আমি সিরাজুল আলম খান
একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য
শামসু্দ্দিন পেয়ারা
এ বইয়ের মধ্য দিয়ে আমার একটি স্বপ্ন পূরণ হলাে। আমার মতাে ১৯৬০-'৭০ দশকের 'মুক্তিযুদ্ধ জেনারেশন'-এর কয়েক লক্ষ তরুণের স্বপ্নের সারথী ছিলেন সিরাজুল আলম খান। আমাদের স্বপ্ন ছিল পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, যার শুরু ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। মােস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল্লাহর রক্ত সে সময়ের তরুণদের পাকিস্তান সংক্রান্ত বিভ্রান্তি ঘুচিয়ে দেয়। তারা বুঝতে পারে, পাকিস্তান যুক্তিনির্ভর কোনাে মানবিক রাষ্ট্র নয়। যে সাম্প্রদায়িক ঘৃণাকে ভিত্তি করে এর জন্ম, ভারত থেকে আলাদা হয়েও তার সে চরিত্রের কোনাে পরিবর্তন হয়নি। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও ঘৃণা নতুন মুখােশ পরে জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা ও ঘৃণার রূপ নিয়েছে। এই পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রে বসবাস সম্ভব নয়।
এ কথা সবার আগে যাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন সে সময়ে জনপ্রিয়তার সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উপরে উঠতে থাকা বাঙালি নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তরুণ ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান। শেখ মুজিবের ওপর পাকিস্তান সরকার শুরু থেকে খড়গহস্ত ছিল। ফলে তাঁর পক্ষে সরাসরি এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া তিনি যে জনগােষ্ঠীর নেতৃত্ব দেবার উপযুক্ত হয়ে উঠছিলেন তারা, অর্থাৎ বাংলার মুসলিম জনগণ, তখনও পাকিস্তানের অখণ্ডতার স্বপ্নে বিভাের। শোষণ, নির্যাতন, সামরিক একনায়কত্ব— ইসলামের নামে হলে সেটা তখনও তাদের কাছে 'জায়েজ’! এর একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ছাত্রসমাজ। তারা ইতােমধ্যে ১৯৫২ সালে একবার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি আদায় করতে গিয়ে পাকিস্তানিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। বুঝেছে, এ বর্বর পশুদের কোনক্রমেই ‘ভাই' বলে মেনে নেওয়া যায় না।
তারপর ১৯৫৮ সালে এই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণতন্ত্র হত্যা করে দেশে সামরিক একনায়কত্ব কায়েম করে। বাঙালি বুঝলাে, এদের হাতে গণতন্ত্রও নিরাপদ নয়। অতঃপর ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন। রাজপথে ঝরলাে গণতন্ত্র ও ন্যায়নীতির পক্ষে উচ্চকণ্ঠ নিরীহ ছাত্রদের বুকের রক্ত।
একদিকে এই নির্যাতন, অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর দ্বারা পূর্ব বাংলার সম্পদের যথেচ্ছ লুণ্ঠন—দেশের রাজনীতিসচেতন ও মুক্তচিন্তার অধিকারী ছাত্র ও তরুণদের মনে এ ধারণা জন্ম দিতে শুরু করে যে, পূর্ব পাকিস্তান আসলে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি উপনিবেশ ছাড়া আর কিছু নয়।
এ সময়ে পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে ছাত্রসমাজকে একমত ও ঐক্যবদ্ধ করে রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য সংগঠিত করে তােলার প্রয়ােজনীয়তা বুঝতে পারেন সে সময়কার (১৯৬২-৬৩) পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খান। তিনি তাঁর যােগ্য সঙ্গী হিসেবে পান আরও দুই নিবেদিতপ্রাণ ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মী আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদকে। তিনজনে মিলে গড়ে তুললেন গােপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’ বা ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ'। উদ্দেশ্য, সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশ কায়েম করা।
সে ছিল এক দুঃসাহসিক ও বিপদসঙ্কুল অভিযাত্রা। চারদিকে পাকিস্তানিদের চর। জনগণ পাকিস্তানের আবহে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। ছাত্ররা পাকিস্তানি শাসনে ক্ষুব্ধ, কিন্তু তারা তাদের এই ক্ষোভকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলন' পর্যন্ত নিয়ে যাবার কথা তখনও ভাবতে শেখেনি। তাছাড়া, সরকারের পক্ষে পাকিস্তানপন্থী ছাত্রদের একটি বিরাট অংশ তাে ছিলই।
এহেন পরিস্থিতিতে, সিরাজ-রাজ্জাক-আরেফের ‘স্বাধীন বাংলা ‘নিউক্লিয়াস' দেশব্যাপী ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করার এক কঠিন কর্মযজ্ঞে নিজেদের নিয়ােজিত করে। সিরাজুল আলম খান ছিলেন এই কর্মযজ্ঞের মূল প্রেরণাদাতা, পথপ্রদর্শক ও সংগঠক। কী করে তিনজনের সেই ক্ষুদ্রাকার 'নিউক্লিয়াস' ক্রমে ‘বিএলএফ' ও জয়বাংলা বাহিনীতে পরিণত হয়ে মুজিব বাহিনী তথা মুক্তিবাহিনীতে রূপ নেয়। তার আগে কী করে এ দেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক সিরাজুল আলম খানের নিয়ত-সৃজনশীল অথচ দৃশ্যপটে অনুপস্থিত নেতৃত্বের জাদুর কাঠিতে উজ্জীবিত হয়ে ৬-দফা ও ১১-দফা আন্দোলনে ও সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়—ঘটনার পেছনের সেই ঘটনাগুলাের বিশদ বর্ণনা রয়েছে এ বইয়ে। বর্ণনা করেছেন ওসব আন্দোলনের মুখ্য কুশীলব সিরাজুল আলম খান নিজেই।
তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৬৬ সালে। যখন আমি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ঢাকায় ছাত্রলীগ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে আসি। আমার বন্ধু আফতাবের কাছে শুনলাম ছাত্রলীগের যা কিছু বক্তব্য-ঘােষণা, বক্তৃতা-সিদ্ধান্ত—সব তিনিই ঠিক করে দেন। ছাত্রলীগ চলে মূলত তারই প্রত্যক্ষ ও নেপথ্য নির্দেশনায়। তাঁর মূল লক্ষ্য পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করা। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। আর ছাত্রলীগের হার্ডকোর সদস্যদের কাছে তিনি ছাত্রলীগের 'মাও সে-তুং' নামে পরিচিত। তখন মাও সে-তুং-এর যুগ। চারদিকে বিপ্লবীরা স্লোগান দেয় : 'মুক্তি আসে কোন পথে, ব্যালটে না বুলেটে?' —বুলেটে বুলেটে।
১৯৬৮ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার অল্প কিছুদিনের মধ্যে ১১-দফা আন্দোলন শুরু হয়। সে আন্দোলনে অংশগ্রহণের সূত্রে আমি তাঁর সান্নিধ্যে আসি। ইকবাল হলের ক্যান্টিনে ও মধ্যরাতে নীলক্ষেতের আনােয়ার হােটেলে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ রাজনৈতিক আলাপ-আলােচনার মধ্য দিয়ে সে সম্পর্ক গাঢ়তর হয়। শুরুতে ছাত্রলীগের একটা-দুটো লিফলেট তিনি আমাকে দিয়ে লেখাতেন। রুমি ভাই (মাসুদ আহমেদ রুমি) তা দেখে দিতেন। তারপর দ্রুত চলে আসে ইয়াহিয়ার মার্শাল ল', ১৯৭০-এর নির্বাচন, ভুট্টো-ইয়াহিয়া-জান্তার ষড়যন্ত্র, আমাদের সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি, ২৫ মার্চের রক্তস্নাত কাল রাত এবং স্বাধীনতার সশস্ত্র যুদ্ধ। এই সময়গুলােতে আমি সিরাজ ভাইয়ের অমানুষিক পরিশ্রম করার ক্ষমতা এবং কর্মীদের অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করার অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে পরিচিত হই। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সত্যি কথা বলতে কী, বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদ ছাড়া আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের আর কেউ বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পক্ষে দৃঢ়মত ছিলেন না।
দেশ স্বাধীন হবার পর আমরা তাঁর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে 'জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’ প্রতিষ্ঠা করি এবং বাংলাদেশকে গণতন্ত্র, ন্যায়নীতি ও আইনের শাসনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে লিপ্ত হই। আমাদের সে চেষ্টা শেষাবধি সফল হয়নি। তবে সিরাজুল আলম খানের সমাজ পরিবর্তন ও নতুন সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন থেমে যায়নি। আজও তিনি স্বপ্ন দেখেন সমাজের সকল শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিত্বময় একটি শােষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজের। তাঁর সে স্বপ্ন ও প্রচেষ্টার কথা এ বইতে লেখা হয়নি। সে কথা অন্য কেউ লিখবেন। এ বইতে ১৯৮১ সালের ১ মে তার কারামুক্তি পর্যন্ত সময়ের ঘটনা ও কার্যাবলি লিপিবদ্ধ আছে।
এই মুখবন্ধটি ছাড়া এ বইতে আমার নিজের লেখা কোনােকিছুই নেই। তিনি বলেছেন, আমি লিপিবদ্ধ করেছি। মুখের ভাষাকে লেখার ভাষায় রূপ দেবার জন্য ছােটখাটো কোনাে শব্দ যােগ বা বাক্যের বিন্যাস করতে হলে, তা করেছি। তার বেশি নয়। বরাবর প্রচারবিমুখ ও মঞ্চের আড়ালে থেকে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে দক্ষ সিরাজুল আলম খান নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে আগ্রহী নন। পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে সেটাই দেখে আসছি। কিন্তু এটা যে উচিত নয়, তা আমরা কখনও তাকে বােঝাতে পারিনি। ১৯৮২ সালের শেষের দিকে প্রধানত আমার উদ্যোগে আফতাব উদ্দিন আহমদ, একরামুল হক, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক, রায়হান ফিরদাউস মধু, বদিউল আলম, মােশারফ হােসেন, মিয়া মােশতাকসহ আমরা কয়েকজন সিরাজ ভাইয়ের কাছে যাই একটি আত্মজীবনী লেখার ব্যাপারে তাকে রাজি করাতে। ঠিক করলাম তিনি বলবেন, আমি লিখবাে। তিনি রাজি হলেন না। বললেন, সব কথা বলার সময় এখনও আসেনি। আমরা বললাম, ঠিক আছে আপনি বলুন, আমরা লিখে রাখি। যখন সময় হবে বলে মনে করবেন, তখন প্রকাশ করা হবে। এতেও তিনি রাজি হলেন না। এর মধ্যে অনেকগুলাে বছর পার হয়ে গেছে। একরাম ও আফতাব আজ পরলােকে। আমাদেরও সময় প্রায় শেষ। এ ব্যাপারে সবার আগ্রহ স্তিমিত হয়ে আসে। তবে সবাই ছেড়ে দিলেও আমি হাল ছাড়ি নি। কিছুদিন পরপরই তাকে তাড়া দিতাম, দাদা রাজনৈতিক স্মৃতিচারণের কী হলাে?
এর মধ্যে একবার তিনি বেশ কঠিন অসুখে পড়লেন। আমি অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে গিয়ে তাঁকে ধরলাম। এবারে তিনি যেন একটু নরম হলেন। আমি বললাম, ঠিক আছে, আমি কিছু প্রশ্ন আপনাকে দেবাে। আপনি মুখে মুখে তার উত্তর দিবেন। আমি টুকে নেবাে। সেটাই বই হয়ে বের হবে। এতে তিনি রাজি হলেন। কয়েক রাত জেগে প্রায় একশত প্রশ্ন তৈরি করে তাঁকে দিলাম। বললেন, দেখি। কয়েকদিন পর গেলাম। এর মধ্যে তিনি মত পাল্টেছেন। এই ফর্ম্যাটে তিনি রাজি নন। হতাশ হয়ে ফিরলাম, কিন্তু হাল ছাড়লাম না।
২০১৭ সালে তিনি হিপ-বােন রিপ্লেসমেন্ট করিয়ে দেশে ফেরার পর আবারও তাঁর কাছে গেলাম। বললাম, এবার কী বলার সময় হয়েছে? দয়া করে বইটি কী লিখবেন? তিনি হেসে উত্তর দিলেন, 'লিখবাে। কোনদিন আসবে বলাে?' আমি বললাম, ‘এক্ষুণি। এ মুহূর্ত থেকে।’ ৬ এপ্রিল ২০১৮ থেকে আমি তাঁর বক্তব্যের নােট নিতে শুরু করলাম। প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা করে। ২১ দিন পর, ২৬ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে নােট নেওয়া শেষ হলাে।
এই বই সিরাজুল আলম খানের আত্মজীবনী নয়। বাংলাদেশের একটা বিশেষ সময়ের (১৯৬২-১৯৭৫) রাজনীতিকে তিনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন তার ধারাবর্ণনা। অনেক বিষয় আমি ইচ্ছে করে তাকে জিজ্ঞেস করিনি। তিনিও ইচ্ছে করেই অনেক বিষয় এড়িয়ে গেছেন বা বলেননি। যাঁরা সে সময়ের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চান, তাঁদের জন্য সিরাজুল আলম খানের এই রাজনৈতিক আত্মকথন ইতিহাসের এক বদ্ধ দুয়ার উন্মুক্ত করে দেবে, যা দিয়ে এমন সব বিচিত্র বর্ণচ্ছটা দৃশ্যমান হবে যা এর আগে কখনও হয়নি। আজকের তরুণদের জন্য এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যবহুল রাজনৈতিক ইতিহাস। এ বই আমাদের অতীত-পর্যবেক্ষণের দূরবীণ। পাঠক এ বইয়ের প্রতি পাতায় বাংলাদেশের অঙ্কুরােদাম দেখতে পাবেন।
কাজটি শেষ করার পর আমার অনুজপ্রতিম বন্ধু ও কৃতী সাংবাদিক স্বপন দাশগুপ্তকে বলতে সে বললাে, মাওলা ব্রাদার্স-এর স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হকের সঙ্গে তার হৃদ্যতা আছে। তিনি হয়তাে বইটি ছাপাতে রাজি হবেন। সে একদিন আমাকে বাংলাবাজারে মাওলা ব্রাদার্স-এ নিয়ে গেল। আহমেদ মাহমুদুল হক বইটি ছাপতে রাজি হলেন।
পুরাে পাণ্ডুলিপিটি আদ্যোপান্ত পাঠ ও সম্পাদনা করে কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক মােরশেদ শফিউল হাসান। ড. মােরশেদ আমার ছােট ভাইয়ের বন্ধু, আমারও অত্যন্ত স্নেহভাজন, ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাই না।
কম্পােজ, সম্পাদনা ও প্রুফ কারেকশনের নানা রােডব্লক পেরিয়ে অবশেষে বইটি যে দিনের আলাে দেখতে পেলাে তা সম্ভব হয়েছে স্বপন দাশগুপ্ত ও আহমেদ মাহমুদুল হকের কারণে। দুজনের প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ।
ফেব্রুয়ারি ২০১৯
শামসুদ্দিন পেয়ারা
একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য
শামসু্দ্দিন পেয়ারা
এ বইয়ের মধ্য দিয়ে আমার একটি স্বপ্ন পূরণ হলাে। আমার মতাে ১৯৬০-'৭০ দশকের 'মুক্তিযুদ্ধ জেনারেশন'-এর কয়েক লক্ষ তরুণের স্বপ্নের সারথী ছিলেন সিরাজুল আলম খান। আমাদের স্বপ্ন ছিল পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, যার শুরু ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। মােস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল্লাহর রক্ত সে সময়ের তরুণদের পাকিস্তান সংক্রান্ত বিভ্রান্তি ঘুচিয়ে দেয়। তারা বুঝতে পারে, পাকিস্তান যুক্তিনির্ভর কোনাে মানবিক রাষ্ট্র নয়। যে সাম্প্রদায়িক ঘৃণাকে ভিত্তি করে এর জন্ম, ভারত থেকে আলাদা হয়েও তার সে চরিত্রের কোনাে পরিবর্তন হয়নি। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও ঘৃণা নতুন মুখােশ পরে জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা ও ঘৃণার রূপ নিয়েছে। এই পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রে বসবাস সম্ভব নয়।
এ কথা সবার আগে যাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন সে সময়ে জনপ্রিয়তার সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উপরে উঠতে থাকা বাঙালি নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তরুণ ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান। শেখ মুজিবের ওপর পাকিস্তান সরকার শুরু থেকে খড়গহস্ত ছিল। ফলে তাঁর পক্ষে সরাসরি এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া তিনি যে জনগােষ্ঠীর নেতৃত্ব দেবার উপযুক্ত হয়ে উঠছিলেন তারা, অর্থাৎ বাংলার মুসলিম জনগণ, তখনও পাকিস্তানের অখণ্ডতার স্বপ্নে বিভাের। শোষণ, নির্যাতন, সামরিক একনায়কত্ব— ইসলামের নামে হলে সেটা তখনও তাদের কাছে 'জায়েজ’! এর একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ছাত্রসমাজ। তারা ইতােমধ্যে ১৯৫২ সালে একবার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি আদায় করতে গিয়ে পাকিস্তানিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। বুঝেছে, এ বর্বর পশুদের কোনক্রমেই ‘ভাই' বলে মেনে নেওয়া যায় না।
তারপর ১৯৫৮ সালে এই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণতন্ত্র হত্যা করে দেশে সামরিক একনায়কত্ব কায়েম করে। বাঙালি বুঝলাে, এদের হাতে গণতন্ত্রও নিরাপদ নয়। অতঃপর ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন। রাজপথে ঝরলাে গণতন্ত্র ও ন্যায়নীতির পক্ষে উচ্চকণ্ঠ নিরীহ ছাত্রদের বুকের রক্ত।
একদিকে এই নির্যাতন, অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর দ্বারা পূর্ব বাংলার সম্পদের যথেচ্ছ লুণ্ঠন—দেশের রাজনীতিসচেতন ও মুক্তচিন্তার অধিকারী ছাত্র ও তরুণদের মনে এ ধারণা জন্ম দিতে শুরু করে যে, পূর্ব পাকিস্তান আসলে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি উপনিবেশ ছাড়া আর কিছু নয়।
এ সময়ে পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে ছাত্রসমাজকে একমত ও ঐক্যবদ্ধ করে রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য সংগঠিত করে তােলার প্রয়ােজনীয়তা বুঝতে পারেন সে সময়কার (১৯৬২-৬৩) পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খান। তিনি তাঁর যােগ্য সঙ্গী হিসেবে পান আরও দুই নিবেদিতপ্রাণ ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মী আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদকে। তিনজনে মিলে গড়ে তুললেন গােপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’ বা ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ'। উদ্দেশ্য, সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশ কায়েম করা।
সে ছিল এক দুঃসাহসিক ও বিপদসঙ্কুল অভিযাত্রা। চারদিকে পাকিস্তানিদের চর। জনগণ পাকিস্তানের আবহে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। ছাত্ররা পাকিস্তানি শাসনে ক্ষুব্ধ, কিন্তু তারা তাদের এই ক্ষোভকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলন' পর্যন্ত নিয়ে যাবার কথা তখনও ভাবতে শেখেনি। তাছাড়া, সরকারের পক্ষে পাকিস্তানপন্থী ছাত্রদের একটি বিরাট অংশ তাে ছিলই।
এহেন পরিস্থিতিতে, সিরাজ-রাজ্জাক-আরেফের ‘স্বাধীন বাংলা ‘নিউক্লিয়াস' দেশব্যাপী ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করার এক কঠিন কর্মযজ্ঞে নিজেদের নিয়ােজিত করে। সিরাজুল আলম খান ছিলেন এই কর্মযজ্ঞের মূল প্রেরণাদাতা, পথপ্রদর্শক ও সংগঠক। কী করে তিনজনের সেই ক্ষুদ্রাকার 'নিউক্লিয়াস' ক্রমে ‘বিএলএফ' ও জয়বাংলা বাহিনীতে পরিণত হয়ে মুজিব বাহিনী তথা মুক্তিবাহিনীতে রূপ নেয়। তার আগে কী করে এ দেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক সিরাজুল আলম খানের নিয়ত-সৃজনশীল অথচ দৃশ্যপটে অনুপস্থিত নেতৃত্বের জাদুর কাঠিতে উজ্জীবিত হয়ে ৬-দফা ও ১১-দফা আন্দোলনে ও সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়—ঘটনার পেছনের সেই ঘটনাগুলাের বিশদ বর্ণনা রয়েছে এ বইয়ে। বর্ণনা করেছেন ওসব আন্দোলনের মুখ্য কুশীলব সিরাজুল আলম খান নিজেই।
তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৬৬ সালে। যখন আমি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ঢাকায় ছাত্রলীগ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে আসি। আমার বন্ধু আফতাবের কাছে শুনলাম ছাত্রলীগের যা কিছু বক্তব্য-ঘােষণা, বক্তৃতা-সিদ্ধান্ত—সব তিনিই ঠিক করে দেন। ছাত্রলীগ চলে মূলত তারই প্রত্যক্ষ ও নেপথ্য নির্দেশনায়। তাঁর মূল লক্ষ্য পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করা। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। আর ছাত্রলীগের হার্ডকোর সদস্যদের কাছে তিনি ছাত্রলীগের 'মাও সে-তুং' নামে পরিচিত। তখন মাও সে-তুং-এর যুগ। চারদিকে বিপ্লবীরা স্লোগান দেয় : 'মুক্তি আসে কোন পথে, ব্যালটে না বুলেটে?' —বুলেটে বুলেটে।
১৯৬৮ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার অল্প কিছুদিনের মধ্যে ১১-দফা আন্দোলন শুরু হয়। সে আন্দোলনে অংশগ্রহণের সূত্রে আমি তাঁর সান্নিধ্যে আসি। ইকবাল হলের ক্যান্টিনে ও মধ্যরাতে নীলক্ষেতের আনােয়ার হােটেলে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ রাজনৈতিক আলাপ-আলােচনার মধ্য দিয়ে সে সম্পর্ক গাঢ়তর হয়। শুরুতে ছাত্রলীগের একটা-দুটো লিফলেট তিনি আমাকে দিয়ে লেখাতেন। রুমি ভাই (মাসুদ আহমেদ রুমি) তা দেখে দিতেন। তারপর দ্রুত চলে আসে ইয়াহিয়ার মার্শাল ল', ১৯৭০-এর নির্বাচন, ভুট্টো-ইয়াহিয়া-জান্তার ষড়যন্ত্র, আমাদের সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি, ২৫ মার্চের রক্তস্নাত কাল রাত এবং স্বাধীনতার সশস্ত্র যুদ্ধ। এই সময়গুলােতে আমি সিরাজ ভাইয়ের অমানুষিক পরিশ্রম করার ক্ষমতা এবং কর্মীদের অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করার অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে পরিচিত হই। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সত্যি কথা বলতে কী, বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদ ছাড়া আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের আর কেউ বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পক্ষে দৃঢ়মত ছিলেন না।
দেশ স্বাধীন হবার পর আমরা তাঁর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে 'জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’ প্রতিষ্ঠা করি এবং বাংলাদেশকে গণতন্ত্র, ন্যায়নীতি ও আইনের শাসনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে লিপ্ত হই। আমাদের সে চেষ্টা শেষাবধি সফল হয়নি। তবে সিরাজুল আলম খানের সমাজ পরিবর্তন ও নতুন সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন থেমে যায়নি। আজও তিনি স্বপ্ন দেখেন সমাজের সকল শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিত্বময় একটি শােষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজের। তাঁর সে স্বপ্ন ও প্রচেষ্টার কথা এ বইতে লেখা হয়নি। সে কথা অন্য কেউ লিখবেন। এ বইতে ১৯৮১ সালের ১ মে তার কারামুক্তি পর্যন্ত সময়ের ঘটনা ও কার্যাবলি লিপিবদ্ধ আছে।
এই মুখবন্ধটি ছাড়া এ বইতে আমার নিজের লেখা কোনােকিছুই নেই। তিনি বলেছেন, আমি লিপিবদ্ধ করেছি। মুখের ভাষাকে লেখার ভাষায় রূপ দেবার জন্য ছােটখাটো কোনাে শব্দ যােগ বা বাক্যের বিন্যাস করতে হলে, তা করেছি। তার বেশি নয়। বরাবর প্রচারবিমুখ ও মঞ্চের আড়ালে থেকে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে দক্ষ সিরাজুল আলম খান নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে আগ্রহী নন। পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে সেটাই দেখে আসছি। কিন্তু এটা যে উচিত নয়, তা আমরা কখনও তাকে বােঝাতে পারিনি। ১৯৮২ সালের শেষের দিকে প্রধানত আমার উদ্যোগে আফতাব উদ্দিন আহমদ, একরামুল হক, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক, রায়হান ফিরদাউস মধু, বদিউল আলম, মােশারফ হােসেন, মিয়া মােশতাকসহ আমরা কয়েকজন সিরাজ ভাইয়ের কাছে যাই একটি আত্মজীবনী লেখার ব্যাপারে তাকে রাজি করাতে। ঠিক করলাম তিনি বলবেন, আমি লিখবাে। তিনি রাজি হলেন না। বললেন, সব কথা বলার সময় এখনও আসেনি। আমরা বললাম, ঠিক আছে আপনি বলুন, আমরা লিখে রাখি। যখন সময় হবে বলে মনে করবেন, তখন প্রকাশ করা হবে। এতেও তিনি রাজি হলেন না। এর মধ্যে অনেকগুলাে বছর পার হয়ে গেছে। একরাম ও আফতাব আজ পরলােকে। আমাদেরও সময় প্রায় শেষ। এ ব্যাপারে সবার আগ্রহ স্তিমিত হয়ে আসে। তবে সবাই ছেড়ে দিলেও আমি হাল ছাড়ি নি। কিছুদিন পরপরই তাকে তাড়া দিতাম, দাদা রাজনৈতিক স্মৃতিচারণের কী হলাে?
এর মধ্যে একবার তিনি বেশ কঠিন অসুখে পড়লেন। আমি অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে গিয়ে তাঁকে ধরলাম। এবারে তিনি যেন একটু নরম হলেন। আমি বললাম, ঠিক আছে, আমি কিছু প্রশ্ন আপনাকে দেবাে। আপনি মুখে মুখে তার উত্তর দিবেন। আমি টুকে নেবাে। সেটাই বই হয়ে বের হবে। এতে তিনি রাজি হলেন। কয়েক রাত জেগে প্রায় একশত প্রশ্ন তৈরি করে তাঁকে দিলাম। বললেন, দেখি। কয়েকদিন পর গেলাম। এর মধ্যে তিনি মত পাল্টেছেন। এই ফর্ম্যাটে তিনি রাজি নন। হতাশ হয়ে ফিরলাম, কিন্তু হাল ছাড়লাম না।
২০১৭ সালে তিনি হিপ-বােন রিপ্লেসমেন্ট করিয়ে দেশে ফেরার পর আবারও তাঁর কাছে গেলাম। বললাম, এবার কী বলার সময় হয়েছে? দয়া করে বইটি কী লিখবেন? তিনি হেসে উত্তর দিলেন, 'লিখবাে। কোনদিন আসবে বলাে?' আমি বললাম, ‘এক্ষুণি। এ মুহূর্ত থেকে।’ ৬ এপ্রিল ২০১৮ থেকে আমি তাঁর বক্তব্যের নােট নিতে শুরু করলাম। প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা করে। ২১ দিন পর, ২৬ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে নােট নেওয়া শেষ হলাে।
এই বই সিরাজুল আলম খানের আত্মজীবনী নয়। বাংলাদেশের একটা বিশেষ সময়ের (১৯৬২-১৯৭৫) রাজনীতিকে তিনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন তার ধারাবর্ণনা। অনেক বিষয় আমি ইচ্ছে করে তাকে জিজ্ঞেস করিনি। তিনিও ইচ্ছে করেই অনেক বিষয় এড়িয়ে গেছেন বা বলেননি। যাঁরা সে সময়ের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চান, তাঁদের জন্য সিরাজুল আলম খানের এই রাজনৈতিক আত্মকথন ইতিহাসের এক বদ্ধ দুয়ার উন্মুক্ত করে দেবে, যা দিয়ে এমন সব বিচিত্র বর্ণচ্ছটা দৃশ্যমান হবে যা এর আগে কখনও হয়নি। আজকের তরুণদের জন্য এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যবহুল রাজনৈতিক ইতিহাস। এ বই আমাদের অতীত-পর্যবেক্ষণের দূরবীণ। পাঠক এ বইয়ের প্রতি পাতায় বাংলাদেশের অঙ্কুরােদাম দেখতে পাবেন।
কাজটি শেষ করার পর আমার অনুজপ্রতিম বন্ধু ও কৃতী সাংবাদিক স্বপন দাশগুপ্তকে বলতে সে বললাে, মাওলা ব্রাদার্স-এর স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হকের সঙ্গে তার হৃদ্যতা আছে। তিনি হয়তাে বইটি ছাপাতে রাজি হবেন। সে একদিন আমাকে বাংলাবাজারে মাওলা ব্রাদার্স-এ নিয়ে গেল। আহমেদ মাহমুদুল হক বইটি ছাপতে রাজি হলেন।
পুরাে পাণ্ডুলিপিটি আদ্যোপান্ত পাঠ ও সম্পাদনা করে কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক মােরশেদ শফিউল হাসান। ড. মােরশেদ আমার ছােট ভাইয়ের বন্ধু, আমারও অত্যন্ত স্নেহভাজন, ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাই না।
কম্পােজ, সম্পাদনা ও প্রুফ কারেকশনের নানা রােডব্লক পেরিয়ে অবশেষে বইটি যে দিনের আলাে দেখতে পেলাে তা সম্ভব হয়েছে স্বপন দাশগুপ্ত ও আহমেদ মাহমুদুল হকের কারণে। দুজনের প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ।
ফেব্রুয়ারি ২০১৯
শামসুদ্দিন পেয়ারা
বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক!