েকজন ইংরাজ রাজপুরুষও সাবধান করতে চেয়েছিলেন। একমাত্র ডেভিড হেয়ার বলেছিলেন, যাও যাও বন্ধু, ঘুরে এসো, তোমার কোনো অনিষ্ট হবে না।
ডেভিড হেয়ার অনেক সাহায্য করেছেন। চিঠি লিখে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। আর তাঁর বোনকে বিশেষ করে বলে দিয়েছেন, সব সময়রাজার দেখাশুনো করতে। তা সে-মেয়েটি তো তাঁর এখনকার সর্বক্ষণের সঙ্গিনী। ভারি লক্ষ্মীশ্রীযুক্তা নারী।
বেশ কিছুদিন তো কেটে গেল, তাঁর শরীরের কোনোই ক্ষতি হয়নি। বরং মনে হয়,এ দেশের জলবায়ু আরো স্বাস্থ্যকর। লন্ডনে প্রচুর মানুষের সঙ্গে দেখা হলো। শুধু একটিই অসুবিধে, তিনি একা একা পথে বেরোতে পারেন না। পথচারীদের কৌতূহলী দৃষ্টি। শুধু কৌতূহলী নয়, তিনি বুঝতে পারেন কারো কারো দৃষ্টিতে অন্য কিছুও থাকে। আতঙ্ককিংবা ঘৃণা? যেন তারা এক আজব প্রাণী দেখছে।
শুধু গায়ের রঙের তফাৎ, তার জন্যই এতো দূরত্ব? মানুষেরই তো শরীর, মানুষেরই মস্তিষ্ক। তবে হ্যাঁ, অস্ত্রবলে ভারতীয়রা হেয়।
আবার এখানকার বিদ্বজ্জন সমাজে অন্য রকম প্রতিক্রিয়া হয়। যাঁরা তাঁর কথা আগে শোনেননি বা কিছুই জানেননা, তাঁরা তাঁর কথাবার্তা শুনে এমনই অবাক হন, যেন চক্ষু ঠেলেবেরিয়ে আসার মতন। এই নেটিভটি এমন ইংরেজি জানে? বাইবেল সম্পর্কে এতো জ্ঞান?
দেশে থাকতে ইউনিটারিয়ান চার্চের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। ওঁদের মতন তিনিও একেশ্বরবাদী। হিন্দুদের মূর্তিপূজায়তিনি বিশ্বাস হারিয়েছেন, এ-কথা রাজা আগেই ঘোষণা করেছেন।
হঠাৎ রাজার চোখে পড়ল বাগানের এক প্রান্তে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বড়জোর সাত-আট বছর বয়েস।সাদা ফ্রক ও নীল সোয়েটার পরা। মাথার চুলসব সোনালি। কী যে অপূর্ব সুন্দর দেখাচ্ছে, যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে এক পরি!
তিনি মনে মনে হাসলেন। তিনি স্বর্গও মানেন না।পরিদের অস্তিত্বেও বিশ্বাসী নন। তবু এরকম উপমা মনে এসেই যায়।
মেয়েটি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে।
রাজা একবার ভাবলেন, হাতছানি দিয়ে তাকে কাছে ডাকবেন। কিন্তু এর দৃষ্টিতে কী আছে? কৌতূহল, না ভয়? ডাকলে যদি না আসে, যদি দৌড়ে পালিয়ে যায়। থাক, এই কাননের অজস্র ফুলের সমারোহের মধ্যে সে পরি হয়েই দাঁড়িয়ে থাকে।
একটু পরেই ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো রামহরি। শশব্যস্ত হয়ে বললো, হুজুর, হুজুর, আপনি এই শীতের মধ্যে বসে আছেন। পায়ে ইস্টানিক পরেননি। আপনার শরীলে ব্যাধি আছে।
রাজা রামহরির কথা শোনারপর কোনো উত্তর না দিয়ে আবার তাকালেন বাগানের কোণে। পরি অদৃশ্য।
ঠান্ডা লাগছে ঠিকই, তাহলে আর বাইরে বসার দরকার নেই। রামহরি তাঁর হাত ধরতে গেল, রাজা ভ্রু কুঁচকে বললেন, ছাড়। আমার এমন কিছু ব্যাধি হয়নি।
রামহরি বললো, বাথ সেরে নিবেন? হট হবাটার নিয়ে আসি।
এই দুবছরে নিরক্ষর রামহরি বেশ ইংরেজি শিখেনিচ্ছে শুনে শুনে। বিচিত্র তার উচ্চারণ। রাজা একবার বলেছিলেন, আমার সামনে তোকে ইংরিজিবলতে হবে না। অন্য জায়গায় ফলাস যত পারিস।
পরে আবার তাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। থাক, যতখানি পারে শিখুক, মন্দ কি!
বাথটবে গরম জল ঢেলে দেবার পর তিনি রামহরিকেইঙ্গিত করলেন বাইরে দাঁড়াতে। কিন্তু নিজে স্নান করতে গিয়ে দেখলেন, তাঁর সারা শরীর কাঁপছে। অবসন্ন হয়ে পড়ছেন।
তিনি ভ্রু কুঞ্চিত করে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। এটা কী হচ্ছে? কেন এই দুর্বলতা? কয়েক দিন ধরেই হচ্ছে এরকম। অথচ সেরকম কোনো রোগের কথা তো বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
অতি কষ্টে নিজেই স্নানান্তে পোশাক পরে বেরিয়ে এলেন তিনি। একটুপরেই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসতে হবে। এ দেশে সুসজ্জিত হয়ে টেবিলে বসাই নিয়ম। রামহরি তাঁকে জোববাজুবিব ও মাথায় পাগড়ি পরালো।
পাশের ঘরে শোয় রাজার পুত্র রাজারাম আর একজন সঙ্গী রামরতন মুখোপাধ্যায়। তারাও জেগে উঠেছে। এখানে নির্দিষ্ট সময়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে ঘণ্টা বাজে।
রামহরি সেবাদাসদের দলে,সে দাঁড়িয়ে রইল দূরে। অন্য দুজনকে দুপাশে নিয়ে বসলেন রাজা। অন্যদিকে মিসেস হেয়ার আর এখানে যাঁরা আতিথ্য দিয়েছেন, তাঁদের পক্ষ থেকে মিস কেডেল আর মিস কাসেল।
এ দেশের নারীদের স্বাবলম্বী অবস্থা দেখে রাজা প্রায়ই ভাবেন, কবে দুর্ভাগা ভারতবর্ষে রমণীদের এমন সৌভাগ্য হবে। এ দেশের রমণীরা শিক্ষার সুযোগ পায়, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে, সম্পত্তিরঅধিকারিণী হয়। হায় বঙ্গনারী!
খেতে খেতে শ্রীমতি কেডেল জিজ্ঞেস করলেন, রাজা, কিছু যদি মনে না করেন, একটা প্রশ্ন করবো? কয়েকদিন ধরেই খুবকৌতূহল হচ্ছে।
রাজা বললেন, অবশ্যই প্রশ্ন করতে পারেন।
শ্রীমতী কেডেল সসঙ্কোচে বিনীতভাবে বললেন, আপনারা যে চারজন এসেছেন, এ ছাড়া আর কোনো ভারতীয় আমরা ব্রিস্টলে দেখিনি। আপনাদের চারজনেরই নাম রাম। ভারতীয়দের সকলেরই নাম কি রাম হয়?
রাজা সংযত হাস্য করলেন।কথাটা তো ঠিক।
তিনি বললেন, মিস কেডেল, আপনার যে-খটকা লেগেছে, তা অত্যন্ত সংগত। এখানেআমাদের চারজনেরই নামে রাম রয়েছে বটে, তবে এটা পিয়োরলি কো-ইন্সিডেন্টাল। ভারতীয়দের আরো নানা প্রকার ও বিচিত্র নাম হয়। যেমন আমার বন্ধু দ্বারকানাথ, যেমন…
তাঁকে আর কিছু বলতে হলো না, তাঁর সঙ্গীরাই গড়গড় করে অন্য ভারতীয় নাম বলে গেল।
ভেজিটেবল স্যান্ডউইচে এক কামড় দিতেই রাজার একবার হেঁচকি উঠলো। এরকম প্রায়ই হচ্ছে ইদানীং। কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। অথচ ভোজনরসিক হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল।
নাম প্রসঙ্গ এখনো চলছে।রাজা মনে মনে ভাবলেন, ইংরাজ পুরুষ বা রমণীদেরনামের উচ্চারণে তাঁর কোনো অসুবিধে হয় না। অথচ শিক্ষিত ইংরাজরাও একটি ভারতীয় শব্দ শুদ্ধউচ্চারণ করতে পারে না। রামের মতন একটি অতি সহজ শব্দকে এরা উচ্চারণ করের্যাম, যার অর্থ ভেড়া। একজন বিশিষ্ট পাদ্রি তাঁর পুরো নাম উচ্চারণ করেছিলেন এভাবে, ড়্যামমোহন রয়। তা শুনে তিনি আঁতকে উঠেছিলেন। তার চেয়ে শুধু রাজাই ভালো, তাও অনেকের ওষ্ঠে হয়ে যায় র্যাজা! আমরা পারি, অথচ তোমরা পারো নাকেন? চেষ্টা করো না, নাকি জিভের দুর্বলতা?
প্রসঙ্গান্তরে যাবার জন্য রাজা বললেন, আজ ভোরবেলা একটি বালিকাকে দেখলাম বাগানের এক কোণে। অপরূপ তার মুখশ্রী। বোধকরি কোনো প্রতিবেশীর কন্যা।
মিস কেডেল বিস্মিতভাবে তাকিয়ে রইলেন। পাশের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন রেভারেন্ড জন ফস্টার। তিনি একজন প্রবন্ধকার। ও বাড়িতে তো কোনো বালক-বালিকা নেই।
রাজা তাঁর কথায় কোনো উত্তর পেলেন না। উত্তর আশাও করলেন না।
তাঁর তলপেটে বেদনা শুরু হয়েছে এবং সে-কথা তিনি অন্যদের জানাতে চান না। ব্রেকফাস্ট শেষ হলে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, মাফ করবেন, আমি এখন কিছু সময় নিরিবিলিতে গ্রন্থপাঠ করতে চাই।
তিনি নিজের কক্ষে এসে প্রথমে বসলেন আরাম কেদারায়, কয়েক মিনিট পরেই তাঁর শুয়ে পড়তে ইচ্ছে হলো। এরকম দুর্বলতার জন্য রাজা নিজের ওপরেই ক্রুব্ধ হয়ে উঠলেন।
লন্ডনে দিনের পর দিন ব্যস্ততার পর ব্রিস্টলে এই আতিথেয়তার আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।
স্টেপলটন গ্রোভ নামে এই উদ্যানবাটিকাটি ব্রিস্টল শহর থেকে কিছুদূরে। অতি সুরম্য ভবন, ব্যবস্থাপনা এবং যত্নেরও কোনো ত্রুটি নেই। বিশ্রাম নেওয়ার পক্ষে আদর্শ।
লন্ডনে তাঁকে অনেক সভা-সমিতিতে উপস্থিত থাকতে হয়েছে। ভারতবর্ষ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ একেবারেই অজ্ঞ। কৌতুকের বিষয় এই যে, অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে ধর্ম সম্পর্কেই সকলের কৌতূহল বেশি। রাজা বারবার ঘোষণা করেছেন যে, তিনি হিন্দু ধর্মের মূর্তিপূজা মানেন না। তিনি একেশ্বরবাদী। তিনি যিশুকে মহামানব এমনকি ঈশ্বরপ্রেরিত বলতেও দ্বিধা করেননি। তবু অনেক জায়গাতেই তাঁকে প্রশ্ন শুনতে হয়, যিশুর জীবনের নানান অলৌকিক ঘটনা এবং পুনর্জাগরণও মানেন কিনা। যুক্তিহীন অলৌকিকতা মানতে রাজার দ্বিধা আছে। ভক্তরা সবইমানতে পারে, তারা তো প্রমাণ খোঁজে না।
কেউ কেউ ইঙ্গিত দেয়, রাজা কেন খ্রিষ্টধর্ম অবলম্বন করছেন না? তিনিসযত্নে এ-প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
এখানে তাঁর পরিচয় দেওয়াহয় হিন্দু ব্রাহ্মণ হিসেবে। তিনি সেই পরিচয়টাই বজায় রাখতে চান। তিনি যদিও জাতপাত মানেন না, তবু তিনি একজনব্রাহ্মণ পরিচারক সঙ্গে এনেছেন। তাঁর নিজের অঙ্গেও উপবীত আছে। দেশের লোক যেন বলতে না পারে ম্লেচ্চদের দেশে এসে অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে জাত খুইয়েছেন, পৈতৃক বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলছে দেশে, একবার যদি রটে যায় যে, তিনি জাত খুইয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে সম্পত্তিতেও তাঁর অংশ বরবাদ হয়ে যাবে। তাঁর সন্তানেরাও বঞ্চিত হবে। আগে সম্পত্তি, তারপর তো জাত।
কিন্তু এখানে এতো আদর, আপ্যায়ন, বিশ্রামের অঢেল সুযোগ, তবু শরীরে কেন জোর পাচ্ছেন না। আলস্যের তো সময় নেই। সামনে কতো কাজ।
হাউস অফ কমন্সের ভারতীয়বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।রাজা সেখানে একটা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। এ-বিষয়ে পার্লামেন্টে একটা বিলও পেশ হয়েছে। দেশের কৃষকদের অসহনীয় দুরবস্থার কথাও রাজা জানাতে চান। নারীগণের কথা… বুকের মধ্যে কে যেন দুমদুম করে দুবার ধাক্কা দিলো।
রাজা চমকে উঠলেন। একি মৃত্যুর মুষ্টাঘাত নাকি? মৃত্যু? এতো মানুষ থাকতে তাঁর কাছে আসতে যাবে কেন? তাঁর উন্নত শরীর, অটুট স্বাস্থ্য, রোগভোগ বিশেষ নেই। পৌরাণিক দেব-দেবীর মূর্তিতে তাঁর বিশ্বাস নেই, তাই যম কিংবা যমদূতদের চেহারা তাঁর মনে এলো না,তবু যেন একটা জ্যোতিপুঞ্জ, যেন মৃত্যুর প্রতীক হয়ে চেয়ে আছে, তাঁর মনে হলো।
তিনি শ্লেষের সঙ্গে বললেন, কী, আমাকে নিয়ে যেতে এসেছ নাকি? এতো ত্বরা কিসের? তেমন কোনোগুরুতর অপরাধ তো করিনি!
তারপর ধমক দিয়ে বসলেন, না, না যাও, যাও! আমি এখন মোটেই প্রস্ত্তত নই! আমার অনেক কাজ বাকি! অনেক দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। এরা শাসক জাতি। আমাদের দুখিনী দেশের তোকোনো ক্ষমতাই নেই, শুধু আবেদন-নিবেদন করে যেটুকু দাক্ষিণ্য আদায় করা যায়। এদের এতো ঐশ্বর্য, তা তো অনেকটা প্রাচ্য দেশ লুণ্ঠনেরই ফল।
কনুইয়ে ভর দিয়ে উঁচু রাজা আবার বললেন, না, আমি যাব না। আমি আবার উঠে দাঁড়াব। শরীরে যথেষ্ট বল আছ। বাহুতে, এই দ্যাখো, কতোখানি গুলি ফোলাতে পারি। ডেথ, তোমার প্রতি আমার চ্যালেঞ্জ রইল, তুমি কিছুতে আমাকে হারাতে পারবে না। যাও!
তিনি জোর করে উঠে দাঁড়ালেন এবং স্বভাবোচিত দর্পভরে লম্বা লম্বা পা পেলে পায়চারি করতে লাগলেন আরমনে মনে বলতে লাগলেন, যাও, যাও, পারবে না!
কিন্তু কয়েকবার পায়চারি করার পরই রাজারবক্ষদেশ উত্তাল হয়ে উঠল। তিনি কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়তে বাধ্য হলেন। তাঁর পালস রেট অনেক বেড়ে গেছে।
আস্তে আস্তে ফিরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন বিছানায়। কিছু খেতে ইচ্ছা করল না,তিনি উঠলেনও না। তিনি জ্ঞানও হারালেন না, ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসতে লাগলেন। তাঁরই নিজেরই দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দুর্বলতার জন্য রাগ হতেলাগল। তিনি হাঁটতে পারছেন না কেন? উঠতে তো হবেই, সিলেক্ট কমিটিতে সাক্ষ্য দিতে হবে। আরো অন্য কাজ, মৃত্যু তুমি যাও, যাও!
পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টাতেও রাজার কোনও উন্নতি হল না। পরের রাতে রাজার সহচরদের সঙ্গে মিস হেয়ারও রােগীর ঘরে থাকবেন। এই প্রস্তাব শুনেই রাজা বললেন, না, না, ছি, ছি, এক অনাত্মীয় পুরুষের সঙ্গে এক কুমারী এক কক্ষে রাত্রিবাস করবে, এ আবার হয় নাকি? তার আপত্তি উড়িয়ে দেওয়া হল। এ দেশে কেউ এ ব্যাপারে ভুক্ষেপও করে না।
এক সময় দু'জন চিকিৎসক এসে তাকে দেখার পর একটু দূরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে নিম্নস্বরে কথা বলতে লাগলেন, রাজা তাদের কথা শুনতে না পেলেও তাদের বিরস ভাবভঙ্গি দেখেই বুঝে গেলেন, এই এত সভ্য ও উন্নত দেশের কোনও ঔষধই তাকে আর এই পীড়া থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। ওরা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছেন।
রাজা উঠে বসে সহাস্য মুখে তাদের প্রচুর ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন।
আবার শুয়ে পড়ার পর চোখ বুজে তিনি ভাবলেন, তা হলে বুঝি মরতেই হবে এই বিদেশ বিভুইয়ে। তিনি জেদের সঙ্গে বললেন, ঠিক আছে, যদি যেতেই হয় রাজার মতন মাথা উঁচু করে চলে যাব।
পরক্ষণেই তিনি আবার ভাবলেন, রাজা আবার কী? তাদের বংশে কেউ কখনও রাজা ছিল না। দিল্লির মুঘল বংশের নখদন্তহীন বর্তমান এক অসহায়, নামমাত্র বাদশা তাকে কিছু আর্থিক সুযােগসুবিধা দানের জন্য কাকুতিমিনতি করেছেন ক্ষমতাধর ইংরাজদের কাছে। রামমােহন এ দেশে আসছেন, তিনি অন্যান্য কিছুর সঙ্গে দিল্লির বাদশাহের প্রতিনিধিত্ব করবেন,
সেই জন্যই তাকে রাজা খেতাব দেওয়া হয়েছে। তার কতটুকু মূল্য?
আর মৃত্যুর কাছে তাে রাজা আর প্রজা সবাই সমান।
ঠিক আছে, তবে সাধারণ মানুষও তাে মাথা উঁচু করে যেতে পারে। কোনও দয়া ভিক্ষা নয় মৃত্যুর কাছে। কোনও সময় ভিক্ষা নয়।
রাজা এখনও তাঁর চলে যাওয়ার নিশ্চিততায় ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না। কী এমন ব্যাধি হল তার?
পর দিন তিনি জোর করে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলেন। মেঝেতেই একটা জাজিম পেতে, ধরাধরি করে তাকে এনে শুইয়ে দেওয়া হল সেখানে। তার একটা হাত ও পা অসাড়। পক্ষাঘাত। তিনি আর খাটে উঠতে পারবেন না।
কিন্তু মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ সজাগ।
তিনি ভাবলেন, তা হলে এটাই মৃত্যু খেলা শুরু করল তার সঙ্গে। তিনি অসহায় হয়ে শয্যায় পড়ে থাকবেন, অন্যের দয়ার ওপর নির্ভর করে। দিনের পর দিন। পক্ষাঘাতে পঙ্গু মানুষটিকে করুণা করবে কাছাকাছি সকলে। কিছু দিন পর করুণাও শুকিয়ে যাবে, তার স্থান নেবে বিরক্তি।
তিনি, রাজা রামমােহন রায়, তাঁকে শক্তিহীন, পঙ্গু, হিসেবে দেখাতে চায় মৃত্যু।
তিনি মৃত্যুর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। পারেননি জয়ী হতে। এখন আবার চ্যালেঞ্জ জানালেন। তিনি মৃত্যুর তােয়াক্কা না করে চলে যাবেন নিজেই। স্বেচ্ছামৃত্যু।
তিনি নিশ্বাস বন্ধ করে রাখলেন। এই অবস্থায় তার চোখে ভেসে উঠল, কয়েক দিন আগে ভােরবেলা দেখা সেই বালিকাটির মুখ। এ এক এমনই রূপ, যা দেখলে বড় শান্তি হয়।
মেয়েটি যেন এগিয়ে আসছে তার দিকে। হাসিতে ঝলমল করছে সর্বাঙ্গ।
তা হলে এ মেয়েটি তাকে দেখে ভয় পায়নি? তাকে আপনজন বলে গ্রহণ করেছে। আঃ, এ যে কত বড় প্রাপ্তি, কে বুঝবে? আর না, এক বার আমাকে একটু ছুঁয়ে দে।
অতি কষ্টে ঘাড় ঘুরিয়ে তিনি মৃত্যুর উদ্দেশে বললেন, তুমি আমার আয়ু কেড়ে নিতে পার, কিন্তু তুমি আমার জীবনের গরিমা কেড়ে নিতে পারবে না!
রাজা বারবার নিশ্বাস বন্ধ করতে লাগলেন। মাঝে মাঝে তা ছাড়তে বাধ্য হলেও পরের বার আরও বেশিক্ষণ শ্বাস রােধ করে রাখতে চাইলেন।
তার পর এক সময় বুক থেকে বেরিয়ে এল সমস্ত নিশ্বাস। এবং তার প্রাণ।
চমৎকার শরতের রাত। ফুটফুট করছে জ্যোৎস্না। জানলা দিয়ে সেই জ্যোৎস্না এসে পড়েছে ঘরে। রাজার সন্তান এবং দুই ইংরেজ বিবি নিচু গলায় কথা বলছেন ঘরের এক কোণে বসে। তার কথা বলছেন খুব নিচু গলায়। এ দেশের আবহাওয়ায় এমন রাত কদাচিৎ আসে।
হঠাৎ ওদের এক জন তাকালেন রাজার শয্যার দিকে। চিৎ হয়ে সটান শুয়ে আছেন তিনি। ওষ্ঠে তাঁর ক্ষীণ হাসি। চক্ষু দুটি খােলা। মৃত্যুর খেলা তিনি মেনে নেননি।
কী যেন একটা রাতপাখি ডাকছে তারস্বরে।
বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক!