আজকাল আমরা নিবিষ্ট মনে বই পড়তে পারি না। ক্ষণে ক্ষণে ফোন, ই-মেল, অথবা সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন জানালা খুলে দেখতে চাই কোথায় কী হচ্ছে। কে কী পোস্ট করল, সেই পোস্টে কে কী মন্তব্য লিখল, এসবের খোঁজ নিতে গিয়ে আমাদের একটানা মনোযোগ দেবার ক্ষমতা ফর্দাফাঁই হয়ে গিয়েছে। শুধু সময় দেওয়ার কথা নয় এটা। আমাদের ভাবনাচিন্তার ধরনটাই বদলে গিয়েছে অন্তর্জালের দৌলতে। আমাদের একেকটি মুহূর্ত শুধু যাপনে সীমাবদ্ধ নয়, তার এক ধারাবিবরণীও চলতে থাকে সমান্তরালে, হয় ফোনে না-হয় সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে। এখানেই একেকটা মুহূর্তকে ভাঙা হয়। এরপর এই ভাঙার খেলা চলতেই থাকে। সেই ধারাবিবরণীর যেসব প্রতিক্রিয়া আসে, সেগুলোর উত্তর দিতে গিয়ে তৈরি হয় আরেকটি স্তর। এভাবে একই মুহূর্তের নানা স্তরে আজকাল আমাদের অবস্থান চিহ্নিত হয়। বেশ মোটা দাগের চিহ্ন সেটা, কারণ অন্তর্জালে কিছুই মুছে ফেলা যায় না। সুতরাং ভাঙা আয়নার মতো চারপাশের বাস্তব জগতের টুকরো টুকরো প্রতিফলনই আমাদের মনে জায়গা করে নেয়। কোনো কিছুই সার্বিকভাবে দেখা সম্ভব হয় না। কারণ, আমাদের হাল-আমলের জীবনচর্যা নিরালায় বসে কিছু ভাবা, কিছু করার ক্ষমতা এবং ইচ্ছে দুই-ই অনেকটাই কেড়ে নিয়েছে।
0 Comments