Ticker

6/recent/ticker-posts

অঘোর-প্রকাশ - বাংলার প্রথম যৌথ আত্মজীবনী

amarboi
অঘোর-প্রকাশ
বাংলার প্রথম যৌথ আত্মজীবনী

ডাক্তার বিধানচন্দ্র আধুনিক ভারতের অনন্য চরিত্র, প্রবাদপ্রতিম ডাক্তার ও মুখ্যমন্ত্রী। বিধানচন্দ্র রায় কোনও বই লেখেননি কিন্তু তাঁর বাবা প্রকাশচন্দ্র রায় নিঃশব্দে একটা বই লিখেছিলেন যার নাম 'অঘোর-প্রকাশ'। বইয়ের টাইটেল পেজে ব্রাকেটের মধ্যে লেখা 'স্বর্গীয় দেবী অঘোরকামিনী রায়ের জীবনকাহিনী' যেখানে প্রকাশচন্দ্র রায় তাঁর স্ত্রী অঘোরকামিনীর জীবনকাহিনি বর্ণনা করেছেন। বাংলায় যতদূর জানি এটাই প্রথম যৌথ আত্মজীবনী। দেড়শো বছর আগে নারীশিক্ষা ও সামাজিক অগ্রগতির পথপ্রদর্শক এমনই এক জন অঘোরকামিনী দেবী। মাত্র দশ বছর বয়সে বিয়ে হয় বছর উনিশের যুবক প্রকাশচন্দ্র রায়ের সঙ্গে। নিতান্ত বাল্য বয়সে ১৮৯৬ সালের ১৫ই জুন পাটনায় বিধানচন্দ্রের মা মারা যান। তাঁর বাবা প্রকাশচন্দ্র রায় ঠিক ৯ বছর পরে পারিবারিকভাবে একটি বই প্রকাশ করেন। যার নাম ‘অঘোর প্রকাশ’। এই বইটি একসময় তাদের পুত্র এস সি রায় কর্তৃক ইংরেজিতেও প্রকাশিত হয়েছিল এবং সেখানকার ভূমিকায় দাবি করা হয়েছে, এই বইটি আসলে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ আত্মজীবনী এমন প্রচেষ্টা এদেশে যে বিরল। এই ইংরেজি বইটির অনুবাদক একজন কেরলভাষী পণ্ডিত পি শেষাদ্রি আয়ার। এবং অনুবাদকের ধারণা, এমন প্রচেষ্টা পৃথিবীর সাহিত্যে কখনও হয়নি।

‘সকলে শয়ন করিলে, যখন তুমি শয়ন করিতে আসিতে, তখন তোমার বিদ্যাশিক্ষা আরম্ভ হইত। আমি গুরু হইয়া স্বতন্ত্র বসিতাম, তুমি ছাত্রী হইয়া ভয়ে ভয়ে দূরে বসিতে। অনুরাগের সহিত আপনার পাঠ শিখিতে। এইরূপে তোমার ক, খ, আরম্ভ হইল, ক্রমে প্রথম ভাগ দ্বিতীয় ভাগ শেষ হইয়া গেল।’

'বুঝিলাম বাহিরের জনসমাজের সেবা না করিলে ঘরের ধর্ম্মও ঠিক থাকে না; আর বাহিরের জগৎ দেখিয়া মনটা বড় না হইলে, ভাল লোকের সঙ্গে মিশিয়া আত্মা উন্নত না হইলে, ব্রাহ্মধর্ম্ম সাধন করা যায় না।’

‘তুমিও ইহা বুঝিতে লাগিলে, তাই এ সময় হইতে আমাদের চেষ্টা হইল যে কিসে আমাদের জীবন, বিশেষতঃ তোমার জীবন, সংসারের সীমা ছাড়াইয়া বাইরে গিয়া ব্যাপ্ত হইয়া পড়ে।’

এমনই বিরল চিন্তাধারার মানুষ ছিলেন প্রকাশচন্দ্র রায় ও অঘোরকামিনী। স্বামীকে বলেছিলেন, ‘‘৭/৮ বৎসর মাত্র মেয়েরা পড়িতে পায়, তাহা হইতে যদি রান্না শিখিতে সময় কাটিয়া লওয়া যায়, তবে কিছুই শিক্ষা হইবে না। আমি ১৫ দিনের মধ্যে মেয়েদের রান্না শিখাইয়া দিব।’’ ধর্মপ্রাণ হয়েও তিনি ধর্ম ও কুসংস্কারের তফাত বুঝতেন। তাঁর জীবনের অনেক ঘটনাই চমকে দেওয়ার মতো। নিজেই লিখেছিলেন, ‘আমি নিজে ৩০ বৎসর সিন্দুর ছাড়িয়া, বিধবা সাজিয়া থাকি।’ সধবা থাকাকালীনই মাঝে মাঝে বিধবাদের মতো সাদা থান পরতেন। বলতেন, বস্ত্রে কি সধবা বিধবা হয়? প্রকাশচন্দ্রের লেখায় ফুটে ওঠে সংস্কারমুক্ত অঘোরকামিনীর কথা: ‘প্রথম প্রথম শাঁখা পরিধান করিতে, শেষে চুড়ি পরিতে, কিন্তু জীবনের শেষ কয় বৎসর শূন্য হস্তেই থাকিতে। হাতে নোয়া না থাকিলে স্বামীর অকল্যাণ হয়, এ কুসংস্কার তোমার ছিল না।’ এ ঘটনা দেড়শো বছর আগের! অঘোরকামিনীর থান পরা বা সিঁদুর নোয়া না পরা ছিল পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান অঘোরকামিনী। প্রায় দেড়শো বছর আগে সমাজের প্রথা ভেঙে, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়েছেন যিনি আজ তাঁকে যদি আমরা স্মরণ না করি তাহলে কখন করবো।

বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক!