Ticker

6/recent/ticker-posts

বিজ্ঞান ভাবনায় কলকাতা - অরূপরতন ভট্টাচার্য

বিজ্ঞান ভাবনায় কলকাতা
বিজ্ঞান ভাবনায় কলকাতা
সম্পাদনা
অরূপরতন ভট্টাচার্য

বিজ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রে আজকের কলকাতা ভারতের মধ্যে একটি বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী ঠিকই, কিন্তু একদিন এই মহানগরীর স্থানটি, এই বিশেষ ক্ষেত্রে, ছিল শীর্ষস্থানে । প্রাক্-স্বাধীনতা আমলে কলকাতা হয়ে উঠেছিল বিজ্ঞান-ভাবনার পীঠস্থান এবং বিজ্ঞান-বিষয়ক গবেষণার প্রধান কেন্দ্র । বৈজ্ঞানিক প্রয়োগে এবং গবেষণায় কলকাতা শুধু বাংলায় বা ভারতেই নয়, সমগ্র এশিয়াতেও একদা পেয়েছিল অগ্রগণ্যের মর্যাদা ও খ্যাতি । দেশ-বিদেশের প্রথিতযশা বৈজ্ঞানিকদের একত্র সমাবেশে, বিজ্ঞানের নানা শাখায় গবেষণার সূচনায় ও বিকাশে—কখনও পথিকৃৎ-রূপে, কখনও-বা অন্যত্র আবিষ্কারের সমকক্ষতায়—এই শহর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পেয়েছে গুরুত্ব, অর্জন করেছে স্বতন্ত্র সম্মান । সেদিক থেকে, কলকাতার বিজ্ঞান-চর্চার বিভিন্ন পর্বে মিশে আছে বিস্তর দিক্‌চিহ্ন ও অসংখ্য উজ্জ্বল মুহূর্ত । কলকাতার তিন 'শো বছরের ঘাতপ্রতিঘাতময় ইতিহাসে সেই প্রসঙ্গের স্মরণ অন্যতম কর্তব্যেরই অঙ্গ ।

অথচ, দুঃখের কথা এই যে, কলকাতার বিজ্ঞান-ভাবনার সূচনা ও বিকাশের ধারাবাহিক আলোচনার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণাঙ্গ একটি ছবি ফুটিয়ে তোলার উপযোগী কোনও কাজ এখনও পর্যন্ত হাতে নেওয়া হয়নি । স্বতন্ত্রভাবে এই শহরের বিজ্ঞান-মনীষীদের সম্পর্কে প্রবন্ধ লেখা হয়েছে, বিজ্ঞান-প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়েও চোখে পড়ে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত আলোচনা, কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত যে-অগ্রগতি জোব চার্নকের কলকাতাকে নিয়ে এসেছে সাম্প্রতিক চেহারায়, তার সামগ্রিক কোনও মূল্যায়ন কি ইতিবৃত্ত অদ্যাবধি রচিত হয়নি । সেই অভাব দূর করতেই ‘বিজ্ঞান-ভাবনায় কলকাতা' নামের সুবৃহৎ এই সংকলন-গ্রন্থটির পরিকল্পনা । কলকাতার বিজ্ঞান ও তার ইতিহাসকে যুগপৎ প্রতিবিম্বিত করার চেষ্টা করা হয়েছে এই সংকলনের সুবিন্যস্ত রচনাগুচ্ছের দর্পণে । কলকাতার বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানভাবনার সামগ্রিক রূপটি যেমন এতে পরিস্ফুট, একইসঙ্গে কলকাতার মূল্যায়নেরও একটা উদ্যোগ এখানে সূচিত । বলা বাহুল্য, কলকাতাকে নিয়ে এ-ধরনের কাজ এই প্রথম ।

এ-কথাও না বললে চলে যে, প্রথম বলেই কাজটি অতীব দুরূহ ছিল । কলকাতার বিজ্ঞান-ভাবনার ক্ষেত্রটি এমন ব্যাপক, বিষয়টিও এতই বহুমুখী ও বৈচিত্র্যমণ্ডিত যে, ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখে সেই সমূহ বিষয়কে এক সূত্রে গ্রথিত করার কাজটি প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে । কিন্তু সুশৃঙ্খল এক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে অসম্ভবকেও বিজ্ঞানসম্মত পথে সম্ভব করে তোলা যায় তারই এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এই সংকলন-গ্রন্থের সম্পাদক অরূপরতন ভট্টাচার্য, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানগ্রন্থ রচনার জন্য যিনি নিজেও সম্মানিত রবীন্দ্রপুরস্কারে । বিভিন্ন ক্ষেত্রের যাঁরা স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ, তাঁদের প্রত্যেককে তিনি আমন্ত্ৰণ জানিয়েছেন স্বক্ষেত্রের সেইসব বিষয় সম্পর্কে আনুপূর্ব ও স্বয়ংসম্পূর্ণ একেকটি আলোচনার জন্য । সুখের কথা, কেউই নিরাশ করেননি । আর তাই, এই একটি মাত্র গ্রন্থের দুই মলাটের মধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ধরা রইল কলকাতার মাটি, গাছপালা, পাখি, প্রাণিজগৎ, মানুষ, সমাজ, স্থাপত্য, সংগ্রহশালা, যানবাহন, আলোক-ব্যবস্থা, শিল্পায়ন, পরিবেশ-দূষণ, গবেষণাগার, গবেষণা, বিজ্ঞানশিক্ষা জাতীয় যাবতীয় বিষয় । ধরা রইল জোব চার্নকের কলকাতা থেকে আজকের—এই তিন শো বছরের কলকাতার বৈজ্ঞানিক ভাবনা, অবদান, সাফল্য ও ব্যর্থতার এক প্রামাণ্য দলিল । এই দলিলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য হিসেবে যুক্ত হল অসংখ্য দামী ও দুষ্প্রাপ্য ছবি । সংকলনের পরিশিষ্টে উল্লেখযোগ্য ঘটনাপঞ্জির সূত্রে কলকাতার ইতিহাস ও বিজ্ঞানের কালানুক্রমিক ও স্তম্ভাকার যে-বিন্যাস, তার মধ্যে ফুটে উঠবে কলকাতার বিজ্ঞান-ভাবনা ও প্রাসঙ্গিক ইতিহাসের ক্রমবিকাশের চিত্র ।

কলকাতাকে ঘিরে বিজ্ঞানচর্চার যে-ইতিহাস, একদিক থেকে তা কলকাতার সাংস্কৃতিক চর্চারও ইতিহাস । এ-গ্রন্থে ধরা রইল সেই ইতিহাসও । কলকাতার তিন শো বছর পূর্তি-উপলক্ষে এ-গ্রন্থের পরিকল্পনা ও প্রকাশ এই উৎসবের এক জরুরি ও অপরিহার্য আয়োজন হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এ-কথা যেমন নিঃসন্দেহে বলা যায়, তেমনই এ-কথাও অস্বীকার করা যাবে না যে, তাৎক্ষণিক আবেদন ছাপিয়ে ভাবীকালেও একইরকম মূল্যবান রূপে বিবেচিত হবে এই সংকলন । বিশেষত, তাঁদের প্রত্যেকের কাছে, কলকাতার ইতিহাস আবিষ্কার ও পর্যালোচনায় যাঁরা বোধ করবেন সামান্যতম কৌতূহল কি উৎসাহ ।

বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক! সাধ্যের মধ্যে থাকলে বইটি কিনবেন এই প্রত্যাশা রইলো।

Post a Comment

0 Comments