Ticker

6/recent/ticker-posts

মার্ক্সীয় মহা-আখ্যানে উপেক্ষিত এক নায়ক

amarboi
মার্ক্সীয় মহা-আখ্যানে উপেক্ষিত এক নায়ক
শোভনলাল দত্তগুপ্ত

এক

শি রােনামটা বােধ হয় খুব ভুল দিলাম না। মার্ক্স-এঙ্গেলস— এই শব্দবন্ধ ব্যতিরেকে এঙ্গেলস-এর তত্ত্বভাবনাকে স্বতন্ত্রভাবে বিচার করা বা গুরুত্ব দেওয়াটা বড় একটা চোখে পড়ে না। এঙ্গেলস মার্ক্সেরই ছায়াসঙ্গী, তিনি মার্ক্সেরই সহযােদ্ধা, তিনি মার্ক্সেরই সহযােগী— এভাবেই এঙ্গেলসকে চিরকাল দেখা হয়েছে। মূলধারার মার্ক্সবাদও এঙ্গেলসের অবস্থানকে এভাবেই চিহ্নিত করতে অভ্যস্ত। তার অর্থ অবশ্যই এঙ্গেলসকে খাটো করা বা অসম্মান করা নয়, কিন্তু এটাও ঠিক যে তার অর্থ। এঙ্গেলসকে মার্ক্স থেকে বিযুক্ত করে তাঁর স্বকীয়তা বা স্বাতন্ত্রকে যথার্থ স্বীকৃতি দেওয়াও নয়। এঙ্গেলসের জন্মের দ্বিশতবর্ষ বােধ হয় এই বিষয়টির পুনর্বিবেচনা দাবি করে।

স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, এঙ্গেলসকে বিচার করার এই যে প্রচলিত দৃষ্টিকোণ, তার ভিত্তিটা কী? এর কারণ মােটামুটি ত্রিবিধ। এক: এঙ্গেলস তাঁর স্বভাবসিদ্ধ বিনয়ে বারেবারেই সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেছেন যে, তিনি ও মাক্স প্রায় সমবয়সি ও অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও, মা ছিলেন প্রকৃত অর্থেই এক প্রতিভা। অর্থাৎ, এঙ্গেলস নিজেই মার্ক্সের সঙ্গে একাসনে বসার সম্ভাবনাকে খারিজ করে দিয়েছিলেন। দুই: এঙ্গেলসের অন্যতম পরিচিতিটি হল মার্ক্সবাদের ভাষ্যকার হিসেবে। এরকম একটি ধারণা ক্রমেই দানা বেঁধেছে যে, মার্ক্সের চিন্তায় যে-মৌলিকত্ব চোখে পড়ে, এঙ্গেলসীয় ভাবনা সে তুলনায় অনেকটাই নিষ্প্রভ। তিনি মূলত ব্যাখ্যাকার ও প্রচারক, যিনি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মার্ক্সকে সহজপাচ্য করে শ্রমজীবী মানুষের দরবারে পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব। তিন; এঙ্গেলস এই যে ভায্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন, তার পরিণতিতে তিনি, অনিচ্ছাকৃত হলেও, মার্ক্সের মূল বক্তব্যের বেশ কিছু সরলীকরণ ঘটালেন, মার্ক্সকে সহজবােধ্য করতে গিয়ে পরিহার করলেন তাঁর চিন্তনের অনেক তাত্ত্বিক জটিলতাকে আর তার ফলে বৈধতা পেল এঙ্গেলস-কৃত যে-মার্ক্সবাদ, তার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হল, ব্যবধান গড়ে উঠল মার্ক্সের মূল ভাবনার। মাঝপন্থী তন্নিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের এক বড় অংশ তাই এঙ্গেলসকে মাঝের সমগােত্রীয় কিংবা এঙ্গেলসের চিন্তায় কোনও মৌলিকত্ব ছিল, এমনটা ভাবতে নারাজ। এদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাঁরা এ-ও মনে করেন যে, মার্ক্সবাদের এঙ্গেলসীয় ভাষ্যকে আশ্রয় করেই বৈধতা পেয়েছিল সােভিয়েত মার্ক্সবাদের নামে লিনতন্ত্র ও বিজ্ঞানমনস্কতার নামে এক ধরনের যান্ত্রিকতাধর্মী, নির্ধারণবাদী মার্ক্সবাদ।

দুই

এঙ্গেলস সম্পর্কে এই অভিযােগগুলির নেপথ্যে যে-ভাবনাটা কাজ করে সেটা এরকম— মাক্স ছিলেন মূলত দর্শনের মানুষ। স্বভাবে, লেখাপত্রে, ব্যক্তিগত জীবনে যার ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। অবিন্যস্ত, সংশয়বাদী, দার্শনিক মননের মার্ক্সের তুলনায় এঙ্গেলস ছিলেন অনেক বেশি সােজাসাপটা, বাস্তববাদী, প্রকৃত অর্থেই বস্তুতান্ত্রিক। মার্ক্সের জ্ঞানচর্চায় প্রাধান্য পেয়েছিল দর্শন, এঙ্গেলসের ক্ষেত্রে প্রকৃতিবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা। মার্ক্স স্বাচ্ছন্দ বােধ করতেন ইতিহাসের পাঠ ও বিশ্লেষণে। এঙ্গেলস ইতিহাসচর্চায় আগ্রহী অবশ্যই ছিলেন, কিন্তু তাঁর প্রধান অনুসন্ধানের বিষয় ছিল সমর- ইতিহাস, কারণ দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই ভাবনাই পােষণ করতেন যে, শ্রমিকশ্রেণির মাধ্যমে সশস্ত্র বিপ্লব বা অভুত্থানকে সংঘটিত করতে না পারলে পুঁজিবাদের পতনকে সুনিশ্চিত করা যাবে না।। তার জন্য শ্রমিকশ্রেণিকে আয়ত্ত করতে হবে রণাঙ্গনের কৃৎকৌশল, যুদ্ধের খুঁটিনাটি। এই বিষয়ে এঙ্গেলসের বিশেষ ব্যুৎপত্তির কারণে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে, মার্ক্সের পারিবারিক বৃত্তে আখ্যাত হয়েছিলেন সেনাপতি। তার অর্থ এই নয় যে, এঙ্গেলস সাধারণভাবে ইতিহাসচর্চায় অনাগ্রহী ছিলেন। কিন্তু মার্ক্স যেমন ইতিহাসকে একটি নির্দিষ্ট ছকে ফেলে বিশ্লেষণ করে তাঁরই উদ্ভাবিত পদ্ধতি থেকে ক্রমেই সরে আসেন, বিশেষত জীবনের শেষ দশকে, যখন রুশ ইতিহাসচর্চা করতে গিয়ে তাঁর মনে হয় যে রাশিয়াতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন হতে পারে পুঁজিবাদের পূর্ণ বিকাশের অপেক্ষায় না থেকে। পুঁজিবাদকে পাশ কাটিয়ে, রাশিয়ার গ্রামীণ কৌমব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে সমাজতান্ত্রিক চেতনার উন্মেষ ঘটানাে সম্ভব মার্ক্সের এই ইতিহাসবােধ এঙ্গেলসের মনঃপূত ছিল না। তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতার পক্ষে ছিলেন, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি সমাজতন্ত্রে উপনীত হওয়ার ঝুঁকি নেবার পক্ষে তিনি ছিলেন না।

এঙ্গেলসের এই ইতিহাসভাবনার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিল তাঁর ডারউইন-প্রীতি, সমাজ, প্রকৃতিজগৎ ইতিহাস সব কিছুকেই এক ধরনের বৈজ্ঞানিক নিয়মবদ্ধতার নিরিখে বিচার করার প্রবণতা। এই ভাবনার সূত্র ধরেই বলা চলে যে এঙ্গেলসের চিন্তায় তাই বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছিল একপ্রকার নির্ধারণবাদ, বিষয়ীর তুলনায় বিষয়গত জগৎ, প্রকৃতিজগৎ ও মনােজগৎ উভয়কেই সর্বজনীন কয়েকটি দ্বান্দ্বিক সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার দৃষ্টিভঙ্গি। একথা অনস্বীকার্য যে উনবিংশ শতকে জার্মানি ও রাশিয়াতে কার্ল কাউটস্কি ও গিয়র্গি প্লেখানভ- এর হাত ধরে মার্ক্সবাদের যে বৈজ্ঞানিক’ ভাষ্য গড়ে উঠেছিল এবং যা পরবর্তীকালে সােভিয়েত জমানায় জন্ম দিয়েছিল মার্ক্সবাদের এক প্রবল একরৈখিক ব্যাখ্যার, তার অন্যতম তাত্ত্বিক সূত্রটি ছিল মার্ক্সবাদের এঙ্গেলসীয় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

কিন্তু এই কথাটাও একইসঙ্গে খেয়াল রাখা প্রয়ােজন যে, কাউটস্কি ও প্লেখানভ যে-সময়। মার্ক্সবাদচর্চা করেছিলেন, সেই পর্বে মার্ক্স ও এঙ্গেলসের বহু রচনাই ছিল অজানা, অনাবিষ্কৃত। পরবর্তীকালে, বিশেষত একবিংশ শতকে মার্ক্স- এঙ্গেলসের প্রায় সমগ্র রচনাবলি প্রকাশিত হতে থাকার ফলে এঙ্গেলসকে নতুনভাবে বিচার করার, তাঁর চিন্তার স্বকীয়তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটা বড় সুযােগ এখন উপস্থিত হয়েছে।

তিন

এঙ্গেলসের ক্ষেত্রে এই সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলি মার্ক্সবাদের আলােচনায় কতটা গুরুত্বপুর্ণ সেটি বুঝতে অসুবিধে হয় না, যদি সেগুলিকে আমরা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারি। এক: আমরা একথাটা প্রায় খেয়ালই করি না যে, মা পুঁজিবাদী অর্থনীতির যে-যুগান্তকারী বিশ্লেষণে লিপ্ত হলেন, যার চূড়ান্ত অভিব্যক্তি ‘ক্যাপিটাল', তার আদি সূত্রগুলি তিনি পেয়েছিলেন এঙ্গেলস- এর ‘আউটলাইনস অফ আ ক্রিটিক অফ পলিটিক্যাল ইকনমি' (১৮৪৪) এবং ‘দ্য কন্ডিশন অফ দ্য ওয়ার্কিং ক্লাস ইন ইংল্যান্ড' (১৮৪৫) পাঠ করে। দুই: এরকম একটা কথা বহুদিন ধরে চালু আছে যে, মার্ক্স মূলত দর্শন ও অর্থনীতির তাত্ত্বিক বিষয়েই আগ্রহী ছিলেন। অপরদিকে এঙ্গেলসের আগ্রহের অন্যতম বিষয় ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রায়ােগিক বিকাশ। কিন্তু এখন যে-তথ্যগুলি পাওয়া যাচ্ছে, তা থেকে এটা খুবই স্পষ্ট যে মাঝ যখন ‘ক্যাপিটাল' রচনায় ব্যস্ত, সেই সময়েই তিনি গভীর মনােযােগের সঙ্গে নােট নিচ্ছেন, পাঠ করছেন সমকালীন পৃথিবীতে রসায়ন, ভূবিদ্যা, প্রযুক্তির ইতিহাস সংক্রান্ত বইপত্র। মার্ক্স ও এঙ্গেলস উভয় ব্যক্তিই পুঁজিবাদের স্বরূপকে বােঝার জন্য গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসে। তিন: অর্থনীতি এককভাবে উপরিকাঠামােকে নিয়ন্ত্রণ করে, অর্থনৈতিক নিয়তিবাদের এই ভাবনা— যা পরবর্তীকালে মার্ক্সবাদের অন্যতম অপব্যাখ্যা হিসেবে স্বীকৃত কিন্তু প্রশ্রয় পেয়েছিল বহুলাংশে ১৮৫৯ সালে মার্ক্স রচিত 'কনট্রিবিউশন টু দ্য ক্রিটিক অফ পলিটিক্যাল ইকনমি'-র বহুপঠিত মুখবন্ধে। সমাজ ও ইতিহাসের বিশ্লেষণে মাঝ যে এরকম কোনও যান্ত্রিক নির্ধারণবাদী ব্যাখ্যা দিতে চাননি এবং উপরিকাঠামাের আপেক্ষিক স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি যে মা চিন্তায় সদাজাগ্রত ছিল, ইতিহাসের একরৈখিক, নির্ধারণবাদী ব্যাখ্যা যে মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গির বিকৃতি মাত্র, সেটিকে অত্যন্ত স্পষ্ট করে, খােলসা করে ব্যাখ্যা করেছিলেন এঙ্গেলস তার একাধিক চিঠিপত্রে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য জে ব্লথ-কে লেখা এঙ্গেলস-এর চিঠি (সেপ্টেম্বর ২১-২২, ১৮৯০) এবং এইচ স্টার্কেনলুগ-কে লেখা আরও একটি চিঠি (ফেব্রুয়ারি ২৫, ১৮৯৪)। চার:সমাজতন্ত্র বলতে যে আসলে বােঝায় শ্রমজীবী মানুষের স্বশাসন, সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ যে রাষ্ট্রের অবলুপ্তির ধারণাকেই মান্যতা দেয়, এই ভাবনাগুলির খোঁজ করতে আমরা সাধারণত দৃষ্টিপাত করি কমিউনিস্ট ইশতেহার' (১৮৪৮) কিংবা মাক্স রচিত ‘ক্রিটিক অফ দ্য গথা প্রােগ্রাম” (১৮৭৫)এর দিকে। আমরা খেয়াল করি না যে, সাম্যবাদের ভাবনার মূল কথা ও মূল নীতিগুলি প্রথম পেশ করেছিলেন এঙ্গেলস তাঁর ‘দ্য ড্রাষ্ট অফ আ কমিউনিস্ট কনফেশন অফ ফেথ” (১৮৪৭), “প্রিন্সিপলস অফ কমিউনিজম’ (অক্টোবর, ১৮৪৭) এবং তার পরে “অ্যান্টি-ডুরিং' (১৮৭৭-৭৮)-এর তৃতীয় অংশে। পাঁচ: আজ আমরা যে নারীবাদের কথা বলি, তার অন্যতম আদি উচ্চারণ করেছিলেন এঙ্গেলস তাঁর ‘দি অরিজিন অফ দ্য ফ্যামিলি, প্রাইভেট প্রপার্টি অ্যান্ড দ্য স্টেট' (১৮৮৪)- এ। পিতৃতন্ত্রের সমালােচনা, লিঙ্গবৈষম্য বিষয়টি জৈবিক নয়, সামাজিক নারীবাদী তত্ত্বের এই মূল ভাবনাগুলিকে নিয়ে কলম ধরেছিলেন এঙ্গেলস, মার্ক্স নন। কেট মিলেট, শুলামিথ ফায়ারস্টোন প্রমুখ বিশিষ্ট র্যাডিক্যাল নারীবার্দীরাও একথা স্বীকার করেন, সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী ভাবনার তিনিই ছিলেন আনি প্রবক্তা। ছয়: আমি একথাটাও একেবারেই খেয়াল করি না যে, এঙ্গেলস ছিলেন যে-কোনও মতান্ধ ভাবনার কড়া সমালােচক। ১৮৯০ সালে তিনি একথাও লিখলেন যে, সমাজতন্ত্র হল একটি প্রক্রিয়া, একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা হিসেবে একে দেখাটা ঠিক নয়। তিনি এ-ও বললেন যে, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব যদি শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হয়, তাতেও তিনি আশ্চর্য হবেন না। “অ্যান্টি-ডুরিং'-এর একটি বক্তব্যই ছিল সম্ভবত এই ভাবনার ভিত্তি। তিনি একথা বলতে কসুর করলেন না যে, বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতি আমাদের স্নানের জগৎকে এতটাই বদলে দিচ্ছে যে, আমরা বােধ হয় অবস্থান করছি ইতিহাসের একেবারে আদিপর্বে।

অর্থাৎ, যেটা উল্লেখ্য তা হল, এঙ্গেলসের চিন্তায় নমনীয়তার উপাদানের উপস্থিতি। মতান্ধতা ও অন্ধ গোঁড়ামি তাঁর চিন্তাকে কোনওদিন গ্রাস করেনি বলেই তিনি বাস্তববাদী হতে পেরেছিলেন। যৌবনে যিনি ছিলেন সরাসরি রাস্তায় নেমে শাসকশ্রেণির মােকাবিলা করার পক্ষে, সেই তিনিই জীবনের অন্তিমপর্বে এসে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রশ্নে রক্তক্ষয়ী সংঘর্যের পথ পরিহার করে বিকল্প সম্ভাবনার পথটি খােলা রাখতে দ্বিধা বােধ করেননি। এঙ্গেলসের চিন্তার এই মৌলিক উপাদানগুলিকে অস্বীকার করার পরিণতি হল তাঁকে নির্ধারণবাদী, একদেশদর্শী, যান্ত্রিকতাধর্মী মার্ক্সবাদের পৃষ্ঠপােষক হিসেবে চিহ্নিত করা। তার ফল হল কাউটস্কি, প্লেখানভ হয়ে স্তালিন জমানার বৈধকরণ। সামগ্রিকভাবে সােভিয়েত জমানার, বিশেষত স্তালিনপর্বে বহু অপকীর্তির জন্য যারা এঙ্গেলসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান, তাঁরা একথা আজ বলতেই হয়— এঙ্গেলসকে পাঠ করেন একমাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে, উপেক্ষা করেন তাঁর চিন্তার বহুমাত্রিকতাকে। হিসেবের মধ্যে অনেকে এটাও রাখেন না যে, উনবিংশ শতকের ইউরােপীয় চিন্তাজগতে, বিশেষত জার্মানিতে, মার্ক্স-এঙ্গেলস-এর কাছে অন্যতম প্রধান বৌদ্ধিক চ্যালেঞ্জটি ছিল হেগেলীয় ভাববাদের। তার মােকাবিলা এবং পুঁজিবাদকে বিশ্লেষণ করার জন্য তাঁদের অন্যতম হাতিয়ার ছিল বিজ্ঞান, বিজ্ঞানমনস্কতা ও বস্তুবাদী। বিচার-বিশ্লেষণ। বিষয়ীর তুলনায় বিষয়গত ভাবনা, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রকৃতিজগতের বিশ্লেষণ তাই প্রাধান্য পেয়েছিল মার্ক্স ও এঙ্গেলস উভয়ের এঙ্গেলস মার্ক্সের ছায়াসঙ্গী, তিনি মার্ক্সের সংসারের হালটা দেদার আর্থিক সাহায্য দিয়ে ধরে রেখেছিলেন। দিলদরিয়া, বিরাট হৃদয়ের, আত্মপ্রচারবিমুখ এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এঙ্গেলস— এই ভাল-ভাল কথাগুলােকে মান্যতা দিয়ে ও তাঁর জন্মের দ্বিশতবর্ষে মানুষটিকে বােধ হয় আর-একটু গভীরভাবে, একটু অন্যভাবে বিচার করা প্রয়ােজন। মার্ক্স-এঙ্গেলস শব্দবন্ধটিকে সম্ভবত একটু ভিন্নভাবে পড়া দরকার, যেখানে এঙ্গেলস মার্ক্সের ছায়ামাত্র নন, তিনি ভিন্ন। ভিন্নতার এই স্বীকৃতি হয়তাে কিছুটা শক্তি জোগাবে সমাজতন্ত্রের ভাবনাকে, সংশােধন করবে তাকে কেন্দ্র করে বহুদিনের প্রচলিত, বহুচর্চিত বেশ কিছু ভাষ্য ও ব্যাখ্যার।"

* দেশ ২০২০



বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক!