বাংলা সাহিত্য পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে সাহিত্য সংকলন বা চয়নিকা একটি পরিচিত শাখা। উনিশ শতকের উপনিবেশ বাংলায় সেই শাখা নতুন প্রাণ পেল জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাঙালির আত্মপরিচয় পুনর্নির্মাণ প্রচেষ্টার হাত ধরে। বাংলা ভাষাসাহিত্যের ঐতিহাসিক বিবর্তনের ধারাগুলি নথিবদ্ধ করার সেইসব প্রচেষ্টার মধ্যে অগ্রগণ্য দীনেশচন্দ্র সেনের ‘বঙ্গ সাহিত্য পরিচয়’। স্বদেশ ও বহির্বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত অজস্র দুষ্প্রাপ্য এবং ক্রমবিলুপ্ত সাহিত্যনিদর্শন এই সংকলনে সাজিয়ে দিয়েছিলেন দীনেশচন্দ্র।
বৌদ্ধযুগের বাংলার ধর্মীয় গাথাসমূহ থেকে শুরু করে উনিশ শতকের ধর্মবিবর্জিত বাস্তব জীবনকথা, শাক্ত পদাবলি থেকে বাংলা ভাষায় গীতা অনুবাদের ইতিবৃত্ত— এই বইয়ের দুই মলাটে ধরা আছে সুবিশাল এক কালখণ্ড জুড়ে গড়ে ওঠা বাংলার বিচিত্র ও উর্বরা সাহিত্যসম্ভারের এক পক্ষী-অক্ষি দর্শন।
দীনেশচন্দ্র যে কত গভীর থেকে দীনেশচন্দ্র যে কত গভীর থেকে বাংলা সাহিত্যকে চিনেছিলেন তার নিদর্শন এই বই। যা পড়তে-পড়তে সত্যিই অবাক হয়ে যেতে হয়। বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃতি কত দূর পর্যন্ত ছিল! কারণ, এই সব লেখার পরতে-পরতে মিশে আছে বাঙালি সমাজ, মনস্তত্ত্ব, অর্থনীতি এবং সেই সময়কার নানা আচার-অনুষ্ঠান। প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের ব্যাপ্তি নতুন করে উপলব্ধি করা যায়। স্পর্শ করা যায় সময়কে। শুধু তাই নয়, বইটি পড়তে-পড়তে বাংলা ভাষার বিবর্তনকেও বোঝা যায়। নতুন-নতুন শব্দ কীভাবে এল এক-এক সময়ে, তাও চিনে নেওয়া যায়। দুই খণ্ডের এই বই যেন ধারণ করে রেখেছে আবহমান বাংলাকেই। দীনেশচন্দ্র যখন এই বই লিখেছেন তখনও দেশভাগ হয়নি। কথার মধ্যে পূর্ব এবং পশ্চিম থাকলেও আসলে ছিল একটাই বাংলা। সেই অখণ্ড বাংলাকেও খুঁজে পাওয়া যায় এই বইয়ে।
দীনেশচন্দ্র সেন
দীনেশচন্দ্র সেন (১৮৬৬-১৯৩৯)। শিক্ষাব্রতী, গবেষক, লোকসাহিত্য সংকলক, ঐতিহাসিক— কর্মমুখর জীবনে এমন নানা পরিচয় একই সঙ্গে বহন করেছেন এবং এই সবক’টি ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান বিপুল।
উনিশ শতকের শেষ ভাগে প্রাচীন বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বিস্মৃতির আড়াল থেকে তুলে এনে স্বমহিমায় স্থাপনের যে বিরাট কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল, তার পুরোভাগে ছিলেন দীনেশচন্দ্র।
লিখেছেন সত্তরটিরও বেশি বই। তাঁর ‘বৃহৎ বঙ্গ’, ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’, ‘বাংলার লোকসাহিত্য’, ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ ও ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’ প্রভৃতি গ্রন্থ বাংলা তথা বাঙালির আত্মপরিচয় গঠনের ইতিহাসে মাইলফলক। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ প্রতিষ্ঠায় এবং ছাত্রদের জন্য পাঠ্যপুস্তক রচনায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক! সাধ্যের মধ্যে থাকলে বইটি কিনবেন এই প্রত্যাশা রইলো।
0 Comments