বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বঞ্চনা: অর্পিত সম্পত্তির সাথে বসবাস
আবুল বারকাত
মানব পুঁজি গঠনের ক্ষেত্রে জাতীয় ক্ষতি হয়েছে অপরিমেয়। যার মধ্যে আছে হিন্দু সংখ্যালঘুদের জোরপূর্বক গণহারে দেশত্যাগে বাধ্য করা, পারিবারিক বন্ধন ভেঙে দেওয়া, অন্যায় নিষ্পেষন ও পারস্পরিক অবিশ্বাস, মর্মবেদনা, মানবিক সম্ভাবনাগুলোর ক্ষয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ব্যাহত হওয়া, স্বাধীনতাহীনতা, সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা, সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে ইন্ধন জোগানো এবং ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান ইত্যাদির মাঝে সুস্পষ্ট। এসবই হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষমতাহীনতা, অসহায়, শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা, দারিদ্র্য ও বিচ্ছিন্নতা বঞ্চনার এক চিরস্থায়ী চক্র সৃষ্টি করেছে।
শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনের যাঁতাকলে ১২ লাখ হিন্দু পরিবার ২৬ লক্ষ একর ভূ-সম্পত্তি হারিয়েছেন। অমানবিক এই সমস্যাটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ৪২ বছর যাবৎ জিইয়ে রাখা হয়েছে। সমস্যাটি মনুষ্য সৃষ্ট কিন্তু মনুষ্যত্ববিরোধী। বিষয়টিকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখতে হবে। সমাধানে মানব উন্নয়নে সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে কৃষক সংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের সচেতন নাগরিক সমাজকে পূর্ণমাত্রায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সমস্যার সমাধানে ভূমি অফিসের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভর করতে হবে জনগণের প্রবল আত্মশক্তির ওপর। মনুষ্য সৃষ্ট এ মহাবিপর্যয় থেকে উত্তরণ জরুরি। মহাবিপর্যয় উত্তরণে দুটি বিষয়ে সম্মিলন প্রয়োজন : ১) উষ্ণ-হৃদয় অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী নেতৃত্ব এবং ২) সমগ্র প্রক্রিয়ায় জনগণের সুদৃঢ় অংশগ্রহণ। -আবুল বারকাত সংশ্লিষ্ট জাতীয় বিপর্যয়টি এমনি যে, গত চার দশকে (১৯৬৫-২০০৬ সময়কালে) ২৭ লক্ষ হিন্দু খানার মধ্যে ১২ লক্ষ খানা বা হিন্দু ধর্মের ৬০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং ব্যাপকভাবে শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; হারিয়েছেন ২৬ লক্ষ একর ভূ-সম্পত্তি। ভূ-সম্পত্তির পাশাপাশি হারিয়েছেন অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। অর্পিত সম্পত্তি আইনে মোট আর্থিক ক্ষতির মূল্যমান (৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭৫ ভাগের সমপরিমাণ (২০০৭ সালের মূল্যের ভিত্তিতে)। এ আইন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মূল চেতনা এবং সাংবিধানিক ‘সমতা, ন্যায্যতা, স্বাধীনতা এবং সমস্ত নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার’ ইত্যাদি চেতনার পরিপন্থী। এ আইন সাম্প্রদায়িক, অমানবিক এবং অগণতান্ত্রিক। বাংলাদেশে মানব উন্নয়নের জন্য একটি সত্যিকারের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিলসহ এ আইনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত মালিক এবং/অথবা উত্তরাধিকারীদের কাছে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
আবুল বারকাত
আবুল বারকাত, পিএইচডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্বনামধন্য অধ্যাপক। মানব উন্নয়নের রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিষয়ে নির্মোহ গবেষণা তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।তাঁর তিন শতাধিক গবেষণাকর্ম এবং ভূমি অধিকার, দারিদ্র্য, মানব বঞ্চনা ও মানব উন্নয়ন বিষয়ে অসংখ্য মননশীল প্রকাশনা রয়েছে। দারিদ্র্য ও মানব উন্নয়ন, উন্নয়নে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার, জমি-দারিদ্র্য-উন্নয়নের আন্তসম্পর্ক, অর্থনীতি ও রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, মৌলবাদের অর্থনীতি, উন্নয়নে জেন্ডার বৈষম্য এবং জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে তাঁর গভীর, সত্যানুসন্ধানী গবেষণাকর্ম দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিশেষ সমাদৃত হয়েছে।
মানব পুঁজি গঠনের ক্ষেত্রে জাতীয় ক্ষতি হয়েছে অপরিমেয়। যার মধ্যে আছে হিন্দু সংখ্যালঘুদের জোরপূর্বক গণহারে দেশত্যাগে বাধ্য করা, পারিবারিক বন্ধন ভেঙে দেওয়া, অন্যায় নিষ্পেষন ও পারস্পরিক অবিশ্বাস, মর্মবেদনা, মানবিক সম্ভাবনাগুলোর ক্ষয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ব্যাহত হওয়া, স্বাধীনতাহীনতা, সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা, সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে ইন্ধন জোগানো এবং ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান ইত্যাদির মাঝে সুস্পষ্ট। এসবই হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষমতাহীনতা, অসহায়, শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা, দারিদ্র্য ও বিচ্ছিন্নতা বঞ্চনার এক চিরস্থায়ী চক্র সৃষ্টি করেছে।
শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনের যাঁতাকলে ১২ লাখ হিন্দু পরিবার ২৬ লক্ষ একর ভূ-সম্পত্তি হারিয়েছেন। অমানবিক এই সমস্যাটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ৪২ বছর যাবৎ জিইয়ে রাখা হয়েছে। সমস্যাটি মনুষ্য সৃষ্ট কিন্তু মনুষ্যত্ববিরোধী। বিষয়টিকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখতে হবে। সমাধানে মানব উন্নয়নে সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে কৃষক সংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের সচেতন নাগরিক সমাজকে পূর্ণমাত্রায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সমস্যার সমাধানে ভূমি অফিসের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভর করতে হবে জনগণের প্রবল আত্মশক্তির ওপর। মনুষ্য সৃষ্ট এ মহাবিপর্যয় থেকে উত্তরণ জরুরি। মহাবিপর্যয় উত্তরণে দুটি বিষয়ে সম্মিলন প্রয়োজন : ১) উষ্ণ-হৃদয় অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী নেতৃত্ব এবং ২) সমগ্র প্রক্রিয়ায় জনগণের সুদৃঢ় অংশগ্রহণ। -আবুল বারকাত সংশ্লিষ্ট জাতীয় বিপর্যয়টি এমনি যে, গত চার দশকে (১৯৬৫-২০০৬ সময়কালে) ২৭ লক্ষ হিন্দু খানার মধ্যে ১২ লক্ষ খানা বা হিন্দু ধর্মের ৬০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং ব্যাপকভাবে শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; হারিয়েছেন ২৬ লক্ষ একর ভূ-সম্পত্তি। ভূ-সম্পত্তির পাশাপাশি হারিয়েছেন অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। অর্পিত সম্পত্তি আইনে মোট আর্থিক ক্ষতির মূল্যমান (৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭৫ ভাগের সমপরিমাণ (২০০৭ সালের মূল্যের ভিত্তিতে)। এ আইন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মূল চেতনা এবং সাংবিধানিক ‘সমতা, ন্যায্যতা, স্বাধীনতা এবং সমস্ত নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার’ ইত্যাদি চেতনার পরিপন্থী। এ আইন সাম্প্রদায়িক, অমানবিক এবং অগণতান্ত্রিক। বাংলাদেশে মানব উন্নয়নের জন্য একটি সত্যিকারের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিলসহ এ আইনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত মালিক এবং/অথবা উত্তরাধিকারীদের কাছে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক!