নাজমা জেসমিন চৌধুরী
উপন্যাস হচ্ছে আধুনিক যুগের মহাকাব্য এবং এ কালের সাহিত্যিক রূপকল্প- সমূহের মধ্যে সব চাইতে বিস্তৃত। মহাকাব্যের মতোই এই রূপকল্প সমগ্র সমাজের চিত্র উপস্থিত করবার চেষ্টা করে। সে সমাজ হচ্ছে ঐতিহাসিক সমাজ, অর্থাৎ কল্পিত সমাজ নয়। এ জন্য উপন্যাসে রাজনীতি আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়, আর বাংলা উপন্যাসে রাজনীতি বিশেষভাবেই আসে, কেন না উপন্যাস রচনার প্রাথমিক লগ্নে দেশ ছিল বিদেশীদের অধীন। পরাধীনতা ছিল একটি রূঢ় সত্য। পরাধীনতার সচেতনতা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় যেমন রয়েছে তেমনি উপন্যাসেও এসেছে। উপন্যাসে বরং বেশী করেই এসেছে, কারণ উপন্যাসের জীবন-সংলগ্নতা অধিকতর। যে জাতীয়তাবাদী চেতনা স্বাধীনতার জন্য আগ্রহী হয়েছিল সেই চেতনাই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট রূপে প্রকাশ পেয়েছে।
চূড়ান্ত বিচারে রাজনীতি হচ্ছে শ্রেণীদ্বন্দ্ব। কিন্তু বাংলা উপন্যাসের সূচনা- কালে ও পরবর্তী সময়েও আমরা যে-রাজনীতির চর্চা দেখি তা শ্রেণীদ্বন্দ্বকে তুলে ধরে না। সে রাজনীতি মূলত শ্রেণীস্বার্থের। ঔপন্যাসিকরা সকলেই মধ্যশ্রেণীর কাজেই তাদের রাজনৈতিক চিন্তায় তাঁদেরই শ্রেণীস্বার্থ প্রতিফলিত। বঙ্কিমচন্দ্র উল্লেখ করেছেন যে, “আধুনিক ভারতবর্ষে উচ্চশ্রেণীস্থ লোকের অবনতি ঘটিয়াছে, শূদ্র অর্থাৎ প্রজার একটু উন্নতি ঘটিয়াছে”। তাঁর বক্তব্যের সত্যাসত্য বিচার অনাবশ্যক, কিন্তু এই অনুভূতি বঙ্কিম যে শ্রেণীর অন্তর্গত সেই শ্রেণীর জন্য সত্য। এই অনুভূতি থেকেই জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি। কাজেই এই জাতীয়তাবাদের একটা শ্রেণীগত ভিত্তি ছিল। এই জাতীয়তাবাদ ব্যাপক জনসাধারণকে আপনার সঙ্গে নেয়নি বা জনসাধারণের স্বার্থচেতনার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেনি। জাতীয়তাবাদী ধারণাটা প্রথম দিকে ইংরেজকে শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করতে সাহস পায়নি, শত্রু করেছে ইতিহাসের আলোকে প্রতিবেশী মুসলমানদের। এ জন্য জাতীয়তাবাদ একটি সাম্প্রদায়িক ও শ্রেণীগত চরিত্র গ্রহণ করেছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদ পরিচয়ে এই জাতীয়তাবাদ পরিচিত বলে এর শ্রেণীগত চরিত্রটা সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের অন্তরালে অপ্রকাশিত থেকে গেছে। পরবর্তী- কালের সমাজে যেমন সাহিত্যেও তেমনি এই সাম্প্রদায়িক ও শ্রেণীগত জাতীয়তা- বাদের ধারার প্রবলতাই আমরা লক্ষ্য করি।
বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক! সাধ্যের মধ্যে থাকলে বইটি কিনবেন এই প্রত্যাশা রইলো।
0 Comments