"তিরিশের কবিদের খানিকটা আগেই নজরুলেও আমরা রবীন্দ্রবিরোধিতার আরেকটি মাত্রা লক্ষ করি। তবে তিরিশের দশকের মোহগ্রস্ত রবীন্দ্রবিরোধিতার সঙ্গে নজরুলের রবীন্দ্রবিরোধিতার যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। বর্তমান সময়ে নজরুলকে আমাদের অভিজ্ঞতা ও জীবনবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত করার স্বার্থেই এই পার্থক্যটাকে বিশেষভাবে খেয়াল করা প্রয়োজন। না, রবীন্দ্রনাথকে জোরেশোরে বর্জন করবেন বলেই নজরুল বোদলেয়ার বা এলিয়টকে পীর মানেননি। কোনো ভিনদেশি নন্দনতত্ত্বের প্রচারকও সাজেননি তিনি। একেবারে ইতিহাসের ভেতরে থেকেই নিজের ইতিহাসের তাপে ও চাপে, বা সেই ইতিহাসের অনিবার্য ছন্দঃস্পন্দে, এক অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্যে, নজরুল কবিতার ভাষায় এবং গানের ভাষায় তৈরি করেছিলেন এমন এক কণ্ঠস্বর যাকে চট করে চেনা যায়, যাকে অনায়াসেই আলাদা করা যায় রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠস্বর থেকে। সেখানেই শেষ নয়। নজরুলের এই অনায়াস রবীন্দ্রবিরোধিতা তিরিশের আধুনিকতাবাদী রবীন্দ্রবিরোধিতাকেও বিরোধিতা করে বটে। এখানে বলা দরকার, রবীন্দ্রনাথেও খানিকটা উপনিবেশবাদবিরোধিতা ছিল বটে, কিন্তু সে বিরোধিতা তার ওপর পশ্চিমা উদারনৈতিকতার প্রভাবে মাঝে মধ্যে পিছু হটেছে; এক ধরনের ঔপনিবেশিক অচেতনও সেখানে কাজ করেছে বটে। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে নজরুলই বোধকরি সবচেয়ে লড়াকু উপনিবেশবাদবিরোধী লেখক যাকে সামান্যতম ঔপনিবেশিক হীনমন্যতা স্পর্শ করেনি, যার স্বার্থতাড়িত ঔপনিবেশিক টানাপোড়েনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।" - ড. আজফার হোসেন
#কাজীনজরুলইসলাম #kazinazrulislam #nazrulislam #banglaboi #bengalibooks
0 Comments